ব্লগার অপূর্ন -র পোস্টে করা কমেন্টটা কিছুটা এডিট করে পোস্ট আকারে রাখার প্রয়োজন মনে করলাম । যারা বেহায়া নারীদের পাল্লায় পড়ে ধর্ষন করতে 'বাধ্য' হইতেছেন , তাদের জন্য এই পোস্ট । আর যারা এইসব নির্লজ্জ বাস্টার্ডদের কথায় হতবাক হয়ে গেছেন , তারাও পড়তে পারেন ।
আমার মনে হইতে শুরু করছিল পুরুষ জাতি পুরাপুরি পার্ভার্টে পরিনত হইছে । তাদের মধ্যে আর আত্মসম্মানবোধ বলে কিছু অবশিষ্ট নাই থাকলে নিজেদের এইভাবে ধর্ষক বলে প্রচার করতে পারতনা ।
আমার ভাইদের ধন্যবাদ, প্রতিবাদ করে পুরুষজাতির সম্মান রক্ষা করার জন্য । অন্যকে সম্মান দিলেই কেবল নিজে সম্মান পাওয়া যায় ।
এবার কিছু কথা বলি , ওইসব পুরুষ নামধারী বাস্টার্ডদের দেয়া যুক্তির নমুনা ।
অনেক পুরুষই যে কথাটা বলছেন তা হল,
শালীন পোষাক পড়লে সমস্যা কি ? :
কয়েকমাস আগে খবরে পড়ছিলাম, একটা গরুকে রেপ করা হইছে । আমি বলি কি, গরুটাকে নগ্ন রাখার দরকার কি ছিল ? জানি গরুকে কেউ কাপড়-চোপড় পরায় না ।
কিন্তু পরাইলে সমস্যা কি ? আছে কোন সমস্যা ? পরাইলে হয়ত রেপ হইত না । হয়ত রেপিস্ট ভাবত এইটা কোন স্পেশাল গরু । হয়ত । ট্রাই করতে সমস্যা কি ?
মাদ্রাসার এক হুজুর বাচ্চা ছেলেদের রেপ করেন । বাচ্চা ছেলেগুলাকে বোরখা পরানো হয়না কেন ? জানি ছেলেদের বোরখা পরানো হয়না ।
কিন্তু হইলে সমস্যা কি ? ছেলেদের বোরখা পরা নিষিদ্ধ তো না ! সমস্যা আছে কোন ?
শালীন পোষাক পরলে কোন সমস্যা নাই । কিন্তু সমস্যাটা হল, ধর্ষকের জন্য সেই পোষাক কখনই যথেষ্ট শালীন হবেনা ।
সমস্যাটা হল, আপনারা আসল সমস্যাটাই ধরতে পারতেছেন না । ভিক্টিমের দোষ আছে কিনা এটা খোঁজার মানেই হইল অপরাধীর অপরাধ জাস্টিফাই করার সুযোগ । এইভাবে যদি হিসাব করেন তাহলে দুনিয়ার যাবতীয় অপরাধকে আপনারা জাস্টিফাই করতে পারবেন ।
কারন কোন মানুষই নিখুঁত না । ভিক্টিমের কিছু না কিছু দোষ পাওয়া যাবেই । ঠিক কতবড় অপরাধ করলে একটা মানুষকে ধর্ষন করা জায়েজ ?
সমস্যাটা হল, অপরাধীর কাজকর্মকে আপনি নিয়ন্ত্রন করার চেষ্টা করতেছেন ভিক্টিম কে উপদেশ বা শাস্তি দিয়ে । চুরি করছে কুদ্দুস, আপনি মাইর দিলেন ইউনুসরে, কারন ইউনুস চুরি করার মত জিনিষ পকেটে নিয়ে ঘুরতেছে । সে সাবধান হইলনা কেন ? মজার ব্যাপার ! ইউনুসের জিনিষও চুরি গেল, মাইরও সে খাইল ।
কুদ্দুসকে সবাই মুখে মুখে ভর্ৎসনা করে ছেড়ে দিল (না না কাজটা খুব খারাপ হইছে কুদ্দুসের শাস্তি হওয়া দরকার, কিন্তু আগে ইউনুসরে মারো ) । কুদ্দুস কেন আবার চুরি করবেনা ?
