বিএনপির নেতৃত্বাধীন ১৮-দলীয় জোটের 'মার্চ ফর ডেমোক্রেসি' কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনেও রাস্তায় নামেনি বিএনপি। রাজপথ দূরের কথা, অলিগলিতেও দেখা যায়নি দলটির নেতা-কর্মীদের। দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয় নয়াপল্টন ছিল পুলিশের নিয়ন্ত্রণে। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া যথারীতি ছিলেন অবরুদ্ধ। সরকারি বিধিনিষেধে ঢাকা ছিল সারা দেশ থেকে বিচ্ছিন্ন।
সন্ধ্যায় বিএনপি-প্রধানের সঙ্গে তার গুলশানের বাসায় হঠাৎ দেখা করেন ব্রিটিশ রাষ্ট্রদূত রবার্ট গিবসন। তিনি চলে যাওয়ার পর পরই তার সঙ্গে থাকা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরীকে আটক করে পুলিশ। তার আগে দুপুরে খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করতে যেতে চাইলে পুলিশ আটক করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান সেলিমা রহমান, রাশেদা বেগম হীরা এমপি ও সাবেক এমপি হালিমা নেওয়াজকে। পরে অবশ্য তাদের ছেড়ে দেওয়া হয়।
বিরোধী দলের কর্মসূচির আগের দিন শনিবার থেকেই ঢাকার সঙ্গে সারা দেশের রেল, বাস ও লঞ্চসহ সব যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
রাজধানীতে যাত্রীবাহী কোনো যানবাহন প্রবেশও করেনি, বেরোতেও পারেনি। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ থাকলেও সরকারি-বেসরকারি অফিস-আদালত, দোকানপাট ছিল খোলা। শনিবার থেকে গতকাল পর্যন্ত যোগাযোগের সব ব্যবস্থা বন্ধ থাকায় দেশ কার্যত অচল হয়ে পড়ে। চরম ভোগান্তিতে পড়ে সাধারণ মানুষ। তবে গতকাল সন্ধ্যার পর গাবতলী থেকে দূরপাল্লার কিছু বাস ঢাকা ছেড়ে গেছে।
কিন্তু নগরবাসীর আতঙ্ক এখনো কাটেনি।
গতকালও বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবন ঘিরে ছিল কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনী। নতুন করে সেখানে জলকামান নেওয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্ট এলাকা গতকালও ছিল উত্তপ্ত। রবিবারের মতো বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীদের সঙ্গে ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষ হয়।
এ ছাড়া পুলিশের সঙ্গে নবাবপুরে সংঘর্ষ বাধে জামায়াত-শিবির কর্মীদের।
অবরুদ্ধ খালেদার বাসায় ব্রিটিশ হাইকমিশনার : পূর্বঘোষিত শিডিউল না থাকলেও গতকাল বিকালে হঠাৎ করেই অবরুদ্ধ বেগম খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করেন ব্রিটিশ হাইকমিশনার রবার্ট গিবসন। তিনি প্রায় ঘণ্টাব্যাপী বৈঠক করেন। বৈঠকে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে কথা বলেন বলে জানা গেছে। এর আগে বিকাল ৫টা ২৭ মিনিটে গুলশানের ৭৯ নম্বর সড়কে খালেদা জিয়ার বাসায় ঢোকেন ব্রিটিশ দূত।
৬টা ৪২ মিনিটে বেরিয়ে যাওয়ার সময় তিনি সাংবাদিকদের সঙ্গে কোনো কথা বলেননি। ওই বাড়ির সামনে ও গলির মুখে দুই দিন ধরে পাঁচটি বালুর ট্রাক দাঁড় করিয়ে রাস্তা বন্ধ রাখা হলেও ব্রিটিশ হাইকমিশনার আসার সময় একটি ট্রাক সরিয়ে জায়গা করে দেওয়া হয়। তিনি পেঁৗছানোর আধা ঘণ্টা আগে বিএনপি চেয়ারপারসনের দুই উপদেষ্টা রিয়াজ রহমান ও সাবিহ উদ্দিন আহমেদ এবং দলের ভাইস চেয়ারম্যান শমসের মবিন চৌধুরী ওই বাসায় ঢোকেন। এর আগে সকাল থেকে গুঞ্জন ছিল পুলিশের ঘেরাও ডিঙিয়ে নয়াপল্টনের দলীয় কার্যালয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবেন খালেদা জিয়া। কিন্তু ব্যাপক পুলিশি নিরাপত্তা থাকায় তিনি চেষ্টা করেও বের হতে পারেননি।
