ফুলে সজ্জিত প্রকৃতি মানবপ্রাণেও ছড়িয়ে দেয় ভালবাসার রঙ। আর সে রঙ-এ রঙিন নগরবাসীর গতকাল প্রধান পছন্দের জায়গা ছিল বইমেলা প্রাঙ্গণ। প্রাণের উৎসবে মেতে উঠতে দিনভর নানা প্রান্ত থেকে বিভিন্ন বয়সী নর-নারী বাসন্তী সাজে হলুদ পোশাকে সজ্জিত হয়ে এসেছিলেন প্রাণের এ মেলায়। ঘুরে ঘুরে বই দেখেছেন, কিনেছেন। কেউ কেউ আবার সময় কাটিয়েছেন বন্ধু-বান্ধব নিয়ে।
বইমেলায় ছিলেন শাওন : প্রয়াত নন্দিত লেখক হুমায়ূন আহমেদের অনুপস্থিতি কুরে কুরে খাচ্ছে তার অগণিত পাঠক ও ভক্তকে। তিনি নেই বলে কেমন যেন একটা বিষাদের ছায়া লক্ষ্য করা যাচ্ছে এবারের গ্রন্থমেলায়। গতকাল বইমেলার ত্রয়োদশ দিনে মেলায় এসেছিলেন প্রয়াত এই নন্দিত লেখকের সহধর্মিণী মেহের আফরোজ শাওন। বিকালে 'অন্যপ্রকাশ'-এর স্টলে তিনি অনেক সময় কাটান। শাওনের আগমনে হুমায়ূনভক্তরা যেন একবুক কষ্টের মাঝেও আনন্দ খুঁজে পেয়েছেন বসন্তের প্রথম দিবসে।
হুমায়ূনভক্ত ও অনুরাগীদের ভালোবাসায় শাওন নিজেও সিক্ত হয়েছেন। আবদার রাখতে গিয়ে এ সময় দীর্ঘলাইনে দাঁড়িয়ে থাকা ভক্তদের অটোগ্রাফ দেন এবং তাদের সঙ্গে ছবিও তোলেন শাওন। অন্যপ্রকাশের স্টলে কথা হয় মেহের আফরোজ শাওনের সঙ্গে। হুমায়ূন আহমেদবিহীন মেলা কেমন লাগছে_ এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বরাবরের মতো এবারও মেলায় এসে ভালো লাগছে। মেলায় এসে ভক্তদের মাঝে হুমায়ূন আহমেদের উপস্থিতি ভীষণভাবে টের পাচ্ছি।
মেলায় হুমায়ূন আহমেদের নতুন বই নেই। তবে বিক্রির তালিকায় এবারও তার (হুমায়ূন আহমেদ) বই-ই শীর্ষে রয়েছে। হুমায়ূন আহমেদের ভক্তদের অটোগ্রাফ দিচ্ছেন, কেমন লাগছে_ এমন প্রশ্নের উত্তরে শাওন বলেন, তিনি (হুমায়ূন আহমেদ) থাকাকালে আমি অনেক অটোগ্রাফ দিয়েছি। তবে এটাও ঠিক যে আমার অটোগ্রাফের মধ্য দিয়ে ভক্ত ও পাঠকরা হুমায়ূন আহমেদের ছোঁয়া নিচ্ছেন। এক প্রশ্নের জবাবে শাওন জানান, হুমায়ূন আহমেদের সঙ্গে কাটানো তার ব্যক্তিগত সময় নিয়ে তিনি একটি বই লিখবেন।
প্রয়াত লেখকের ব্যবহৃত দ্রব্যসামগ্রীর সমাহারে নুহাশ পল্লীতে হুমায়ূন আহমেদ মিউজিয়াম করার পরিকল্পনা রয়েছে বলেও জানান তিনি। এদিকে গতকাল পহেলা ফাল্গুনে পুরো মেলাপ্রাঙ্গণে ছিল বসন্ত ও ভালোবাসার ঢেউ। দর্শনার্থীদের লাল আর বাসন্তী রঙের সাজে এক ভিন্নধরনের ব্যঞ্জনার সৃষ্টি করে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও বাংলা সাহিত্যের মননের জায়গা বাংলা একাডেমিতে। কোকিলের কুহুতানে প্রথম বসন্তের বাহারি আবহে মেলা হয়ে উঠেছিল প্রাণময়।
মেয়ের বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করলেন বি চৌধুরী : মেলায় এসেছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি অধ্যাপক এ কিউ এম বদরুদ্দোজা চৌধুরী।
বিকালে বাংলা একাডেমির নজরুল মঞ্চে মেয়ে মুনা চৌধুরীর কাব্যগ্রন্থ 'অগি্ন কিংবা জলের গল্প'-এর মোড়ক উন্মোচন করেন তিনি। এ সময় মেলায় আগত অগণিত মানুষের সঙ্গে ফটোসেশন করেন সাবেক এই রাষ্ট্রপতি।
নতুন বই ও মোড়ক উন্মোচন : গতকাল মেলায় নতুন বই এসেছে ১১০টি এবং নজরুল মঞ্চে ১০টি বইয়ের মোড়ক উন্মোচন করা হয়। গতকাল প্রকাশিত বিষয়ভিত্তিক বইয়ের মধ্যে রয়েছে গল্পের ১৮, উপন্যাস ২০, প্রবন্ধ ৯, কবিতা ২১, ছড়া ১, শিশুতোষ ৮, জীবনী ২, নাটক ১, বিজ্ঞান ১, ভ্রমণ ২, কম্পিউটার ১, ধর্মীয় ২, সায়েন্স ফিকশন ৩ এবং অন্যান্য ১৭টি।
মূল মঞ্চের আয়োজন : বিকালে গ্রন্থমেলার মূল মঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় 'কাজী ইমদাদুল হক : এক বিস্মৃত মনীষা' শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান।
অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রেজিনা সুলতানা। আলোচনায় অংশ নেন বিশ্বজিৎ ঘোষ, মনজুরুর রহমান ও ফারজানা সিদ্দিকা। সভাপতিত্ব করেন সৈয়দ আবুল মকসুদ।
সন্ধ্যায় সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে আবৃত্তি পরিবেশন করে আবৃত্তি সংগঠন 'ক'জনা', 'বাংলাদেশ আওয়ামী সাংস্কৃতিক ফোরাম' (আসাফো)। এ ছাড়া লুবনা মারিয়ামের নির্দেশনায় 'সাধনা' পরিবেশন করে সৈয়দ শামসুল হক রচিত নাটক 'চম্পাবতী'।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।