শহীদদের নিয়ে তামাশা করা সকল আগাছাকে পদদলিত করি। আমরা চির উন্নত শিরের জাতি। আমরা বাঙালি।
কাল ভোররাতে বোমা ফাটল আন্তর্জালে।
যারা এমন সত্য ধারণ করে, এমন সত্য লালন করে, এমন সত্য প্রচার করে, এমন সত্যের উপর ভিত্তি করে জেলার পর জেলায়, শহরের পর শহরে মানুষ জবাই করে এই ২০১৩ সালেও, যারা হাত পা বেঁধে ৬৭ বছরের মুক্তিযোদ্ধাকে পুড়িয়ে মারে, যারা ধ্বংস করে তো শহীদ মিনার আজো, পুড়িয়ে দেয় তো মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিল আজো, বদনাম করে তো স্বাধীনতা স্তম্ভের আজো, এবং যারা দাবী করে কাদের মোল্লা একাত্তরে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে কমান্ডো ট্রেনিং নিয়েছিল,
তাদের ইসলাম, তাদের সত্য, তাদের কাছে আল্লাহর আইন এবং তাদের কাছে ন্যায়বিচার মানে কী!
পাকিস্তানের পার্লামেন্ট ও জামাত প্রকারান্তরে কাদের মোল্লাকে কসাই কাদের বলল।
কাদের মোল্লার পরিবার ও জামাতের বাংলাদেশ শাখা কাদের মোল্লাকে মুক্তিযোদ্ধা ও কসাই কাদেরকে ভিন্ন ব্যক্তি আখ্যা দিয়ে এসেছিল এবং এর ফলে জনমনে চরম বিভ্রান্তি সৃষ্টি হয়েছিল।
লক্ষ লক্ষ শিক্ষিত মানুষ একযোগে এই প্রচারণাতে নামে। এমনকি আপাত জামাত বিরোধী মানুষজনও।
উল্লেখ্য, পাকিস্তানের জামাত তার ফাঁসির পর 'বাংলাদেশ শাখা' বলেছিল।
পাকিস্তানে ব্যাপকহারে তাকে জাতীয় বীর আক্কা দেয়া হচ্ছে।
এবং তার জাতীয় বিরত্বের কারণ হিসাবে একাত্তরের নয়মাস পাকিস্তানের প্রতি 'পূর্ণ আনুগত্য'র কথা বলা হচ্ছে।
'ঢাকার পতন' তথা বাংলাদেশের স্বাধীনতা একটা পাকিস্তানি ন্যাশনাল ট্রাজেডি। একই কথার সাথে মিলিয়ে ইন্টেরিয়র মিনিস্টার নিসার আলী এবং এমকিউএম লিডার আবদুল ওয়াসিম কাদের মোল্লার ফাঁসিকে 'পাকিস্তানের জাতীয় বিপর্যয়' উল্লেখ করে। এবং তারা এটাকে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের মত একটা বিপর্যয়কর পরিস্থিতি হিসাবে বর্ণনা করে।
"প্রস্তাব উত্থাপন করেন পাকিস্তানের জামাত-ই-ইসলামীর (জেআই) নেতা শের আকবর খান।
এতে বলা হয়, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানকে সমর্থন করার কারণে বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর একজন প্রবীণ নেতাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে। এ ঘটনায় পার্লামেন্ট গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। পরে সংখ্যাগরিষ্ঠ ভোটে প্রস্তাবটি পাস হয়।
কাদের মোল্লার পরিবারের প্রতি সমবেদনা প্রকাশ করে একাত্তরের ক্ষত কাটিয়ে ওঠা এবং বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নেতাদের মামলাগুলো সদয়ভাবে বিবেচনার দাবি জানায় পাকিস্তানের পার্লামেন্ট।
