আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

নাদান, না সমঝ লোকদের জন্য দলিল সহ উত্তর প্রয়োজন।



সাইয়্যিদুল আ’ইয়াদ, সাইয়্যিদে ঈদে আ’যম, সাইয়্যিদে ঈদে আকবর পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করার গুরুত্ব ও ফযীলত বুঝাতে গেলে একজন আমাকে কিছু কথা বলে। এই সকল কথার উত্তর জানাথাকার পরও উত্তর দিতে পারছি না সহি দলিল না জানার কারনে। দয়া করে আমাকে সহি দলিল সহ কথাগুলো খন্ডন করে কোন ভাই পোষ্ট করলে উত্তম হত। ধন্যবাদ।

সেই লোকের বক্তব্য……….
আপনাদের সাথে নতুন করে বিতর্ক করার ইচ্ছা ছিল না।

আপনাদের মন্তব্যে পরিপেক্ষিতে শেষ পর্যন্ত করতেই হলো। আপনাদের বক্তব্যঃ “আপনারা এখন পর্যন্ত কুরআন শরীফ, হাদীছ শরীফ, ইজমা শরীফ ও কিয়াস শরীফ হতে একটিও দলিল দিতে পারেনি যার দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, পবিত্র ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করা যাবেনা বা এটি বিদয়াত। ” …….. বিদআ’ত পন্থীদের এটাই একমাত্র অস্ত্র, যে তারা বলে এটা করে যাবে না, এটা কুরআন হাদীসের কোথায় আছে। এর উত্তর তখন তো এগুলি ছিল না, সুতরাং নিষেধ করার প্রশ্ন আসবে কেন? কিন্তু ঈদে মিলাদুন্নবী পালনকরার হুকুম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম করেছেন এমন কোন হাদীস তো আপনারা দেখাতে পারলেন না। এমনকি খুলাফায়ে রাশেদার আমলে এ ঈদে মিলাদুন্নবী ঘটা করে পালন করা হয়েছে কিংবা খুলাফায়ে রাশেদাগণ(রা) এমন কিছু করার তাগিদ দিয়েছেন।

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর স্পষ্ট কথা, যে ব্যক্তি আমাদের দীনে এরূপ বিষয় প্রবর্তন করে যা তাতে নেই তবে তা বাতিল। (সহীহ্‌ বুখারী ও সহীহ্‌ মুসলীম, হযরত আইশা(রা) থেকে বর্ণিত)। এখন আপনারা যে দলিল দিচ্ছেন সে প্রসঙ্গে আসি। ইসলামী শরীয়ার প্রধান উৎস আল কুরআনুল কারীম। আপনারা কুরআনের সূরা ইউনুসের ৫৮নং আয়াতের অপব্যাখ্যা করেছেন।

এই আয়াতে আল্লাহ্‌ সুবহানাহুতা’আলা বলেন, “বল, ইহা আল্লাহ্‌ অনুগ্রহে ও তাঁহার দয়ায়; সুতরাং ইহাতে উহারা আনন্দিত হউক। উহারা যা পুঞ্জীভূত করে তাহা অপেক্ষা ইহা শ্রেষ্ঠ”। (আল-কুরআনুল করীম। বাংলা তরজমা। ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ কর্তৃক প্রকাশিত)।

