আসন্ন উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহ প্রার্থীদের ব্যাপারে সতর্ক অবস্থানে আওয়ামী লীগ। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর উপজেলা নির্বাচনেও নিরঙ্কুশ জয়ের ধারা অব্যাহত রাখতে চায় ক্ষমতাসীন দলটি। উপজেলা নির্বাচনে দলীয় প্রার্থীদের বিজয় যাতে নিজেদের কোন্দলে বাধাগ্রস্ত না হয়, সে ব্যাপারে দলের হাইকমান্ড কঠোর অবস্থানে। উপজেলা নির্বাচনে কোনোভাবেই বিদ্রোহী প্রার্থী দেখতে চায় না আওয়ামী লীগ। এ ব্যাপারে দলের কেন্দ্র থেকে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের নেতাদের সতর্ক করা হয়েছে চিঠি দিয়ে।
উপজেলায় দলের বিদ্রোহী প্রার্থী দমনে সংশ্লিষ্ট দলীয় সংসদ সদস্যদেরও বিশেষ দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে কেন্দ্র থেকে। সতর্ক করা সত্ত্বেও যেসব প্রার্থী দলের নির্দেশ উপেক্ষা করে বিদ্রোহী হিসেবে অংশ নেবেন, নির্বাচনের আগেই তাদের বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে দল থেকে। সূত্রমতে, বিদ্রোহী প্রার্থীদের নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়াতে শেষ সুযোগ দিতে চায় দলের হাইকমান্ড। এর পরও যাদের সাড়া মিলবে না, তাদের দ্রুত কেন্দ্র থেকে বহিষ্কারের প্রক্রিয়া শুরু করেছে আওয়ামী লীগের হাইকমান্ড। সূত্রমতে, এ পর্যন্ত ১৯ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠেয় উপজেলা নির্বাচনে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীর সংখ্যা কমানোর কেন্দ্রীয় উদ্যোগ খুব একটা কাজে আসছে না।
১৯ ফেব্রুয়ারির প্রথম দফা নির্বাচনে ৯৭টি উপজেলার মধ্যে মাত্র ২১টিতে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী রয়েছেন। বাকিগুলোতে রয়েছেন একাধিক প্রার্থী। কেন্দ্রের চিঠি পাওয়ার পরও একক প্রার্থী নিয়ে নির্বাচনে লড়তে ব্যর্থ হচ্ছে তৃণমূল। এবারের উপজেলা নির্বাচনে চ্যালেঞ্জের মুখে থাকলেও প্রতিকূল পরিস্থিতি কাটিয়ে ওঠার সর্বাত্দক চেষ্টা করছে আওয়ামী লীগ। দলীয় সূত্রমতে, উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী ঠিক করতে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা উপজেলা সভাপতি-সম্পাদকদের কাছে চিঠি পাঠান বেশ কয়েক দিন আগে।
দলের কেউ বিদ্রোহী প্রার্থী হলে তাকে বহিষ্কারসহ কঠোর ব্যবস্থার হুঁশিয়ারি দেওয়া হয় এতে। এ ছাড়া দলের সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে কেন্দ্রীয়ভাবে সাত বিভাগে সাতটি টিম গঠন করা হয়েছে। কিন্তু কিছুতেই ফল আসেনি। দলের কেন্দ্রীয় সাত সাংগঠনিক সম্পাদক নিজ নিজ দায়িত্বপ্রাপ্ত বিভাগে দলীয় নেতাদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন। উপজেলা নির্বাচন ঘিরে সাংগঠনিক সফর অব্যাহত রেখেছেন কেন্দ্রীয় নেতারা।
দলের যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক জাহাঙ্গীর কবির নানক বিদ্রোহী প্রার্থীদের ব্যাপারে কেন্দ্র থেকে সার্বক্ষণিক তৃণমূল নেতাদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখছেন। কেন্দ্র থেকে জেলা ও উপজেলা নেতাদের দিকনির্দেশনাও দিচ্ছেন তিনি। জাহাঙ্গীর কবির নানক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, 'আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী নিশ্চিত করতে। এ জন্য কেন্দ্র থেকে সব ধরনের উদ্যোগ ও সমঝোতার চেষ্টা করা হচ্ছে। সূত্রমতে, বিদ্রোহী প্রার্থী সংক্রান্ত জটিলতা এড়াতে দলের একক প্রার্থী নিশ্চিতে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে গঠিত সাতটি টিম ইতোমধ্যে সাংগঠনিক সফরে বেরিয়েছে।
কেন্দ্রীয়ভাবে গঠন করা নেতৃত্বে রংপুর বিভাগের দায়িত্বে রয়েছেন দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য বেগম মতিয়া চৌধুরী, সমন্বয়ক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী, রাজশাহী বিভাগে প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম, সমন্বয়ক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন, ঢাকা বিভাগে প্রেসিডিয়াম সদস্য সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী, সমন্বয়ক আহমেদ হোসেন, চট্টগ্রাম বিভাগে প্রেসিডিয়াম সদস্য মোশাররফ হোসেন, সমন্বয়ক বীর বাহাদুর, বরিশাল বিভাগে উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য আমির হোসেন আমু, সমন্বয়ক আ ফ ম বাহাউদ্দিন নাছিম, খুলনা বিভাগে প্রেসিডিয়াম সদস্য আবদুল লতিফ সিদ্দিকী, সমন্বয়ক বি এম মোজাম্মেল হক, সিলেট বিভাগে প্রেসিডিয়াম সদস্য ওবায়দুল কাদের, সমন্বয়ক মিজবাহউদ্দিন সিরাজ। আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সারা দেশে উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী চূড়ান্ত নিশ্চিত এবং তৃণমূলের কোন্দল নিরসন করার জন্য সাতটি টিম কাজ করছে। উপজেলা নির্বাচনে দলে কোনো বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে না। যদি কেউ দলের সিদ্ধান্তের বাইরে যায়, তাকে বহিষ্কার করা হবে। তিনি বলেন, 'জাতীয় নির্বাচনের পর জয়ের ধারাবাহিকতা আমাদের বজায় রাখতে হবে।
জাতীয় নির্বাচনের মতো স্থানীয় নির্বাচনেও বিএনপি-জামায়াতকে পরাজিত করা হবে। যে কারণে যে কোনো মূল্যে একক প্রার্থী রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে। ' এদিকে কাজে আসছে না কেন্দ্রের কোনো উদ্যোগ। উপজেলা নির্বাচনে বিদ্রোহী প্রার্থীদের ছড়াছড়ি আওয়ামী লীগে। শুধু নরসিংদী জেলার পলাশ উপজেলায়ই রয়েছেন চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগ ও সহযোগী সংগঠনের নয়জন প্রার্থী।
আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য নূহ-উল-আলম লেনিন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, উপজেলা ও জেলা নেতাদের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিদ্রোহী প্রার্থী যাতে না থাকে সে ব্যবস্থা করা হচ্ছে। সমঝোতার ভিত্তিতেই বসিয়ে দেওয়া হচ্ছে দলের বিদ্রোহী প্রার্থীকে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে আওয়ামী লীগের আরেক প্রেসিডিয়াম সদস্য বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, আওয়ামী লীগ একটি বৃহৎ রাজনৈতিক দল। এমন দলের সমর্থন পাওয়া সবারই কাম্য। কিন্তু দিতে হবে তো একজনকে।
যে কারণে বিদ্রোহী প্রার্থী থাকবে সেটাই স্বাভাবিক। তবে উপজেলা নির্বাচনে একক প্রার্থী করতে দলের সভানেত্রী ইতোমধ্যে তৃণমূলে চিঠি পাঠিয়েছেন। ওই চিঠিতেই সব নির্দেশনা দেওয়া আছে। কেউ দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গেলেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তিনি জানান, দলের সিনিয়র নেতাদের সমন্বয়ে গঠিত সাতটি কমিটি যেখানে বিদ্রোহী প্রার্থী রয়েছে সেখানে ওই প্রার্থীকে নিয়ে তৃণমূল পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে একক প্রার্থী নিশ্চিত করছে।
সর্বশেষ প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী দলের প্রার্থী ও বিদ্রোহী প্রার্থী হচ্ছেন_ সিরাজগঞ্জের কাজীপুরে আওয়ামী লীগের মোজাম্মেল হক বকুল ও বিদ্রোহী আবুল কালাম; রায়গঞ্জের আল হাদি আলমাজি জিন্নাহ ও বিদ্রোহী নূর সাইদ সরকার; নওগাঁর মহাদেবপুরে মইনুল ইসলাম ময়েন ও বিদ্রোহী আহসান হাবীব ভোদন; জামালপুর সদরে বিজন কুমার চন্দ ও বিদ্রোহী অধ্যক্ষ আবদুল হামিদ; নেত্রকোনার দুর্গাপুরে এমদাদুল হক খান ও বিদ্রোহী নাজমুল সায়েদাৎ বাবুল; ঢাকার নবাবগঞ্জে নাসিরুদ্দীন ঝিলু ও বিদ্রোহী শেখ হান্নান উদ্দিন; পাবনার সাঁথিয়ায় মীর মঞ্জুর আলী এবং দুই বিদ্রোহী নিজাম উদ্দিন ও সিরাজ দৌলা; বগুড়ার ধুনটে টি আই এম নুরুন্নবী তারিক এবং তিন বিদ্রোহী কুদরত-ই-খুদা জুয়েল, শফিকুল ইসলাম শফি ও যুবলীগ নেতা শেখ মতিউর রহমান; সারিয়াকান্দিতে আলমগীর শাহী সুমন এবং দুই বিদ্রোহী শাজাহান আলী ও অধ্যক্ষ মুনজিল আলী; নন্দীগ্রামে আনিসুর রহমান এবং দুই বিদ্রোহী রেজাউল আশরাফ জিন্না ও অ্যাডভোকেট ইউনুস আলী; ময়মনসিংহের নিকলীতে কারার সাইফুল ইসলাম ও বিদ্রোহী আসাদুল হক; নরসিংদীর পলাশে সৈয়দ আবেদ হোসেন ও বিদ্রোহী মো. আবদুল আলী ভূঁইয়া, বেলাব উপজেলায় মো. সমসের জামান ভূঁইয়া এবং দুই বিদ্রোহী মো. শহিদুল্লাহ ও মো. নজরুল ইসলাম, খুলনার দীঘলিয়ায় খান নজরুল ইসলাম ও বিদ্রোহী গাজী সেলিম আকতার; সিলেটের জৈন্তাপুরে মো. আবদুল্লাহ ও বিদ্রোহী কামাল আহমদ; জকিগঞ্জে লোকমান আহমদ চৌধুরী ও বিদ্রোহী ইউনুছ আলী; হবিগঞ্জের মাধবপুরে আওয়ামী লীগের জাকির হোসেন চৌধুরী অসীম ও বিদ্রোহী প্রার্থী সৈয়দ হাবিবুল্লাহ চান সুজন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।