বিএনপি একটি চরম প্রতিক্রিয়াশীল দল। দল গঠন থেকে ক্ষমতারোহন এবং ক্ষমতার বাহিরে প্রতিটি পর্যায়ে তার প্রমাণ অত্যন্ত স্পষ্ট। বিএনপি ও ১৮ দলীয় জোটের তুলনা চলে সাম্প্রতিক মিশরের তাহ্রির স্কোয়ারে মোবারকবিরোধী জনগণের আন্দোলনকে ধ্বংস করার উদ্দেশ্যে গড়ে ওঠা তামারোদের সাথে। তামারোদ এক ছদ্ম বামপন্থী জোট। পোশাকী নাম রেভলিউশনারী সোসালিস্ট।
এর নেপথ্যে কাজ করেছে বিভিন্ন মিডিয়া, মোবারক সমর্থক সামরিক বেসামরিক জনধিকৃত কর্মকর্তা। সেই তামারোদকে বিশ্বস্ত প্রগতিশীল চেহারা দিয়েই আন্দোলনের বুকে ছুরি মারা হয়েছে। বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান একজন মুক্তিযোদ্ধা। জিয়া নিজের মুক্তিযোদ্ধা পদবিকে মূলধন করে দলে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সকল প্রতিক্রিয়াশীল গোষ্ঠীর সমন্বয় ঘটান। খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে বর্তমান ১৮ দলীয় জোট তার পূর্ণাঙ্গ অবয়ব।
অন্যদিকে জিয়ার ক্ষমতা দখল ছিল অগণতান্ত্রিক পথে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী সামরিক বাহিনীর ওপর ভর করে। এর সাথে আবার জড়িয়ে আছে খুনের অভিযোগ। যেটি আজ আইন-আদালতে প্রমাণিত ও প্রতিষ্ঠিত সত্য। আগেই উল্লেখ করেছি, দলটি গঠিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তিদের নিয়ে। ক্ষমতায় বসিয়েছেন শীর্ষ অপরাধীদের।
বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠা লাভের পরও যে ব্যক্তিটি বিদেশে সদ্য স্বাধীন দেশটির বিরুদ্ধাচরণ করে বেড়িয়েছে সেই গণধিকৃত গোলাম আযমকে দেশে ফিরিয়ে এনে সামাজিক রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠা দিয়েছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনী, যারা প্রকাশ্যে দেশ-বিদেশের মিডিয়ায় গলা উচিয়ে গর্বভরে খুনের কৃতিত্ব জাহির করেছে। আন্তর্জাতিক রীতিনীতি ও মানবতাকে অগ্রাহ্য করে আইন করে সেসব আত্মস্বীকৃত খুনীদের বিচারের পথ বন্ধ করা হয়। এখানেই শেষ নয়, দেশে বিদেশে বিভিন্ন উচ্চপদে চাকুরী দিয়ে এসব খুনীদের পুরস্কৃত করেন। বুদ্ধিজীবি হত্যার দায়ে অভিযুক্ত আশরাফুজ্জামান খান ও চৌধুরী মঈনউদ্দিন মুক্তিযুদ্ধের পর থেকে বিদেশে পালিয়ে আছে।
আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনাল আজ তাদের মৃত্যুদ-ে দ-িত করেছে। অথচ এই দুই খুনী অপরাধী জিয়া ও এরশাদের আমলে দেশে যাওয়ার সুযোগ পেয়েছে। পাকিস্তান দূতাবাসের প্রটকলে তারা দেশে গিয়েছে। জিয়া ও এরশাদ তাদের পুলিশি প্রহরায় নিরাপত্তা দিয়ে বাংলাদেশ ঘুরিয়ে যেতে সব রকমের রাষ্ট্রীয় সহযোগিতা দিয়েছেন। এভাবেই বিএনপির যাত্রা, খুনীদের পৃষ্টপোষকতা ও প্রতিষ্ঠালাভ।
এটাকে মুক্তিযুদ্ধের ঘোষক, মুক্তিযোদ্ধার দল আখ্যা, ব্যাখ্যার মাধ্যমে তামারোদের ন্যায় স্বাধীনতাবিরোধী প্রতিক্রিয়াশীল চরিত্র ও কর্মকা- আড়াল করার অপচেষ্টা চলছে। তামারোদের ন্যায় বাংলাদেশের ১৮ দলীয় এই ফেসিস্ট জোট গণতান্ত্রের মুখোশ ধারণ করে স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের মূল্যবোধ ধ্বংসের প্রয়াস ও পায়তায় লিপ্ত রয়েছে। সংবাদপত্রের নামে গড়ে ওঠা আমার দেশের ন্যায় এক শ্রেণীর মিডিয়া তাদের কর্মকা-ে পৃষ্টপোষকতা ও ইন্দন যুগিয়ে আসছে।