ধর্ষন একটা ক্রাইম । যেমন কাউকে খুন করা । আপনি একটা মানুষকে খুন করতে পারেন কোন যুক্তিতে ? কোন যুক্তি দিয়েই একটা ক্রাইমকে জাস্টিফাই করা যায়না । এমনকি একটা ক্রাইমের পরিবর্তেও আপনি আরেকটা ক্রাইম করতে পারেননা ।
আপনার প্রতি ক্রাইম হলে আপনি আদালত বা আইনের সাহায্য নেবেন । বদলা নিতে আরেকটা খুন করতে পারবেননা । এটাই সভ্য সমাজের নিয়ম । অশালীন পোষাক পড়া মেয়েরা কার প্রতি ক্রাইম করতেছে ?
আমি অশালীন পোশাক সমর্থন করিনা । কিন্তু এটাকে কুসংস্কৃতি বলা যায়, বড়জোর সামাজিক অনাচার ।
এটা কোন ক্রাইম নয় । কুসংস্কৃতিকে সচেতনতা আর নৈতিক শিক্ষা দিয়ে ডিফেন্ড করতে হবে । ধর্ষন বা ইভটিজিং করে নয় ।
যারা বলেন, একজায়গায় পর্দাশীল আর বেপর্দা ২ টা মেয়ে থাকলে কুনজর পড়বে বেপর্দা মেয়েটার উপর, তারা জবাব দিয়া যান, সাজিয়া আফরিন একজন হিজাবী মেয়ে ছিলেন । এত বেহায়া মেয়েলোক চারপাশে থাকতে, ধর্ষক তার দিকে দৃষ্টি দিল কেন ?
পর্দানশীন 'ইসলামী' দেশে ধর্ষন হয়না : সত্য ।
কারন ধর্ষনের সংজ্ঞা হইল, একজনের মত ছাড়াই তার সাথে জবরদস্তি যৌন সংসর্গ স্থাপন করা । আর যেই দেশে 'মেয়েদের মত' জাতীয় কোন বস্তুরই স্বীকৃতি নাই , সেই দেশে ধর্ষন হবে কিভাবে ? যেই দেশে কেউ ধর্ষনের অভিযোগ করতে গেলে তারে জেনা করার অভিযোগে দোররা মারা হয়, তাদের ধর্ষনের রিপোর্ট কম হবেনা তো কি সুইজারল্যান্ডে হবে ?
যাদের দেশে ধর্ষনের রেকর্ড এত কম, তাদের দেশে ভয়ে অন্যান্য দেশ নিজেদের নারীকর্মী পাঠানো বন্ধ করে দিছে ।
আচ্ছা , মুখতার মাই যেন কে ?
অশালীন মেয়েদের কারনে ভদ্র নিরীহ মেয়েরা ধর্ষিত হয় : আহহা ! ধর্ষকরা অত খারাপ না । কিন্তু সারাক্ষন অশ্লীল পোষাক পরা মেয়ে দেখতে বাধ্য হয় । আর তাদেরকে না পেয়ে নিরীহ মেয়েদের উপর হামলা চালায় ।
ভালো কথা, তো তারা পর্ণ দেখা বন্ধ করেনা কেন ? ধরে নেই, আপনি দেশের যাবতীয় মেয়েকে (২ বছরের বাচ্চাকেও) হিজাব পরায় দিলেন । তবুও ধর্ষকরা এই যুক্তিটি দিতে পারবে । কারন তখনও তারা পর্ণ দেখবে । পর্ণ তো আপনি খুঁজে বের করেই দেখেন, নাকি ? এটা কেউ আপনাকে দেখতে বাধ্য করেনা ।
।
আচ্ছা, এত্ত এত্ত বেহায়া বেশরম মেয়ে, যারা কিনা নিজেদের ইজ্জত লুটায় দেওয়ার জন্য অস্থির, তারা থাকতে ধর্ষকদের নিরীহ মেয়েদের উপর ঝুঁকি নিয়ে জবরদস্তি করার দরকারটা কি ? একান্তই যদি এমন বেহায়া মেয়েও না পায়, তাইলে যৌনকর্মীও আছে এই দেশে । ক্রাইম করার দরকার পরে কেন ?
খলের যুক্তির অভাব হয়না ।
একহাতে তালি বাজেনা : বিশেষ করে ইভটিজিং জাতীয় যৌন নিপীড়নের ক্ষেত্রে অপরাধীকে বাচাতে এ কুযিক্তিটি দেয়া হয় । একহাতে তালি বাজেনা সত্য । কিন্তু অপরাধ একতরফাভাবে করা যায় ।
আপনি যখন ছিনতাই করেন একহাতেই তালি বাজে । যখন ডাকাতি করেন, চুরি করেন, খুন করেন, এক হাতেই তালি বাজে । নির্যাতিতর দোষ আছে কিনা এটা খুঁজতে যাবার মানে কি ? মানে হল নির্যাতনকারীর অপরাধ কম করে দেখানো ।
কোন পতিতাকে যৌন নির্যাতন, কিংবা ধর্ষন করা কি জায়েজ ?
