পুড়ে খাঁক হ
আমার মনে হয়, শিক্ষাঙ্গনে অবশ্যই রাজনীতির প্রয়োজন আছে। এবং বর্তমানে যে 'দলীয় লেজুরবৃত্তি' শব্দদ্বয় যত্রতত্র ব্যবহার করা হয়- তাহা শাসকগোষ্ঠী এবং তাদের বংশবদ মিডিয়ার তৈরি বিভ্রান্তিসৃষ্টিকারী প্রচারণা - যে প্রচারণায় আমরা বেশির ভাগই প্রভাবিত এবং ইহা শাসকগোষ্ঠীর রাজনীতির মধ্যে যে অন্তসারশূণ্যতা তাহাকে টিকাইয়া রাখিবার অস্ত্র।
রাজনীতি করিবার অধিকার, মত প্রকাশের অধিকার আমাদের গণতান্ত্রিক অধিকার, রাজনৈতিক অধিকার। তাহা প্রচলিত কোন রাজনৈতিক দলের অনুসারি হইয়াই হউক অথবা কোন রাজনৈতিক দলের সহিত যুক্ত না থাকিয়াই হউক। ইহাতে কাহারো বাঁধা প্রদান মোটেও গণতান্ত্রিক হয় না।
ফলে, একজন ছাত্র বা একজন শিক্ষক রাজনীতি করিতে চাইলে তাহা তাঁহার করিতে পারাই উচিত। এমনকি তাঁহারা কোন রাজনৈতিক দলের অনুগত থাকিয়া করিতে চান- তাহাও তারা করিতে পারেন। এইখানে দলীয় লেজুরবৃত্তি শব্দখানিই আপত্তিকর।
কিন্তু, যেইসব কারণে এই রাজনীতির বিষোদগার করা হয়, অনেকে- রাজনীতির প্রয়োজনীয়তার কথা বলিয়া লেজুরবৃত্তির বা বহিরাগতদের কথা বলিয়া থাকেন- তাহাদের বুঝা উচিত যে ইহাতে সেই সব মূল কারণ আড়ালে পড়িয়া যায়। সেই সন্ত্রাস বলেন, আর দূর্বৃত্তায়ন বলেন আর নীতিহীনতা বলেন- সেইগুলোকে নির্মূলই সর্বাগ্রে প্রয়োজন।
ধরেন, একজন ছাত্র প্রচলিত একখানা বড় দলের সহিত যুক্ত এবং সেই দলের প্রভাব খাটাইয়া চাঁদাবাজি-টেন্ডারবাজি-সন্ত্রাসী কার্যকলাপে লিপ্ত। তাহলে- সেই ছাত্রকে কোন কর্মকান্ডের জন্য অপরাধী করিব? দলীয় রাজনীতির সহিত যুক্ত থাকা নাকি ঐ সকল অপকর্ম করা?
বিশেষত সরকারী দলের অঙ্গসংগঠনের দাপটে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা অনেক হয়রানি-বঞ্চনার শিকার যদি হয়, তবে সেক্ষেত্রে কাহাকে অপরাধী করিবেন, কোন অপরাধে অপরাধী করিবেন?
আমার মতে অপরাধী করা উচিত- যাহারা দাপট দেখাইলো, যাহারা হয়রানি করিল, যাহারা শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের বঞ্চনা করিল- তাহাদিগকে, যাহারা নেপথ্যে মদত দান করিল তাহাদিগকেও।
কিন্তু, এই কারণে রাজনীতিকে বা লেজুরবৃত্তির রাজনীতিকে দোষারোপ করিলে- বুঝিতে হইবে ইহাতে অন্যরূপ অসত ইনটেনশন বিদ্যমান। এই অসত ইনটেনশন সকলের না থাকিলেও, শাসকগোষ্ঠী এই ইনটেনশন লইয়াই এই ধরণের প্রচারণায় সকলকে প্রভাবিত করিতে চায়।
আর সবচেয়ে বড় বিপদ এই খানে যে, এইভাবে বলিলে- মূল হোতারা পর্দার আড়ালেই থেকে যায়, বা তাহাদের বিরুদ্ধে প্রকৃত কোন প্রতিরোধ গড়ে তোলা যায়না বা এই সমস্যা সমূহের প্রকৃত সমাধান সম্ভবপর হয় না।
সরকারি দল বা প্রধান বিরোধীদলসমূহই তো এহেন অপকর্মের হোতা। তাহারা জাতীয় রাজনীতিতে, জাতীয় ক্ষেত্রে সর্বস্থলে, এবং একইভাবে শিক্ষাঙ্গনেও দূরবৃত্তায়ন কায়েম করিয়াছে।
তাহাদের সর্বোত্ত প্রকারে প্রতিরোধ না করিয়া শুধু শিক্ষাঙ্গনে রাজনীতি বা লেজুরবৃত্তি বন্ধ করিলে লাভের লাভ কি হইবে?
শিক্ষাঙ্গনে যে সন্ত্রাস, যে নীতিহীনতা, তাহার সহিত অনেকাংশেই আর্থিক কর্মকান্ড জড়িত।
ইহার রুট সমূলে উত্পাটিত না করিলে কি, শুধু লেজুরবৃত্তি বন্ধ করিলে বা রাজনীতি বন্ধ করিলেই - সেই টেন্ডারবাজী, চাঁদাবাজী বন্ধ হইবে?
এই সমস্যাসমূহ রাজনৈতিক সমস্যা, সমাধানও একমাত্র রাজনৈতিক উপায়েই সম্ভব।
গণমানুষের, ছাত্রের, কৃষকের, শ্রমিকের আন্দোলন-লড়াই-সংগ্রামের ভিতর দিয়েই এর সমাধান সম্ভব, এর মধ্য দিয়েই নেতৃত্ব তৈরি হবে- ইহার কোন বিকল্পই দেশকে সঠিক গন্তব্যে পৌঁছাতে পারে না- সেনা ক্যু, আর্মি ও সাম্রাজ্যবাদীদের আহ্বানে আসা কেয়ারটেকার বা সেনা-ব্যাকড কোন সুশীল সরকার- কোনটাই জনগণের জন্য কোন কল্যাণ বহিয়া আনিবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।