আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

পুরোপুরি বন্ধ হয়নি দুবাইয়ের ভিসা

সংযুক্ত আরব আমিরাত সরকারের অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তে বাংলাদেশের জন্য শ্রমিক ভিসা প্রদান দীর্ঘদিন বন্ধ রয়েছে। ২০১২ সালের আগস্ট মাসে একটি আদেশের মাধ্যমে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ ভিসা প্রদান প্রক্রিয়া বন্ধ থাকলেও অন্য সব ভিসাই খোলা রয়েছে। দুবাই কনস্যুলেট থেকে এখনো প্রতিদিন প্রায় ৬০ থেকে ৭০টি ভিসা সত্যায়িত করা হয়। এসব ভিসার আবেদনকারীদের সিংহভাগই দুবাইয়ের জন্য আবেদন করেন বলে জানা গেছে। সে হিসেবে দুবাইয়ের ভিসা পুরোপুরি বন্ধ রয়েছে এমন খবরের সঙ্গে কনস্যুলেটের কোনো রেকর্ড মিলছে না বলে জানান দুবাই ও উত্তর আমিরাতে অবস্থিত বাংলাদেশ কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা।

দীর্ঘদিন ভিসা বন্ধ ও অন্যত্র ভিসা পরিবর্তন প্রক্রিয়া বন্ধ থাকায় দেশে ফেরত গিয়েছেন অনেক শ্রমিক। জানা গেছে, বাংলাদেশ সরকার ১৯৭৬ সাল থেকে বিদেশে লোক পাঠানো শুরু করে। সে সময় ঢাকায় শ্রম ও জনশক্তি রপ্তানি ব্যুরো গঠন করা হয়। তাদের হিসাব ও বিমানবন্দরের ইমিগ্রেশনের হিসাব অনুযায়ী ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১৩ পর্যন্ত সংযুক্ত আরব আমিরাতে ২৩ লাখ বাংলাদেশি প্রবেশ করেছে। কিন্তু এ পর্যন্ত কতজন লোক দেশে ফেরত গেছেন তার কোনো সুনির্দ্দিষ্ট হিসাব পাওয়া যায়নি।

দুবাইয়ে নিযুক্ত কনসাল জেনারেল বলেছেন, অফিসিয়ালি চেষ্টা করলে এর একটি হিসাব বের করা সম্ভব হবে। তবে বর্তমানে কতজন বাংলাদেশি আমিরাতে অবস্থান করছেন এর সঠিক কোনো তথ্য আমিরাত কর্তৃপক্ষও প্রকাশ করেনি। বলা যায়, এটি তাদের অভ্যন্তরীণ পলিসি। তবে প্রথম সচিব (শ্রম) জানালেন, আনুমানিক হিসাব মতে, আমিরাতে অবস্থানরত প্রবাসীর সংখ্যা ৮ থেকে ৯ লাখের মধ্যেই হবে। ওয়ার্ল্ড এঙ্পো ২০২০ ভেন্যু নির্ধারণীর বিষয়ে দুবাই এর জোর আলোচনা ও প্রচার শুরু হয় ২০১৩ সালের জুন-জুলাইতে আর নম্বেভর মাসে ভোট অনুষ্ঠিত হয়।

কিন্তু ২০১২ সালের আগস্ট থেকেই ভিসা বন্ধ রয়েছে। সে ক্ষেত্রে এঙ্পোর সঙ্গে ভিসা বন্ধের আদৌ কোনো সম্পর্ক নেই বলে জোর দাবি করলেন দুবাই কনস্যুলেটের কর্মকর্তারা। অবশ্যই সংযুক্ত আরব আমিরাতে নিযুক্ত বাংলাদেশি রাষ্ট্রদূত ড. মোহাম্মদ ইমরান বেশ কয়েকটি অনুষ্ঠানে এই ভোট সম্পর্কে বলেছেন, এঙ্পো ২০২০ এর ভেন্যু নির্ধারণী প্রতিযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার দ্বিতীয় ও ফাইনাল রাউন্ডে দুবাইকেই ভোট দিয়েছে। একশ্রেণীর মানুষ এঙ্পো ২০২০ এর ভেন্যু নির্ধারণী ভোটের কারণ দেখিয়ে ভিসা বন্ধ রয়েছে এমন দাবির প্রসঙ্গে দুবাই কনস্যুলেটের কনস্যাল জেনারেল মাসুদুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, ব্যবসা-বাণিজ্যের বিষয়টি কখনোই এঙ্পো ২০২০ এর সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত নয় এমন কি ভিসার বিষয়টিও এর সঙ্গে সম্পৃক্ত নয়। এটা তাদের একটি অভ্যন্তরীণ সিদ্ধান্তের ফসল।

