স্বাধীনতার পর থেকে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক যে অর্জন, তা হুমকির মুখে। সামাজিক নিরাপত্তাও ভেঙে পড়ছে দ্রুতগতিতে। পুনরুদ্ধারকৃত গণতন্ত্র আজ ভূলুণ্ঠিত। বাংলাদেশ হাঁটছে গণতান্ত্রিক ধারার সেই পেছন দিকে, ঠিক যে পথ দিয়ে এগিয়েছিল। কিন্তু এই যে গণতন্ত্রকে পেছনে ঠেলে দেওয়া, এর দায় কার? কে আমাদের ভবিষ্যৎ আশা-আকাঙ্ক্ষাকে ক্ষয়রোগগ্রস্ত করেছে? সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) চেয়ারম্যান রেহমান সোবহান বিষয়টি তুলে ধরেছেন গতকাল ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টার পত্রিকায় 'পুটিং ডেমোক্রেটিক প্রসেস ব্যাক টু টপ্যাক নিবন্ধে'।
এর উল্লেখযোগ্য অংশে রেহমান সোবহান বলেন, অর্থনৈতিক ও সামাজিক উভয় সূচকে এক সঙ্গে উন্নতি এবং অন্য প্রত্যাশার জায়গাগুলোতে বেশ ভালো কিছু করে দেখিয়েছে বাংলাদেশ। বিগত ২০ বছরে দেশটি উপভোগ করেছে চারটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন। বর্তমান আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার বঙ্গবন্ধুর খুনিদের বিচার করে দেশে ফিরিয়ে এনেছে আইনের শাসন। শেখ হাসিনার সরকার একাত্তরের ঘাতকদের বিচারে গঠন করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ইতিবাচক অগ্রগতির ফসল ঘরে তোলা যায়নি শুধু নির্বাচনকালীন সরকারের প্রধান কে হবেন এ নিয়ে দেশের প্রধান দুই জোট বিভক্ত হয়ে পড়ায়।
এর ফলস্বরূপ বিএনপির শরিক জামায়াতে ইসলামী দ্বারা দেশ শিকার হয়েয়ে হিংসাত্দক কার্যক্রম আর তাণ্ডবের। সংকট জিইয়ে রেখেই অনুষ্ঠিত হয় দশম জাতীয় নির্বাচন, যা গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে ফেলেছে ঝুঁকির মধ্যে। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ ক্ষয় সাধন করেছে গণতান্ত্রিক উত্তরাধিকারের। এ বিষয়ে তর্ক-পাল্টা তর্ক হতে পারে অনেক যে কে আমাদের ভবিষ্যৎ প্রত্যাশাকে ক্ষয়রোগগ্রস্ত করার জন্য দায়ী? কে আমাদের ঠেলে দিয়েছে একতরফা নির্বাচনের দিকে, যা কিনা আমাদের নিপতিত করেছে অনিশ্চিত গন্তব্যে? বর্তমান অবস্থানে দাঁড়িয়ে আমরা বলতে পারি, এই যে ৫ জানুয়ারি নির্বাচন হয়ে গেল, এর মাধ্যমে দেশে বিরাজ করছে চাপা উত্তেজনা। বাংলাদেশ হারিয়েছে সামনের দিকে চলার ইতিবাচক গতি আর অনুমেয় ভবিষ্যৎ।
সদ্য সমাপ্ত নির্বাচন খর্ব করেছে রাষ্ট্রব্যবস্থার গণতান্ত্রিক চরিত্র। এখানে এসে আমরা আবারও তর্কে জড়াতে পারে যে কে এ পরিস্থিতির জন্য দায়ী। কিন্তু ভালো করে তাকালে বলা যায়, দশম সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে ইতিহাসে সর্বনিম্ন ভোটার উপস্থিতির মধ্য দিয়ে। ৩০০ সদস্যের মধ্যে নির্বাচিত ঘোষিত ১৫৩ জন, যারা ৫৩% ভোটারের প্রতিনিধিত্ব করেন, একটি ভোটও পড়েনি তাদের পক্ষে। এমনকি আমরা যদি নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত পরিসংখ্যান দেখি, যেখানে তারা ১৪৭ জন সদস্যের পক্ষে ৪০% ভোট পড়েছে বলে দাবি করেছে, সেখানে অনুমান করা যায়, চূড়ান্তভাবে ভোটারের উপস্থিতি হয়েছে ১৮%।
এমনকি ১২ জানুয়ারি নতুন সরকারের শপথ নেওয়া মন্ত্রীদের একটি বড় অংশই নির্বাচিত হয়েছেন কোনো রকম ভোট ছাড়া।
রেহমান সোবহান বিএনপির সমালোচনা করে বলেন, দলটি রাজনৈতিকভাবে ব্যর্থ হয়েছে নিজেদের মূল্যায়ন ও এর ফল কী হতে পারে তা নির্ণয় করতে। যে অথর্ব একটি নির্বাচন হয়ে গেল, এর দায়ভার অবশ্যই দলটিকে নিতে হবে। অনেক বছর ধরেই বিএনপির গণতান্ত্রিক ভিত্তি ক্ষীয়মাণ। তাই তারা ব্যর্থ হয়েছে আমজনতাকে সঙ্গে নিয়ে শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি পালনের মাধ্যমে ক্ষমতাসীনদের চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিতে।
আর এতে বিএনপি হয়ে পড়েছে জোটশরিক জামায়াতনির্ভর, যারা সন্ত্রাসবাদ ও সহিংসতা ছড়িয়েছে রাজপথে, অলিতে-গলিতে। জামায়াতের গায়ে রয়েছে যুদ্ধাপরাধের তকমা অাঁটা। তাদের অনেক নেতাই ট্রাইব্যুনালে বিচারের মুখোমুখি। এমন একটি দলকে জোটভুক্ত করে মাঠে নামায় বিএনপি কতটা জনসমর্থন হারিয়েছে, তা নির্ণয়ে ব্যর্থ হয়েছে। তাই বর্তমান পরিস্থিতির দায় থেকে কোনোভাবেই মুক্তি মিলছে না বিএনপির।
সবশেষে রেহমান সোবহান উল্লেখ করেছেন, এ অবস্থায় কী করা যেতে পারে গণতন্ত্র টিকিয়ে রাখতে। তার মতে, যত শিগগির সম্ভব একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে হবে। এ জন্য উভয় জোটের দুই প্রধানকে বসতে হবে খোলামেলা সংলাপে। বন্ধ করতে হবে রাজনৈতিক সহিংসতা।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।