আমি যা শুনি এবং যা বুঝি তাই নিশ্বঙ্ক চিত্তে বলতে চাই।
রেইলওয়ে প্রথম আবিস্কার হয় আজ থেকে প্রায় ২৬০০ বছর আগে। গ্রিসে এটি ব্যবহার করা হত চুনা পাথর খনি থেকে জাহাজ পর্যন্ত নিয়ে যাওয়ার জন্য। স্টিম ইঞ্জিন আবিস্কারের পুর্ব মুহুর্ত এই ট্রেইনগুলো চালানো হত বিভিন্ন ভাবে যেমন নিগ্র ক্রীতদাসদের দারা হাতে ঠেলে এবং পরবর্তিতে ঘোরা বা অন্য প্রানি দ্বারা।
স্টিম ইঞ্জিন আবিস্কারের পর ইংল্যান্ড সর্ব প্রথম এবং তার দেখাদেখি স্পেইন যাত্রি পরিসেবার জন্য বিলাশবহুল ট্রেনের প্রচলন করে।
তখনকার দিনে ঘোরায় চালিত গাড়ির পরই অত্যান্ত মুল্যবান ছিল এই ট্রেইন। তখনকার রাজারা তাদের ট্রেইনের বিলাশিতা নিয়ে করতেন অদ্ভুদ সব প্রতিযোগিতা। সেই কাহিনি নিয়ে না হয় লিখব আর একদিন।
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ এবং তৎপরবর্তি বেশ কিছুদনি পর্যন্ত পৃথিবির সকল নজর ছিল বিমান এবং মটর গারির দিকে। মানুষ একেবারে ভুলেই গিয়েছিল ট্রেইনের কথা।
আশির দশকে মুলত আবার বিশ্বের নজরে আসে এই বিলাশ বহুল ভ্রমনের কথা। এবং শুরু হয় একের পর এক বিলাশবহুল ট্রেনের কাজ।
আজ আমি এই পোস্টে সারা বিশ্বের এই ধরনের কিছু ট্রেইন নিয়ে আলোচনা করব। এত এত ট্রেইন এবং তাদের এত এত ছবি এবং ডিটেইলস যে পুরো লেখাটি আমাকে দুই ভাগে ভাগ করে ফেলতে হয়েছে। আশা করি ভাল লাগবে আমাদের।
10. Rocky Mountaineer Trans Canada Rail Adventure
এটি মুলত একটি কানাডিয়ান ট্যুর কোম্পানি। ১৯৯০ সালে প্রতিষ্ঠিত এইকোম্পানিটির উত্তর আমেরিকাতে সবচেয়ে বেশি প্রাইভেট ট্রেইন রয়েছে। অত্যান্ত লাক্সারিয়াস এই ট্রেনগুলো মুলত কানাডার রেইল রোড ব্যাবহার করে খুব যাত্রিদেরকে খুব সুন্দর কিছু প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার সুযোগ করে দেয়।
এটি মুলত একটি দ্বিতল ট্রেইন। উপরের তলাটি স্বচ্ছ কাচের ছাদ দ্বারা তৈরি যাতে যাত্রিরা আশেপাশের পুরো দৃশ্য উপভোগ করতে পারে।
এখানে তিন ক্যাটাগরির ট্রেন রয়েছে রেডলিফ, সিলভার লিফ এবং গোল্ড লিফ। ট্রেনটি প্রধানত তিনটি রুটে চলাচল করে। যাত্রিদেরকে দুইদিন এবং এক রাতের এক অসাধারান ভ্রমন করারয় এই কোম্পানিটি। এর মধ্যে থাকে তাদের নিজস্ব হোটেলে এক রাত থাকা সুযোগ।
প্রতিটি রুটই চলে রকি পর্বতমালার ভিতরদিয়ে অত্যান্ত সুন্দর কিছু স্থানের মধ্যে দিয়ে।
মজার ব্যাপার হল প্রতিটি রুটই আপনাকে রকি পর্বতমালা, অসম্ভব সুন্দর সব বন এবং অবশ্যই নায়গ্রাফলস এর প্রাকৃতিক ভিউ উপভোগ করাবে। ট্রেনটিতে আলাদা কোন ডাইনিং সার্ভিস না থাকলেও এর ফুড সার্ভিস অসাধারন এবং যে কোন উচু মানের হোটেলের সমান।
9. Bergen Railway Norway
