আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জার্মানিতে উচ্চশিক্ষা -এজেন্সি- স্বপ্ন ও বাস্তবতা (পর্ব ৮ )- সম্মান আর ভালবাসা



সেদিন ক্লাসে স্যার ইউ রেগুলেশন(EU Regulation 2004) পড়াচ্ছিলেন। শুরু করে আমার দিকে তাকিয়ে আবার তার লেকচার শুরু করলেন। কিছুক্ষন পর আবার তাকালেন। এবার লেকচার থামিয়ে তার ডেস্কের পাশে রাখা কম্পিউটার এ কি যেন করছেন। তার আকস্মিক লেকচার থামিযে দেয়ায় সবাই তার দিকে তাকিয়ে আছে বিস্ময় নিয়ে।

কিছুক্ষন কম্পিউটার এর দিকে তাকিয়ে থেকে আমাকে সামনে যেতে বল্লেন । তাহলে কি আমি যে টেবিলের নিচে মোবাইল দেখছিলাম তা দেখে ফেলেছে?আমাকে খালি হাতে সামনে যেতে দেখে এবার বলল ;বিটে মিট টাসে , মানে প্লিজ উইথ ব্যাগ। আমি এবার সিওর আমার মোবাইল কাহিনি এর শাস্তিসরুপ সামনের সিটে বসা। এই ভেবে যেইনা সামেনর ব্যান্চ্হে বসতে যাচ্ছি সে এইবার বলল ,নিসট ডররট. মানে এই খানে না. একটা চেয়ার নিয়ে আমার কম্পিউটার এর সামনে বস। সারা ক্লাসের সব জার্মান স্টুডেন্টরা আমার দিকে তাকিয়ে আছে।

সে আমাকে কম্পিউটার ডেস্কে বসিয়ে হাতে কিছুক্ষন আগে তারই দেয়া ইউ রেগুলেশন(EU Regulation 2004) এর জার্মান ভার্সনটা রেখে কম্পিউটার থেকে ইংরেজি ভার্সনটা পড়তে দিয়ে বেরিয়ে গেলেন। আর কিছুক্ষন পর ফিরে এলেন ইংরেজি ভার্সন এর প্রিন্ট আউট কপি নিয়ে। আসলে কিছুক্ষন আগে আমার শুখনা মুখ দেখে আমার যে জার্মান টার্ম বুঝতে সমস্যা হচ্ছে সেটা খেয়াল । আর আমি যে টেবিলের নিচে মোবাইলে ট্রান্সলেটর দিযে ইংরেজি অর্থ খুজছিলাম তা বুঝতে পেরেছিলেন । আর সে জন্যই তার এ প্রচেষ্টা।

আমি ঘটনার আকস্মিকতায় স্তম্ভিত। এবার এজেন্সি এর ঘটনায় আসি। গত লেখায় যেখানে শেষ করেছিলাম তার পর থেকে বলি। যারা আগের লেখাগুলো পড়েননি তারা বিসাগ এর গত নিউজলেটারগুলু থেকে পড়তে পারেন। প্রথম যখন ৩১৩৫ টাকা দিয়ে স্টুডেন্ট ফাইল খুললাম তার পরেন দিনই কালার প্রিন্ট করা হাম্বল্ড ল্যাগুয়েজ ইন্স্টিটিউট এর অফার লেটার আর টেলিফোনে ২ লক্ষ ৮০ হাজার টাকা জমা দেবার জন্য তাড়া , কিন্তু সমস্যা হল ইউনি এর অফার লেটার সহ নতুন অফার লেটার পেতে।

৩-৪ সপ্তাহের পরেতো দূরের কথা ১২ সপ্তাহে পরে অফার লেটার পেলাম। এর ভেতরে যখনই জানতে চাইতাম করে আসবে তখনি ৬৯ বুঝাত। তাও ভাল অবশেষে অফার লেটার আসছে। পরেন দিন অফার লেটার হাতে দিয়ে বলল স্কেন করে এম্বেসী এর মেইল এড্রেসে পাঠিয়ে দিতে , ভিসা ইন্টারভিও এর ডেট নেবার জন্য। এখান কার মত তখন এম্বেসিতে এত চাপ ছিল না ভিসা ইন্টারভিও ডেট পেতে।

