আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

শপথের পর ১০ চ্যালেঞ্জ

দায়িত্ব নিয়েই নতুন সরকারকে কমপক্ষে দশটি গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করতে হবে। দেশের অভ্যন্তরে ও বহির্বিশ্বে নিজেদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়ানোর জন্য এই চ্যালেঞ্জগুলো বাস্তবায়ন করতেই হবে। বাস্তবায়ন প্রক্রিয়ায় ত্রুটি-বিচ্যুতি হলেই গভীর সংকটে পড়তে হবে সরকারকে। আজ বিকালে শপথ নেওয়ার পর থেকেই কঠিন চ্যালেঞ্জের মধ্যেই অগ্রসর হতে হবে আওয়ামী লীগ সরকারকে।

সংশ্লিষ্ট বিশ্লেষকরা জানান, যে দশটি চ্যালেঞ্জ আওয়ামী লীগের সামনে তা হলো- প্রথমত. গত পাঁচ বছর দল ও সরকারে বিতর্কিত এবং অদক্ষদের বাদ দিয়ে মন্ত্রিসভা গঠন।

এক্ষেত্রে আবারও পুরোনোদের টেনে এনে বিতর্ক সৃষ্টি করলে জনমনে ক্ষোভ তৈরি হতে পারে। দ্বিতীয়ত. আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে সরকারকে শূন্য থেকে শুরু করতে হবে। সমর্থন আদায় করতে হবে গুরুত্বপূর্ণ সব দেশের। জাতিসংঘ, কমনওয়েলথসহ আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর সঙ্গেও সম্পর্ক দৃঢ় করতে হবে। তৃতীয়ত. ফিরিয়ে আনতে হবে আইনের শাসন।

উন্নত করতে হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা, নিরীহ মানুষের ওপর অত্যাচার, চাঁদাবাজি বন্ধ করতে হবে। চতুর্থত. বিএনপির সঙ্গে সম্পর্ক উন্নত করা এবং সংলাপ শুরু করা। হরতাল, অবরোধ নিয়ে সমঝোতা করা। নির্বাচনের পদ্ধতি বা সময়ক্ষণ নিয়েও একটি সমঝোতায় পেঁৗছতেই হবে।

পঞ্চমত. ধসে পড়া ব্যবসায় বাণিজ্য আবার চাঙ্গা করতে হবে। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে সুসম্পর্ক ধরে রাখতে হবে সরকারকে। ষষ্ঠত. উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের গতি ধরে রাখা। বিশেষ করে পদ্মা সেতুর কাজ শুরু করা, ঢাকা-চট্টগ্রাম ও ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক চার লেনের কাজ দ্রুত দৃশ্যমান করা। ঢাকাতে মেট্রোরেল, উড়ালসড়ক ও অন্য ফ্লাইওভারগুলোর কাজ শুরু করা।

সপ্তমত. সরকারের সাফল্যগুলো গণমাধ্যমে তুলে ধরা। এক্ষেত্রে গত পাঁচ বছর যাদের ওপর সরকার নির্ভরশীল ছিল তাদের ওপরই এবারও নির্ভরশীল থাকলে কোনো সাফল্য আসবে না। অষ্টমত. প্রতিশ্রুত যুদ্ধাপরাধের বিচার অব্যাহত রাখা। এই বিচার বাস্তবায়নের প্রক্রিয়ায় জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আগে থেকেই সব ব্যবস্থা নিশ্চিত করা। নবমত. প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে ঢেলে সাজাতে হবে।

অদক্ষ ও সুযোগ সন্ধানীদের বাদ দিতে হবে। দশম. কূটনৈতিক মিশন, ব্যাংক-বীমাসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে বিতর্কিত ও অদক্ষদের বাদ দিয়ে গ্রহণযোগ্যদের সামনে টেনে আনতে হবে। এক্ষেত্রে পাঁচ বছর সরকারের কোনো কাজে যারা লাগেননি বরং বিভিন্ন সেক্টরের সঙ্গে সরকারের দূরত্ব তৈরি করেছেন তাদের বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে।

সরকারের সামনের চ্যালেঞ্জ সম্পর্কে জানতে চাইলে খ্যাতনামা শিক্ষাবিদ ও বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান ড. এ কে আজাদ চৌধুরী বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেছেন, আপামর জনগণের কল্যাণে কাজ করাই হবে সরকারের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। সরকারের কাছে প্রথম প্রত্যাশা নির্বাচিত ক্লিন ইমেজের সংসদ সদস্যদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করা, যাদের থাকতে হবে আপসহীন দেশপ্রেম, আদর্শিক দৃঢ়তা ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার প্রতি দৃঢ়ভাবে আস্থা।

