আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি মোমবাতির কাহিনী

Doing job.

মোমের আলোয় কাজ করছিলেন খলিফা উমর রাযিআল্লাহু আনহু । এমন সময় সেখানে আসলেন তার দুই আত্মীয় । খলিফা তাড়াতাড়ি ফুঁ দিয়ে মোমবাতিটি নিভিয়ে দিলেন । অন্য আরেকটি মোমবাতি ধরিয়ে অতিথিদের বসতে দিয়ে তাদের খোজখবর নিলেন । কৌতুহল চাপতে না পেরে একজন জানতে চাইলেন , আমাদের দেখে কেন আপনি আগের মোমবাতি নেভালেন আর নতুন একটি জ্বালালেন ? খলিফা জবাব দিলেন : আগের মোমবাতি ছিল রাষ্ট্রের সম্পত্তি থেকে কেনা ।

তোমরা যেহেতু আমার আত্মীয় , তাই তোমাদের সাথে আমার ব্যক্তিগত অনেক আলাপ হবে । আমার নিজের কাজে জনগণের আমানত থেকে আমি কিছু খরচ করতে পারি না । তাহলে আল্লাহর দরবারে আমাকে জবাবদিহি করতে হবে । তাই নিজের টাকায় কেনা মোমবাতিটি তোমাদের দেখে জ্বালালাম । এই জবাবে আত্মীয়রা হতভম্ব হলেন ।

তারা এসেছিলেন আত্মীয়তার খাতিরে বিশেষ কোন সুবিধা পাওয়া যায় কি না , সেই অনুরোধ করতে । কিন্ত্ত সামান্য মোমবাতি নিয়ে খলিফার এত বিবেচনা ও সতর্কতা দেখে নিজেদের প্রস্তাব জানাতে তারা আর সাহসই করলেন না । আরেকবার খলিফার কাছে এক লোক অবৈধ সুবিধা চায় । খলিফার সামনে রাখা কিছু কাঠে তখন আগুন জ্বলছিল। খলিফা বললেন , ঠিক আছে ।

তুমি এই আগুনের ভিতর তোমার হাত কিছু সময়ের জন্য রাখো ; তারপর তোমার অনুরোধ আমি বিবেচনা করবো । লোকটি ভয় পেয়ে বললো , হে খলিফা ; এই আগুনে হাত ঢুকালে আমার হাত তো জ্বলে যাবে । খলিফা বললেন , তুমি দুনিয়ার এই সামান্য আগুনকে ভয় পাচ্ছ অথচ আমাকে তুমি দোযখের অনন্ত আগুনের ভিতরে নিয়ে যেতে চাও ? তদবিরকারী নিজের ভুল বুঝতে পেরে ফিরে যায়। হজরত মুহাম্মদ সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের চার সুযোগ্য খলিফা রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে কখনোই বিলাসিতায় গা ভাসান নি । একদম গরীব , সাধারণ কোন প্রজাও যদি তাদের কোন ভুল ধরিয়ে দিতেন , তবে তারা তা সাথে সাথেই সংশোধন করতেন ।

এদেরই একজন খলিফা ওমর রাযিআল্লাহু আনহুর দায়িত্ব ও কর্তব্যের কিছু নমুনা নীচে দেয়া হলো যা আজ আমাদের কাছে অবিশ্বাস্য মনে হবে । কাযীর দরবারে খলিফা: বিচারের কাজে একদিন খলিফাকে কাযীর কাছে যেতে হয়। খলিফাকে সম্মান দেখাতে কাযী দাড়িয়ে গেলে খলিফা তাতে বিরক্তি প্রকাশ করলেন । কাযীকে তিনি মনে করিয়ে দিলেন , বিচারপ্রার্থী দুই পক্ষকেই সমান মর্যাদা না দিলে ন্যায়বিচার সম্ভব নয়। সরকারী ভাতা : বাইতুল মাল থেকে খলিফা যে অর্থ পেতেন , তা ছিল খুবই সামান্য ।