তার নিরাপত্তাকর্মীদের একটি সূত্র বলেছে, দুপুরের পর বিরোধীদলীয় নেতার গাড়িতে পতাকা লাগানো হয়। বিকালে এক ঘণ্টা খালেদা জিয়া তার গাড়িতে বসে ছিলেন। কিন্তু গেট খোলেনি পুলিশ। ৫টার দিকে তিনি বের হচ্ছেন, এ খবরে সংবাদকর্মীরা তৎপর হয়ে উঠলেও পরে জানা যায়, গেট না খোলায় তিনি বাড়ির ভেতের চলে গেছেন। এ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছিল রবিবারও।
পুলিশের বাধার মুখে এক ঘণ্টা চেষ্টা করেও গুলশানের বাসভবন থেকে বেরোতে পারেননি বিএনপি চেয়ারপারসন। বাড়ির মূল ফটকেই আটকে দেয় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। গুলশানে বেগম খালেদা জিয়ার ৭৯ নম্বর 'ফিরোজা' নামের বাসভবন সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ভোর থেকেই ভবনটি ঘিরে রাখে ১০ প্লাটুন পুলিশ। এ ছাড়া র্যাব ও সাদা পোশাকের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদেরও অবস্থান নিতে দেখা যায়। দুপুরের পর পরই বাসভবনের সামনে মহিলা পুলিশের সদস্য বাড়ানো হয়।
জলকামান নেওয়া হয় নতুন করে। শনিবার রাত থেকেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী তার বাড়িতে যাওয়ার পথ বালুভর্তি তিনটি ট্রাক ও পুব পাশের গলিতে দুটি ট্রাক আড়াআড়িভাবে রেখে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করে রাখে।
এদিকে রাজধানীতে সকাল থেকেই সতর্ক অবস্থানে ছিল আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। রাজধানীতে যানবাহন না থাকায় দুর্ভোগের সব সীমা ছাড়িয়ে যায়। হাতে গোনা কিছুসংখ্যক বাস চলতে দেখা গেছে রাস্তায়।
তবে গণপরিবহন দূরের কথা রিকশা, সাইকেল পর্যন্ত চলতে দেওয়া হয়নি কোনো কোনো রাস্তায়। বিভিন্ন সড়কে রাস্তা বন্ধ করে গণসংগীতের আসর বসান সরকারি দলের সমর্থকরা। এতে কর্মস্থলে ফিরতে নগরবাসীকে দিনভর পোহাতে হয়েছে অবর্ণনীয় দুর্ভোগ। সীমাহীন কষ্ট ভোগ করতে হয়েছে রোগী, শিশু এবং নারীদের। নানা প্রয়োজনে মানুষকে দীর্ঘ পথ হেঁটে যেতে হয়েছে।
ঢাকার অলিগলি-রাজপথের কোথাও বিএনপি ও তার অঙ্গ-সংগঠনের মিছিল বা কোনো ধরনের তৎপরতা ছিল না। চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসভবন এলাকায়ও দুপুর পর্যন্ত কোনো নেতা-কর্মী যাননি। কিন্তু বিএনপির এ কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনেও দাপটের সঙ্গে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। ভোর থেকেই প্রবেশমুখসহ রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোয় শক্ত অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। এতে কেন্দ্রীয় থেকে শুরু করে মাঠ পর্যায়ের নেতারা অংশ নেন।
বিচ্ছিন্ন রাজধানীতে তল্লাশি, হয়রানি : ১৮-দলীয় জোটের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে রাজধানীর প্রতিটি মোড়েই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা তল্লাশি চালান। অনেক স্থানে যান চলাচলেও বাধা দেয় পুলিশ। আগের মতো আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের কয়েকটি স্থানে পুলিশের সঙ্গে অবস্থান করতে দেখা গেছে। সকাল থেকে উত্তরা, বিমানবন্দর, মহাখালী, ফার্মগেট, যাত্রাবাড়ী, সদরঘাট, মগবাজার, শাহবাগ, গাবতলী, মতিঝিল, দৈনিক বাংলা মোড়সহ বিভিন্ন স্থানে ঘুরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের বিপুল উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। ঢাকামুখী কোনো যানবাহনই ভেতরে ঢুকতে পারেনি।
