আমি দুয়ার খুলে বের হয়ে জোছনা ধরতে যাই। আমার হাত ভরতি চাঁদের আলো ধরতে গেলে নাই!
প্রতি রাতে, এই রাতজাগা শহরে,
তন্দ্রাগ্রস্থের মতো আমি হেঁটে যাই।
রাস্তার ধারের সোডিয়ামের হলদে আলোয়,
পিচঢালা পথে নিজের ছায়াও
অনেক বড় মনে হয়।
এই ভূতুড়ে কালো ছায়াকে সঙ্গে নিয়ে
আমি হেঁটে চলি।
না, না, এই শহরে আমি
জোছনা দেখতে বের হই না,
জোছনা! সে তো আমার বিলাসিতা নয়।
না, না, এই শহরে আমি
রাতের সৌন্দর্য দেখতেও বের হই না।
সৌন্দর্য দেখা! সে তো আমার কাজ নয়।
সারাদিন ব্যাস্ততার মুখোশ পড়ে থাকা এই শহর,
নীরব কালো রাতে,
তার মুখোশ খোলে।
আমি এই মুখোশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা
শহরটা দেখতে আসি।
কংক্রিটের বাক্সে বসে থাকা যান্ত্রিক মানুষেরা,
হ্যা, হ্যা, তোমাদেরকেই বলছি!
তোমাদের ভদ্র চোখের আড়ালে,
ধরা দেয় কি এই শহরের আসল রূপ?
হ্যা, এই মুখোশের আড়ালের রূপ
দেখি আমি।
সেখানে সবই কালো,
সেখানে পাই শুধু দুঃখ, বেদনা আর
কান্না, কান্না শুধুই কান্না।
আমি ফুটপাথে ঘুমিয়ে থাকা
মলিন শিশু দেখি আর
তাদের হারিয়ে যাওয়া শৈশব দেখি।
আমি ফুটপাথে ঘুমিয়ে থাকা
অভুক্ত কিশোর কিশোরী দেখি আর
তাদের হারিয়ে যাওয়া কৈশোর দেখি,
ক্ষুধায় মলিন মুখটা দেখি।
আমি হেটে বেড়ানো নিশিকন্যাদের দেখি আর
তাদের হারিয়ে যাওয়া স্বপ্ন দেখি,
তাদের ধূসর মলিন চোখটা দেখি আর সেই চোখে
স্বপ্ন ভাঙ্গার বেদনা দেখি।
আমি এদের করুন জীবন সংগ্রাম দেখি আর
আরোপিত হাসির আড়ালে লুকানো
বোবা কান্না দেখি।
আমি হেটে যাই,
এ যান্ত্রিক শহরের মুখোশের ভেতরের রূপ
দেখতে দেখতে আমি
হেটে যাই।
নিশিকন্যাদের মলিন চোখ আর
স্বপ্ন ভাঙ্গার বেদনা দেখতে দেখতে আমি
হেটে যাই।
মলিন শিশুদের হারিয়ে যাওয়া শৈশব
দেখতে দেখতে আমি,
হেটে যাই।
অভুক্ত কিশোর কিশোরীর হারিয়ে যাওয়া কৈশোর
দেখতে দেখতে আমি
হেটে যাই।
তারপর ভোর আসে,
সকালের পবিত্র আলো গাছের ফাক দিয়ে গলে
এই শহরটাকে ভিজিয়ে দেয় যেন !
রাতের সব দুঃখ, কষ্ট,
স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনা, কান্না সবকিছু
যেন চলে যায় মুখোশের আড়ালে আর
আমার এই শহরটা আবার হয়ে যায়,
নাগরিক ব্যাস্ততায় পূর্ণ।
আমিও ফিরে যাই নীড়ে,
বুকপকেটে নিয়ে
রাতের স্বপ্নভঙ্গের বেদনা, হাসির আড়ালে কান্না,
পঙ্কিলতা, অন্ধকার, হারানো শৈশব, হারানো কৈশোর, ক্ষুধা আর
কান্না, কান্না শুধু কান্না।
আমি আবার অপেক্ষা করি,
রাতের অপেক্ষা,
মুখোশ উন্মোচনের অপেক্ষা!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।