এটি নরওয়ের বার্গান শহরের টুরিস্ট ডিপার্টমেন্ট পরিচালনা করে। মুলত নরওয়ের মত একটি সুন্দ দেশকে টুরিস্টদের কাছে আরো আকর্ষনিয় করার জন্য এই রেলওয়েটি ব্যাবহার করছে বার্গান রেইলওয়ে। এটি অসলো থেকে বার্গান পর্যন্ত প্রায় ৪৯৬ কিমি পথ ভ্রমন করে।
এটি মুলত একটি হাইস্পিড রেইল সিস্টেম। এখানে ট্রেইন লাইনের বাহ্যিক দৃশ্যগুলো অসাধারন। ট্রেনটি প্রায় ১৮২ টি বিভিন্ন ছোটবড় টানেল মধ্যদিয়ে এবং বেশ কিছু সুন্দর লেক এর পাশ দিয়ে যায়। এছারাও অসলো এবং বার্গান শহরের মধ্যে ভ্রমনের সময় এই ট্রেনটি সমুদ্র লেভেল থেকে প্রায় ৪০০০ ফিট উপরে উঠে যায় এবং এটি ইউরোপে সর্বোচ্চ। এই রেলে ভ্রমনে আপনার খরচ পরবে প্রতি জনে ৪৫০০ ডলার বা বাংলাদেশের টাকায় প্রায় সারে তিনলক্ষ টাকার মত।
8. Southern Spirit Australia
অস্ট্রোলিয়া মানেই মরুভুমি আর ক্যাঙ্গারুদের দেশ। বিশাল এই দেশটিতে একটি প্রধান চলচলের মাধ্যম হচ্ছে ট্রেন এবং প্লেন। কারন দেশটির পুরো মধ্যভাগ হচ্ছে মরুভুমি। আর বিশাল এই মরুভুমিতে গাড়ি চালিয়ে চলাচলে থেকে ট্রেন চলাচলই বেশি স্বাচ্ছন্দ দায়ক। আর তাই অস্ট্রেলিয়ান রেল ডিপার্টমেন্ট চালুকরেছে এই বিলাশবহুল ট্রেইন সার্ভিসটি।
এটি মুলত টুরিস্টদের জন্য করা হয়েছে। এই সাভিসের আওতায় আপনাকে এডিলেড থেকে ব্রিসবেন পর্যন্ত ঘুরাবে মাত্র ৬ দিনে এবং ৫ রাতে।
এইট্রেনটি এই ছয় দিনের বেশির ভাগ সময়ই দিনের বেলায় চলবে। কারন এতে যাত্রিরা বাইরের সুন্দর মনোমুদ্ধকর প্রকৃতি দিনের আলোতে পরিপুর্ন ভাবে উপভোগ করতে পারে। ট্রেনটি ছোট ছোট পাহাড়, পর্বত, সবুজ বনাঞ্চল, ধুসর জনমানবহীন মরুভুমি এবং অনেক ঐতিহাসিক স্থানের মধ্যদিয়ে পথ অতিক্রম করবে।
এবং কিছু ঐতিহাসকি স্থানে অল্পকিছুক্ষনের জন্য বিশ্রাম নেবে যাতে যাত্রিরা সেখানটা পরিদর্শন করতে পারে।
ট্রেনটিতে রয়েছে বিভিন্ন শ্রেনির কম্পার্টমেন্ট। সবচেয়ে ভালগুলোতে রয়েছে একটি কিংসাইজ বেড, আলাদা একটি রুমে একটি সোফা, পরার জন্য খুব সুন্দর করে সাজানো একটি টেবল এবং খুব সুন্দর সাজানো গোছানো একটি বাথরুম। আর সাথে পাবেন ৫স্টার হোটেলের মানের রুম সার্ভিস। খাবারের প্রয়োজনে রয়েছে রেস্টুরেন্ট।
এছারা রয়েছে বার,এবং একদম শেষ কম্পাটমেন্টে রয়েছে আলাদা ওয়াচিং ডেক।
একটু ভাবেন। দুপুরে খেয়ে সোফায় বসে একটু রেস্ট নিচ্ছেন। ঠিক আপনার রুমের জানালার পাশেই একঝাক ক্যাঙারু ছুটছে। একটা অসাধারন ফিলিংস আসবে।
এখানে একটা ট্যুর দিতে আপনার মোটামুটি ৪ লক্ষটাকার মত খরচাপাতি পরবে।
7. Hiram Bingham Peru