ঢাকার আশপাশ জেলাগুলো থেকে যারা নিয়মিত ঢাকায় এসে অফিস করতেন, তাদের সবচেয়ে বেশি সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। সকালে তারা অফিসের উদ্দেশে রওনা হলেও প্রবেশপথ থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
বিরোধী দলের কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে শনিবার থেকে যানবাহন চলাচল বন্ধ করে দেওয়ায় অল্পসংখ্যক রিকশা এবং অটোরিকশা চলাচল করে। কর্মদিবস হওয়ায় অনেককেই যানবাহন না পেয়ে রিকশা-অটোরিকশা এবং হেঁটে অফিসে যেতে দেখা গেছে। তবে যানবাহনে কিংবা হেঁটে যেতে চাইলেও তল্লাশি থেকে রেহাই পাননি কেউই।
অফিসগামী অনেক সাধারণ মানুষকেও তল্লাশির নামে হয়রানি করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা, এমন অভিযোগ অনেকেরই। এ নিয়ে জনসাধারণের মধ্যে চরম ক্ষোভ বিরাজ করছে। বুড়িগঙ্গা প্রথম, দ্বিতীয় ও তৃতীয় সেতুতে গতকালও অবস্থান নেন পুলিশ ও ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা। কোনো ধরনের পরিবহন ঢাকায় প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। বুড়িগঙ্গা নদীতে খেয়া নৌকাসহ সব ধরনের নৌযান চলাচল বন্ধ থাকে।
যান চলাচল বন্ধ রয়েছে ঢাকা-মাওয়া সড়কেও। সদরঘাট টার্মিনাল থেকে দ্বিতীয় দিনের মতো কোনো লঞ্চ ছেড়ে যায়নি। তবে হাতিয়া থেকে এমভি ফারহান-৩ ও দৌলতপুর থেকে এমভি টিপু-৫ নামের দুটি যাত্রীবাহী লঞ্চ ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসে। এ লঞ্চ দুটি ভোরে সদরঘাট টার্মিনালে না ভিড়ে পুরান ঢাকার ফরাশগঞ্জ ঘাটে যাত্রী নামিয়ে দেয়। সদরঘাট টার্মিনালে শত শত যাত্রী লঞ্চের অপেক্ষায় ছিল।
বেলা ১টার দিকে গোপীবাগে বিক্ষোভ মিছিল বের করে ছাত্রশিবির। পুলিশ তাদের বাধা দিলে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পুলিশকে লক্ষ্য করে বেশ কয়েকটি ককটেল বিস্ফোরণ ঘটান শিবির কর্মীরা। পরে পুলিশ তাদের ছত্রভঙ্গ করতে শটগানের গুলি ছোড়ে।
দ্বিতীয় দিনেও মানুষের ভোগান্তি : বিরোধী দলের ডাকা 'গণতন্ত্রের অভিযাত্রা' কর্মসূচির দ্বিতীয় দিনেও গতকাল সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েন রাজধানীবাসী।
ঢাকা থেকে দূরপাল্লার কোনো বাস ছেড়ে না যাওয়ায় এবং ঢাকার উদ্দেশ্যে কোনো বাস ছেড়ে না আসায় সারা দেশের সঙ্গে রাজধানীর যোগাযোগ বিছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঢাকার অভ্যন্তরেও গণপরিবহন চলাচল না করায় অফিসগামী যাত্রী, ফলাফলপ্রত্যাশী পরীক্ষার্থী এবং রোগীদের সীমাহীন দুর্ভোগে পড়তে হয়। বিভিন্ন পেশাজীবী, শিক্ষার্থী ও রোগীদের দ্বিগুণ-তিনগুণ ভাড়ায় রিকশা, সিএনজি, ট্যাঙ্কি্যাব, ভ্যানগাড়ি এমনকি পিকভাপ ভ্যানে যাতায়াত করতে দেখা যায়। সরেজমিন রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশন, গাবতলী বাসস্ট্যান্ড এবং সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনাল ঘুরে দেখা যায়, যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করলেও কোনো ট্রেন, বাস বা লঞ্চ গন্তব্যের উদ্দেশ্যে ঢাকা ছেড়ে যায়নি। নিরাপত্তাহীনতার আশঙ্কায় প্রয়োজন ছাড়া বেশির ভাগ মানুষ ঘর থেকে বের হননি।