তবে দুবাইতে বাংলাদেশিদের অপরাধের মাত্রা অনেক বেশি সে দিকটাও লক্ষ্য করা প্রয়োজন। সম্প্রতি শারজায় খুন হওয়া বাংলাদেশিদের ইস্যু উল্লেখ করে তিনি বলেন, তুচ্ছ ঘটনায় বাংলাদেশিরা একে অন্যকে নির্মমভাবে খুন করার বিষয়টিও ভিসা খোলার রাস্তায় নতুন করে বাধা সৃষ্টি করল। তবে গত বছর আমিরাতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীনে ও বাংলাদেশ দূতাবাসের মাধ্যমে সাড়ে ১৪ হাজার লোক ভিসা নিয়ে বৈধভাবেই আমিরাতে এসেছেন। সে ক্ষেত্রে ভিসা পুরোপুরি বন্ধের খবর মোটেও সত্য নয়।

এ ব্যাপারে দুবাই কনস্যুলেটের প্রথম সচিব (শ্রম) এ কে এম মিজানুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, অবশ্যই ভিসা বন্ধ নয়।

আমি গত মঙ্গলবারও অনেকগুলো ভিসা সত্যায়িত করেছি। শ্রম মন্ত্রণালয়ের অনুমতি নিয়ে যেসব ভিসা ইস্যু করতে হয় শুধু সেসব ভিসা দেওয়া স্থগিত রাখা হয়েছে। এ ছাড়া ফ্রি-জোনে যেসব কোম্পানি আছে শ্রম মন্ত্রণালয়ের অনুমতি না লাগায় তাদের ভিসাগুলো আমরা অহরহ পাচ্ছি। দুবাই আরটিএ ভিসা, গর্ভারমেন্ট অব দুবাই, গর্ভারমেন্ট অব রাস-আল-খাইমা, গর্ভারমেন্ট অব ফুজিরাহর ভিসা আমরা পাচ্ছি এবং মহিলা গৃহকর্মীর ভিসা বরাবরই খোলা রয়েছে। বরং ইদানীং এসব ভিসা আরও বাড়ছে।

এ ছাড়া ট্রানজিট ভিসা ও ভিজিট ভিসা খোলা রয়েছে। এগুলো আমাদের সত্যায়িত করা লাগে না। বাংলাদেশিদের জন্য শ্রমিক ভিসা কবে নাগাদ খুলতে পারে এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি জানান, এর জন্য আমরা দূতাবাস থেকে উদ্যোগ নিচ্ছি। বাংলাদেশ সরকার থেকে প্রবাসী কল্যাণ মন্ত্রীও আসার কথা রয়েছে। সেদিকটাও চেষ্টা চলছে কিন্তু সবকিছুই নির্ভর করে আমিরাত সরকারের উপর।

তবে সবচেয়ে বড় কথা হলো যখনই ভিসা খোলার একটু সম্ভাবনা সৃষ্টি হয় তখনই বাংলাদেশিদের ছোট-বড় অপরাধের কারণে স্তিমিত হয়ে যায় সব ব্যবস্থা। দুবাই প্রবাসী ব্যবসায়ী হাজি শাফিকুল ইসলাম বলেন, জানুয়ারি বা ফেব্রুয়ারিতে ভিসা খোলার ব্যাপারে আমরা শতভাগ আশাবাদী ছিলাম। কিন্তু অতি সম্প্রতি শারজায় ঘটে যাওয়া ঘটনা আমাদের আশার প্রদীপ নিভিয়ে দিল। ভিসা বন্ধ থাকায় হতাশা ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ছোট-খাটো একটি লাইসেন্সধারী কোম্পানিও প্রতিবছর লাইসেন্স নবায়ন ও যাবতীয় খরচ বাবদ আমিরাত সরকারকে দিতে হয় ৩৫ থেকে ৪০ হাজার দিরহাম। কিন্তু লোকবলের অভাবে সেসব লাইসেন্সধারীরাও বিপাকে পড়ছেন।

একদিকে বাংলাদেশি শ্রমিক ভিসা বন্ধ অন্যদিকে নেপাল, শ্রীলঙ্কা বা অন্য দেশি শ্রমিকদের কাজের মান দুর্বল। আবার ভারতীয় শ্রমিকদের কাজ তুলনামূলক ভালো হলেও তারা বাংলাদেশি লাইসেন্সে আসতে আগ্রহী নন। যার ফলে এসব ছোটখাটো লাইসেন্সধারীরাও অল্প দিনে সবকিছু গুটিয়ে নিয়ে দেশে পাড়ি দেওয়ার অবস্থা সৃষ্টি হচ্ছে।

 

 

সোর্স: http://www.bd-pratidin.com/index.php     দেখা হয়েছে বার

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.