ঢাকার আশুলিয়ায় তাজরীন ফ্যাশনে অগি্নকাণ্ডের ঘটনায় মালিক ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) দেলোয়ার হোসেন ও তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তারকে কারাগারে পাঠিয়েছেন আদালত। গতকাল আসামিরা ঢাকার মুখ্য বিচারিক হাকিম আদালতে আত্দসমর্পণ করে জামিন চাইলে ঢাকার বিচারিক হাকিম তাজুল ইসলাম এই আদেশ দেন।
এর আগে জামিনের বিরোধিতা করে ঢাকার আদালতের পুলিশের জেনারেল রেকর্ডি অফিসার মো. আসাদুজ্জামান আসাদ আদালতকে বলেন, গত ২৫ নভেম্বর আশুলিয়ার নিশ্চিন্তপুরে তুবা গ্রুপের পোশাক কারখানায় স্মরণকালের ভয়াবহ অগি্নকাণ্ডে অন্তত ১১১ জনের মৃত্যু হয়। এ সময় উপর থেকে লাফ দিয়ে বেঁচে যাওয়া কয়েকজন শ্রমিক বলেছেন, আগুনের শুরুতে ফায়ার এলার্ম বেজে উঠলেও গার্মেন্ট কর্তৃপক্ষ তাদের বলে, এলার্ম নষ্ট হয়ে গেছে, আগুন লাগেনি। ঠিক করে দিচ্ছি বলে কলাপসিবল গেটে তালা এঁটে দিয়ে কাজ করতে বলেন শ্রমিকদের।
তাই এই ঘটনার জন্য এই আসামিরা দায়ী। এ কারণে তাদের জামিন আবেদন নাকচ করে কারাগারে পাঠানো হোক। এ ছাড়া বিচারিক হাকিম আদালতের রাষ্ট্র পক্ষের অতিরিক্ত পিপি আনোয়ারুল কবীর বাবুল বলেন, তাজরীনে অগি্নকাণ্ডের সময় শ্রমিকরা নিজেদের জীবন বাঁচাতে ছোটাছুটি করলেও এই আসামিরাসহ কারখানার অন্য দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা সময়োপযোগী সহযোগিতা না করায় শ্রমিকরা কারখানা থেকে বের হতে পারেননি। যার ফলে এমন বিভীষিকাময় ঘটনা ঘটে। আসামিদের তাচ্ছিল্যপূর্ণ আচরণেই শ্রমিকদের মৃত্যু হয়েছে।
আসামিদের পক্ষে জামিন শুনানিতে তাদের আইনজীবী গোলাম গাউস আদালতকে বলেন, অপরাধজনক প্রাণনাশ ও আগুন বা বিস্ফোরক দিয়ে অনিষ্ট করার অভিযোগ এই আসামিদের ক্ষেত্রে খাটে না, কারণ নিজেদের এতবড় ক্ষতি করার কোনো ইচ্ছা বা পরিকল্পনা তাদের ছিল না। তাছাড়া তাজরীন কারখানায় আসামিদের নিয়োগ করা উচ্চ বেতনভোগী দশজন কর্মকর্তা কর্মচারী ছিলেন। প্রতিদিন কারখানা পরিদর্শন করা এ দুই আসামির পক্ষে সম্ভব ছিল না। তাই আসামিদের জামিন দেওয়া হোক।
এর আগে গত বছরের ২৪ নভেম্বর সন্ধ্যায় তাজরীন ফ্যাশনসে অগি্নকাণ্ড ঘটে।
এর ফলে ১১১ জন মানুষ নিহত, দুই শতাধিক আহত হয়। পরদিন আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক খায়রুল ইসলাম অজ্ঞাত পরিচয় আসামিদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করে। ওই মামলায় নাশকতার পাশাপাশি অবহেলাজনিত মৃত্যুর ( দণ্ডবিধির ৩০৪ ক) ধারা যুক্ত করা হয়। এর পরে গত বছর ২ জানুয়ারি সিআইডি এ মামলার তদন্ত শুরু করে। গত ২২ ডিসেম্বর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগের (সিআইডি) পরিদর্শক এ কে এম মহসিনুজ্জামান খান ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম (সিএমএম) আদালতে তাজরীনের চেয়ারম্যান ও এমডিসহ মোট ১২ জনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র (চার্জশিট) দাখিল করেন।
আসামিদের মধ্যে দেলোয়ার হোসেন, তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার, প্রকৌশলী এম মাহবুবুল মোর্শেদ, ফ্যাক্টরি ম্যানেজার আবদুর রাজ্জাক, কোয়ালিটি ম্যানেজার শহিদুজ্জামান দুলাল, প্রডাকশন ম্যানেজার মোবারক হোসেন মঞ্জু পলাতক রয়েছেন।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।