নেহায়েত প্রয়োজনেই কিছু মানুষ ঢাকা ছেড়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিয়েছিলেন। গতকাল সকাল থেকে নগরীর বাসস্ট্যান্ডের টিকিট কাউন্টারগুলো বন্ধ ছিল। বিকালে গাবতলীসহ অন্য স্ট্যান্ডগুলোতে কিছু দূরপাল্লার বাস চলাচল শুরু করলেও তাও ছিল হাতেগোনা। গাবতলী বাসস্ট্যান্ডে গতকাল সকালে কথা হয় ব্যবসায়ী সাঈদুর রহমানের সঙ্গে। তিনি জানান, বাবার অসুস্থতার খবর পেয়ে তাকে ফরিদপুর যেতে হবে।
কিন্তু বাসস্ট্যান্ডে উপস্থিত হয়ে তিনি কোনো কাউন্টারই খোলা পাননি। খবর পান যে, বিকালে বাস ছাড়ার সম্ভাবনা আছে। অগত্যা স্ত্রীকে নিয়ে শীতের মধ্যে বিকাল হওয়ার জন্য অপেক্ষা করেন। বিভিন্ন বাস কোম্পানির মালিকরা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, পুলিশি নিরাপত্তা থাকলেও জানমালের ক্ষতির আশঙ্কায় তারা ঢাকা থেকে দূরপাল্লায় কোনো গাড়ি ছাড়ছেন না। এদিকে সদরঘাটে ভোলা, বরিশাল, পিরোজপুর, পটুয়াখালী, খুলনা, কাউখালীসহ দক্ষিণাঞ্চলের নৌরুটে যেসব লঞ্চ চলাচল করে তার উপস্থিতি ছিল না।
তবে সদরঘাটে বিকালের দিকে কিছু যাত্রী সমাগম দেখা যায়। এদিকে ভাইয়ের বিয়ের জন্য চট্টগ্রামে যাওয়ার উদ্দেশ্যে মিরপুরের শাহনাজ বেগম তার সন্তানদের নিয়ে গতকাল সকালে কমলাপুর রেলস্টেশনে অপেক্ষা করছিলেন। কিন্তু তাকে হতাশ হতে হয়। কোনো ট্রেনই ঢাকা ছেড়ে যায়নি। তাদেরকে কর্তৃপক্ষও ট্রেন কখন ছাড়বে তা নির্দিষ্ট করে বলতে পারেনি।
এ বিষয়ে রেলপুলিশের সাব-ইন্সপেক্টর মো. ফায়েজ বলেন, গত রবিবার রেলের নিরাপত্তা বাহিনীর এক সদস্য দুর্বৃত্তের ছোড়া পেট্রলবোমায় মারা যাওয়ার পর নিরাপত্তা আরও বেশি বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। কমলাপুর স্টেশন ম্যানেজার খায়রুল বাশার বলেন, তিনি ট্রেন ছাড়ার কোনো নির্দেশ পাননি। নির্দেশনা পাওয়ামাত্রই ট্রেন ছাড়া হবে। হতাশ অনেক যাত্রীকেই বাড়ি ফিরে যেতে দেখা যায়। দূর-দূরান্ত থেকে শীত উপেক্ষা করে নগরীর হাসপাতালগুলোতে ভ্যান ও রিকশাযোগে রোগী ও তার স্বজনদের আসতে দেখা যায়।
এদিকে রাজধানীর অভ্যন্তরে সকালে গণপরিবহন না থাকলেও বিকালে গণপরিবহন চলাচল কিছুটা বাড়ে। সন্ধ্যার পর তা আবার কমে আসে। এদিন হাতেগোনা কিছু লেগুনা, সিএনজি ও টেম্পো চলাচল করতে দেখা যায়। কিন্তু যাত্রীর তুলনায় এগুলোর সংখ্যা ছিল কম। পর্যাপ্ত রিকশা থাকলেও ভাড়া ছিল দ্বিগুণ-তিনগুণ।
নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি জানান, নারাণয়ণগঞ্জ-কমলাপুর ট্রেন থেকে শুরু করে জেলায় কোনো ধরনের গণপরিবহন সোমবার সকাল থেকে চলতে দেখা যায়নি।
আশুলিয়া প্রতিনিধি জানান, গতকাল দ্বিতীয় দিনেও আশুলিয়ার বিভিন্ন স্থানে ব্যারিকেড দিয়ে যান চলাচলে বাধা ঘটায় আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা। গণপরিবহন না থাকায় গতকালও চরম দুর্ভোগে পড়েছেন সাধারণ মানুষ।