এর আগে পার্লামেন্টে পয়েন্ট অব অর্ডারে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের অখণ্ডতার পক্ষ নেওয়ায় কাদের মোল্লাকে ফাঁসি দেওয়া হয়েছে।
এটা বিচার বিভাগীয় হত্যাকাণ্ড। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, একাত্তর সালে পাকিস্তানের পক্ষে সমর্থন করে কাদের মোল্লা দেশ-প্রেমিকের দায়িত্ব পালন করেছিলেন। পূর্ব পাকিস্তান বিচ্ছেদ হওয়ায় পাকিস্তানিদের মনে যে ক্ষত সৃষ্টি হয়েছিল, তাতে আবারও ব্যথা দেওয়া হলো এই ফাঁসির মাধ্যমে। দ্য ডন। "
"পিটিআই লিডার মাখদুম জাভেদ হাশমী, পাকিস্তান আওয়ামী মুসলিম লীগ এর প্রধান নেতা শেখ রশিদ আহমেদ, পাকিস্তান মুসলিম লীগ কায়েদ লিডার হিরানি, জমিয়াতে উলেমা ইসলাম ফজল এর মাওলানা আমীর জামান দাবি করেছে, মোল্লার মৃততদন্ড হয়েছে পাকিস্তানের প্রতি তার আনুগত্যের কারণে।
"
অনুসিদ্ধান্ত মাত্র পাঁচটা:
* পাকিস্তানেও মানুষ আছে। তাদেরও কারো কারো লজ্জা আছে। জামাত শিবির এবং তাদের কথা যারা বিশ্বাস করে, তাদের ভিতর মনুষ্যত্ব ও লজ্জাটুকুও বাকি নাই। বিবেক তো শেষ হয়েই গেছে। বিচার বিবেচনা তো কর্পুর।
পাকিস্তান পিপলস পার্টি লিডার আবদুস সাত্তার বাখানির লজ্জা আছে। তিনি বোঝেন। বলেছেন, "জামাত লিডারের ফাঁসি বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বিষয় নিয়ে পাকিস্তানের নাক গলানো ঠিক হবে না। "
* পাকিস্তান এখনো বাংলাদেশের স্বাধীনতা মেনে নিতে পারেনি।
বাংলাদেশের বিজয় দিবসে (অথবা তার আগের দিন) পার্লামেন্টে তারা কৈ চুপচাপ লজ্জা পেয়ে থাকবে তা না, 'ঢাকার পতন' নিয়ে কথা বলে এবং এই দিনে বাংলাদেশকে শুভেচ্ছা জানাবে তা না, কাদের মোল্লার ফাসি নিয়ে শত শত আইনপ্রণেতা একমত হয়! কাদের মোল্লার ফাঁসি ন্যায়বিচারের জন্য গুরুত্বপূর্ণ, বাংলাদেশের স্বাধীনতার জন্য গুরুত্বপূর্ণ- এটা প্রমাণিত হলো আবারো।
*'শিক্ষিত' বাংহারি (বাংলায় কথা বলা বিহারি) এবং বাংজাবি (বাংলায় কথা বলা পাঞ্চাবি) তোমরা কোথায়?
*যারা 'জামাত বিরোধী', কিন্তু কাদের মোল্লা একাত্তর সালে পিছনদিকে কচু নিয়ে শীতনিদ্রায় ঘুমিয়ে ছিল, তাই সে ওই নয়মাস কী হয়েছিল তা জানত না, এই কথা বলেছ, তাদের কি শি ক্ষা হয়েছে? নাকি জামাতের কথা আরো বিশ্বাস করে আরো শিক্ষিত হতে বাকি আছে?
* আর কাদের মোল্লার পরিবার কেমন পরিবার? একটা মরা লোককে নিয়ে তারা এতবড় মিথ্যা কথা বলে? কাদের মোল্লার দল কেমন দল? একটা মরা লোককে নিয়ে ডাহা মিথ্যা কথা বলেই যাচ্ছে? এই মিথ্যার পাপ কি লোকটার মরা লাশে জমা হচ্ছে না?
