আট মাস আগে মতিঝিলে সমাবেশ ডেকে তাণ্ডবের পর এবারো একই দাবিতে ২৪ ডিসেম্বর শাপলা চত্বরে সমাবেশের ঘোষণা দিয়েছে চট্টগ্রামভিত্তিক সংগঠনটি।
রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে হেফাজত এই সমাবেশ ডেকে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করার পাঁয়তারা করছে দাবি করে আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেছেন, তাদের সমাবেশ করতে দেয়া হবে না।
হেফাজতের সঙ্গে বিএনপি ও জামায়াতের যোগসাজশের অভিযোগও তুলে ধরেন তিনি।
এদিকে হেফাজত তাদের এই সমাবেশের দিন অবরোধ শিথিলের প্রত্যাশা করলেও তা হচ্ছে না বলে জানিয়েছে বিএনপি।
গত ফেব্রুয়ারিতে যুদ্ধাপরাধীদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে গণজাগরণ আন্দোলন শুরু হলে ‘নাস্তিক ব্লগারদের’ শাস্তি দাবিতে মাঠে নামে হাটহাজারী মাদ্রাসার অধ্যক্ষ শাহ আহমদ শফী নেতৃত্বাধীন হেফাজত।
গত ৫ মে তারা মতিঝিলে সমাবেশ ডেকে ঢাকার বিভিন্ন স্থানে তাণ্ডব চালায়, যাতে সংঘাতে নিহত হন বেশ কয়েকজন। হেফাজতকর্মীরা শাপলা চত্বরে টানা অবস্থানের ঘোষণা দিলে রাতে সাঁড়াশি অভিযানে তাদের তুলে দেয়া হয়।
এরপর সভা-বিবৃতির মধ্যে সক্রিয় হেফাজত ২৪ ডিসেম্বর পুনরায় মতিঝিলে সমাবেশের ঘোষণা দিলেও রোববার পর্যন্ত তাদের কোনো অনুমতি দেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের উপকমিশনার মাসুদুর রহমান।
তবে হেফাজতের নেতারা আশা করছেন, শেষ মুহূর্তে হলেও সমাবেশের অনুমতি পাবেন তারা।
অনুমতি না পেলেও রোববার এক বিবৃতিতে সমাবেশ সফলের আহ্বান জানিয়েছেন হেফাজতের কেন্দ্রীয় মহাসচিব জুনায়েদ বাবুনগরী।
তিনি বলেন, “আমরা সর্বস্তরের লাখ লাখ তৌহিদী জনতাকে সঙ্গে নিয়ে সরকারের কাছে আমাদের বক্তব্য ও চাহিদা তুলে ধরব। ”
সরকারের তীব্র সমালোচনা করে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার ‘ইসলামবিরোধী’ বিভিন্ন কার্যকলাপে প্রকাশ্যে জড়িয়ে পড়েছে।
“এছাড়া সরকার গণতান্ত্রিক ও নাগরিক অধিকারের বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়ে দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বকে চরম হুমকির মুখে ঠেলে দিয়েছে। জনসমর্থনহীন সরকার অন্যায়ভাবে ক্ষমতাকে আঁকড়ে রাখার জন্য প্রতিদিন অসংখ্য নিরীহ জনতাকে গুলি চালিয়ে হত্যা করতেও দ্বিধা করছে না। ”
আইন প্রতিমন্ত্রী কামরুল রোববার আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সভায় বলেন, “হেফাজত যতই আস্ফালন করুক না কেন তাদের সমাবেশ করতে দেয়া হবে না।
কারণ তারা সমাবেশের নামে আরেকটি অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। ”
পুলিশের ঊর্ধ্বতন এক কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, হেফাজতকে অনুমতি দেয়ার কোনো সম্ভাবনাই নেই।
“দেশের অন্য জেলার তুলানায় রাজধানীর আইনশৃঙ্খলা এখনো অনেক উন্নত। এই অবস্থায় তাদের সমাবেশের অনুমতি দিলে তৃতীয় কোনো পক্ষকে বড় ধরনের নাশকতার সুযোগ করে দেয়ার শামিল হবে। ”
অন্যদিকে চট্টগ্রামে অবস্থানরত হেফাজতের সাংগঠনিক সম্পাদক আজিজুল হক ইসলামাবাদী সন্ধ্যায় বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, অনুমতি না পেলেও তারা সমাবেশ করবেন।
“আল্লামা শফী ইতোমধ্যে সবাইকে নিজ দায়িত্বে ঢাকায় সমবেত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। ”
তবে হেফাজতের আমির শফী কবে ঢাকায় আসবেন, সে বিষয়ে কিছু জানাননি সংগঠনের নেতারা।
অনুমতি না পেলেও হেফাজত সমাবেশ করার চেষ্টা চালাতে পারে ইঙ্গিত দিয়ে সবাইকে সজাগ থাকার আহ্বানও জানিয়েছেন আইন প্রতিমন্ত্রী।
গত ৫ মে সমাবেশের আগে পল্টনে হেফাজতের তাণ্ডব বিএনপি নেতৃত্বাধীন ১৮ দলের ডাকে সারাদেশে অবরোধ চলছে, যা মঙ্গলবার বিকাল পর্যন্ত চলবে।
গত ৫ মে সমাবেশের আগে পল্টনে হেফাজতের তাণ্ডব
সেই অবরোধ শিথিল করতে বিরোধী দলের কাছে আহ্বান জানানো হয়েছে জানিয়ে ইসলামাবাদী বলেন, “না হলে রাজধানীর আশেপাশের জেলাগুলো থেকে আমাদের হাজার হাজার কর্মী-সমর্থক হেঁটে ঢাকায় পৌঁছবেন।
”
হেফাজতের সমাবেশে অতীতে সমর্থন দেয়ার কথা তুলে ধরে এবার অবরোধ শিথিল হচ্ছে কি না- জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান রোববার এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, অবরোধ কর্মসূচি শিথিলের কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি।
চট্টগ্রাম থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা সমাবেশের বিষয়ে অনড় মনোভাবের কথা জানালেও ঢাকায় অবস্থানরত হেফাজত নেতাদের কণ্ঠ কিছুটা নরম দেখা গেছে।
কেন্দ্রীয় কমিটির যুগ্ম মহাসচিব মো. জাফরউল্লাহ বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “আমরা আশাবাদী, সরকার শেষ মুহূর্তে সমাবেশের অনুমতি দেবে।
“অনুমতি না পাওয়া গেলে সংবাদ সম্মেলন করে আমাদের অবস্থানের কথা দেশবাসীকে জানাব। ”
জাফর উল্লাহর সঙ্গে কথা বলার আগে হেফাজতের নায়েবে আমির ও ঢাকা মহানগর কমিটির আহ্বায়ক নূর হোসাইন কাসেমীকে র্যাব-১ এর কার্যালয়ে দেখা যায়।
তাকে ধরে নেয়া হয়েছিল বলে হেফাজত অভিযোগ করলেও র্যাব তা অস্বীকার করে। দেড় ঘণ্টা পর কাসেমী র্যাব কার্যালয় থেকে বেরিয়ে আসেন।
র্যাব-১ এর অধিনায়ক কিসমত হায়াত বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “তাকে আমরা ধরে আনিনি। ২৪ ডিসেম্বরের সমাবেশ নিয়ে কথা বলতে উনারাই এসেছিলেন। ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।