পেরুর মাচুপিচু সহ বিভিন্ন পুরোনো সভ্যতার ঘুরতে চান? তাহলে এই ট্রেনটির মত লাক্সারিয়াস আর কিছু হতে পারে না। পেরুর কুসকো শহর থেকে মাচুপিচু পর্যন্ত আপনাকে একটা চমৎকার রাউন্ড ট্রিপ দিবে এই অত্যান্ত বিলাশবহুল ট্রেনটি। ট্রেনটির নামকরন করা হয়েছে আমেরিকান এক্সপ্লোরার Hiram Bingham এর নামানুসারে। তিনিই প্রথম পেরুতে অবস্থিত ইনকা সভ্যতার এই মাচুপিচু কে পৃথিবীর সাথে পরিচয় করিয়ে দেন।
এখানে রয়েছে অত্যান্ত উচ্চমানের রেস্টুরেন্ট। যেখানে আপনি পাবেন সব ধরনের খাবার এবং অত্যান্ত ভাল মানের সার্ভিস। ডাইনিং কারের সাথেই রয়েছে একটি উচু মানের কিচেন যাতে রয়েছে বিশ্বমানের সব শেফ।
প্রথম ক্লাসের যাত্রিদের জন্য রয়েছে আলাদা সোফা সম্বলিত রিক্রিয়েশনাল কার যেখানে একসাথে বসে যাত্রিরা খুব সুন্দর সময় কাটাতে পারবে।
ট্রেনটিতে একই সাথে রয়েছে একটি বার কার এবং একটি অবজারভেশন কার।
যেখানে সবসময় কিছু না কিছু পার্টিটাইপ থাকেই। আরো জানতে ট্রেনটির নামের লিংকে ক্লিক করুন।
ও আর একটা কথা এতটুকু জেনে রাখুন যে এটি ওরিয়েন্ট গ্রুপের একটি সার্ভিস। বাকিটা সামনে পাবেন।
6. Trans Siberian Railroad Russia
এটা পৃথিবীতে সবচেয়ে লম্বা ট্রেইন জার্নি।
টানা ১৫ দিন ট্রেনে করে আপনাকে রাশিয়ার মস্কো থেকে জাপান সাগরের তিরে মানে চিনের রাজধানি পর্যন্ত নিয়ে যাবে। প্রায় ৫৫০০ মাইল পথ পারি দেয় এই ট্রেনগুলো। আসলে এই রুটে অনেকগুলো ট্রেন চলাচল করে। তবে গোল্ডেন ইগল এর মধ্যে সবচেয়ে ভাল সার্ভিস দেয়। চলতি পথে রাশিয়া এবং চিনের অনেক ঐতিহাসিক স্থান, সুন্দর সব বনাঞ্চল এবং অনেক গুলো লেক দেখা যায় ট্রেনথেকে।
ট্রেনটিতে রয়েছে একটি আধুনিক বিলাশবহুল ট্রেনের সকল সুবিধাদি। রয়েছে স্লিপিং কার, ডাইনিংকার, বারকার, রিক্রিয়েশনাল কার এবং অবজারভেশন কার। ডাইনিং কারে রয়েছে রাশিয়া এবং চিনের বিভিন্ন বিখ্যাৎ খাবারের আইটেম। এবং এর সাভিসের মানও যে কোন হোটেলের থেকে কম কিছু নয়।
এই ট্রেনটির সবচেয়ে আকর্ষনিয় দিক হচ্ছে ।
এর বেড রুমগুলো। অসাধারন ভাবে একোমেন্ডেশন করা বেডগুলো এমন ভাবে সাজানো হয়েছে যাতে এত দীর্ঘ জার্নিতে যাত্রিদের কোন রকম কোন অসুবিধার সম্মুখিন ন হতে হয়। প্রত্যেকটি রুমে রয়েছে একটি টিভি, একটি টেবিল সাথে বসার জন্য সোফা এবং অবশ্যই একটি অসাধারন জানালা।
ট্রেনটিতে যাত্রিদের জন্য আলদা একটি অসাধারন বারকার। (উপরের ছবিতে দ্রস্টব্য) বারকারটি অনেকগুলো সোফা, এবং একটি রিচ বার দ্বারা সাজানো যেখানে প্রায় সকল প্রকারের পানীয় পাওয়া যাবে।
এছারাও রয়েছে রেস্টুরেন্ট এবং সবার শেষে অবজারভেশন কার। ( পোস্ট বেশি বড় হচ্ছে বলে সব ছবি দেয়া সম্ভ হল না)। এই ট্রেনের টিকেট মুল্য বাংলাদেশি টাকায় সারে তিন লক্ষ থেকে শুরু করে সর্বোচ্চ ৩২লক্ষ পর্যন্ত রয়েছে। কি যাবেন নাকি??
