...............................।
প্রাচীন মানুষের মাঝে যে সব কুসংস্কার কাজ করতো তার মাঝে বেশ বড় স্থান দখল করে ছিল বিভিন্ন জ্যোতিষ্কের আবির্ভাব। বিশেষ করে উল্কা, ধূমকেতু এসব জ্যোতিষ্ক মানুষ দেখত বেশ নেতিবাচক দৃষ্টিতেই। এখন দেখা যাচ্ছে, ধূমকেতুকে ভয় পাওয়ার যথেষ্ট কারণ আছে মানুষের। জ্যোতির্বিদদের প্রিয় যে হ্যালির ধূমকেতু, তার একটি অংশ ৫৩৬ খ্রিস্টাব্দে পৃথিবীতে আছড়ে পড়েছিলো এবং তার ফলশ্রুতিতে পৃথিবীর বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়ে প্রচুর পরিমাণে ধুলা।
পৃথিবীর জলবায়ুতে আসে বিশাল পরিবর্তন এবং আমাদের এই গ্রহটি ঠাণ্ডা হয়ে যায়। এসব পরিবর্তনের হাত ধরে সাড়া বিশ্ব জুড়ে আসে বন্যা এবং দুর্ভিক্ষ। আরও ধারণা করা হয়ে, ৫৪১-৫৪২ সালে যে “জাস্টিনিয়ান প্লেগ” দেখা দেয় ইউরোপে তার পেছনেও এই দুর্যোগ কাজ করেছে। কলাম্বিয়া ইউনিভার্সিটির এক গবেষণা থেকে এই তথ্য পাওয়া গেছে।
এতদিন পর এই তথ্য কোথা থেকে বের হলো? খুব অদ্ভুত এক জায়গায় পাওয়া গেছে এই তথ্য, আর তা হলো গ্রিনল্যান্ডের এক বরফের স্তর যা ৫৩৩ থেকে ৫৪০ সালের মাঝে তৈরি হয়েছিলো।
সাত বছরের সময়কালে এই বরফের কাঠামোর মাঝে প্রচুর পরিমাণে বায়ুমণ্ডলীয় ধুলোর উপস্থিতি দেখা যায়। আর এই ধুলোর সবটার উৎস পৃথিবী নয়, অর্থাৎ মহাজাগতিক কিছু ধুলো পাওয়া যায় এই বরফ থেকে। “এই বরফের চাঁই এর ভেতরে মহাজাগতিক যতসব উপাদান দেখতে পাচ্ছি,” বলেন গবেষণার নেতৃত্বে থাকা ডালাস অ্যাবট।
কিভাবে বোঝা যায় যে এই ধুলো পৃথিবীর না পৃথিবীর বাইরের? কিছু বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করতে হয় এর জন্য। যেমন উচ্চ মাত্রায় টিন থাকলে সেটা পৃথিবীর বাইরে থেকে এসেছে বলে ধরে নেওয়া যায়।
আর এগুলো যখন জমা হয় বরফের মাঝে, তখন উত্তর মেরুতে বসন্ত চলছিলো। এ সময়েই প্রতি বছর এপ্রিল-মে মাসে পৃথিবীতে এটা অ্যাকুয়ারিড উল্কাবৃষ্টি হয়- যার কারণ হলো হ্যালির ধূমকেতু। সাধারণ এটা অ্যাকুয়ারিড উল্কাবৃষ্টি থেকে আসা এই ধুলার কারণেই হয়তো পৃথিবী ঠাণ্ডা হয়ে গেছিলো, কিন্তু ৫৩৬-৫৩৭ সালে পৃথিবীর তাপমাত্রা কমে যায় প্রায় ৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত। শুধুমাত্র উল্কাপাতের কারণে এত বড় পরিবর্তন আসার কথা না। এর পরে এই বরফে পাওয়া যায় ৫৩৬ সালের একটি অগ্ন্যুৎপাতের চিহ্ন।
কিন্তু সেটাও জলবায়ু পরিবর্তনের জন্য যথেষ্ট শক্তিশালী ছিলো না। অ্যাবটের মতে, কোনও কিছু এসে সাগরে বড় ধরণের আঘাত হানে, যার ফলে এই পরিবর্তনের সুচনা হয়।
এই ধরণের কোনও আঘাত আসলেই ঘটেছিলো কিনা তা বের করার জন্য অ্যাবট এবং তার সহকর্মীরা খুঁজতে শুরু করেন। এই বরফের মাঝেই পাওয়া যায় ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কিছু সামুদ্রিক অণুজীবের ফসিল। অ্যাবটের তত্ব এটাই, যে সমুদ্রে এসে পড়া কোনও মহাজাগতিক বস্তুর আঘাত এসব প্রাণীকে সাগর থেকে ঠেলে ডাঙ্গার ওপরে, গ্রিনল্যান্ডের বরফের ওপরে উঠিয়ে দেয়।
এই মহাজাগতিক বস্তু যে হ্যালির ধুমকেতুর একটি অংশ ছিলো, সে সম্পর্কে বেশ নিশ্চিত অ্যাবট। অন্তত হ্যালির ধুমকেতুর আবির্ভাবের সময়টা সেটাই নির্দেশ করে।
মোটামুটি প্রতি ৭৬ বছরে একবার পৃথিবীর আকাশে দেখা দেয় হ্যালির ধূমকেতু। ৫৩০ সালেও এটি দেখা যায় এবং তখন এটা ছিলো অনেক বেশী উজ্জ্বল। এমনকি খ্রিস্টপূর্ব ৪৬৬ সালের দিকে মিশরীয়রাও এই ধূমকেতু দেখতে পায় বলে ধারণা করা হয়।
অ্যাবটের মতে, ৫৩০ সালে এই ধূমকেতু উজ্জ্বল ছিল তার কারণ হতে পারে, তখন তার ওপরের একটি স্তর ভেঙ্গে যাচ্ছিলো এবং একটি অংশ এসে পৃথিবীতে আঘাত করে। কিন্তু ধুমকেতুর এই অংশটি পৃথিবীর ঠিক কোথায় আঘাত করে বা এটা কতো বড় ছিল সে সম্পর্কে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।