আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পরেশ বড়ুয়া চীনে!

ভারতের ইন্টেলিজেন্স ব্যুরোর একজন জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, পরেশ বড়ুয়া গত কিছুদিন একেবারেই লাপাত্তা থাকলেও সম্প্রতি তিনি রেডিওতে নিজের সহযোগী জ্যোতির্ময় ভারলির সঙ্গে যোগাযোগ করেন।      

“গত কয়েক মাসে নিজের নেতাকর্মীদের সঙ্গে কোনোরকম যোগাযোগই করছিলেন না। আগে মাঝেমধ্যে উলফার ঘনিষ্ঠ সাংবাদিক আর সামাজিক অধিকারকর্মীদের সঙ্গে কথা বলতেন, ইদানিং সেটাও হচ্ছিল না। তবে কিছুদিন আগে হঠাৎ করেই পরেশ জ্যোতির্ময়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে একটি জরুরি ব্যাগ উদ্ধারের খোঁজ খবর নেন। ”

ভারতের ওই গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, পরেশের সেই ব্যাগে তার ব্যবহৃত কয়েকটি সিম কার্ড ও জরুরি কিছু ফোন নম্বর আছে বলে কথোপকথনে জানা যায়।

সেই ব্যাগটি ছিল উলফা নেতা পার্থ গগৈয়ের কাছে, যিনি ভারতীয় বাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করার পরিকল্পনা করার পর পরেশ বড়ুয়ার নির্দেশে নিজের দলের কর্মীদের হাতে নিহত হন বলে ধারণা করা হয়।   

“পরেশ বড়ুয়া খুবই উদ্বিগ্ন ভঙ্গিতে জ্যোতির্ময়কে বলছিলেন যাতে ফোন ডিরেক্টরি আর সিমগুলো নিরাপদে উদ্ধার করে আনা হয়। ওই ব্যাগে টাকাও ছিল, তবে সেটা তার কাছে খুব একটা গুরুত্বপূর্ণ বলে কথা শুনে মনে হয়নি। কিন্তু সিম আর ফোন নম্বরগুলো যাতে কোনোভাবেই ভারতীয় কর্মকর্তাদের হাতে না পড়ে, সে বিষয়ে বার বার সতর্ক করেছেন তিনি। ”

গোয়েন্দা কর্মকর্তা জানান, জ্যোতির্ময় রেডিও কথোপকথনে পরেশকে বলেছেন যে গগৈয়ের কাছ থেকে ব্যাগটি উদ্ধার করে উত্তর মিয়ানমারে উলফার এক ঘাঁটিতে নিরাপদে পৌঁছে দেয়া হয়েছে।

  

ভারতীয় গোয়েন্দারা গত কয়েক বছর ধরেই পরেশের রেডিও সিগন্যাল ধরতে নিবিড় পর্যবেক্ষণ চালিয়ে যাচ্ছেন। তবে নিজের অবস্থান ফাঁস হওয়া ঠেকাতে এই উলফা নেতা এতোটাই সতর্ক যে গত কয়েক সপ্তাহে পার্থ গগৈসহ অন্তত আটজন উলফা নেতা দলত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়ার পরপরই খুন হয়েছেন।  

এর আগে মিয়ানমারের তেনচং এলাকা থেকে রেডিওতে পরেশ বড়ুয়ার কণ্ঠ শুনতে পেয়েছিলেন ভারতীয় গোয়েন্দারা। উলফা কমান্ডারের বর্তমান সম্ভাব্য অবস্থান রুইলি থেকে তেনচং শহর খুব বেশি দূরেও নয়।       

ভারতীয় গোয়েন্দাদের সন্দেহ, পরেশ এক বান্ধবীর সঙ্গে সাক্ষাত করতে প্রায়ই মিয়ানমারের জঙ্গলে উলফা ঘাঁটি থেকে সীমান্ত পেরিয়ে চীনের রুইলিতে যান।

তার সেই বান্ধবী একজন ছদ্মবেশী চীনা গোয়েন্দা বলেই ভারতীয়দের সন্দেহ।  

ভারতীয় গোয়েন্দা কর্মকর্তারা বলছেন, পরেশের স্ত্রী ববি ও তাদের দুই সন্তান বর্তমানে বাংলাদেশ অবস্থান করছেন। তবে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা তাদের খোঁজ জানেন কি-না, অথবা পরেশের খোঁজে ববিকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে কি-না তা স্পষ্ট নয়।

২০০৪ সালের ১ এপ্রিল চট্টগ্রামের সিইউএফএল জেটিঘাটে দশ ট্রাক সমপরিমাণ অস্ত্র খালাস করে পুলিশ। পরে তদন্তে দেখা যায়, চীনে তৈরি এসব অস্ত্র ও গোলাবারুদ সমুদ্রপথে উলফার জন্য আনা হয়েছিল; বাংলাদেশের ভূখণ্ড ব্যবহার করে সীমান্ত পাড়ি দিয়ে ভারতে নিয়ে যাওয়ার কথা ছিল এই চালান।

দশ বছর পর ওই মামলার রায়ে পরেশ বড়ুয়াসহ ১৪ আসামিকে মৃত্যুদণ্ড দেয় চট্টগ্রামের আদালত। মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামিদের মধ্যে জামায়াতে ইসলামীর আমীর ও জোট সরকারের শিল্পমন্ত্রী মতিউর রহমান নিজামী, বিএনপি নেতা ও তৎকালীন স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী লুৎফুজ্জামান বাবর এবং গোয়েন্দা সংস্থা এনএসআইয়ের কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তাও রয়েছেন।  

এনএসআই কর্মকর্তাদের সঙ্গে সে সময় উলফার যে ঘনিষ্ঠ যোগাযোগ ছিল, রায়ের পর্যবেক্ষণে তাও উঠে এসেছে।

এই মামলায় আপিল করার সুযোগ থাকলেও পরেশ বড়ুযা বাংলাদেশে এসে সে সুযোগ নেবেন বলে ভারতীয় গোয়েন্দারা মনে করেন না। কারণ বাংলাদেশে এলে অবধারিতভাবে তাকে গ্রেপ্তার হতে হবে।

আর তাতে উলফার সশস্ত্র আন্দোলনও মুখ থুবড়ে পড়বে।    

বিশ্লেষকদের মতে, চীনে পরেশের যোগাযোগ খুবই গভীর, কেননা দশ বছর আগে চট্টগ্রাম দিয়ে যে চালান তিনি ভারতে নিচ্ছিলেন, সেসব অস্ত্র তৈরি হয়েছিল চীনের শীর্ষ অস্ত্র নির্মাতা প্রতিষ্ঠান নোরিনকোতে।   

অবশ্য চীন যেহেতু প্রকাশ্যে পরেশ বড়ুয়াকে কোনো সমর্থন দিচ্ছে না, সেহেতু এ বিষয়ে চীনকে জোড়ালো চাপও দিতে পারছেন না ভারতীয় কূটনীতিকরা।


সোর্স: http://bangla.bdnews24.com

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।