আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বইমেলা ০০২

দুপুর বেলা গরুর গোস্তো দিয়ে ভরপেট খেয়ে একটা ভাত ঘুম দিয়েছিলাম। দিনে দুপুরে মশার অত্যাচারে ঘুম ভেঙ্গে গেল। ডেঙ্গু মশা নিয়ে ক'দিন চিল্লাপাল্লা করেই সেই আন্দুলন থেমে গেছে বলে একটু মেজাজ খারাপ হচ্ছিল। রাগ কমাতে রওনা দিলাম বইমেলার পথে। একটু আয়েশ করে যাওয়ার আশায় সিএঞ্জি দাম দর করতে যেয়ে আরেক দফা মেজাজ খারাপ।

শেষমেষ ভাঙ্গা হাত নিয়ে ধাক্কাধাক্কি করে বিহঙ্গতে উঠলাম। শাহবাগে নেমে ভাবলাম টিএসসি পর্যন্ত এই দীঈঈর্ঘ পথ হেঁটে যাওয়া ঠিক হবে না। বহু কাকুতি মিনতি করার পর এক ব্যাক্তি আমাকে তার রিক্সায় ওঠার অনুমতি দিলেন। বার দশেক প্যাডেল চাপার জন্য তাকে দশটি টাকা গুনে গুনে দিতে হলো।
আজকেও মেলার উদ্যান অংশেই যাওয়া হয়েছিল।

বাংলা একাডেমির অংশে কেন জানি যাওয়ার আগ্রহ পাচ্ছি না তেমন। অথচ লিটল ম্যাগ চত্তরটা প্রতিবার আড্ডার জন্য একটা চমৎকার যায়গা ছিল। দ্বিখণ্ডিত মেলার জন্য কিছুটা বেদনা অনুভব করি। ঢাকা শহরে শীতকাল হুট করে একদিন চলে যায়। আজকে ছিল সেইদিন।

শীত চলে যাবার তিন চারদিন পরও রাস্তা ঘাটে কিছু মানুষকে দেখা যায় ভারী শীতবস্ত্র পরে থাকতে। তারা আসলে মানসিক ভাবে শীতটা তখনও কাটিয়ে উঠতে পারেন নি বা কাটিয়ে ওঠার সাহস সঞ্চয় করতে পারেন নি। এবারের বইমেলারও অনেকটা সেই দশা। সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বিশাল পরিসর থাকা সত্ত্বেও বইয়ের স্টলগুলো সেই পুরাতন ফরম্যাটটা কাটিয়ে উঠতে পারেনি। সামনে নিশ্চয় পারবে।


মেলায় ঢোকার মুখেই পুলিশের কন্ট্রোল রুম। সেখানে সারি সারি চেয়ার পাতা, আর তাতে বসে আছেন সারি সারি পুলিশ। অনেকেই দেখলাম সেই কন্ট্রোলরুমের সামনে দাঁড়িয়ে ব্যাকগ্রাউন্ডে অসংখ্য পুলিশ রেখে একটা ছবি তুলছেন। এই মুহূর্তে মোস্ট হ্যাপেনিং প্লেস অন আর্থের একটা লিস্ট করলে ঢাকা বইমেলা তাতে অবশ্যই প্রথম দিকে থাকবে।
গতদিন মেলায় ক্লকওয়াইজ চক্কর দিয়েছিলাম।

আজ তাই অ্যান্টিক্লকওয়াইজ চক্কর দেয়া শুরু করলাম। ছায়াবীথির সামনে যেয়ে দেখি পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য মহামতি তারেক অণু দন্ডায়মান। এতদিন শুধু ভার্চুয়াল জগতেই তার সাথে ইন্টার‍্যাকশন হয়েছিল বলে অনেকের মত আমারও ধারনা ছিল "তাড়েকাণু মিডিয়ার সৃষ্টি"। আজকে বুঝলাম ঘটনা তা নয়। প্রকৃতপক্ষে "তাড়েকাণুকে ঘিরেই মিডিয়ার সৃষ্টি"।


প্রফেসর হিজিবিজবিজ এসেছিলেন তার বড় ছেলেকে নিয়ে। অণুর "জমজ বড়ভাই" অপু ভাইও ছিলেন। বেশ একটা আড্ডা জমে উঠলো সেখানে। এর মাঝেই খেয়াল করলাম নিয়মিত বিরতিতে কেউ না কেউ এসে এক কপি "পৃথিবীর পথে পথে" কিনে তাড়েকাণুর থেকে অটোগ্রাফ নিয়ে যাচ্ছে। ঘটনা ইট্টু সন্দোজনক মনে হলেও এক পর্যায়ে চক্ষু লজ্জার খাতিরে আমাকেও এক কপি কিনতে হলো।

বইটা কিছুক্ষণ উল্টেপাল্টে লেখককে পরবর্তী সংস্করণের জন্য কিছু "গঠন মূলক পরামিশ" দিয়ে ভাব ধরলাম।
আমাদের আলোচনায় ঘুরে ফিরে আসছিলেন চরম উদাস, হিমু, মুখফোড় ইত্যাদি ফ্যাসিবাদী ব্লগারের পাশাপাশি আইভরি কোষ্ট ফেরত ঔপন্যাসিক আমিষুল হক পুটুন্দা। আড্ডার দ্বিতীয় পর্যায়ে অতন্দ্র প্রহরী এলেন নারীকুল পরিবেষ্টিত অবস্থায়। তার এই জনপ্রিয়তায় প্রভাবিত হয়ে টিভি চ্যানেলগুলো ইন্টারভ্যু নিতে ছুটে এল। তিনি নিজের অমায়িক হাসিটি অক্ষুণ্ণ রেখে ইন্টারভ্যু দিতে লাগলেন।

বুনোহাঁসের সাথেও ভার্চুয়াল দুনিয়ার বাইরে আজই প্রথম দেখা। তিনি তার "সদ্য সন্ত্রাস কবলিত চৌকষ মুঠোফোনটি" আমাদের এক নজর দেখার সুযোগ করে দিলেন।
এর মধ্যেই কখন যেন বেশ রাত হয়ে গেছে। তখন আমরা সবাই লাইন ধরে চরম উদাসের "লাইনে আসুন" বইখানা এক কপি করে খরিদ করে বাড়ি ফেরার লাইন ধরলাম।


সোর্স: http://www.sachalayatan.com

এর পর.....

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।