আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

হতাশার প্রলাপ -২ : আমরা এইরকম ই...



আমরা আসলে এইরকম ই...। আপনি যতই না না করেন। আমাদের ইতিহাস আসলে গোলামির ইতিহাস। নাহ এইটা স্যাটায়ার না... এই লেখা দিয়ে কারো মন জয় করাও সম্ভব না। নিজের সমালোচনা কে সহ্য করে বলেন? মানে বাংলাদেশে?

যেদিন মন ভাল হবে সেদিন আমাদের অজস্র ভালো দিক গুলো নিয়ে লিখব।

আজকে নিজের উপর অনেক ঘেন্না হচ্ছে। লিখে সেই ঘিনঘিনে ভাবটা প্রশমিত করতে চাই।

তো যেটা বলছিলাম, আমাদের ইতিহাস গোলামির ইতিহাস। পৃথিবীর সবচেয়ে নিকৃষ্ট জাত গুলোর একটা - পাকিস্তান, এরা আমাদের শাসন করেছে বহুকাল। পৃথিবীর আরেকটা নিকৃষ্ট জাত ভারত, আমাদের এখনও শোষণ করে যাচ্ছে।

ডিভাইড অ্যান্ড রুল এর প্রবক্তারা আমাদের ২০০ বছর শাসন করেছে। আরো যত বদ রক্ত, প্রায় সবাই আমাদের কখনো না কখনো শাসন করেছে এবং করছে।

এত না পেঁচিয়ে .. না না , আরও একটু পেঁচাই.. আমাদের মধ্যে একটু পরগাছা স্বভাব ও আছে। সবকিছুতে আমরা দুইটা পক্ষ দাড় করাই... ভাদা-ছাগু, ভারত-পাকিস্তান, ব্রাজিল আর্জেন্টিনা, আওয়ামী-লীগ-বিএনপি, গরু-ছাগল, হাস-মুরগী। ভাবছেন ঠিক ই তো ছিল, জানি ই তো... কিন্তু আওয়ামী-লীগ-বিএনপির শেষে গরু, ছাগল, হাস, মুরগী কেন?

আরে ভাই, দেশ রসাতলে গেল আর আপনি আছেন গরু ছাগল, হাস মুরগী নিয়ে! এখনও যদি না বুঝেন, আপনাকে ভাই আমি বুঝাতে পারব না!

আরেক দল আবার আছে বুদ্ধিজীবি।

এদের আলোচনা হল – “ক্রমানুসারে আওয়ামী-লীগ কে গরু বুঝাইসে আর বিএনপি ছাগল! তার মানে লেখক আওয়ামী-লীগ করে!” যাই হোক, আপনারা কষ্ট করে আর পইড়েন না ভাই, শেষে আমি মাথায় কিডনী হয়ে মারা যাবো! এবং তারপর আপনাদের মৃত্যুর জন্য আমি দায়ী থাকব!

পরগাছা বলার কারণ হল, প্রায় ই দেখি আমি নিজেই এই দুইটার যেকোনো একটার পক্ষ নিয়ে বসে আছি। মানে আমাদের সামনে দুইটা অপশন দিলে কিভাবে কিভাবে যেন আমরা একটার পক্ষ নিয়ে ফেলি। এবং তারপর ওইটার পক্ষে এমন ভাবে “সাফাই” গাইতে থাকি যে মনে হয় কোন বিতর্ক প্রতিযোগীতায় আমার ভাগ্যে ওই অপশন টা পড়ে গেছে। এখন যদি হেরে যাই, বা অন্য অপশন টাকে মেনে নেই, আমার মস্ত পরাজয়। মতামতের জন্য অন্যের উপর নির্ভরশীল হওয়ার এই অভ্যাস পরগাছাদের ই বেশী থাকে।



পক্ষ নেয়া দোষের কিছু না, কিন্তু অন্ধভাবে পক্ষ নেয়া টা মূর্খামি। আর দুইটা অপশন এর বাইরে কিছু চাইলে সেটা আপনাকেই আনতে হবে, মাথা খাটিয়ে।

আপনার মেসি কে ভালো লাগে বলে নেইমার বা রোনালদো কে আলফাজ এমিলি বানায়ে দেয়ার দরকার নাই। যাই হোক, আসলে আলফাজ এমিলি এরা মেসি,নেইমার বা রোনালদোর চেয়ে বাংলাদেশের জন্য অনেক প্রয়োজনীয় মানুষ!