আর তখন ইমেইল এর মাধ্যমে ডেট নেয়ার নতুন নিয়ম চালু হয়। তাই এম্বেসী থেকে কুইক রেসপন্স পাওয়া যেত। অফার লেটার আর এম্বেসী এর ইমেল এড্রেস হাতে ধরিয়ে পাঠাল মিস্টার আলমগীর এর কাছে। কোন ভাষায় ইমেল লিখব তা জেনে নিতে। উনার কাছ থেকে কি শিখব (যে ইন্টারনেট এক্র্প্লরাল আর গুগুল ক্রম কি জিনিস ঠিকমত জানে না) উল্টা কিছু শিখাইয়া আসলাম।

তার চেয়েও অবাক করার বাপার হল , আমি তার কম্পিউটার থেকে শুধু এম্ব্সিতে মেইল পাঠাতে চাইলাম , স্টুডেন্টদের জন্য তাদের অফিসে কোন কম্পিউটার নেই তার সরাসরি উওর। অথচ স্টুডেন্ট দের জন্যই তারা কাজ করছে। আমর এর জন্য সার্ভিস চার্জ ই নিচ্ছে। অফার লেটার হাতে নিয়ে আমার মনে কিছু প্রশ্ন আসল। সেগুলু জানানোর আগে দেখুন কেমন ছিল সেই অফার লেটার।

এবার প্রশ্নগুলু বলি। উপরের ছবি ভাল করে দেখবেন মাঝখান দিয়ে কাটা দাগ দেয়া। এটা করার কারন যাতে কেউ যদি অফার লেটার পারবার পার আর তাদের কাছে না যায় এই ভয়ে কেটে দিয়েছে। কিন্তু এম্বেসী যে এটাকে বাতিল পেপার বলবে এ চিন্তা আর তার করেন নাই। আমি বললাম ফ্রেস একটা প্রিন্ট করে দিতে , তার বলে এতেই হবে।

কি আর করব র্তক না করে এটাই পরের দিন স্কেন করে ডেট এর জন্য মেইল দিলাম। যা ভেবেছিলাম তাই হল। এইবার ঠিকই ফ্রেস কপি প্রিন্ট করে দিল। পরের প্রশ্ন হল , আমি জমা দিয়েছি (১০৬টাকা- ১ ইউর হিসাবে) ২ লক্ষ টাকা , আর অফার লেটারে আছে ২৫০০ ইউরো পেইড। আর ইউনি এর অফার লেটারে কোন সাবজেক্ট এর নাম লেখা নেই।

উওর হল, এই অফার লেটার শুধু ভিসা ইন্টারভিও এর জন্য ভিসা হলে তখন নতুন অফার লেটার আসবে । কি করে অবশেষে ডেট পেয়েছিলাম তা বলব আগামী পর্বে। গতকাল ক্লাসটেস্ট পরীক্ষায় আবার ও সেই টিচার আমার পাশে এসে বলল , আমার যদি জার্মান ল্যাগুয়েজে উওর দিতে প্রবলেম হয় আমি যেন ইংরেজিতে লিখি । আর কোন ওয়ার্ড এর ইংরেজি যদি না পাই তাকে যেন বলি সে না জানলে নেট থেকে বের করে দেবে। শুধু একজন টিচার না সবাই ঠিক একই রকম ব্যবহার করে।

তারা তাদের সর্বোচচ্ চেস্টা করে আমাকে সব ধরনের হেল্প করার জন্য। অথচ ক্লাসের ১৬ জন জার্মান স্টুডেন্ট এর মাঝে আমি একমাত্র বিদেশী . ভাবতে অবাক লাগে , ১ জন বিদেশী ছাত্র এর জন্য আমার ক্লাসের টিচাররা আজ যা করছে তারা যদি তা না করত তা হলেও কিছুই বলার বা করার ছিল না। অথচ আমার দেশের এজেন্সি এর কাছ থেকে টাকা দিয়ে যে সার্ভিস পাবার কথা ছিল তা কিন্তু আমি পাই নি। আর আমার টিচাররা এর বেতন ও কিন্তু আমি দেই না দেয় জার্মান সরকার। একেই বোধ হয় দায়িত্ববোধ আর নৈতিকতা বলে।

অন্তরের গভীর থেকে সম্মান আর ভালবাসা থাকবে সবসময় তাদের জন্য। (চলবে ) লেখাটি বিসাগ ক্রোড়পত্র - নভেম্বর এবং ডিসেম্বর ২০১৩ পূর্বে প্রকাশিত হয় । সিরিজের সবগুলু লেখা এখানে পাবেন

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.