আর আপনারা লিখেছেন, অর্থ: “হে হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম! আপনি উম্মাহকে জানিয়ে দিন, আল্লাহ পাক ফযল-করম হিসেবে তাদেরকে যে দ্বীন ইসলাম দিয়েছেন এবং রহমত হিসেবে উনার হাবীব ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনাকে পাঠিয়েছেন সেজন্য তারা যেন খুশি প্রকাশ করে। এই খুশি প্রকাশ করাটা সেসবকিছু থেকে উত্তম যা তারা দুনিয়া ও আখিরাতের জন্য সঞ্চয় করে। ” এখন আমরা উক্ত আয়াতের প্রত্যেকটি শব্দের আলাদা আলাদা অর্থ দেখে নেই। “ক্বুল=আপনি বলুন বা বল, বিফাদ্বলি=অনুগ্রহে, আল্লাহি=আল্লাহ্‌র, ওয়া=ও, রাহ্‌মাতি=তাঁর রহমতে, ফাবিজালিকা=সুতরাং ইহাতে, ফালইয়াফরাহূ=উহারা আনন্দিত হউক, হুয়া=ইহা, খাইরু=উত্তম, মিম্মা=তাহা অপেক্ষা, ইয়াজমাঊ’ন=উহারা যা পুঞ্জীভূত করে। ” আপনাদের তরজমায় রহমত হিসাবে এই আয়াতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বুঝিয়েছেন এটা আপনারা ধরে নিলেন কোন হিসাবে? কোন কোন তাফসীরকারক এই আয়াতে ‘রহমত’ বলতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-কে বুঝেছেন? আর এই খুশির বহিপ্রকাশ হিসাবে ঈদে মিলাদুন্নবী পালন করার কথা কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাদেরকে বলেছেন অথবা খুলাফায়ে রাশেদার অন্তর্ভুক্ত সাহাবা আজমাঈনরা বলেছেন? এই আয়াত নাযিল হয়েছে কার কাছে? তিনি কি রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নন? তিনি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এই আয়াতের কি ব্যাখ্যা করেছেন? সাহাবা আজমাঈনরা এ আয়াত থেকে কি বুঝেছেন? নাকি এ আয়াতের ব্যাখ্যা আপনাদেরকে করার জন্য রেখে দিয়েছিলেন? এই আয়াতটি যে রুকুর অন্তর্ভুক্ত সে রুকুর প্রথম থেকে কেউ যদি লক্ষ্য করে দেখেন, তাহলে দেখতে পাওয়া যাবে এই ৫৮নং আয়াতটি পূর্ববর্তী আয়াতগুলির ধারাবাহিকতায় কথাগুলি আল্লাহ্‌তাআ’লা উল্লেখ করেছেন।

যারা কুরআনের অপব্যাখ্যার মাধ্যমে ফায়দা হাসিল করার ধান্দায় লিপ্ত তারা একটি আয়াতকে অপরাপর আয়াত থেকে বিছিন্নভাবে উপস্থাপান করে মানুষকে বিভ্রান্ত করে। সূরা ইউনুসের ৬নং রুকুর প্রথম আয়াতটি ৫৪নং আয়াত। এখানে সবগুলি আয়াত উল্লেখ না করেও শুধুমাত্র এর পূর্ববর্তী আয়াতটি অর্থাৎ ৫৭নং আয়াতটির সাথে মিলিয়ে দেখলেই বুঝা যায় এখানে ‘রহমত’ বলতে আল্লাহ্‌তাআ’লা কুরআনুল কারীমকেই বুঝিয়েছেন। আল্লাহ্‌তাআ’লা বলছেন, “হে মানুষ! তোমাদের প্রতি তোমাদের প্রতিপালকের নিকট হইতে আসিয়াছে উপদেশ ও তোমাদের অন্তরে যাহা আছে তাহার আরোগ্য এবং মু’মিনদের জন্য হিদায়ত ও রহমত। বল, ইহা আল্লাহ্‌ অনুগ্রহে ও তাঁহার দয়ায়; সুতরাং ইহাতে উহারা আনন্দিত হউক।

উহারা যা পুঞ্জীভূত করে তাহা অপেক্ষা ইহা শ্রেষ্ঠ”। ___ সূরা ইউনুস ১০:৫৭-৫৮। কুরআনুল কারীমকে আল্লাহ্‌তাআ’লা হিদায়ত এবং রহমত হিসাবেই কি প্রেরণ করেননি? আরো একটি আয়াত দেখুন, “আমি অবতীর্ণ করি কুরআন, যাহা মু’মিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত, কিন্তু উহা যালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে”। ___ সূরা বনী ইসরাঈল ১৭:৮২।
ক্রমশ আপনাদের বক্তব্যঃ “এ হুকুম বা নির্দেশের কারণে স্বয়ং আল্লাহ পাক উনার হাবীব হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার যামানাতেই হযরত ছাহাবায়ে কিরাম রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম উনারা ঈদে মীলাদুন নবী ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পালন করেন।



যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে-
عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه انه مر مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الانصارى وكان يعلم وقائع ولادته صلى الله عليه وسلم لا بنائه وعشيرته ويقول هذا اليوم هذا اليوم فقال عليه الصلوة والسلام ان الله فتح لك ابواب الرحمة والملائكة كلهم يستغفرون لك من فعل فعلك نجى نجتك.
অর্থ: হযরত আবূ দারদা রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু হতে বর্ণিত আছে যে, একদা তিনি হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার সাথে হযরত আমির আনছারী রদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু-উনার গৃহে উপস্থিত হয়ে দেখতে পেলেন যে, তিনি উনার সন্তান-সন্তানাদি এবং আত্মীয়-স্বজন, জ্ঞাতি-গোষ্ঠী, পাড়া-প্রতিবেশীদেরকে নিয়ে হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম উনার বিলাদত শরীফ উপলক্ষে খুশি প্রকাশ করে বিলাদত শরীফ-এর ঘটনাসমূহ শুনাচ্ছেন এবং বলছেন, এই দিবস অর্থাৎ এই দিবসে রসূলুল্লাহ ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যমীনে তাশরীফ এনেছেন। এমন সময় হাবীবুল্লাহ হুযূর পাক ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন। (তিনি যখন উপস্থিত হলেন সমবেত লোকজন দাঁড়িয়ে উনাকে সালাম পেশ করতঃ অভ্যর্থনা বা স্বাগত জানিয়ে আসনে বসালেন। ) তিনি লোকজনের মীলাদ শরীফ-এর অনুষ্ঠান এবং বিলাদত শরীফ-এর কারণে খুশি প্রকাশ করতে দেখে উনাদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহ তায়ালা তোমাদের জন্য রহমতের দরজা উমুক্ত করেছেন এবং সমস্ত ফেরেশতা তোমাদের জন্য মাগফিরাত তথা ক্ষমা প্রার্থনা করছেন এবং যে কেউ তোমাদের মত এরূপ কাজ করবে, তোমাদের মত উনারাও রহমত ও মাগফিরাত লাভ করবে এবং নাজাত লাভ করবে। সুবহানাল্লাহ! (কিতাবুত তানবীর ফী মাওলিদিল বাশীর ওয়ান নাযীর, সুবুলুল হুদা ফী মাওলিদে মুস্তফা ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম, হাক্বীক্বতে মুহম্মদী ও মীলাদে আহমদী পৃষ্ঠা- ৩৫৫)”…………………….. এখানে আপনারা উল্লেখ করেছেন ‘যেমন এ প্রসঙ্গে হাদীছ শরীফ-এ বর্ণিত রয়েছে’ অথচ আপনারা রেফারেন্স বা উদ্ধৃতি দিলেন অন্য কিতাবের।

আফসোস, হাদীসের নামে কি চরম মিথ্যাচারই না করলেন! যারা কুরআনের আয়াতের অর্থের বিকৃতি ঘটাতে পারে তাদের কাছে মিথ্যা হাদীস বর্ণনা করা তো নস্যি! আর এই ‘মীলাদুন্নবী’ শব্দটি কি কুরআন ও হাদীসে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম-এর সংগে সম্পর্কিত করে কোথাও উল্লেখ আছে? এ মিলাদুন্নবী যদি এতই ফায়দাজনক হবে তাহলে আল্লাহ্‌ কিংবা তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি আমাদেরকে জানাতে ভুলে তা গিয়েছিলেন(নাউজুবিল্লাহ্‌ মিন জালিক)? এখন মনে হয় আপনাদেরকে দায়িত্ব দিয়েছেন উম্মাকে মিলাদুন্নবী সম্পর্কে জানানোর জন্য, কি বলেন? মিথ্যুকরা হচ্ছে যালিম, আর আল্লাহ্‌তাআ’লা কুরআনের বহু যায়গায় বলেছেন তিনি যালিমদেরকে হিদায়েত দেন না। উপরের মন্তব্যে সূরা বনী ইরাঈলের ৮২নং আয়াতেও আল্লাহ্‌তাআ’লা বলেন, “আমি অবতীর্ণ করি কুরআন, যাহা মু’মিনদের জন্য আরোগ্য ও রহমত, কিন্তু উহা যালিমদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে”। যে কাজ ফরয, ওয়াজিব এমনকি সুন্নাতে মুয়াক্কাদাও নয়, যা ছেড়ে দিলে কোন লোকসান নেই সেটা নিয়ে বাড়াবাড়ির কোন অন্ত নেই। বিদআ’তিরা তাহলে এভাবেই কি পথভ্রষ্ট হয়? সুতরাং যালিমরা শির্‌ক ও বিদআ’তের মাধ্যমে নিজেদের ক্ষতিই বৃদ্ধি করে নিবে, তাতে কার কি করার আছে?

http://shobujbanglablog.net/61242.html

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.