আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

বিডিআর হত্যাকাণ্ডে সম্পৃক্ত খুনিদের রক্ষায় এখনও তৎপর বিএনপি-জামায়াত



২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপি-জামায়াত জোটের দুঃসহ অত্যাচার, অনাচার এবং দুর্নীতির প্রেক্ষিতে দেশের মানুষ নিজেদের অধিকার আদায়ের জন্য নিরপেক্ষ-নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত সর্বজন প্রশংসিত নির্বাচনের মাধ্যমে ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকারকে দেশ পরিচালনার ম্যান্ডেট দিয়েছিল। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মহাজোট দেশ পরিচালনার দায়িত্বভার গ্রহণ করার মাত্র ৪৭ দিনের মাথায় ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর সদর দপ্তর পিলখানায় ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ সংঘটিত হয়। বর্বরোচিত ওই ন্যাক্কারজনক ঘটনায় সর্বমোট ৭৪ জন প্রাণ হারায়। এর মধ্যে ৫৭ জন ছিল দেশের সূর্যসন্তান মেধাবী সেনা কর্মকর্তা। এটি সহজেই অনুমেয় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব বিরোধী অপশক্তি নবগঠিত একটি সরকারকে অস্থিতিশীল করার জন্য এ ন্যাক্কারজনক ঘটনা ঘটিয়েছিল।

কয়েকটি ঘটনায় প্রমাণিত হয় যে, ২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারির আগে থেকেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া বিডিআর বিদ্রোহ যে সংঘটিত হবে, তা জানতেন। এ জন্য তিনি ২৫ ফেব্রুয়ারি ভোরে একটি কালো কাচ ঘেরা গাড়িতে করে সেনানিবাসের তৎকালীন তার বাসা থেকে বেরিয়ে যান। ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি রাতে তিনি সেনানিবাসের বাসায় ছিলেন না। তিনি ছিলেন অজ্ঞাত স্থানে। বিডিআর বিদ্রোহ প্রশমিত হলে খালেদা জিয়া অজ্ঞাত স্থান থেকে বেরিয়ে এসে তড়িঘড়ি বিবৃতি দেন, ‘বিডিআর সদর দপ্তরে সেনা কর্মকর্তা হত্যার পেছনে ছিল রহস্য।

সেখানে ষড়যন্ত্র করে সেনাবাহিনী ও বিডিআরকে দুর্বল করা হয়েছে। ’
খালেদা জিয়া এ জাতীয় বিবৃতি দিলেও ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি তিনি কোথায় ছিলেন, কেন ছিলেন, কেন সেনানিবাসের বাসা ত্যাগ করলেন, কেন ২৪ ফেব্রুয়ারি রাতে লন্ডনে অবস্থানরত পুত্র তারেক রহমানের সাথে ৮৮ মিনিটের ফোনালাপ করলেনÑতার কোনো জবাব কোনো সময়েই তিনি বা তার দল দেয়নি; যা আজো মানুষের কাছে রহস্যে ঘেরা রয়ে গেছে। এ ছাড়া আরো কিছু প্রশ্নও মানুষের মনে এখনো ঘুরপাক খাচ্ছে। যেমন, পিলখানায় বিএনপি নেতা নাসিরউদ্দিন পিন্টু কার নির্দেশে ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি বিডিআর বাহিনীকে খাবার ও পানি যোগান দেয় এবং ২৬ ফেব্রুয়ারি বিকেলে খুনীদের পালিয়ে যাওয়ার সব ব্যবস্থা করে দেয়। কার নির্দেশে খুনিদের বেসামরিক পোশাক ও নৌকা জোগাড় করে দেয়।

ঘটনা সংঘটিত হওয়ার সপ্তাহখানেক আগে থেকে কার নির্দেশে নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন হিযবুত তাহরীর প্রচারপত্র বিলি করে বিডিআর বাহিনীকে অশান্ত করেছিল?
সে যাই হোক, বিডিআর বিদ্রোহ সংঘটিত হওয়ার পর নবগঠিত মহাজোট সরকার কালবিলম্ব না করে তিন পর্যায়ে এই ঘটনার তদন্ত কাজ সম্পন্ন করে। স্বচ্ছতা বজায় রাখার জন্যই মহাজোট সরকার বিডিআর কর্তৃক তদন্ত, সেনাবাহিনী কর্তৃক তদন্ত এবং জাতীয় তদন্তের ব্যবস্থা করে। তদন্ত শেষে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে কয়েকটি দাবি উত্থাপিত হয়। এর মধ্যে অন্যতম ছিল বিদ্রোহের বিচার সামরিক আইনে করা ও চাহিদা অনুযায়ী চাকরির ব্যবস্থা করা। সরকার অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে সেনা কর্মকর্তাদের সকল দাবি মেনে নেয়।