আমার ডান্ডা খারায় যায় আমি কি করমু : কয়েকজন ধার্মিক মনোভাবাপন্ন ব্লগার এটি বলেছেন । এটা একটা স্বাভাবিক প্রাকৃতিক প্রক্রিয়া ।
আপনি যদি মেয়েদের সালওয়ার কামিজে দেখে অভ্যস্ত হন তাহলে জিন্সে দেখে আপনার 'খারায়' যেতে পারে । যদি বোরখা দেখে অভ্যস্ত হন, সালওয়ার কামিজে দেখে আপনার 'খাড়ায়' যেতে পারে । আর যদি মেয়েদের না দেখতে অভ্যস্ত হন তবে আশেপাশে কোন মেয়ে আছে এই চিন্তাতেও আপনার 'খারায়' যেতে পারে । এমতাবস্থায় আপনার ধর্ম আপনাকে যে নির্দেশ দিয়েছে তাই করবেন । বাড়ি গিয়ে অজু করে নামাজ পড়বেন ।
কারন বেপর্দা বেহায়া মেয়েলোকের সংখ্যা পৃখিবীতে কমার কোন চান্স নাই । কিন্তু আপনাকে তো বেহেশতে যাইতেই হবে, তাই না ?
ছিলা কলা ও মাছি তত্ব : এইটাও অত্যন্ত ধার্মিক কিছু মানুষের বক্তব্য । কেউ গায়ে পেট্রল লাগায় ঘুরলে আগুনের কি দোষ ? অথবা , ছিলা কলায় মাছি তো বসবেই । আচ্ছা ধরেন, গে-রা বাচ্চা ছেলে দেখলে লোভ সামলাইতে পারতেছেনা । তাদের আগুন দাউদাউ করে জ্বলে উঠতেছে ।
কি করবেন ? ছেলেদের বোরখা পরাইতে শুরু করবেন ? ছেলেদেরও তো ফুটা আছে । তো ধর্ষক গে-দের হাত থেকে বাঁচার জন্য ঠিক কি ধরনের ব্যবস্থা নিবেন আপনারা ?
ভালো কথা , আমাদের দেশের ৯০ ভাগ পুরুষ মাঝরাস্তায় সবার সামনে উলঙ্গ হয়ে যায় । আপনার কি মনে হয় কেন তাদের ছিলা কলায় মাছি বসেনা ?
উত্তেজিত ছেলে বনাম ক্ষুধার্ত হায়না : এ যুক্তিটিও কেউ কেউ দিয়েছেন । তাদের বক্তব্য, ছেলেদের ব্যাপক উত্তেজনা দিয়ে তৈরী করা হইছে । তারা ক্ষুধার্ত হায়না ।
মেয়েদের চাইতে তাদের উত্তেজনা অনেক বেশী । কাজেই তারা নিজেদের সামলাইতে পারেনা । আর যাদের এমন হয়না তারা নাকি পুরুষই না ।
মজার ব্যাপার হল, মধ্যপ্রাচ্যে এবং আফ্রিকার কয়েকটি দেশে মেয়েদের খৎনা করার কারন হিসেবে ঠিক এর বিপরীত যুক্তি দেয়া হয় । মেয়েদের যৌন উত্তেজনা বেশী বলে তা দমিয়ে রাখতে যৌনাঙ্গের মূল অংশটাই কেটে ফেলা ।
তো হতেই পারে আমাদের দেশে হয়তো উল্টাটাই সত্যি । সেক্ষেত্রে একই যুক্তি অনুসারে তাদের উচিত হবে নিজেদের যৌনাঙ্গ কেটে ফেলা । আমরা মেয়েরা নাহয় উত্তেজনাহীন ভদ্র সভ্য পুরুষ দিয়াই কাজ চালায় নিব ।
সমস্যাটা আপনার হইলে ব্যবস্থাও তে আপনাকেই নিতে হবে, তাইনা ? অন্যকে গাড়ী চড়তে দেখে আপনের কষ্ট হইলে আপনে তার গাড়ী চুরি করতে পারেননা , তাকে গাড়ী চড়তে বাধা দিতেও পারেননা । নিজে গাড়ি কিনেন ।
অথবা আপনি নিজেই বাইরে বের হওয়া বন্ধ করেন ।
যেসব পুরুষ মেয়ে দেখলে ধর্ষনের ইচ্ছা (অথবা ইভ টিজিং এর ইচ্ছা) সামলাতে পারেননা , তারা অন্তপুরবাসী হন । কারন বেহায়া মেয়েলোক দুনিয়াতে কমবেনা....ইশশ...কিন্তু আপনাকে তো পরকাল নষ্ট করলে চলবেনা...তাই না ?
