আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না

'বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না' ছবিতে বেদের মেয়েটা কি সুইট ছিল! জ্যোৎস্নার হরিণ চোখ, দীঘল চুল দেখে শুধু প্রেমে পড়েই নয়, ডুবেও যেতে হতো। মনের মধ্যে মোচর দিত ভালোলাগা। এখনো পৃথিবীতে বেদের মেয়েরা আছে, বিলুপ্ত হয়নি। তাদের দেখলে এখনো মনের মধ্যে মোচর দেয়, বুক দুরু দুরু কাঁপে, চোখে ঘোর লাগে। কিন্তু আগের কাঁপাকাঁপির সঙ্গে এখনকার কাঁপাকাঁপির বিরাট পার্থক্য আছে।

আগে সবাই কাঁপাকাঁপি করত ভালোবাসায়, এখন করে ভয়ে।

দেশে খাল-বিল তো দূরের কথা, নদীই নাই। সব বালুময় চড়। তাই বেদের মেয়েরা জল থেকে ডাঙায় উঠেছে। গ্রাম-গঞ্জ পেরিয়ে এই ঢাকা শহরে এসে পেঁৗছেছে।

কিন্তু ওরা এখন আর 'নায়িকা' নেই, 'খলনায়িকা' হয়ে গেছে। চলার পথে সাপ নিয়া ভয় দেখায়, টাকা-পয়সা চায়।

সকালে অফিসের গাড়ির জন্য ওয়েট করছি। দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বিড়ি ফুকছি। হঠাৎ দেখি মানুষজন দৌড়াচ্ছে।

ঘটনা কি!!! ভালো করে খেয়াল করে দেখি, দুই বেদেনী সাপ নিয়ে মক্কেল খুঁজছে। কেউ মক্কেল হতে চায় না। তাই তারা দৌড়ের ওপর। মুহূর্তেই পুরো এলাকায় গেল্লাছুট খেলা শুরু হয়ে গেল।

শেষমেশ দেখি বেদেনীরা আমার দিকে এগিয়ে আসছে।

ভাবলাম, দৌড় দেব কিনা। পরে সিদ্ধান্ত নিলাম, দৌড় দিলে চলবে না। ইজ্জতের ব্যাপার। দাঁড়িয়ে রইলাম। যা হওয়ার হবে।

বেদেনীরা আমার কাছে আসল। একজন বয়স্কা, অন্যজন তরুণী। তরুণীকে দেখতে একেবারে বেদের মেয়ে জ্যোৎস্নার মতো সুন্দরী মনে হলো। আমি বললাম, 'তুমি দেখতে হুবহু বেদের মেয়ে জ্যোৎস্না অঞ্জু ঘোষের মতো। '

শুনে মেয়েটা ফিক করে লাজুক হেসে চোখ নিচে নামাল।

আর তার সঙ্গে থাকা বয়স্কা কড়কড়া কণ্ঠে বলল, 'সবাই এ কথা কয়। এর লাইগ্যা আমার মাইয়ার নাম রাখছি জ্যোৎস্না। '

ব্যাপারটা খুবই ইন্টারেস্টিং। আমি জানতে চাইলাম, 'তা জ্যোৎস্নার জন্য ইলিয়াস কাঞ্চনের মতো কোনো রাজকুমার পেয়েছেন, যে বাঁশি বাজিয়ে আপনার মেয়েকে পাগল করে ঘরের বাহির করেছে। '

মহিলা বললেন, 'বাঁশি তো অনেকেই বাজায়, তয় কেউ রাজপুত্রের লাহান না।

আমার এত সুন্দর মাইয়া, রাজপুত্র না পাইলে বিয়া দিবাম না'।

দেখলাম রূপবতী জ্যোৎস্নার মাথা লজ্জায় নিচু হয়ে একেবারে মাটির সঙ্গে মিশে যাচ্ছে। ঠিক তখনি কড়কড়া মহিলা আমার মুখের সামনে ফশ করে সাপ ধরে বলল- 'সাপ কিছু খাইতে চায়। ওরে খাওয়ার জন্যি ট্যাকা দ্যান'।

আমি অবাক হলাম।

এ রকম একটা ভিলেন মহিলার সঙ্গে এমন ইনোসেন্ট একটা মেয়ে ঘুরছে। মেয়েটির জন্য বুকের ভেতর চিনচিনে মায়া যেই ঘন হচ্ছিল তখনি মহিলা আবার বলল, 'কি চিন্তা করেন? ট্যাকা দ্যান, সাপ খাইব। '

আমি বললাম, তোমার সাপ কি সিগারেট খায়?

: কি কন! সাপ সিগারেট খাইব ক্যান!

: তাহলে কি চা খায়?

: আবোল-তাবোল কি কইবার লাগছেন! সাপ চা-সিগারেট খাইব ক্যান?

: দ্যাখেন খালা, আমি তো মেহমানদের চা-সিগারেট দিয়া অতিথিসেবা করি। মেহমান যদি মহামান্য টাইপের কেউ হয় তাহলে হাজির বিরিয়ানি খাওয়াই। কিন্তু তোমার সাপ দেখে মনে হচ্ছে, এটা লোকাল জাতের সাপ।

জাতি সাপ কিংবা পদ্ম গোখরার মতো উঁচু জাতের সাপ হলে হাজির বিরিয়ানি খাওয়াতাম। তোমার সাপকে চা-সিগারেটের থেকে বেশি কিছু বরাদ্দ করতে পারছি না। আমি দুঃখিত।

আমার কথা শুনে মহিলা অবাক হয়ে তার কন্যা জ্যোৎস্নার দিকে তাকাল। জ্যোৎস্নার চোখে-মুখে হাসি।

সে আমার কথা শুনে খুব মজা পেয়ে খিলখিল করে হাসতে লাগল।

মহিলা জ্যোৎস্নাকে ধমক মেরে বলল, 'হাসিছ না। হ্যায় মনে অয় পাগল, ল যাই গা। '

মহিলা সাপ বাঙ্ েঢুকিয়ে চলে গেল। সঙ্গে জ্যোৎস্নাও গেল।

কিন্তু চিনচিনে মায়াটা রয়েই গেল।

 

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।