সেই সঙ্গে বিচার প্রক্রিয়াকে বিতর্কের ঊর্ধেŸ রাখার জন্য ২০০৯ সালের ১৭ আগস্ট রাষ্ট্রপতি কর্তৃক সংবিধানের আর্টিকেল ১০৬-এর অধীনে সুপ্রিম কোর্টে রেফারেন্স প্রেরণ করেন। ২০০৯ সালের ১৯ আগস্ট সুপ্রিম কোর্ট কর্তৃক ১০ জন সিনিয়র আইনজীবীকে এ্যামিকাস কিউরি (আদালতের বন্ধু) হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্য যে, বিএনপি-জামায়াত জোট বিডিআর বিদ্রোহের বিচার সংক্রান্ত কার্যক্রম ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য একের পর এক অপপ্রচার চালিয়ে সেনাবাহিনী এবং দেশের মানুষের মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর কাজে জড়িত ছিল; এমনকি এখনও জড়িত রয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোটের অনেক নেতাই ওই সময়ে সেনা বিধি ৫ (পাঁচ) মোতাবেক সেনা আইনে বিদ্রোহের বিচারের বিরোধিতা করতে থাকেন। সে সময় এ্যামিকাস কিউরি হিসেবে বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা যেসব বক্তব্য প্রদান করেন তাতেও প্রতীয়মান হয় নৃশংস বিডিআর হত্যাকান্ডে সম্পৃক্ত খুনিদের রক্ষায় তখন এবং এখনও তৎপর রয়েছে বিএনপি-জামায়াত জোট।


সে সময় বিএনপিপন্থি আইনজীবী টি এইচ খান বলেছিলেন, ‘সেনা আইনে বিডিআর বিদ্রোহের বিচার সম্ভব নয়। এই রেফারেন্স ষড়যন্ত্রমূলক এবং সুপ্রিম কোর্ট মতামত দিতে বাধ্য নয়। ’
বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব উদ্দিন বলেছিলেন, ‘সেনা আইনে বিডিআর বিদ্রোহের বিচার সম্ভব নয়, এক্ষেত্রে সেনা বিধির ৫ ধারায় দুইটি প্রজ্ঞাপন জারি করতে হবে। ’
জামায়াত-বিএনপি জোটের আদর্শপুষ্ট আইনজীবী মাহমুদুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে ভূতাপেক্ষ কার্যকারিতা দেওয়া সম্ভব নয় বিধায় সেনা আইনে বিচার সম্ভব নয়। ’
বিএনপির শাসনামলে নিয়োজিত অ্যাটর্নি জেনারেল এম এ হাসান আরিফ বলেছিলেন, ‘সেনা আইনে বিচার সম্ভব নয়।

তবে দ্রুত বিচার আইনে বিচার সম্ভব। ’ রেফারেন্স পাঠানো ঠিক হয়নি বলেও হাসান আরিফ মন্তব্য করেন।
জানা যায়, বিএনপি-জামায়াত সমর্থিত আইনজীবীরা এই ধরণের মতামত প্রদানের আগে বিএনপির স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে যোগদান করেন এবং সেখান থেকে নির্দেশিত হয়ে তারা প্রায় একই রকম মন্তব্য করেন। স্ট্যান্ডিং কমিটির বৈঠকে ব্যারিস্টার মওদুদ আহমেদও সেনা আইনে বিডিআর হত্যাযজ্ঞের বিচারের ঘোর বিরোধিতা করেন।
পৃথিবীর ইতিহাসে আসামির সংখ্যা বিবেচনায় এতো বড় বিচার কার্যক্রম কোথায়ও কখনও অনুষ্ঠিত হয়নি।

সঙ্গত কারণেই এ বিচারকে অধিকতর স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ ও প্রশ্নাতীত করার জন্য রায় পেতে প্রায় ৪ বছর ৯ মাস সময় লেগেছে। এই সময়ের সুযোগ নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট বিচার প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত করার লক্ষ্যে বিরতিহীনভাবে নানাবিধ অপপ্রচার চালিয়ে যাচ্ছে। এমনকি তারা ক্ষমতায় গেলে বিজিবি’র নাম পরিবর্তন করে বিডিআর এবং আগের পোশাক বহাল রাখার অঙ্গীকার ব্যক্ত করে। এভাবে বিভিন্ন সময়ে বাহিনীর ভেতরে-বাইরে উস্কানিমূলক ও বিভ্রান্তিকর প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে আসছে।
বিজিবিতে ভবিষ্যতে যে কোনো প্রকার বিদ্রোহ বন্ধের জন্য বর্তমান সরকার ‘বিজিবি অ্যাক্ট-২০১০’ জাতীয় সংসদে পাস করেছে, যা আর্মি অ্যাক্টের অনুরূপ।