নিজের পরকাল বাঁচাতে আকুল ধর্ষকরা দুই চোখ ঢাকা বোরখাও পরতে পারেন ।
নারীরা অশালীন পোশাক পরবে ক্যান: কিছু পুরুষ কোনোভাবেই নারীকে খারাপ পোষাকে দেখতে চাননা । আপনার মনে হতেই পারে, এটা তো খারাপ কথা নয় ।
তাদের পোস্ট দেখে যে কারো মনে হওয়াটা স্বাভাবিক, আমাদের দেশীয় পুরুষরা অত্যন্ত শালীনতাপ্রিয় । এটি ভালো । আমিও সমর্থন করি । কিন্তু কিছুতেই ভেবে পাইনা, তাইলে তারা খুঁজে খুঁজে পর্ণ দেখে কেন ? রাস্তাঘাটে বেহায়া মেয়েলোক এসে পড়লে না হয় আপনি দেখতে বাধ্য হন, ফলে আপনার ইহকাল পরকাল হুমকীর মুখে পড়ে । কিন্তু নেটে তো একটা ফিল্টার লাগানোই যথেষ্ট ।
তা দূরে থাক, আপনি আরো সার্চ করে করে খুঁজে বের করেন । বাংলাদেশ থেকে পর্ণ খোঁজার হার কেমন, তা ওয়েবে সার্চ করে দেখতে পারেন । তাও বাদ দেই, এই সামু ব্লগেই হট ভিডিও চেয়ে যারা ইমেইল এর সারি দিয়েছিলেন, তাদের অনেককেই দেখি শালীন পোশাকে মেয়ে দেখতে ভীষন আগ্রহী । হিপোক্রেটস !
যেই দেশের ৯০ভাগ পুরুষ রাজপথে উলঙ্গ হয়ে প্রশ্রাব করে , যেই দেশে ৯০ভাগ পুরুষ ইন্টারনেটে ঢোকে পর্ণ খুঁজতে, তাদের মুখে শালীনতার কথা মানায়না ।
আমাদের দেশের মেয়েরা এখনও অনেক ভদ্রভাবে চলাফেরা করে ।
প্রচুর মেয়েরা হিজাব , বোরখা পরছে । কিন্তু একতরফা মার খেতে খেতে তারা আর এত ভদ্র থাকবেনা । সেদিন আর দূরে নেই যখন মেয়েরা রাস্তায় ব্লেড হাতে চলাফেরা করবে । মরিয়া হয়ে হয়ত তারা একযোগে আক্রমন করতে শিখে নেবে । সেদিন আপনার সবেধন নীলমনি পুরুষাঙ্গটি বাঁচাতে পারবেন তো ? আপনাদের যে ওই একটিই সম্বল পৃথিবীতে ।
-----------------------------------------------------------------------
যারা বাংলা কথা বুঝেও না বুঝার ভান করে আলোচনাকে অন্যপথে নিতে চায়, তাদের জন্য একটি সংযুক্তি :
আমার পোস্টের উদ্দেশ্য: ভিক্টিমের প্রতি নেগেটিভ মানসিকতার বদল ।
কেন ? : কারন তাতে মানুষ অপরাধীর অপরাধ হালকাভাবে দেখতে শুরু করে । ভিক্টিমের প্রতি নয়, অপরাধীর প্রতি সহানুভূতি জন্মায় ।
ফলে ? : এই সহানুভূতির ফলে অপরাধীর কঠোর শাস্তির দাবী থেকে সরে আসে । উল্টো ভিক্টিমকে শাস্তি দিতে চায় ।
এবং ? : ভয়ে ভিক্টিম রিপোর্ট করতে চায়না । কথনো সে নিজেও অপরাধবোধে ভুগে এমনকি আত্মহত্যা করে ।
অতএব ? : অপরাধীকে আইনগতভাবে দিতে হবে কঠোর শাস্তি (অর্থাৎ পুরুষত্বহীন করা এবং মৃত্যুদন্ড ) । সামাজিকভাবে করতে হবে চরম ঘৃণা এবং বয়কট । তাতে করে পোটেনশিয়াল ধর্ষকামীরাও হবে সাবধান ।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।