5. Venice Simplon Orient Express Europe
এটা একটা বিশাল এবং বিখ্যাত টুরিজম কোম্পানি। এদের প্রায় ২৪ টিদেশে ৫০ টির উপরে হোটেল, বিলাশবহুল রিভার ক্রুজ(এক ধরনের ছোট শিপ), প্রচুর রেস্টুরেন্ট এবং অবশ্যই বিলাশবহুল ট্রেইন।
অনেক গুলো ট্রেইন আছে এই কোম্পানিটির। তবে বিলাশিতার দিক দিয়ে এই ট্রেইনটিকে আর কেও ছারাতে পারবে না। ট্রেনটি মুলত ফ্রান্সের রাজধানি প্যারিস থেকে তুরস্কের ইস্তাম্বুল পর্যন্ত যায়।
প্রায় ৬ দিনের এই এপিক জার্নিতে আপনাকে ট্রেনটি নিয়ে যাবে প্যারিস, রোম, ভিয়েনা, ভেনিস, ইস্তাম্বুল সহ অত্যান্ত সুন্দর সব স্থানে। এর মধ্যে হাঙ্গেরির বুদাপেস্ট এবং বুচারেস্টে আপনাকে চমৎকার কিছু দর্শনিয় স্থান সশরিরে ঘুরিয়ে আনবে তাদের রিভার ক্রুজ দ্বারা।
ট্রেনটির সাজানো হয়েছে দুইটি ডাইনিং কার, একটি কিচেন কার, একটি বার কার এবং ১২ টি স্লিপিং কার দ্বারা।
যেহেতু এটি একটি হোটেল কোম্পানি। সুতারং বুঝতেই পারছেন তাদের ডাইনিং কার গুলো সার্ভিস পুরো ৫ স্টার মানের। এছারা এদর বেডরুম গুলো সাজানো হয়েছে পুরোনো ধাচে।
প্রত্যেকটি স্লিপিং কার ডিজাইন এবং নির্মিত হয়েছে ১৯২৫ থেকে ১৯৩৫ এর মধ্যে।
এগুলো এখন আবার রিডিজাইন করে আরো বিলাশ বহুল এবং আরো আরামদায়ক করা হয়েছে। এখানে খরচ শুরু হয় টাকায় সর্বনিম্ন ৩.৫ লক্ষ থেকে আর সর্বোচ্চ টা আমার অজানা।
৭ নাম্বার ট্রেনটি এই একই কোম্পানির।
সবগুলোই একসাথে দিতে চাচ্ছিলাম। কিন্তু পোস্ট এত বড় হচ্ছিল যে যারা মোবাইল থেকে ঢুকে তাদের জন্য কস্ট হয়ে যাবে পরতে।
তাই দুই ভাগ করে ফেললাম। আপনাদের রেসপন্সের উপর ডিপেন্ড করবে পরে পর্ব দেয়া না দেয়। একদম রেডি আছে পরের পর্ব। সবার যদি এই পর্ব পছন্দ হয় তবে পরের পর্ব খুব শিঘ্রই শুভ মুক্তি পাবে।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।