সংগঠনের এই অংশের অন্যতম জ্যেষ্ঠ নেতা রাজু বড়ুয়া বলেন, “অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনা ও এই রায় ভারত সরকারের সঙ্গে আমাদের শান্তি আলোচনার ওপর কোনো প্রভাব ফেলবে না। ”
নানা চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ১০ বছর পর বৃহস্পতিবার দুপুরে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ও বিশেষ ট্রাইবুন্যাল-১ এর বিচারক এসএম মজিবুর রহমান জনাকীর্ণ আদালতে এই মামলার রায় ঘোষণা করেন।
অস্ত্র চোরাচালানের ঘটনায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে করা মামলায় জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, বিএনপি নেতা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর ও পরেশ বড়ুয়াসহ ১৪ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয় আদালত।
রায়ের পর পরই পরেশ বড়ুয়ার মৃতুদণ্ডের বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাইলে আসামে অবস্থানরত রাজু বড়ুয়া সাংবাদিকদের বলেন, দেশের বাইরে এই রায় হওয়ায় তা নিয়ে বিস্তারিত কোনো প্রতিক্রিয়া দেয়ার সুযোগ তার সংগঠনের নেই।
২০০৪ সালের ১ এপ্রিল রাত ১২টা ৫৫ মিনিটে চট্টগ্রামের আনোয়ারায় কর্ণফুলী নদী তীরে রাষ্ট্রায়ত্ত সার কারখানা চিটাগাং ইউরিয়া ফার্টিলাইজার লিমিটেডের (সিইউএফএল) সংরক্ষিত জেটিঘাটে দুটি মাছ ধরার ট্রলার থেকে বিপুল পরিমাণ অস্ত্র খালাস করে ট্রাকে তোলার সময় পুলিশ আটক করে।
বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদের সর্ববৃহৎ চালান ধরা পড়ার পর দেশব্যাপী ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়।
পরে তদন্তে দেখা যায়, চীনে তৈরি এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ সমুদ্রপথে উলফার জন্য আনা হয়েছিল; বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল এই চালান।
অস্ত্র উদ্ধারের ঘটনার সময় অবিভক্ত উলফায় পরেশ বড়ুয়ার ঠিক পরেই ডেপুটি কমান্ডার রাজু বড়ুয়ার অবস্থান ছিল।
তবে, দৃশ্যত পরেশ বড়ুয়ার নির্দেশনায় বাংলাদেশে অস্ত্রের এই বিশাল চালান নিয়ে যাওয়ার বিষয়ে কোনো মূল্যায়ন বা অভিযোগ করেননি রাজু বড়ুয়া।
তিনি বলেন, “তিনি হয়ত আসলেই সংগঠনের জন্য ওই অস্ত্রের চালান এনেছিলেন।
কিন্তু এটা ঠিক ছিল কি না, তা আমার পক্ষে বলা কঠিন। কারণ বিষয়টি নিয়ে কখনোই সংগঠনের শীর্ষ নীতি নির্ধারণী পর্যায়ে আলোচনা হয়নি। ”
তাদের সাবেক এই নেতার ‘সংকটের সময়ে’ সংগঠন তার পাশে দাঁড়াবে বলে জানান তিনি। তবে এর জন্য তাকে সরকারের সঙ্গে আলোচনায় অংশ নিতে হবে বলে শর্ত জুড়ে দেন তিনি।
আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে উচ্চ আদালতে আপিল করার সুযোগ রয়েছে বলে স্বস্তিও প্রকাশ করেন তিনি।
গত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে বাংলাদেশ থেকে উলফা গেরিলাদের তাড়িয়ে দেয়ার পর অরবিন্দ রাজখোয়ার নেতৃত্বে ২০১১ সাল থেকে ভারত সরকারের সঙ্গে সমঝোতার আলোচনা শুরু করে উলফার একটি অংশ।
তবে এই সমঝোতার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকার কোনো ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি পরেশ বড়ুয়ার পক্ষ থেকে। ওই সময়ে পরেশ বড়ুয়া প্রথমে বাংলাদেশে ঢুকে পড়লেও পরে মিয়ানমারে আশ্রয় নেন।
বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার গুয়াহাটিতে পুলিশের মহাপরিচালক খগেন শর্মার উপস্থিতিতে আসাম পুলিশের শীর্ষ পর্যায়ে নিরাপত্তা বিষয়ে বৈঠক হলেও সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এখনো কোনো প্রতিক্রিয়া জানানো হয়নি।
তবে রায়ের পর পুলিশ ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা নিজেদের চেহারার উল্লাস ঢাকতে পারেননি।
গুয়াহাটি থেকে ফোনে আসাম পুলিশের এক শীর্ষ কর্মকর্তা বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “এটা পরেশ বড়ুয়ার জন্য বিশাল ‘সেটব্যাক’। কারণ মিয়ানমারের জঙ্গলে থেকে কাজ করা কঠিন হওয়ায় নাছোড়বান্দা হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে সেখানে ঘাঁটি প্রতিষ্ঠা করতে চেয়েছিলেন তিনি।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।