তো যেটা বলতে চাচ্ছিলাম, আমি বুদ্ধিজীবী না, কিবোর্ড-জীবি। এইখানে আমি আসলে স্বজাতির (কিবোর্ড-জীবি) সমালোচনা করতে এসেছি।

এই যেমন আমার মত যারা, ফেইসবুকে “উচিৎ কথা” সংবলিত রাজনৈতিক পোস্ট সমগ্র দেখে তাদের গায়ের রোম দাঁড়িয়ে যায়, রক্ত গরম হয়ে উঠে। তারপর দাঁড়ানো রোম আর গরম রক্ত নিয়ে তারা শীতের রাতে লেপের নিচে ঢুকে যায়, অথবা চা খেতে খেতে কমেন্ট করে। একজন আরেকজনকে ভাদা, ছাগু বলে গালাগাল দেয়। বাকিরা? বাকিরা আমার মত ব্ল”গ দিয়ে ইন্টারনেট চালায়। “

ইদানিং কুৎসিত এই গাল দুইটা অবলীলায় একজন আরেকজনকে দিয়ে দিচ্ছে।

কথায় কথায় কাউকে “তুই ছাগু”, “তুই ভাদা” বলা লোকজন অধিকাংশ সময় ই এই দুই দলের কোনো একটার অন্তর্ভুক্ত হয়ে থাকে। এইটা আমার পর্যবেক্ষণ এবং মোটামুটি প্রমাণিত।

আমি আসলে “গৃহযুদ্ধের মুখে বাংলাদেশ” এই জাতীয় একটা খবর পড়ে আজকে “ব্লগ দিয়ে ইন্টারনেট চালানোর” সিদ্ধান্ত নিয়েছি। আমার মনে হয়না এই দেশে গৃহযুদ্ধ হবে। আমাদের দেশে যতদিন মানুষ কোনভাবে খেয়ে পড়ে বেঁচে থাকতে পারবে, ততদিন কোন গৃহযুদ্ধের সম্ভাবনা নেই।

আমরা অল্পে তুষ্ট। অপরাধ, দুর্নীতি, স্বৈরাচার, উগ্রবাদ, রাজাকারের প্রতাপ এইগুলা আমাদের তেমন একটা সমস্যা তৈরী করে না।

হরতাল অবরোধ এ আমরা দিন কাটিয়ে দেই।

পাশের দেশ নগ্নভাবে আগ্রাসন দেখালেও ভাবলেশহীন থাকি।

সীমান্তে মানুষ মারা গেলেও ভুলে যেতে পারি।



পেট্রোল বোমা দিয়ে কোন দল আমাদের পুড়িয়ে দিলেও আমরা লেট নাইট টক শো তে মানবাধিকারের বুলি আওড়াই।

প্রধানমন্ত্রীর ছেলেরা সুইস ব্যাংক এ টাকা পাচার করলেও আমাদের কিছু আসে যায় না।

গ্রেনেড হামলা হলে আমরা ভাবি, আমার উপর তো হয় নাই।

দুই একটা পদ্মা সেতু না হওয়ার বেদনা আমরা সহজেই ভুলে যাই।

রানা প্লাজায় ইটের নিচে চাপা পড়া মানুষকে আমরা জিজ্ঞেস করি “আপনার অনুভুতি কি?”

সাগর-রুনির হত্যাকারী কে খোজার জন্য আমাদের খুব একটা মাথা ব্যাথা নেই।



রামপালে বিদ্যুৎ কেন্দ্র হলেও আমাদের কথার পাত্তা দেয়ার ঠেকা পড়েনা সরকারের।

আমাদের মা বোনদের তেঁতুল বললেও তেমন গায়ে লাগে না।

সেখানে দুই দলের একটা ক্ষমতায় পড়ে থাকলে আমাদের কি এসে যায়? ওরা ওরাই তো!

