চাকরী নাহয় ককটেল
------------------------
আমার বন্ধু মহল হলো বেকার সমাজ। সুদীপ ঈশান রিমন জিনি তান্না। এতোদিন জানতাম লিংক এবং টাকা থাকলে বাঘের দুধ ও পাওয়া যায়। আমাদের তো ভাই বাঘের দুধের দরকার নাই। চাকরী পেলেই হলো, তাই না?
আমার যাহেতু মাষ্টার্স শেষ হয় নাই তাই আমার কথা বাদ।
অন্যদের কথাই বলি।
১)ঢাকার আকাশে বাতাসে টাকা উড়ে। অনেক টাকা। সেই টাকা ধরার উদ্দেশ্যে এবং থিসিস টাও সেই সাথে শেষ করার উদ্দেশ্যে ২০১৩ এর শুরুর দিকে আমার বন্ধু সুদীপ গিয়েছিলো ঢাকা। থিসিস শেষ হলো।
মাসে মাসে টাকা গেলো। আক্ষরিক অর্থেই জুতা ক্ষয় হলো। কিন্তু চাকরী নামের সোনার হরিণ আর ধরা পড়লো না। একদিন আমি তাকে বললাম, দোস্ত আমরা অনার্স মাষ্টার্স মিলিয়ে ৭ বছর পড়ালিখা করার পর, মিনিমাম বছর প্রতি ১ লাখ টাকা করে খরচ করার পর ৭০০০ টাকা দামের চাকরী ও বুঝি কেউ আমাদের দিচ্ছে না? সে এখন সারাদিন হাতিরঝিলে বসে থাকে।
টাকা আর লবিং হয়তো সুদীপ ম্যানেজ করতে পারবে মাগার ভাগ্য টা?।
হায়রে আমার বন্ধুটা।
২) রিমন। সে যখন স্কুলে পড়তো তখন নাকি কথিত ছিলো রিমন যে ক্লাসে পড়ে ওই ক্লাসে ফার্স্ট হওয়ার জন্যে পড়ে লাভ নাই। ওটা রিমনের ই স্থান। অনেক চড়াই উতরাই পেরিয়ে ভার্সিটির পড়া সে শেষ করেছে।
কোন প্রকার গ্রুপিং, বা রাজনীতি বা অন্য কোন কিছুর সাথে জড়িত না থেকেও শুধুমাত্র বন্ধুত্বের জন্য আমার বা সুদীপের সাথে ঘুরতো এবং লাস্ট বেঞ্ছ আমাদের সাথে বসত বলে স্যার দের রক্তচক্ষুর স্বীকার সে ও। যার কারনে তার ও রেজাল্ট নেমে গেলো। যাই হোক, তার মনে হয়তো ধারনা ছিলো মাস্টার্সে ভালো রেহাল্ট করে ভাগ্যে কিছুটা পরিবর্তন আনবে। মাস্টার্সে সে ভালো রেজাল্ট ও করলো বটে। কিন্ত কি লাভ হলো? যেখানেই খবর পাচ্ছে, পারলে এপ্লাই করছে, চাকরী হওয়াতো দূরে থাক, ডাক ই পাচ্ছে না।
একদিন তাকে জিজ্ঞেস করলাম, দোস্ত আমাদের শেষ ঠিকানা কি? সে বললো, আমাদের শেষ ঠিকানা হলো একদিন থেমে যাবে জীবন টা। আমি বললাম, থেমে যাবে মানে কি? চাকরী পেয়ে থামবে নাকি মৃত্যু? সে বললো, ওসব কিছুই না, এম্নিতেই থেমে যাবে। আমি আর রিমন রুমমেট। প্রায় ই আমরা ঘুমাতে ঘুমাতে ৩/৪ টা বেজে যায়। কিন্তু শোয়ার পরেও দুজনে চুপচাপ দেওয়ালের দিকে যে তাকিয়ে থাকি তা বোধহয় দুজনেই জানি।
ওর টাকাও নেই লবিং ও নেই ভাগ্য ও নেই।
৩)জিনি ওরফে শাওন বড়ুয়া। আমার দেখা অসম্ভব মেধাবী , অত্যন্ত বিশ্বস্ত এবং অনেক শান্ত একটা ছেলে। সে ও কোন কিছুর সাথে জড়িত না থেকেও শুধু মাত্র আমাদের সাথে হাটাচলা করার কারনে স্যারদের কাছে খারাপ এবং যথারীতি রেজাল্ট ও ফল করলো। কখনো কারো কাছে কোন আবদার করার সভাব নেই তার।
তার পক্ষে ঢাকায় টাকা ধরার উদ্দেশ্যে যেয়ে থাকাও সম্ভব না। যেই সার্কুলারেই এপ্লাই করে কোন লাভ ও হয় না। চিটাং আসলে আমি আর সে প্রায় ই আগ্রাবাদ মোড়ে যেয়ে চুপচাপ বসে থাকি। হয়তো কিছুক্ষন কথা হয়, তারপর কথাও ফুরিয়ে যায়। একটার পর একটা সিগারেট জ্বলে।
টাকা না থাকলে তাও জ্বলে না। মাইলের পর মাইল হেটে হেটে যাই দুজন। আর নাহয় নিষ্প্রান চোখে সামনের দিকে তাকিয়েই থাকা হয়।
তার ও টাকা নেই ভাগ্য নেই লবিং ও নেই।
৪) তান্না।
সেও সুদীপের মত টাকা ধরার উদ্দেশ্যে ঢাকা গিয়েছিলো। কিন্তু দেশের চলমান অবস্থার কারনে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। সে এবং তার ক্লাসের অন্য ছাত্র রা একইসাথে ভাইভা দেয়, অন্যদের হয় তার হয় না। এইবার ক্যাম্পাস থেকে আসার আগের সপ্তাহে সে গিয়েছিলো হল এ। বললাম কি খবর? সে বললো, দোস্ত, শুধু আমার বাপ টা বিদেশ এ থাকে বলে, নাহয় আমারে মনে হয় এখন রাস্তায় নামতে হইতো।
তান্না কে দেখলে বুঝার উপায় নাই তার মনের ভিতর কি চলতেছে। কিন্তু চোখ নামক জিনিষ টা তো সানগ্লাস ছাড়া লুকিয়ে রাখার উপায় নাই। আর মানুষের অন্তরের আয়না হলো তার চোখ।
তার ও লবিং ভাগ্য টাকা একটাও যোগাড় করা সম্ভব হবে না চাকরীর জন্য। কেউ কি এম্নিতে দিবেন?
