আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

একটি রিয়েল লাইফ জোক...



থার্ড ইয়ারের ক্লাস শুরু হবার পর সপ্তাহ দুই ক্লাস করার পর প্রায় দেড় মাসের মত ক্লাস করিনি। গিয়েছিলাম একটা অ-কাজে। (কাজ হিসেবে গেলেও শেষ পর্যন্ত ভাগ্যের পরিহাসে ওটা আমার জীবনে সবচেয়ে বড় 'আকাম' রূপে পরিনাম পেয়েছে...কি কাজ সেইটা পরে কোনোদিন বিস্তারিত বলবো নে...)। আর এর মধ্যে আমার কমসে কম ৭০-৮০টা ক্লাস মিস হয়ে গেছে সব মিলিয়ে। ...এক মাস পর ক্লাস করতে এসে দেখি দুই জন টিচার আমার নাম ই ডাকেনা আর!!... প্রথম জন আয়েশা সুলতানা ম্যাডাম।

প্রথম দিন উঠে দাঁড়ায় আমতা আমতা করে বললাম, 'ম্যাডাম, রোল ৫০...!!''...কি জানি ভাবলেন আমার দিকে তাকায়। তারপর বললেন, 'হু'। ...পরদিন আবার রোল ডাকেনা!!...আমি আবার বললাম, 'ম্যাডাম, রোল ৫০'...উনি আবার আমার দিকে তাকায় কি যেন ভাবলেন। তারপর বললেন, 'তোমার তো অনেক ক্লাস মিস হয়েছে!...' আমি বোকার মত হেসে মাথা নাড়লাম। তবে তারপর দিন থেকে আজ পর্যন্ত উনি আমার রোল ডাকছেন।

দ্বিতীয় জন তানভীর স্যার। আমাদের গোলগাল সদা হাস্যময়ী একজন স্যার। সম্প্রতি দ্বিতীয় বিয়ে করলেও উনার মনটা অনেক ভালো। পড়াণ ও ভালো। এইবার আমাদের ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যান্ড অর্গানাইজেশনাল সাইকোলজি পড়াচ্ছেন।

দূর্ভাগ্যবশতঃ এক মাস লাপাত্তা হবার আগে উনার মাত্রই একটা ক্লাস করেছিলাম। ফিরে এসে ক্লাস করতে গিয়ে দেখি উনিও রোল ডাকেন না। আমি একদম শেষ বেঞ্চে বসা। (কিন্তু আমি ব্যাকবেঞ্চার নই। সেদিন বসেছি জায়গার অভাবে।

) পেছন থেকে বললাম, 'স্যার, রোল ৫০!' ক্লাসে হঠাৎ পিন পতন নীরবতা নেমে এলো। সামনের সব কয়টি মাথা আমার দিকে ঘুরে গেলো। স্যার আমার দিকে মূর্তিমান দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলেন কিছুক্ষণ। তারপর সবকয়টি দাঁত প্রদর্শন করে হেসে উঠলেন। হাসি চললো মিনিট খানেক।

তারপর বাকিদের রোল ডেকে শেষ করলেন। রোল কল শেষে আবার হাসি। বললেন, 'একটা গল্প বলি, তোমরা শোনো। ' এক গরীব জেলে একদিন সকালে মাছ ধরতে গেছে। কিন্তু সেদিন তার ভাগ্য এতই খারাপ যে কোনো মাছই পেলোনা।

সন্ধ্যা হয়ে এলো, তাও কোনো মাছের দেখা নাই। জাল তুলতে গিয়ে সে দেখলো একটা চকচকে বস্তু সেখানে আটকে আছে। হাতে নিয়ে দেখতে পেল একটা সোনার আংটি। সে বেশ খুসি হল। 'যাক, অন্তত এইটা বেচে তো আজ কিছু টাকা পাওয়া যাবে!,' এই ভেবে কাদা মাখা আংটিটা সে ধুতে গেল।

কিন্তু, আংটিটা হাত ফস্কে আবার পানিতে পড়ে গেল। সে আর আংটিটা খুজে পেলোনা। ' সারাদিন মাছ ও পেলোনা। যাও একটা আংটি পেল, তাও গেলো। তার তো মাথা খারাপের অবস্থা।

বাসায় ফিরে সে কেবল আপন মনে বলে চলেছে, 'ধোয়ার কি দরকার ছিল, না ধোয়াই তো ভালো ছিল'...। সে আর কিছু বলেনা। কিছু খায়না। খালি এই একই কথা বলে। লোকটার মা তার এই অবস্থা দেখে চিন্তিত হয়ে ডাক্তার ডাকলো।

ডাক্তার এসে তাকে দেখে টেখে ঘুমের ওষুধ দিয়ে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে গেলেন। ঘরে টাকা নাই। তাই, ডাক্তার কে টাকা দেয়া গেলোনা। ডাক্তার পরদিন এসে টাকা নিয়ে যাবেন বলে চলে গেলেন। পরদিন ঘুম ভাঙ্গার পর গেলের আর কিছু মনে নাই।

একদম ফ্রেশ মাথা। এর মধ্যে তার মা এসে তাকে বললেন, 'গতকাল তোর অবস্থা দেখে আর কিছু জিজ্ঞেস করিনাই। কি হয়েছিল গতকাল???' ব্যস!...ওই লোকের তো সব মনে পড়ে গেল। আবার সে বলতে শুরু করলো, 'ধোয়ার কি দরকার ছিল। না ধোয়াই তো ভাল ছিল......' তার এই অবস্থা দেখে মা দুঃখের চোটে বলে উঠলেন, 'জিজ্ঞেস করার কি দরকার ছিল, না জিজ্ঞেস করলেই তো ভালো ছিল' এর মধ্যে ডাক্তার এলেন।

মা-ছেলে দুইজনই তখন প্রলাপ বকছেন। টাকা দেয়ার কোনো প্রশ্নই ওঠেনা এই অবস্থায়!...ডাক্তার তখন কপাল চাপড়ে বলে উঠলেন, 'বাকি রাখার কি দরকার ছিল, কাল টাকা নিয়ে নিলেই ভালো ছিল......' এই গল্প শেষ করে স্যার একটা বিগলিত হাসি দিলেন। তারপর আমার দিকে তাকায় বললেন, 'তোমাকেও বলতে চাই, ক্লাস করতে আসার কি দরকার ছিল, না করাই তো ভাল ছিল...' সারা ক্লাস জুড়ে হাসির রোল পড়ে গেল। আমিও বোকার তিন নাম্বার হাসি দিয়ে এদিক ওদিক তাকালাম। আর কি ই বা করতে পারতাম!!!!!!..............


অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.