সাভার প্রতিনিধি জানান, গতকাল সকাল থেকেই আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী অঙ্গ সংগঠনের নেতা-কর্মীরা পুলিশের পাশাপাশি যৌথ চেকপোস্ট বসিয়ে তল্লাশি চালায়। দুই দিন ধরে রাজধানীতে সব ধরনের যানবাহনের প্রবেশ ও চলাচল বন্ধ থাকায় চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে সাধারণ মানুষকে।
দ্বিতীয় দিনেও রাজপথ ছিল আওয়ামী লীগের : ভোর থেকেই রাজধানীর পাড়া-মহল্লা, ওয়ার্ডের বিভিন্ন পয়েন্টে পতাকা, লাঠি, হকিস্টিক নিয়ে অবস্থান নেন আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। যৌথবাহিনীর কড়া পাহারার পাশাপাশি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীদের দাপুটে অবস্থানের কারণে রাজধানীর কোথাও নামতে পারেননি বিএনপি ও জামায়াতের নেতা-কর্মীরা। নিরাপত্তায় দেহ তল্লাশির নামে পথচারীদের চরম হয়রানি করেন আওয়ামী লীগের সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীরা। তাদের মাতিয়ে রাখতে চলে কবিতা আবৃত্তি। নাচ-গানও চলে দিনভর।
সরেজমিন গতকাল ফার্মগেট, কল্যাণপুর, মোহাম্মদপুর, খামারবাড়ি, ধানমন্ডি, রামপুরা, খিলগাঁও, মতিঝিল, ডেমরা, মিরপুর-১, ১০, শেওড়াপাড়া, বাড্ডা, খিলগাঁও, যাত্রাবাড়ী, সায়েদাবাদ, শ্যামপুর, কদমতলী, শ্যামলী, নিউমার্কেট, নীলক্ষেত, কারওয়ান বাজার, মহাখালী, তেজগাঁও, বিশ্বরোড, বিমানবন্দর এলাকাসহ পাড়া-মহল্লায় আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের লাঠি-পতাকা হাতে মিছিল করতে দেখা যায়। তবে গাবতলী, কল্যাণপুর, উত্তরা, সায়েদাবাদ, বাবুবাজার, বিমানবন্দর এলাকায় দেহ তল্লাশির নামে সাধারণ মানুষ ও পথচারীদের শাসক দলের নেতারা চরম হয়রানি করেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সকাল থেকেই ২৩ বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে দলীয় কার্যালয়ের সামনে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে সমবেত হন বিভিন্ন ওয়ার্ড, থানা, ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। এ সময় বিক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগ, তাঁতী লীগ, জাতীয় শ্রমিক লীগ, ছাত্রলীগ ও সম্মিলিত আওয়ামী সমর্থক জোটের নেতা-কর্মীরা। তাদের হাতেও ছিল জাতীয় ও দলীয় পতাকা, লাঠি, হকিস্টিক।
বেলা পৌনে ১২টার দিকে সুপ্রিম কর্োট এলাকায় বিএনপি সমর্থক আইনজীবীরা কিছুক্ষণ অবস্থান করলেও পরে আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ধাওয়া খেয়ে সরে যেতে বাধ্য হন। এ সময় যুব মহিলা লীগের সঙ্গে বিএনপি সমর্থক আইনজীবীদের ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার ঘটনা ঘটে। পরে যুব মহিলা লীগের সঙ্গে যুবলীগ কর্মীরা এসে যোগদান করলে সটকে পড়েন বিএনপি সমর্থকরা। জাতীয় প্রেসক্লাবে বিএনপি সমর্থক সাংবাদিকরা কর্মসূচি পালন করলে পাল্টা কর্মসূচি পালন করেন সরকার সমর্থকরা। প্রেসক্লাবের বাইরে পাল্টা অবস্থান কর্মসূচি পালন করে মুক্তিযুদ্ধ চেতনা পরিষদ।
তবে এখানে কোনো ধরনের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেনি।
রাজধানীর গাবতলী ও উত্তরা আবদুল্লাহপুরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ঢাকা মহানগর উত্তর যুবলীগ। ঢাকা মহানগর উত্তর ছাত্রলীগ অবস্থান নেয় রাজধানীর কারওয়ান বাজার ও মহাখালীতে। মহানগর দক্ষিণ যুবলীগ রাজধানীর যাত্রাবাড়ী ও বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে। মহানগর দক্ষিণ ছাত্রলীগ অবস্থান করে বঙ্গবন্ধু এভিনিউ, গুলিস্তান ও আশাপাশের এলাকায়।
