নওগাঁ ও দিনাজপুর, জয়পুরহাট, নীলফামারী, রংপুরের বদরগঞ্জ, পঞ্চগড়, বগুড়া, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ, লালমনিরহাট জেলায় এ বছর আলুর বাম্পার ফলন হয়েছে। কিন্তু কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় বিপাকে পড়েছে কৃষক। এসব জেলার কোনো কোনা বাজারে প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২ থেকে ৩ টাকা দরে। যা উৎপাদন খরচের অনেক কম। দিনাজপুর : জেলায় আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে গেছে।
তবে বাজারে দাম না থাকায় প্রতিটি আলু চাষির চোখে-মুখে ফুটে উঠেছে করুণ আর্তনাদ। এক কেজি মোটা চাল কিনতে কৃষকদের বিক্রি করতে হয় ১৮ কেজি আলু। তিন কেজি আলু বিক্রি করলে মেলে এ কাপ চায়ের দাম। নওগাঁ : মাত্র এক মাস আগে ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকা মণ দরে আলু বিক্রি হলেও বর্তমানে বিক্রি হচ্ছে ১৮০ টাকা থেকে ২২০ টাকায়। ধামইরহাট উপজেলার ইসবপুর ইউনিয়নের আলু চাষি কায়েম উদ্দিন জানান, আগামীতে আর আলু লাগাব না।
পত্নীতলার চকনিরখিন, চাঁদপুর, পাটিচোরা, কাশিপুর, নাগরগোলাসহ আশপাশে কয়েকটি গ্রামের চাষিদের মুখে নেই হাসি। ভুক্তভোগীরা দাবি জানিয়েছেন উপজেলায় আলু সংরক্ষণে হিমাগার করার।
জয়পুরহাট : আলুর দরপতনে মহা বিপাকে পড়েছে জয়পুরহাটের চাষিরা। আলু চাষে সমৃদ্ধ এই জেলায় অনেক কৃষক এখন জমি থেকে আলু তুলতে অনীহা প্রকাশ করছে। জেলার হাট বাজারগুলোতে প্রতিকেজি আলু জাত ভেদে বিক্রি হচ্ছে দেড় টাকা থেকে ৪ টাকা কেজি।
এই মূল্যে আলু বিক্রি করে কৃষকের খরচের টাকাও উঠছে না। নীলফামারী : বাজারে নামমাত্র আলুর দাম থাকায় দিশাহারা হয়ে পড়েছেন কৃষকরা। সম্প্রতি টানা হরতাল ও অবরোধের কবলে পড়ে জমি থেকে আলু না তুলে জমিতেই রেখে দেয় কৃষক। ফলে সময় মতো আলু জমি থেকে না তোলায় আগাম আলু ও নতুন আলুর জমির আকার বড় হতে থাকে। হরতাল অবরোধের বিড়ম্বনা আপাতত বন্ধ হলেও এখন সরবরাহ বাড়ায় আলু নিয়ে দুর্ভোগে পড়েছেন চাষিরা।
পঞ্চগড় : আলুর বাজার মূল্য প্রথম দিকে ২৫/৩০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বর্তমানে দরপতন হয়ে নেমে গেছে ৩/৪ টাকায়। রইসউদ্দীন নামের একজন কৃষক জানালেন তিনি গতবারের দাম পাবেন বলে এবারে ৩ একর আলু লাগিয়েছেন। কিন্তু দাম পড়ে যাওয়ায় ক্ষেত থেকে আলু তুলতে পারছেন না বলে আলু নষ্ট হয়ে যাচ্ছে।
বগুড়া : আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় জেলায় চলতি মৌসুমে উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে। আলু উৎপাদন নিয়ে চাষিরা খুশি হলেও বাজারে দাম না থাকায় লোকসান গুনছে আলু চাষিরা।
বর্তমান বাজারে আলুর প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬ থেকে ৭ টাকা । পাইকারি বাজারে আলু বিক্রি হচ্ছে ৪ টাকা কেজি। লালমনিরহাট : আলু এখন মড়ার উপর খাঁড়ার ঘা হয়ে দাঁড়িয়েছে। ১ মণ আলু বিক্রি করে এক কেজি মাংসও কিনতে পারছে না কৃষক। বাজারে আলু নিয়ে দাম না থাকায় পানির দরে তা বিক্রি করে অশ্রু নয়নে ফিরছে অনেক কৃষক।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, চলতি মৌসুমে জেলার পাঁচ উপজেলায় ২৭ হাজার ১৭০ হেক্টর জমিতে আলু চাষের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়। সেখানে এবার অনুকূল আবহাওয়ার কারণে মোট ৩৩ হাজার ২০০ হেক্টর জমিতে আলু চাষ হয়েছে, যা নির্ধারিত লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে ৬ হাজার ১০০ হেক্টর বেশি। বদরগঞ্জ (রংপুর) : উপজেলার ১০ ইউনিয়নে ৩ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে আলুচাষ হয়েছে। আলুর ফলন ভালোই হয়েছে। তবে বাজারমূল্য কমে যাওয়ায় কৃষকরা পথে বসার উপক্রম হয়েছেন।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে ২৬০-৩০০ টাকা মণ দরে আলু বিক্রি করছেন কৃষকরা। পীরগঞ্জ (ঠাকুরগাঁও) : বর্তমানে ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায় গেনেলা জাতের পুরাতন আলু প্রতি মণ ৬০ টাকা ও নতুন আলু ৮০-৯০ টাকা মণ দরে বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন হাট-বাজারে। ফলে একজন কৃষককে ১ কেজি ইলিশ মাছ কিনতে ৫ থেকে ৬ মণ আলু বিক্রি করতে হচ্ছে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।