একবার অসুস্থ হলে চিকিৎসক মধু খেতে বললেন কিন্ত্ত তা কেনার টাকা খলিফার ছিল না । তাই মসজিদে গিয়ে জনগণের অনুমতি চাইলেন বাইতূল মাল থেকে সামান্য মধু নেয়ার জন্য। তালি দেয়া কাপড় থাকতো খলিফার গায়ে : রোম ও পারস্য সম্রাটের দূতগণ এসে খলিফাকে খুঁজে পেত না । তিনি তালি দেয়া জামা পরে মসজিদের এক কোণে অবস্থান করতেন । দূতরা কল্পনাও করতে পারতো না বিশাল সাম্রাজ্যের যিনি খলিফা , তিনি এত সাধারণ জীবন যাপন করেন ।

সফরে খলিফা : অনেক সময় খলিফা একটি মাত্র উট , সামান্য রুটি ও শুকনো খেজুর নিয়ে সফর করতেন । তিনি যখন জেরুজালেমে যাত্রা করেন , তখন এই দীর্ঘ সফরে সাথী ছিল একজন মাত্র গোলাম । চাইলেই খলিফা সারা পথ উটের পিঠে চড়তে পারতেন ; কিন্ত্ত না ; তিনি নিজেই ঠিক করলেন একবার তিনি , পরেরবার গোলাম উটের পিঠে চড়বে । এভাবে পালা করে কখনো গোলাম , কখনো মনিব যিনি সমস্ত মুসলিম জাহানের খলিফা তিনি উটের লাগাম ধরে হাটতেন । জেরুজালেমের নাগরিকরা খলিফাকে অভ্যর্থনা জানাতে যখন এগিয়ে আসলো , তখন উটের পিঠে বসার পালা ছিল গোলামের ।

নগরবাসী চিনতে না পেরে গোলামকে অভ্যর্থনা করলো । এরপর মুসলিম সেনারা খলিফাকে চিনতে পেরে যখন তার দিকে এগিয়ে যায় , তখন উপস্থিত সবাই হতভম্ব হয়ে পড়ে । খলিফার সাম্যনীতি : মনিব ও গোলামের মধ্যে তিনি কোন পার্থক্য করতেন না । বাইতুল মাল থেকে ভাতা ঠিক করার সময় তিনি যোগ্যতার মাপকাঠি অনুযায়ী অনেক সময় গোলামকেও মনিবের সমান ভাতা দিতেন । তিনি বলতেন , যারা গোলামদের ঘৃণার নজরে দেখেন , তাদের পরিণতি সম্বন্ধে আল্লাহই ভাল জানেন ।

সরকারী কর্মচারী নিয়োগে সতর্কতা : যোগ্যতার ভিত্তিতে কর্মচারী বাছাই করে নিয়োগ পত্র দেয়া হত ও সেখানে সে কি কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত তার বর্ণনা ও সাক্ষী হিসাবে বিশিষ্ট নাগরিকদের স্বাক্ষর থাকতো । কাজের জায়গায় সেই সরকারী লোককে এলাকার মানুষদের কাছে তা পড়ে শোনাতে হতো । ফলে সরকারী পদে নিয়োজিত ব্যক্তিদের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সাধারণ মানুষরা অবহিত থাকতো ও কাজের গাফিলতি ধরতে পারতো । খলিফার নির্দেশ ছিল সরকারী কর্মচারীরা দামী কাপড় পড়বে না ও দরজায় পাহারাদার রাখবে না । কেননা তাহলে সাধারণ মানুষদের সাথে তাদের দূরত্ব সৃষ্টি হবে ।

কাজে যোগ দেয়ার পর কোন কর্মচারীর সম্পদ অস্বাভাবিক বেড়ে গিয়েছে - এই অভিযোগ পেলে তিনি তার কাছে কৈফিয়ত চাইতেন । এ ধরণের এক অভিযোগের সত্যতা প্রকাশ পেলে তিনি অভিযু্ক্ত কর্মচারীর অর্ধেক সম্পত্তি বাজেয়াপ্ত করে সরকারী কোষাগারে জমা দেন । সামান্য মোমবাতি অপচয় করতে খলিফার মনে আল্লাহর কাছে জবাবদিহিতার যে ভয় কাজ করছিল , আফসোস , আজ মুসলমানরা ইসলামের এসব মহান আদর্শ থেকে কতই না দূরে । এসব আদর্শ মেনে চলা তো দূরের কথা , শুনলেও রুপকথার গল্প বলেই মনে হয়।


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.