এরা যত বেশী পড়ে, তত বেশী জানে, তত কম মানে। -_-
যে ঈশ্বর তাঁহাকে সৃজিলেন, অগণিত কারণ থাকা সত্ত্বেও তাহার ওপর রুষ্ট হইয়া বসা কেবল অশোভনীয় নহে; অন্যায়ও ঠেকে মাঝে মাঝে। তাহার শত দোষ, শত নির্মমতা- সকলি মাফ শুধু এই গুণে যে তিনি তাঁহাকে সৃজিলেন।
কি বলিবো তাঁহার কথা? ঈশ্বর সৃজিলেন বটে একজনকে! পরিপাটি মেয়েটি হইয়া থাকা তাঁহার এই জনমে শেখা হইলো না; তথাপিও তাঁহার এই কিঞ্চিত অগোছালো সৌন্দর্যের পাশে, অন্যদের শত পরিপাট্য যে মলিন ঠেকে! সার্টিফিকেটের বালাই ছিলো না, বাংলা সাহিত্যের আশ্রয় নিলেন স্বশিক্ষিত হইবার জন্যে। যাহা হইবার তাহাই হইলো, হৃদয়ের সীমানা অসিম হইয়া গেল, যা কিছু অনুচিত সকলি কর্পূরের ন্যায় উড়িয়া গেলো সেথা হইতে।
অতিরিক্ত মায়া তাঁহার সকল কিছুর প্রতি, সাধ্য থাকিলে সমগ্র বিশ্ব-ভ্রম্মান্ডের যতন করতে বুঝি আপত্তি করতেন না, বরং খুশিই হইতেন। হয়তো বাড়িতে কম্পিউটারে বসিয়া লেখছি, উনি আসিয়া হাজির হইবেন। কিছু বলিবেন না, কিন্তু মৌনতার অর্থ আমি জানি- ভিডিও গেইম খেলায় উনি আমার ভ্রাতাকেও পরাজিত করিয়াছেন। জিজ্ঞাসা করিবো- “কি মা, খেলবে?” অমনি আমায় একটি বোকা বোকা হাসি উপহার দিয়া মাথা নিচু করিয়া ফেলিবেন। বহমান ঝর্ণা ধারার মত তাঁহার ঐ শিশুসুলভ হাসি, কত সহজেই না মানুষকে আপন করিয়া নিতে জানে! মাঝে মাঝে ভাবি, ভোরের প্রথম আলোর মত স্নিগ্ধ-বিকশিত এই হাসি যে প্রতিবার আমাকে প্রশান্তির নিশ্বাস নিতে বাধ্য করে, তাহা কি উনি জানেন? হয়তো বা জানে্ন...
তবে হ্যাঁ, তিনি শাসনও করেন বটে- কিন্তু বড়ই আবেগী ভঙ্গীতে, চোখ ছলছল করিয়া ওঠে।
অভিমান নহে, প্রাধান্য পায় বেদনা। যেন অন্যায় তাঁহার প্রতি নহে, ব্যক্তি নিজের প্রতিই করিয়া বসিয়াছে- যাহা দেখিয়া তিনি ব্যথিত। কোনদিন কোন কিছু দাবী করিয়াছিলেন বলিয়া মনে হয় না, তাঁহার সর্বোচ্চ দাবীটিও অনুনয় পর্যন্তুই সীমাবদ্ধ। এই একটি মানুষ বাঁচিয়া আছেন অন্যদের জন্যে এবং ঈশ্বরের সবচাইতে বড় কৃপা আমার ওপর যে, এই “অন্যদের” মাঝে আমিও একজন। প্রতিদিন ভোরবেলা নিজ গন্তব্যস্থলে যাইবার পূর্বে, আমি তাঁহাকে ডাকিয়া যাই।
শুধু ঘরের কপাট লাগাইবেন সেই উদ্দেশ্যে নহে, স্নেহের আলিঙ্গনে ধারণ করিয়া তিনি যে অজস্র আশির্বাদ আমার যাত্রাতলে বিসর্জন দিবেন! ভিখারী আমি সেই দান গ্রহণ করিতেই নিত্যদিন ভোরের প্রহর গুণি।
এ কি করিয়া বসিলে ঈশ্বর! কাকে সৃজিলে তুমি? যেমন সৃজিলে, তেমন সুবিচার কি তাঁহার প্রতি করিতে পারিয়াছো? তাঁহার শত যতন করিবার পরেও যে মনে হইবে আমি কার্পণ্য করিয়াছি! নাহ, রুষ্ট হইলাম না তোমার উপর, এমন সৃষ্টি করিবার সামর্থ্য থাকিবার পরও সৃষ্টি না করিলে বড়ই অন্যায় হইত। কিন্তু আক্ষেপটিও সাথে রহিয়া গেলো, সৃষ্ট হইবার পরে তাঁহার প্রাপ্যটুকু যে তাঁহার পাওয়া হইলো না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।