জাতীয় শ্রমিক লীগ অবস্থান করে রাজধানীর কমলাপুর, বঙ্গবন্ধু এভিনিউ ও সদরঘাট এলাকায়। পয়েন্টগুলোয় আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীরা ছিলেন শক্ত অবস্থানে।
বিএনপি জোটের দেখা মেলেনি : গুলশানের বাসভবনে রবিবারের মতো অবরুদ্ধ ছিলেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। কিন্তু রাজধানীতে বিএনপি ও এর অঙ্গ-সংগঠনের কোনো পর্যায়ের নেতাকে রাজপথে দেখা যায়নি। জোটের শরিক দল জামায়াতসহ অন্য দলগুলোও মাঠে ছিল না।
গতকালও দু-একটি স্থানে বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া রাজধানীতে কোনো অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। নয়াপল্টনের আশপাশেও ১৮-দলীয় জোটের কোনো নেতা-কর্মীকে দেখা যায়নি। বিএনপির সিনিয়র নেতারা আত্দগোপনে থেকে বিভিন্ন মাধ্যমে ফোন করে রাজধানীর চালচিত্র জেনেছেন।
সম্প্রতি এক সংবাদ সম্মেলনে ১৮-দলীয় জোটসহ দেশবাসীকে মার্চ ফর ডেমোক্রেসি কর্মসূচিতে যোগ দিতে আহ্বান জানান বেগম জিয়া। এরপর প্রথমবারের মতো এক ভিডিওবার্তায় তিনি বিএনপিসহ জোটের সব নেতা-কর্মীকে নয়াপল্টনের কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার নির্দেশ দেন।
এরপর রবিবার নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও আশপাশ এলাকায় জোটের নেতা-কর্মীদের দেখা যায়নি। বেগম জিয়াও গুলশান কার্যালয়ে অবরুদ্ধ থেকে সাংবাদিকদের মাধ্যমে গতকালও গণতন্ত্রের অভিযাত্রা চলবে বলে ঘোষণা দেন। কিন্তু পুরো দিনই কার্যালয় ছিল তালাবদ্ধ। অবশ্য ভোর থেকেই কার্যালয়ের আশপাশে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিপুলসংখ্যক সদস্যকে শক্ত অবস্থানে দেখা যায়। কার্যালয়ের সামনে একটি জলকামান, একটি প্রিজনভ্যান, একটি রায়টকারসহ বেশ কয়েকটি সাদা মাইক্রোবাস রাখা ছিল।
এ ছাড়া বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশানের বাসা ও কার্যালয়ও ছিল র্যাব-পুলিশের দখলে। অবরুদ্ধ থাকা বেগম জিয়ার বাসার আশপাশেও কোনো নেতা-কর্মীর দেখা মেলেনি।
বিএনপির এক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, 'চেয়ারপারসন নয়াপল্টনে এলেই আমরা সেখানে যাব। অন্যথায় আমরা গ্রেফতার ও নির্যাতনের ঝুঁকি নিতে রাজি নই। ' নয়াপল্টনের আশপাশ এলাকায় নিজের অবস্থানের কথা জানিয়ে তিনি বলেন, 'খালেদা জিয়ার নির্দেশনা সত্ত্বেও দলের সিনিয়র নেতারা মাঠে না নামলে আমরা কেন এ ঝুঁকি নিতে যাব।
'
রাজপথে না থাকার কারণ ব্যাখ্যা করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য লে. জেনারেল (অব.) মাহবুবুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, যেভাবে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পাশাপাশি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা সশস্ত্র অবস্থায় রাজধানীতে তাণ্ডব চালাচ্ছে তাতে বিএনপির নেতা-কর্মীদের রাজপথে না নামাটাই স্বাভাবিক। এ ছাড়া কয়েকটি স্থানে মিছিল বের করলে পুলিশ সরাসরি গুলি করছে। নেতা-কর্মীদের বাসায় বাসায় অভিযানের নামে ভাঙচুর চালিয়ে ঘরছাড়া করা হয়েছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।