যে পশু গুলোকে ফাঁসি দেয়া হল/দেয়া হবে, এদেরকে ক্রসফায়ার দিলেও “বাংলাদেশী” কেউ কাঁদত না। এদের বিচার কে এত দির্ঘায়ীত করে সেটা থেকে রাজনৈতিক ফায়দা নেয়া, বা নাটক করে সাধারণ মানুষকে বোকা বানানোর মতো ব্যাপার গুলো বাংলাদেশেই সম্ভব। আমি যখন শাহবাগে গিয়েছিলাম, তখন একবারের জন্যও মনে হয়নি এটা কোন দলের কর্মসূচি? সপ্তাহ খানেক পরে দেখলাম এটাকে কিভাবে দলীয় মঞ্চ বানানো হল।

খুব লজ্জা লেগেছিল। আমাদের সেন্টিমেন্ট নিয়ে খেলা এদের জন্য এত্ত সহজ? আমি জানি, শুধু আত্ম-অহংকার এর জন্য এখনও অনেকেই স্বীকার করতে চাইবেন না শাহবাগ একটা রাজনৈতিক খেলা ছিল। দেখুন, আপনি বা আমি খেলোয়ার ছিলাম না, আমরা দর্শক ছিলাম। নিজেকে ঘৃণা না করে, ওদেরকে ঘৃণা করুন। তাহলেই সব সহজ হয়ে যাবে।



এখন আমি কাউকে বিশ্বাস করিনা, আমি জানি কাকে ফাঁসি দিতে হবে আর কাকে দিতে হবে না, এটা আমাদের চেঁচামেচির উপর নির্ভরশীল না। এসব অনেক উঁচু স্তরের রাজনৈতিক খেলা, যেখানে আমরা আমন্ত্রিত নই।

যদি ধরে নেন ওইটা আমাদের প্রতিবাদী নতুন প্রজন্ম, তাহলে শুনুন, এখন তো আর রাজাকার ইস্যু নেই, দেশের এত এত ইস্যু নিয়ে তারা এখন নীরব কেন? কেন এই দুই দলকে এরা হুমকী দিচ্ছে না? আল্টিমেটাম দিচ্ছেনা এ দেশ নিয়ে নোংরা খেলা বন্ধ করার?

কেন বলছে না, আর একটা মানুষ যদি আগুনে পুড়ে মারা যায়, তাহলে পুলিশ লাগবে না, আমরাই দুই দলের কার্য্যালয় পুড়িয়ে দিব?


আমার উপর ঘেন্না ধরে যাচ্ছে? আসুন আপনার গায়ে আরও জ্বালা ধরিয়ে দেই...। আজকে যদি সুন্দরবন পুরোটা কোনো দেশের কাছে বিক্রি করে দেয়া হয়, আপনি কি একা একা, নিজের বিবেক তাড়িত হয়ে, টিভি প্রভাবিত না হয়ে শাহবাগে যাবেন আন্দোলন করতে? যাবেন না। কেউ একজন মঞ্চ তৈরী করবে, ফেইসবুকে সেই মঞ্চ “টপিক অফ দ্য টাউন” হবে, তারপর আপনিও যাবেন।

“কেউ একজন” টা অবশ্যই আমাদের আমজনতা না। তারা “এইসব খেলার মধ্যে নাই”। খেলা শুরু হলে তারা মাঠে যায়।

তাহলে দেখা যাচ্ছে, যতই গালমন্দ করি, কোন খেলা আসলে আমরা জনগণ তৈরী করতে পারি না। মঞ্চ বানাতে গেলেই “ওদের” দরকার হয়।

ওরা মানে রাজনীতিবিদেরা।

রাজনীতিবীদ গুলো একটু অন্য টাইপ এর, এরা আমাদের গোলামি করে না। এরা আমাদের শাসন, শোষণ সবই করে যাচ্ছে... একটু দাঁড়ান! কি দাঁড়াচ্ছে??

রাজনীতিবিদরা যে এসব পারে, কিভাবে পারে? .. ওরা কি তাহলে বাংলাদেশী না...?

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।