হৃদয়ের কাছে বুদ্ধির বাস ভাল কথা। কিন্তু মাঝে মঝে হৃদয়ের ওপর থেকে বুদ্ধির শাসন তুলে দিতে হয়, হৃদয়কে স্বাধীন করে দিতে হয়, মুক্ত করে দিতে হয়। স্বাধীন মুক্ত হৃদয়ের ধর্মকে সব সময় বুদ্ধি দিয়ে বিচার করতে নেই
বাবুই পাখিরে ডাকি বলিছে চড়াই/কুঁড়েঘরে থেকে কর শিল্পের বড়াই/আমি থাকি মহাসুখে অট্টালিকা পরে/তুমি কত কষ্ট পাও রোদ বৃষ্টি ঝড়ে/বাবুই হাসিয়া কহে সন্দেহ কি তায়?/কষ্ট পাই তবু থাকি নিজের বাসায়। এটি রজনীকান্ত সেনের বিখ্যাত ‘স্বাধীনতার সুখ’ কবিতার চিরচেনা কয়েকটি লাইন।
বর্তমানে যেমন তাল জাতীয় গাছ হারিয়ে যাচ্ছে তেমন হারিয়ে যাচ্ছে বাবুই পাখিও।
বাবুই পাখি ও এর শৈল্পিক নিদর্শনকে টিকিয়ে রাখার জন্য আমাদের সবার উদ্দ্যেগ নিতে হবে। বাবুই পাখির চোখ জুরানো বাসা এখন আর চোখে পড়ে না। ছোট হলেও বুদ্ধিতে সব পাখিকে হার মানায়।
খড়ের ফালি, ধানের পাতা, তালের কচি পাতা, ঝাউ ও কাশবনের লতাপাতা দিয়ে উঁচু তালগাছে চমৎকার আকৃতির বাসা তৈরি করত ছোট্ট বুদ্ধিমান বাবুই পাখিরা। ঠোঁট দিয়ে ঘাসের আস্তরণ ছড়ায়।
পেট দিয়ে ঘসে গোল অবয়ব মসৃণ করে। শুরুতে দুটি নিম্নমুখী গর্ত থাকে। পরে এক দিকে বন্ধ করে ডিম রাখার জায়গা হয়। অন্য দিকে লম্বা করে প্রবেশ ও প্রস্থান পথ তৈরি করে বাবুই পাখির বাসা যেমন দৃষ্টিনন্দন তেমনি মজবুত।
মাঝে-মধ্যে খেজুর কিংবা নারিকেল গাছের শাখাতেও এরা বাসা বাঁধে।
মেধাবী বলেই এরা সুন্দর বাসা বোনে। প্রবল ঝড়ে বাতাসে টিকে থাকে তাদের বাসা। বাবুই পাখির মুক্ত বুননের এ বাসা টেনেও ছেঁড়া কঠিন। বাবুই একধারে শিল্পী, স্থাপতি এবং সামাজিক বন্ধনের প্রতিচ্ছবি।
এরা এক বাসা থেকে আরেক বাসায় যায় পছন্দের সঙ্গী খুঁজতে।
সঙ্গী পছন্দ হলে স্ত্রী বাবুইকে সঙ্গী বানানোর জন্য খালবিল ও ডোবায় গোসল করে ফুর্তিতে নেচে নেচে বেড়ায় গাছের ডালে ডালে। এরপর উঁচু তালগাছ, নারিকেল বা সুপারি গাছের ডালে বাসা তৈরির কাজ শুরু করে। স্ত্রী বাবুই পাখির প্রেরণা পেয়ে পুরুষ বাবুই খুবই শিল্পসম্মতভাবে নিপুণ বাসা তৈরি করে।
পুরুষ বাবুই পাখি কেবল বাসা তৈরি করে। স্ত্রী বাবুই ডিম দেয়ার সঙ্গেই পুরুষ বাবুই খুঁজতেই থাকে আরেক সঙ্গীকে।
পুরুষ বাবুই এক মৌসুমে ছয়টি পর্যন্ত বাসা তৈরি করতে পারে। অর্থ্যৎ এরা ঘর-সংসার করতে পারে ছয় সঙ্গীর সঙ্গেত, তাতে স্ত্রী বাবুইয়ের বাধা নেই। প্রজনন প্রক্রিয়ায় স্ত্রী বাবুই ডিমে তা দেয়ার দুই সপ্তাহের মধ্যে বাচ্চা ফোটে। আর তিন সপ্তাহ পর বাবুই বাচ্চা ছেড়ে উড়ে যায়।
জানা গেছে, সারা বিশ্বে বাবুই পাখির প্রজাতির সংখ্যা ১১৭।
তবে বাংলাদেশে তিন প্রজাতির বাবুই পাখির বাসা দেখা যায়। দক্ষিণ এশিয়ার বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল ও পাকিস্তান ছাড়া আর কোথাও নেই।
১ । দেশি বাবুই (Ploceus philippinus),
২ । দাগি বাবুই (Ploceus manyar)
৩।
বাংলা বাবুই (Ploceus bengalensis)
বাবুই পাখির অন্যতম বৈশিষ্ট্য হলো, রাতের বেলায় ঘর আলোকিত করার জন্য এরা জোনাকি পোকা ধরে নিয়ে বাসায় রাখে এবং সকাল হলে আবার তাদের ছেড়ে দেয়।
বাবুই খাবারের জন্য রাতের বেলা ঝাঁকবেঁধে নামে। এই সুযোগটাই নেয় শিকারিরা। তারা জাল পেতে রাখে। জালে আটকা পড়ে শত শত বাবুই।
প্রতিটি পাখি থেকে ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম মাংস পাওয়া যায়। সামান্য লোভের জন্য এভাবেই বাবুই পাখি শিকার চলছে।
কৃতজ্ঞতাঃ
http://en.wikipedia.org/wiki/Ploceidae
Click This Link
http://www.kishorgonj.com/?p=7614
Click This Link
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।