কারেন্ট না থাকিলে মোমবাত্তি'ই ভরসা !! খামখেয়ালি করেই আমার নিক 'মোমবাতি' দিয়েছিলাম। তখন এই নাম দেওয়ার বিশেষ কোন কারন ছিল না। উপস্থিত মুহূর্তে এই নাম মাথায় আসছিল তাই আমিও দিয়ে দিয়েছিলাম। কিন্তু এখন দেখলাম এই নিক দেওয়ায় ভালই হয়েছে! আজ প্রথম আলোতে জাফর ইকবাল স্যারও দেখলাম জন্মদিনের কেকে মোমবাতি নিয়ে লিখেছেন। স্যার এর লেখাটা আমাকে একটু ভাবিয়ে তুলল।
মোমবাতির কদর আগে বুঝিনি। স্যার এর লেখা পড়ে আজ মোমবাতির ফ্যান হয়ে গেলাম! আসলেই মোমবাতি অনেক কাজের। জ্বলে জ্বলে নিঃশেষ হয়ে যায় কিন্তু অন্যকে আলো দিয়ে যায়, এক মুহূর্তের জন্য নেভেনা যদিনা কেউ না নেভায়। নিজের দায়িত্ব পালনে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মোমবাতি। আমাদের সমাজের আলোকিত মানুষগুলোর প্রতীক এই মোমবাতি।
স্যার এর ৬০ তম জন্মদিনে ৬০টা মোমবাতি সম্বলিত কেক নিয়ে হাজির হয়েছিল ছাত্র-ছাত্রী। জ্বল জ্বল করে প্রতিটি মোমবাতি যেন জানান দিচ্ছিল কত আলোকময় ছিল স্যারের জীবনের প্রতিটি বছর। সবকটা বাতি এক হয়ে রাতের বেলায়ও দিনের মত আলো দিচ্ছিল। স্যার, আপনাকে স্যালুট। ।
মোমবাতি জ্বলে জ্বলে আলো দিয়ে নিজের দায়িত্ব পালন করে যায় অবিরত। ক্ষুদ্র জড় পদার্থ কত সুন্দর তার কাজগুলো করে যাচ্ছে। আর আমরা!! বিবেক-বুদ্ধি সম্পন্ন আশরাফুল মাখলুকাত হয়েও নিজ দায়িত্ব পালন করা তো দূরের কথা, চাপাতি দিয়ে রাজপথে মানুষ কুপানো শুরু করে দেই! দিনে দুপুরে আগুনে লাগিয়ে নিরীহ মানুষ মেরে ফেলি!! জলজ্যান্ত মানুষ গুম করে মাসের পর মাস লুকিয়ে রাখি !!! প্রস্রাব, আবর্জনা, ড্রেইন, কারখানার বর্জ্য দিয়ে দূষিত করে ফেলি বুড়িগঙ্গা, সুরমার পানি!!! মরা মুরগি জবাই করে চিকেন গ্রিল করে খাওয়াই !! মাদকাসক্ত মানুষের রক্ত ঢুকিয়ে দেই রোগীর দেহে!! পড়ালেখা করলে মেয়েদের আঙ্গুল কেটে দেই!! কুত্তার দলের মত গনধর্ষণ করে অকালে ঝড়িয়ে দেই স্কুল পড়ুয়া ছোট্ট মেয়ের জীবন!!! শিক্ষক হয়ে ছাত্রীকে বাসায় নিয়ে যৌনতা শিক্ষা দেই !!!! হায় মানব জাতি, এ কেমন মানবতা তোমাদের? একে যদি মানবতা বলি, পশুবৃত্তিকে কি বলব? কবে পরিবর্তন হবে আমাদের চিন্তা-ভাবনা, ধ্যানধারণা? বাঙালি জাতি নাকি বীরের জাতি। নিরপরাধ মানুষ খুন করাটাই কি আমাদের বীরত্ব? আমাদের এই কাণ্ড-কীর্তি দেখে হয়ত ধিক্কার দিচ্ছে ৭১এর শহীদদের আত্মাগুলো। তাঁদের রক্তে অর্জিত এই দেশ আমরা কুলাঙ্গাররা কুকীর্তি করে ধ্বংস করে দিচ্ছি।
এই মুহূর্তে আমাদের প্রয়োজন মোমবাতির মত জ্বলে ওঠার। এখনও দেশে ভাল মানুষ আছেন, দেশের এই করুন অবস্থা দেখে এখনও অনেকেই আফসোস করেন। সবার প্রয়োজন একে একে জ্বলে ওঠার। একজনের একার পক্ষে তেমন কিছুই করা সম্ভব নয়। সময় এসেছে দিন বদলের।
সবাই একসাথে জ্বলে ওঠলেই পরস্থিতির পরিবর্তন সম্ভব। আর কতদিন চুপ করে বসে রইবেন? কতদিন এসব নিপীড়ন সইতে থাকবেন? নিজের জন্য না হোক, নিজের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য কিছু একটা করুন যেমনভাবে একাত্তরে যুদ্ধারা আমাদের জন্য করে গেছেন। আমি যুদ্ধ করতে বলছিনা, যার যার অবস্থানে থেকে যতটুকু সম্ভব, ততটুকুই যথেষ্ট। নিজেদের এলাকার সমস্যাগুলো এলাকাবাসিরা এক হয়ে সমাধান করা যেতে পারে। জানেন, আমারও জ্বলে ওঠতে ইচ্ছা করে, মোমবাতি হয়ে ওঠতে ইচ্ছা করে।
কিন্তু আমাদের পায়ে শিকল বাঁধা, চাইলেও তেমন কিছু করতে পারিনা। ব্লগে লেখা, টক শো তে ফোন করে অভিযোগ জানানো কিমবা বড়জোর পত্রিকার চিঠিপত্র বিভাগে লিখে দেওয়া ছাড়া তেমন কিছুই করার থাকেনা। কিন্তু সবাই যদি এক হই, অনেক কিছুই সম্ভব। আমরা ছাত্ররা চাইলে অনেক কিছুই করতে পারি। দরকার শুধু একটু সচেতনতার, একটু জ্বলে ওঠার।
একজন একজন করে জ্বলে ওঠে আলোকিত করে দিতে পারি পুরো দেশ। আমি আমার নিক নিয়ে এখন গর্বিত! মোমবাতি, তোমায় সালাম...... ।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।