৫) বন্ধু ঈশান।
ভার্সিটিতে আমার প্রথম কয়েকজন বন্ধুর মাঝে সেও একজন। অসাধারন তার গানের গলা। তার আদাত গানের টান টা শুনে তার ভক্ত হয় নাই এমন মানুষ কম ই আছে। সে অনেক বুদ্ধিমান। আমাদের মত ভ্যাবলা হয়ে বসে না থেকে সে অনেক আগ থেকেই খুচরা পাচরা চাকরী গুলাতেও এপ্লাই শুরু করছে।
আশ্চর্যের ব্যাপার হলেও , সে হয়তো ডাক পায় মাগার সিলেক্টেড হয় না। এপ্লাইড কেমিষ্ট্রি থেকে অনার্স মাষ্টার্স পাশ করে যদি এসব খুচরা চাকরীও না পাওয়া যায় তাহলে আর পড়ার ই বা কি দরকার ছিলো? আর ভালো কোম্পানী থেকে যখন ডাক পায় তখন তার সাথের বন্ধুটির ও হয়তো চাকরী হয় কিন্তু তার হয় না। এই দুই দিন আগেও এমন ঘটলো। সোনালি ব্যাংকে যাও ঈশানের একটা সম্ভাবনা ছিলো কিন্তু সে যেদিন থেকে সোনালি ব্যাংকে ভাইভা দিয়ে আসলো আর আমরাও তার সুখবর শুনার জন্য অপেক্ষা শুরু করলাম, সেদিন থেকেই মনে হয় সোনালি ব্যাংকের এম ডি মারা গেছে। কোন খবর ই নাই।
আমাদের বন্ধুদের মাঝে যদি কারো স্বীকৃত লবিং থাকে তাহলে ঈশানের ই আছে। হয়তো টাকাও ম্যানেজ করতে পারবে। কিন্তু ভাগ্যটাও কি ম্যানেজ করা সম্ভব?
আর আমি? যদিও আমার শুধু অনার্স এবং ২.৬৬ নিয়ে চাকরী পাওয়ার যোগ্যতা এখনো হয় নাই তারপরেও চোখে ঝাপসা দেখি, যখন দেখি আমি নিজে বাসা থেকে আগ্রাবাদ বা আন্দরকিল্লা পুরা পথ হেটে হেটে যাওয়া আসা করার পরেও আমার বাপ নিজেই হেটে ঝাউতলা বা দেওয়ানহাট যাচ্ছে ৬৫ বৎসর বয়সে। হা হা হা হা হা। এই দৃশ্য ও দেখতে হয়।
হা হা হা হা।
তাহলে দেখা যাচ্ছে আমাদের কারো ভাগ্য নাই, কারো টাকা নাই , কারো লবিং নাই আর কারো কোনটাই নাই।
প্রায় ই পেপার পত্রিকায় পড়ি রাস্তায় ককটেল কুড়িয়ে পেয়ে বিষ্ফোরণে শিশুর মৃত্যু।
আজ আমার এই পাঁচ বন্ধুকেই সকালে ফোন বা টেক্সট দিয়ে বললাম, এখন থেকে রাস্তায় হাটার সময় ককটেল পাও কিনা দেখো। তখন তাদের কেউ কেউ বললো , বন্ধু, চাকরী তো পাই ই না, ককটেল ও পাই না যে হাতে নিয়ে খেলতে খেলতে ধুম করে ফুটবে আর আমরাও ফুটবো।
এমন ই কপাল।
তাই প্রধানমন্ত্রী এবং বিরোধিদলীয় নেত্রীর কাছে আমাদের আকুল আবেদন, একটা ককটেল হবে প্লীজ? একটু হাতে নিয়ে খেলবো। আশা করি ২ মিনিটেই কাজ হবে। বেশী লাগবেনা। ৫জনের জন্য মনে হয় একটা তেই যথেষ্ট।
দিবেন প্লীজ?
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।