পাদটীকা:
যাবজ্জীবন জেল হলে যে পিশাচ ভি দেখায়, সে কীভাবে চিন্তা করে যে, তার জয় হয়েছে আজীবন জেলে থাকার রায়ে? তার মানে তখনি বোঝা উচিত ছিল। তার মতে সে আজীবন জেলে থাকলে এটা তার জন্য নূনতম ন্যায়বিচার এবং এই বিচারে সে জিতে গেছে।
কোন উন্মাদও নির্দোষ হলে চোদ্দ বছরের ঘানি টানার রায়ে ভি দেখাবে না।
যাদের ঘটে মাল ছিল, তারা তখনি জানতে পেরেছিল কাদের মোল্লা কে।
শিক্ষা:
ঘটে জামাতের প্রচারণা নয়, মাল রাখুন। জামাত শিবির রাজাকার যার ঘাড়ে চেপেছে তার জন্য লজ্জা নিয়ে এসেছে। পাকিস্তান পার্লামেন্টের জন্য লজ্জা, বাংলাদেশের বিজয় দিবসের প্রাক্কালে তাদের কাদের মোল্লা নিয়ে কান্নাকাটি করতে হচ্ছে পার্লামেন্টে। হেফাজতের জন্য লজ্জা, তাদের মধ্যপন্থী মুসিলম পরিচয় মাত্র একদিনে মুছে গেছে। স্বয়ং শিবিরের জন্য লজ্জা, ভবিষ্যতের কাদের মোল্লা তৈরি হচ্ছে।
যারা কাজ করছে পাকিস্তানের আনুগত্যের জন্য। পাকিস্তানের আনুগত্যকে শাহাদাত বলছে। গোমা রনির জন্য লজ্জা, সে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে পাস হওয়া বিল অনুযায়ী একজন পূর্ণ অনুগত (একাত্তরের নয়মাস পাকিস্তানের পূর্ণ আনুগত্য মানে কী? বাঙালি নারীর উপর ফুল ছিটানো? বাঙালির উপর ভালবাসা বর্ষণ? পাকিস্তান সেনাবাহিনী কী করেছিল?) রাজাকারকে নির্দোষ প্রমাণ করতে গিয়ে পুরো বাঙালি জাতিকে জারজ বলেছে।
আর শিক্ষিত বাঙালির জন্য শিক্ষা, জীবনে যাই শোন না কেন, তোমাকে বেইজ্জত করবে, মাথাটা নিচু করে দিবে, মুখ নেংটির আড়ালে লুকাতে হবে, যদি কোনক্রমে ভুলক্রমে কখনো জামাতের একটা কথাও বিশ্বাস করো।
মনে নাই?-
*দেশপ্রেম ঈমানের অঙ্গ- এটা জাল হাদিস।
*বাংলাদেশে কোন যুদ্ধাপরাধী নাই।
* শিবিরের সাথে জামাতের কোন সম্পর্ক নাই।
*একাত্তরে জামাতে ইসলাম ছিলই না। জামাত জন্ম নিয়েছে ৭৯ সালে।
*৭১ থেকে ৮০ পর্যন্ত গোলাম আজম ইসলামী আন্দোলন করেছে পাকিস্তান, লনডনে।
(বাংলাদেশ না-মঞ্জুর আন্দোলন করে নাই। )
* সত্য। সত্য। সত্য। (জামাত শিবিরের প্রতিটা বাক্যের আগে সত্য, মাঝে সত্য এবং শেষে সত্য শব্দটা থাকে, মনে নাই???)
সঙ্গদোষে লোহা ভাসে।
জামাত শিবির রাজাকার হল সেই ছোঁয়াচে ভাইরাস, যার কথাটুকু বিশ্বাস করলেও মুখ দেখানোর জায়গা থাকবে না। আর সমঝদারের জন্য ইশারাই কাফি। কারণ দাম দিয়ে কিনেছি বাংলা, কারো দানে পাওয়া নয়। আমি দাম দিছি প্রাণ লক্ষকোটি, জানা আছে জগৎময়।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।