২০০১ সালে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় আসার পর প্রকাশ্য তাদের ফেসিস্ট রূপ পরিগ্রহ করে। আজকের ১৮ দলীয় জোট চারদলীয় জোটেরই বর্দ্ধিত রূপ।
চারদলীয় জোট তখন খুন-হত্যা সন্ত্রাসের মাধ্যমে দেশকে এক চরম অস্থিতিশীল পর্যায়ে উপনীত করে। নেপথ্যে মদদ দেয় আই এস আই ও আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী গোষ্ঠী। উদ্দেশ্য পুনরায় দেশকে পাকিস্তানী ভাবধারায় ভারতবিরোধী অবস্থান দাঁড় করিয়ে একটি অকার্যকর রাষ্ট্রে পরিণত করা। মানুষকে মধ্যযুগীয় ধর্মীয় খোলসে ডুবিয়ে রেখে শাসন শোষণ অক্ষুন্ন রাখা। কিন্তু তাদের দুর্নীতি, খুন-হত্যা, সন্ত্রাস এমন এক পর্যায় পৌছায়, দেশের মানুষ হাফ ছেড়ে বাঁচার পথ খুঁজছিলেন।
সৌভাগ্যের কথা, সেনাবাহিনীর তত্ববধানে ২০০৮ সালে একটি সুষ্ঠু সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। মানুষ নির্ভিঘেœ তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করে। বিপুল সংখ্যাগরিষ্টতা নিয়ে নির্বাচিত হয় বর্তমান মহাজোট সরকার।
কিন্তু বিপত্তি দেখা দেয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার এবং খালেদা জিয়ার দুই ছেলের দুর্নীতি মামলা। এর সাথে যুক্ত হয় দশ ট্রাক অস্ত্র মামলা ও ২১শে আগষ্ট গ্রেনেড হামলার ন্যায় আরো কিছু গুরুত্বপূর্ণ মামলা।
সরকার প্রাথমিক পর্যায়ে আপোষের পথে ক্ষমতায় থাকার চেষ্টা করেছে। এজন্য যথেষ্ট কালক্ষেপনও করেছে, যার চরম খেসারত আজ দিতে হচ্ছে। এজন্য জনসাধারণ ও বিভিন্ন পক্ষ থেকে সরকারের নির্বাচনী ওয়াদা ভঙ্গের অভিযোগ উঠে। বিচার তরান্বিত করতে বিভিন্ন পক্ষ থেকে সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি হতে থাকে। আন্দোলনের চাপে এক পর্যায় সরকার সক্রীয় উদ্যোগী হতে বাধ্য হয়।
বিএনপি তখন দিকে ধরি মাছ না ছুই পানি এমনি অবস্থান থেকে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার নিয়ে বক্তব্য দিয়েছে। এককভাবে বিএনপির আন্দোলনও পানি পাচ্ছিল না। কিন্তু সরকার যখন কঠোর অবস্থান নিয়েছে বিএনপি জামাতের সাথে পাশাপাশি আন্দোলনে গেছে। এখন বলা চলে বিএনপি জামাতের অভ্যন্তরে বিলীন হয়ে গেছে।
ইতিমধ্যে জামাতের নিবন্ধনও বাতিল হয়ে গেছে।
জামাতকে বাদ দিয়ে এককভাবে বিএনপির পক্ষে নির্বাচনে জয়লাভ করাও কঠিন। এমনি অবস্থায় উভয়ই একে অপরের অস্তিত্ব রক্ষার এক অভিন্ন মাত্রায় উপনীতি। ফলে বিএনপির মুখে এখন অবাধ-সুষ্ঠু নির্বাচনের কথা অজুহাত মাত্র। আসলে যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষাই এখন তাদের মূখ্য উদ্দেশ্য। তাই সন্ত্রাসের মাধ্যমেই সরকার উৎখাতের পথ তারা বেছে নিয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।