জীবন বুনে স্বপ্ন বানাই মানবজমিনে অনেক চাষ চাই সে ছিল আমার বন্ধু। তার আসল নামটা ভুলে গেছি। ভুলে যাওয়ার কথা। সামান্য ক দিনের পরিচয়। তারপর দীর্ঘদিন দেখা নেই।
আর কোন দিন দেখা হওয়ার সুযোগও নেই। দেখা হলেও হয় তো কোন দিন দু'জন দু'জনকে চিনতেও পারব না।
ক্লাশ ফোরে ওঠার পর হঠাৎ করে আমাকে মাদ্রাসায় ভর্তি করিয়ে দেয়া হল। কারণ, অনেক ছোট থাকতে একবার ভীষণ অসুখ হয়েছিল আমার। একেবারে দম যায় যায় অবস্থা।
তখন আমার মা মানত করেছিলেন, যদি আমি বেঁচে থাকি, তবে আমাকে মাওলানা বানাবেন। মায়ের সেই মানত পূরণ করার জন্য আমাকে মাদ্রাসায় দেয়া হল।
মাদ্রাসায় বেশির ভাগই হতদরিদ্র এতিম ছেলে। ওদের মাঝখানে আমি অনেক ধনী ঘরের ছেলে। আমি প্রতিদিন বাসায় যেতাম এবং মায়ের কাছ থেকে বা বড় ভাইয়ের কাছ থেকে দু তিন টাকা করে হাত খরচ আদায় করতাম।
তাছাড়া আমার বাসা থেকে প্রায়ই আমার জন্য ভালো ভালো খাবার পাঠানো হত।
আমার হাত খরচের টাকা ও বাসা থেকে পাঠানো খাবারের লোভে আমার অনেক বন্ধু জুটে গেল। আমি অনেককেই প্রতিদিন আচার, লজেন্স কিংবা চটপটি খাওয়াতাম। ওদের মধ্যেই একজন ছিল যে কিনা ভীষণ আলুর দম পছন্দ করত। এক টুকরো আলুর দমের দাম ছিল ১০ পয়সা।
ওকে প্রতিদিন বিকালে আলুর দম খাওয়াতাম। আলুর দম খেতে খেতে ওর নাম পাল্টে হয়ে গেল আলুর দম।
সব ছাত্রদের শোয়ার ব্যবস্থা ছিল মেঝেতে বিছানা । এক রাতে দেখি ও মশারি ছাড়াই ঘুমানোর চেষ্টা করছে কিন্তু মশার কামড়ে ঘুমাতে পারছে না। আমার মায়া লাগল।
ওকে ডেকে আনলাম আমার মশারীর ভেতরে । এর পর থেকে আলুর দম আমার সাথে ঘুমাতো। তার মুখ থেকে বের হত ভয়াবহ দুর্গন্ধ। আমি উল্টো দিকে মুখ ঘুরিয়ে শুয়ে থাকতাম।
কয়েক দিন পর ওর বালিশ ছিঁড়ে গেল।
ও আমার বালিশে মাথা রেখে ঘুমাত। আমি ক দিন পর বাসা থেকে বালিশ আনতে গেলাম। বাসায় গিয়ে দেখি একটা রাবারের বালিশ। ও্ই বালিশটাই আনলাম। ওটা দেখে আলুর দম অবাক।
এই রকম রাবারের বালিশ যে আছে সেটা ও জানত না।
আমার মাদ্রাসা ভালো লাগত না। শিক্ষকরা ছিল নিষ্ঠুর। কারণে অকারণে ছাত্রদের ভয়াবহ পেটানো হত। আমি একদিন ভয়াবহ মার খেলাম।
আমার অপরাধ ছিল শিক্ষক মেঝেতে বসা ছিলেন, আমি ভুল করে তার খাটে বসে ফেলেছিলাম। ব্যাস, আর যায় কোথায়, আমার দুই হাত বেত মেরে ফুলিয়ে ফেলা হল।
আমি বাসায় ফিরে জানালাম, আমি আর কোন দিন মাদ্রাসায় যাব না। কিন্তু আমাকে আবারও মাদ্রাসায় দিয়ে এল আমার বড় ভাই। এর পর থেকে সেই শিক্ষক আমাকে মারার অজুহাত খুঁজতেন ।
পড়া না পারলেই ভয়াবহ মারতেন।
আলুর দম আমাকে এক রাতে মলম দিয়ে মালিশ করে দিল এবং আমাকে পরামর্শ দিল আমি যেন পালাই। এক সপ্তাহের মাথায় আমি পালালাম। পালিয়ে চলে গেলাম আমার বড় বোনের বাসায়। গিয়ে খুলে বললাম সব ঘটনা।
অবশেষে আমার বড় বোনের হস্তক্ষেপে আমার মাদ্রাসায় পড়া সাঙ্গ হল। আর সেই সাথে হারালাম আমার এক প্রিয় বন্ধু আলুর দমকে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।