টানা অবরোধে অস্থির রাজধানীর নিত্যপণ্যের বাজার। পণ্য পরিবহনের ভাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় পাইকারি ও খুচরা বাজারে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে পণ্যের দাম। মহাসড়কে সহিংসতা বেড়ে যাওয়ায় রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ কমে গেছে। ব্যবসায়ীরা বলছেন, অন্য সময়ে হরতালে সড়কপথ বন্ধ থাকলেও অনেকটাই সচল থাকে নৌ ও রেলপথে পণ্য পরিবহন। কিন্তু পর পর চারটি অবরোধে সড়কপথের পাশাপাশি নৌ ও রেলপথ বন্ধ থাকায় সরবরাহ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় পণ্য ঘাটতি বাড়ছে।
আবার ঝুঁকি নিয়ে কিছু পরিবহনে পণ্য সরবরাহ হলেও দিতে হচ্ছে বাড়তি ভাড়া। অন্য সময়ে যশোর থেকে ১৫ হাজার টাকায় সবজি ভর্তি ট্রাক এলেও এখন ৪০ থেকে ৪৫ হাজার টাকা দিতে হচ্ছে। একইভাবে নরসিংদী থেকে ১০ হাজার টাকার ভাড়া এখন গুনতে হচ্ছে ২২ থেকে ২৫ হাজার টাকা। পণ্য পরিবহনের সময় ভাঙচুর ও অগি্নসংযোগের কারণেও বড় অঙ্কের ক্ষতির মুখে পড়ছেন অনেক ব্যবসায়ী। এতে সব দিক থেকেই পণ্যের দামে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে।
গতকাল সরেজমিন বাজারে গিয়ে দেখা যায় পণ্যের সরবরাহ কম থাকায় ক্রেতারা কোনো প্রকার দামাদামি না করেই কেনাকাটা করেছেন। বিশেষ করে মাছের বাজারে ছিল রীতিমতো হুড়োহুড়ি অবস্থা। যার সামনে যা পড়েছে তাই কিনে নিয়েছেন। এ ছাড়া বিক্রেতাও ইচ্ছা মতো এক দামে বিক্রি করেছেন। শীতের সবজির আমদানিও ছিল কম।
গতকাল রাজধানীর প্রতিটি বাজারেই মাছ, মাংস ও সবজির দাম ফের বেড়েছে। প্রতিটি সবজির দাম কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেড়েছে। কমেছে পিয়াজের দাম। গতকাল সাত দিনের ব্যবধানে কেজিতে কমেছে ৫০ টাকা পর্যন্ত। গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে প্রতি কেজি পিয়াজ বিক্রি হয়েছে ৮৫ থেকে ৯০ টাকায়।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার ঘুরে দেখা গেছে, টানা অবরোধের আগে প্রতিদিন প্রায় দেড়শ ট্রাক এলেও গতকাল ভোর থেকে দুপুর পর্যন্ত ২০ থেকে ২৫টি ট্রাক ভর্তি সবজি ও নিত্যপণ্য এসেছে। এসব ট্রাক রাজধানীর আশপাশের জেলা থেকে এসেছে। প্রতিটি ট্রাকের পাশেই ছিল পাইকারি ক্রেতাদের ভিড়। বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গতকাল পাইকারিতে প্রতি কেজি আলু ১৬ টাকায় বিক্রি হলেও খুচরা বিক্রি হয়েছে ১৮ টাকায়। এ ছাড়া বেগুন, করলা, শিম ও ঝিঙ্গা-চিচিঙ্গার কেজি ৪০ থেকে বেড়ে হয়েছে ৫০ টাকা।
তবে নতুন আলু গতকাল প্রতি কেজি ৩০ টাকায় বিক্রি করতে দেখা গেছে। এ ছাড়া প্রতি কেজি ইলিশ মাছ বিক্রি হয়েছে ৬০০ থেকে ৭০০ টাকায়। বাজারে আসা ক্রেতা ও ব্যবসায়ীরা জানান, কাঁচামরিচের দাম কেজিতে ১০ টাকা বেড়ে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের ১০০ টাকার ধনেপাতা গতকাল বিক্রি হয়েছে ৫০ টাকায়। অভিজাত এলাকা বারিধারার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, শীতের সবজির সরবরাহ বেড়েছে।
মটরশুটি প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে ১০০ টাকায়। গতকাল ছোট আকারের ফুলকপি ৩০ থেকে ৩৫, ৬০ টাকার নিচে কোনো লাউ নেই। এ ছাড়া মাঝারি বাঁধাকপি বিক্রি হয়েছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকায়। এ ছাড়া ঢেঁড়স ৫০ থেকে ৬০, কাঁকরোল ৫০ টাকায় বিক্রি হয়। এ ছাড়া টমেটো দেশি ৭০ টাকায় বিক্রি হয়।
গতকাল বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে ১১৫ থেকে ১১৭ টাকায়, ৫ লিটার ৫৭০ থেকে ৫৮০ টাকা, খোলা সয়াবিন ১০৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। প্যাকেটজাত আটা-ময়দা কেজিতে ৩ থেকে ৪ টাকা বেড়েছে। ২ কেজির প্রতি প্যাকেট আটা ৭০ টাকা ও ময়দা ৯০ টাকায় বিক্রি হয়। মসুর ডাল ১০৮ থেকে ১১৫, অ্যাংকর ডাল ৬২ থেকে ৬৫ টাকায় বিক্রি হয়। মাছের সরবরাহ নেই বললেই চলে।
দামও নাগালের বাইরে। কারওয়ান বাজারে দেখা যায়, এক কেজি সাইজের কোরাল ৪৩০, আইড় (বড়) ৩৮০ টাকায় প্রতি কেজি বিক্রি হয়েছে। বড় আকারের এক কুড়ি কৈ ৩৫০, শিং ৩৫০ থেকে ৪০০ টাকা, শৈল ২৬০, রুই (বড়) প্রতি কেজি ২৮০ থেকে ৩৫০, কাতল ২০০ থেকে ২২০, মেনি ৩২০, পুঁটি দেশি ২৮০, নলা ১৫০ থেকে ১৬০, ফাইসা ২৭০, বাইলা (বড়) ৩৫০, ছোট ২৫০, পুঁটি (বড়) ৩৫০ টাকা ও টেংরা ৩২০ টাকায় বিক্রি করা হয়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।