নতুন মন্ত্রিসভাকে এমন একটি গ্রাউন্ড তৈরি করতে হবে যার মাধ্যমে পরবর্তী নির্বাচনকালীন সরকার পদ্ধতি নিয়ে সব বিরোধ কাটানো সম্ভব হবে। তিনি বলেন, পুরো জাতির দাবি যুদ্ধাপরাধের বিচার প্রক্রিয়া দ্রততার সঙ্গে ও সব উন্নয়ন কর্মকাণ্ড সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করতে হবে। মানবিক মূল্যায়ন, গণতান্ত্রিক চেতনা ও মুক্তিযুদ্ধের আদর্শ বজায় রেখে জনগণের সার্বিক কল্যাণে কাজ করাই হবে নতুন সরকারের দায়িত্ব। তার মতে, সরকার আইনগতভাবে সম্পূর্ণ বৈধ। তবে নৈতিক ভিত্তি কিছুটা দুর্বল।

এটি কাটিয়ে উঠতে জনগণের মতের সম্পৃক্ততা ঘটাতে হবে। বহির্বিশ্বের চাপ সাময়িক কিন্তু জনগণের প্রত্যাশাই দীর্ঘস্থায়ী। সাবেক রাষ্ট্রদূত ও আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিশ্লেষক হুমায়ূন কবির মনে করেন, সরকারের সামনে প্রথম চ্যালেঞ্জ দেশের শান্তি ও স্থিতিশীলতা ফিরিয়ে আনা। নির্বাচনকে ঘিরে যে সহিংসতা অনেক দিন ধরেই চলছে এর মাধ্যমে দেশে ও দেশের বাইরে বাংলাদেশ নিয়ে এক ধরনের শঙ্কাবোধ তৈরি হয়েছে। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ উদারনৈতিক দেশ হিসেবে বাংলাদেশের যে গ্রহণযোগ্য ভাবমূর্তি ছিল তা ভীষণভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

তাই সংঘাতকারীদের বিশেষ করে গত কয়েক দিনের সংখ্যালঘুদের ওপর আক্রমণকারীদের অতি দ্রুত চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনাটা সরকারের জন্য অগ্রগণ্য বলে আমি মনে করি। তিনি বলেন, সংঘাত বন্ধ করা ও অপরাধীদের দ্রুত বিচার করার প্রতিবন্ধকতা হলো রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা। এ কারণে বিদ্যমান যে রাজনৈতিক বিভেদ রয়েছে তা নিরসনে আলাপ-আলোচনাটা অত্যন্ত জরুরি। এই আলোচনার মাধ্যমে একটি সর্বজন গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠান করাটা দ্বিতীয় প্রাধ্যান্য পাওয়া উচিত। তা না হলে দেশের অভ্যন্তরের যে প্রশাসনিক কার্যক্রম চলছে তা সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে চালানো সম্ভব হবে না।

তৃতীয়ত. কয়েক মাস ধরে চলা অচলাবস্থায় বাংলাদেশের অর্থনীতি যে চাপের মুখে পড়েছে তা জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নিয়ে চাঙ্গা করতে হবে। সাবেক এই রাষ্ট্রদূত বলেন, এই বিষয়গুলোর প্রতিটিই একে অপরের পরিপূরক। তাই একটি বিষয়কে বাদ দিয়ে আরেকটি বিষয়ের অগ্রগতি সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে মনে রাখতে হবে, দেশের কয়েক মাসের এই অবস্থার কারণ পুরোপুরিই রাজনৈতিক, এর সমাধানও হতে হবে রাজনৈতিক, প্রশাসনিকভাবে এর সমাধান কখনোই সম্ভব নয়। বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমানের মতে, সরকারের সামনে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ চ্যালেঞ্জ হলো চলমান সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমন করা।

এর সঙ্গে জড়িতদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা এবং ক্ষতিগ্রস্ত প্রত্যেককেই প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদান করা। দ্বিতীয়ত. সর্বশেষ কিছু দিনের পরিস্থিতির জন্য দেশের সব স্তরের ব্যবসা-বাণিজ্য ও অর্থনীতির ওপর যে চাপ পড়েছে তার মূল্যায়ন করে ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়াও সরকারের সামনে অন্যতম চ্যালেঞ্জ। কারণ দেশের ক্ষতিগ্রস্ত অর্থনীতিকে এখনই টেনে তুলতে না পারলে সামনের দিনগুলোতে দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হতে পারে। এই অর্থনীতিবিদের মতে, সরকারের পথচলার শুরু থেকেই দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরাও অন্যতম চ্যালেঞ্জ। এখনই যদি লাগাম টেনে না ধরা যায় তাহলে ভবিষ্যতে তা নাগালের বাইরে চলে যেতে পারে।

তখন দল, সরকার ও দেশ সবাই ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এ জন্য প্রশাসনকে নিম্ন থেকে উচ্চস্তর পর্যন্ত সৎ ও গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের দিয়ে ঢেলে সাজানোর পরামর্শ দিয়েছেন ড. কাজী খলীকুজ্জমান।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.