ডায়েরী না কলম, শাড়ী না জিনস নাকি এইসব তুচ্ছ পার্থিব মেটিরিয়ালের চেয়ে ৬টা টাটকা গোলাপ আর ১০ লাইন কবিতা কি নিয়ে ওদের বাড়ী ঢুকব ভেবে আর ঠিক করতে পারলুম না। বেলা এগারটায় এবং বেলা বারোটায় দু বার রিং হলেও ফোন ধরলুম না। একটু চাপে থাক, প্রেমরূপ রাসায়নিক পরিবর্তনের ক্ষেত্রে চাপ বড়ই হিতকারী। কিন্তু চাপের আবার মাত্রা আছে। ধৈর্য্যশীলা প্রেমিকাদের ক্ষেত্রে প্রবল চাপ দিলেও ক্ষতি নেই কিন্তু আমার হবু শ্বশুর মশায় বড় বদরাগী চয়নিকা যেহেতু তারই মেয়ে তার রাগের প্রকৃতিও সুনামী ধরণের।
কোন পুর্বাভাস ছাড়াই পুকুরের জল আমগাছে তুলে দেবার ক্ষমতা ওরও আছে।
আর সত্যি বলতে কি পৃথিবীতে সুবিধাজনক কোন কিছুই বিনা খরচে হয়না। মানুষ আজকাল চোখেমুখে মিথ্যা কথা বলে। ওর বান্ধবীরা যখন তাদের পাওয়া উপহার এক’শ দুশ গুন বাড়িয়ে বলবে তখন আমার উপহার যদি খেলো হয় তবে কলিং বেল সারাদিন বেজে যাবে কন্তু দরজা আর হাট হবেনা। সুতরাং ৮জিবি একটা সানডিস্ক পেনড্রাইভ, দুটি গোলাপ, একটি ৩৫ টাকা মুল্যের বাহারী কার্ডে অমুল্যকে দিয়ে আর্টে লেখা ‘তুমি আমারই আমি তোমারই মনেরই মতন’ এইসব গোলা বারুদে সজ্জিত হয়ে বেলা ১টা নাগাদ ওদের দরজায় উপস্থিত হয়ে কলিং মেরে টেনশন নিয়ে দন্ডবৎ হয়ে রইলুম।
একটু পরেই ক্যাঁচ করে দরজার এক পাল্লা ভেতরে ঢুকে আমার জন্য পথ তৈরি হয়ে গেল। চুল শ্যাম্পু করে ফুলিয়ে এই ফরফরে করে রেখেছে, আর ভুরু প্লাক করে করে এমন বংকিম চাহনি তৈরি করেছে যে চাইলেই বুক ঢিব ঢিব করে।
ঘড়ি নেই তোমার? ড্রয়িং রুমে বসতে ইঙ্গিত করে বসা মাত্রই কোশ্চেন শুরু হয়ে গেল।
এই চৈনি, ইয়ে রাগ করেছ নাকি?
আমি তোমায় অনেকবার বলেছি তুমি আমার পুরো নাম ধরে ডাকবে, কায়দা মারবে না।
ইয়ে! চয়নিকা, অ্যাম রিয়েলি স্যরি! এই পেনড্রাইভটা কিনতে গিয়ে এমন জ্যামে আটকে গেলুম-
চুল ঝাঁকিয়ে চোখের কোন দিয়ে একবার পেনড্রাইভটা দেখে নিয়ে ঠোঁট বেকিয়ে বলল, কি হবে পেনড্রাইভ?
তুমি ভাল ভাল জিনিস ওতে ভরে রাখবে।
যেই ভরা জিনিস আবার ছাড়বে আমার কথা তোমার মনে পড়বে। ওঃ! কতদিন পরে এ বাড়ীতে এলুম। তোমার বাবা নিশ্চয় ধানাবাদে বহুকাল থাকবে?
কিন্তু বাবা ধানাবাদে থাকলে কি হবে বাবার জিন আমার দু হাত দূরে তরুন রক্তের মধ্যে উথাল পাথাল খাচ্ছে। গোৎ খেয়ে বেরিয়ে গেল চয়নিকা। মিষ্টির বাক্সের কথা ভুলেই গিয়েছিলাম।
সেইটা ধরে ওর পিছু নেব নেব করছি এমন সময় দেখলাম মাসীমা এইদিকেই আসছেন।
কেমন আছে তোমাদের বাড়ীর সব? থাক থাক বাবা! আর নমস্কার করতে হবেনা। বলেই মুচকি হেসে বললেন, কেন জানিনা মেয়ে তো সকাল থেকে উপোস করে আছে। তুমি যাও, হাত পা ধুয়ে নাও। বেলা হয়ে গেছে, খেতে বসে যাও।
শুনে আমার মন বড় শীতল হয়ে গেল। বাঙ্গালী কিনা! যাই করতে যায় একটু ধর্ম তার সঙ্গে পাঞ্চ করে দেয়। শুভদিনে আমি খাবার আগে খাবেনা। এই মেয়ে ফেলে আমি উর্বশী, রম্ভা, মেনকা যেই আসুক কারো দিকে ফিরে তাকাবোই না। আর গ্রহদোষে যদি সল্টু বল্টু কিছু করেও ফেলি দুহাত ধরে স্যরি বলে কনফেস করে সব ক্লীয়ার করে নেব।
আহা! এমন যার মন সে আমার দোষ কে দোষ বলে গ্রাহ্যই করবে? না।
কি তুমি শুনতে পেলেনা মা কি বলল?
এই যাই। তা তুমি কিছু খেয়ে নিতে পারতে। শুনলাম সকাল থেকে কিছুই খাওনি।
না, খাইনি।
আমার শরীর ভাল নেই। কাল অহীন দা এই এতগুলো বাটার পনীর, রেজালা মেজালা নিয়ে এসেছিল। সেই খেয়ে কাল রাত থেকে আমার শরীর বিগড়ে আছে।
অহীন? কে অহীন?
আমাদের সঙ্গে পড়ে। অহীন দাও ভূগোলে অনার্স নিয়েছে।
আমায় যা নোট যোগাড় করে দিয়েছে আমার আর কোন চিন্তা নেই।
হে বিশ্ববিধাতা, আমি কি কোথাও ফাঁকা মাঠ পাবোনা? এইসব অহিসাসুর মহিসাসুরের কি ক্ষতি করেছি যে আমার বাগানে ঘুঁতোতে আসে। এই শুভদিনে তুমি ন্যায়বিচার কর হে স্বর্গস্থ পিতা। এই বলে মনের দুঃখ মনে চেপে নাকে মুখে কি দিলুম জানিনা ভাই, কোন টেষ্ট তো পেলুম না। আর বলার মত সাফল্যের কাজ কিছুই করতে পারিনি যে শোনাব।
আমার অ্যান্টি ভ্যালেনটাইন কপাল ভাই পরকে দোষ দিয়ে লাভ নেই আর তা দিতেও চাইনা। সবাই সুখে থাক, আমার যা গ্যাঁটগচ্চা গেছে যাক!।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।