ফুলের গন্ধে ঘুম আসে না
পাগল ভাবে অনেক কিছুই, ভাবে বদলে ফেলবে নিজেকে; ভাবে করবে অনেক কিছুই | কিন্তু ‘জাতে পাগল হলেও তালে ঠিক’ তো, তাই কিছুই করে না | কিন্তু ভাবনাগুলো পাগলের মাথায় বারেবারে ফিরে আসে, হুটহাট করে অস্থায়ী আলোড়ন তোলে, তারপরই ঝিমিয়ে পড়ে | তার পাগলামিটা না টিকলেও অন্য পাগলদের দেখলে খালি মনে হয় কেন সে পারে না পাগলামি করতে? কেন সুস্থ মানুষের মত থাকার তার এ চেষ্টা? তাই পাগল লিখে রাখল তার পাগলামিগুলো, কোন একসময় সুস্থ মানুষের মুখোশ ছিঁড়ে সে যাতে উঠতে পারে পাগল হয়ে |
পাগলকে যে রাস্তায় হাঁটতে হয় , সে রাস্তায় ময়লা আবর্জনার স্তূপ পড়ে থাকে - ড্রেন পরিষ্কার করার ময়লা, শুকনো পাতা, মানুষের ফেলা চিপসের প্যাকেট, প্লাস্টিকের গ্লাস, সিগারেটের গোড়া আরো নানান জিনিস | পাগল ভাবে নিজেই পরিষ্কার করে ফেলবে রাস্তাটা, নেমে যাবে ঝাড়ু নিয়ে | পাগল কি তা করে? না করে না, ভাবে ‘পাছে লোকে পাগল বলে’ | তারপর ভাবে, ‘থাক না নোংরা, আমার কী?’ পাগলামি চাপা পড়ে যায় | সে সুস্থ মানুষের মতই প্রতিদিন ওই পথে হাঁটে, গন্ধ সহ্য না হলে নাকে রুমাল চাপা দেয় |
পাগল fb তে ঢোকে, অর্থ/রক্ত সাহায্য চেয়ে পোস্ট আসলে ভাবে যাবে নাকি যা পারে তাই নিয়ে | তারপর ভাবে, কে কী বলবে | তারপর ভাবে, অনেকেই তো করছে | ভাবে, আমি না করলে কী এমন ক্ষতি হবে? তারপর এড়িয়ে যায় | একটা শেয়ার দেয়, যাক দায়িত্ব অন্যের কাঁধে চাপানো গেছে| এরপরই সুস্থ মানুষের মত অন্যের ছবিতে লাইক দেয়, কমেন্ট করে, মজাদার পোস্ট শেয়ার করে, জ্ঞানগর্ভ পোস্ট শেয়ার দেয়, চ্যাটে আজগুবি কথার আসর বসায় |
পাগল মাঝে মাঝে ভাবে, কোচিং করানোর টাকা দিয়ে গরিব দুই-একজনকে একবেল়া হলেও পেটভরে খাওয়াবে | তারপর সে ভার্সিটিতে হাঁটার সময় ছোট ছোট ছেলে মেয়ে এসে ধরে তাকে, ‘ভাইয়া, কয়ডা টাকা দ্যান | সকালে কিচ্ছু খাই নাই |’ তারা পাগলের হাত ছাড়ে না | পাগল তখন ভাবে, ‘হুম, আমারে ব্ল্যাকমেইল করস?’ সে হাত ছুটানোর চেষ্টা করে, জোরে হাঁটতে থাকে, অন্যরা তার আচরণে কী ভাবছে ভাবার চেষ্টা করে | তারপর ভাবে, ‘একবেলা খাইয়ে লাভ কী? দুইটা টাকা দিয়ে বিদায় করে দেই |’ তারপর দুইটা টাকা পকেট থেকে বের করতে গিয়ে দেখে দশ টাকার কমে টাকা নেই | তখন বলে, ‘যা, আরেকদিন দিমুনে |’ এজন্য যেটুকু অনুশোচনা হয়, তা সুস্থ মানুষের মত দ্রুত ঝেড়ে ফেলে |
পাগল সন্ধ্যায় রাস্তা দিয়ে হাঁটার সময় দেখে ফুটপাতে স্কুল বসেছে | কয়জন পাগলাটে ছেলেমেয়ে পড়াচ্ছে কয়েকটা বাচ্চা ছেলেমেয়েকে | ভাবে, সেও একাজে নামবে নাকি? যদি কিছু কাজে লাগা যায় | তারপরই সে ভাবে, ‘এইরকম পড়াইয়া লাভ কী? এরা তো আর স্কুলেও পড়বে না |’ পাগল সুস্থ মানুষের মত গটগট করে হেঁটে চলে আসে |
পাগল বাসে উঠে সিট পেলেই বসে পড়ে | তারপর দেখে, কয়েকজন বয়ষ্কলোক/ মেয়ে/ বাচ্চা-কাচ্চা তখনো দাঁড়িয়ে আছে | ভাবে, সিট ছেড়ে দিয়ে তাদেরকে বসতে বলবে নাকি? তারপর ভাবে,না থাক| আমি কি দাঁড়িয়ে যাই না মাঝে-মাঝে? কী লাভ অন্যের জন্য দাঁড়িয়ে? তারপর সুস্থ মানুষের মত গ্যাট হয়ে সিটে বসে থাকে |
তারপরও পাগল দেখে জগতে পাগলের অভাব নেই, অনেকেই তাদের পাগলামিগুলোকে ঢেকে রাখতে পারে না | তাদের পাগলামি দেখে পাগলের ঈর্ষা হয়, ভাবে সে পাগল হবে | ভাবে, তারা তো পারছে| পাগল কি আসলেই কখনো পাগল হতে পারবে, নাকি পাগলামি ঝেড়ে ফেলে একেবারে সুস্থ মানুষ হয়ে উঠবে?
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।