এই আইনে বিদ্রোহের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদন্ড। এ প্রেক্ষিতে বিএনপি-জামায়াত জোট ইতোমধ্যে ঘোষণা দিয়েছে যে, ক্ষমতায় গেলে তারা এই আইন বাতিল করে পূর্বের আইন বহাল করবে।
এ ধরণের অভিপ্রায় মূলত খুনিদের উৎসাহ দেওয়ারই নামান্তর। আমাদের সেনাবাহিনীর দেশপ্রেমিক সদস্যদের এবং দেশের আপামর জনগণের আজ বুঝতে বাকি নেই, বিডিআর হত্যাকান্ডের বিচার নিয়ে বিএনপি-জামায়াত জোট ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করার পাঁয়তারা করছে। বিডিআর হত্যাকান্ডের বিচার নিয়ে দেশের সাধারণ মানুষের অনেকেই যে তথ্যটি জানে না তা হলো মেধাবী সেনা অফিসারদের খুনি পথভ্রষ্ট বিডিআর সদস্যদের রক্ষার জন্য জামায়াত-বিএনপি জোট তথা স্বাধীনতাবিরোধী আদর্শে বিশ্বাসী আইনজীবীরা খুনিদের রক্ষায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছে।

ইতিহাসের বর্বরতম হত্যাযজ্ঞ সংঘটনকারী আসামিপক্ষের আইনজীবীদের তালিকা দেখলেই সচেতন দেশবাসী এই সত্য অতি সহজেই উপলব্ধি করতে সক্ষম হবেন। প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যায়, নৃশংস বিডিআর হত্যাকান্ডে জড়িত খুনিদের রক্ষায় আইনজীবী হিসেবে আসামি পক্ষের পাশে দাঁড়ায় বিএনপি-জামায়াতপন্থি আইনজীবীরা। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, আসামি পক্ষের আইনজীবী অ্যাডভোকেট আমিনুল ইসলাম। বিএনপির-জামায়াতের আদর্শপুষ্ট এই আইনজীবী বিএনপি নেতা অ্যাডভোকেট মাহবুব উদ্দিনের জুনিয়র হিসেবে কাজ করতেন এবং তিনি বিএনপির একজন সক্রিয় রাজনৈতিক নেতা।
অ্যাডভোকেট ফারুক আহমেদ।

জামায়াতপন্থি এ আইনজীবী ছাত্রজীবনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ইসলামী ছাত্রশিবিরের হল কমিটির আহ্বায়ক ছিলেন। এছাড়া তিনি বিগত বিএনপি-জামায়াত সরকারের সময়ে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের স্পেশাল পিপি ছিলেন।
অ্যাডভোকেট সুলতান আহমেদ। বিএনপির রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে জড়িত এ আইনজীবী বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিঞার জুনিয়র হিসেবে কাজ করেন।
অ্যাডভোকেট মো. জামাল উদ্দিন খন্দকার।

তিনি বিএনপি সমর্থিত একজন আইনজীবী হিসেবে সর্বমহলে পরিচিত।
অ্যাডভোকেট শফিকুর রহমান। জামায়াতের রাজনীতির সাথে সক্রিয়ভাবে সংশ্লিষ্ট এ আইনজীবী অ্যাডভোকেট হাজী নজরুল ইসলামের জুনিয়র হিসেবে কাজ করেন।
অ্যাডভোকেট শাহিন সুলতানা। তিনি বিএনপি সমর্থক আইনজীবী হিসেবে পরিচিত।


অ্যাডভোকেট মো. সাইফুল ইসলাম। তিনি বিএনপি-জামায়াত আদর্শপুষ্ট একজন আইনজীবী। অ্যাডভোকেট মো. রেজাউল করিম সরকার। তিনি বিএনপি-জামায়াতের আদর্শে বিশ্বাসী একজন আইনজীবী।
এভাবে বিডিআর হত্যাকান্ডের বিচারে সম্পৃক্ত আইনজীবীদের তালিকা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে, নৃশংস এ হত্যাকান্ডে জড়িত খুনিদের রক্ষা করতে জামায়াত-বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা মূলত তৎপর রয়েছে।

তারা নানাভাবে সময়ক্ষেপণ করাসহ বিচারকে কৌশলে বাধাগ্রস্ত করারও চেষ্টা করেছে। আর বিচারকাজে জড়িত আইনজীবীদের নানাভাবে পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান করে চলেছে বিএনপি-জামায়াতপন্থি রাজনীতিবিদরা।
ফলে এটি সহজেই অনুমেয় বিএনপি-জামায়াত এবং তাদের আদর্শপুষ্ট ব্যক্তিবর্গ স্পষ্টতই খুনিদের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে। তারা নানাবিধ উস্কানিমূলক বক্তব্য দিয়ে সেনাবাহিনী তথা দেশের মানুষের কাছে অত্যন্ত মর্মস্পর্শী এবং আবেগপ্রবণ একটি বিষয়কে কাজে লাগিয়ে মিথ্যা প্রচার-প্রচারণা ও ভুল ব্যাখার মাধ্যমে ধুম্রজাল সৃষ্টি করে রাজনৈতিক ফায়দা লোটার হীন চক্রান্তে লিপ্ত।
বাংলার মানুষ বায়ান্নতে ভুল করেনি, ভুল করেনি ঊনসত্তর, সত্তর কিম্বা একাত্তরে।

১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে যে জাতি স্বাধীনতা অর্জন করেছিল, আজ তারই সুযোগ্য কন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সে জাতি গণতন্ত্র রক্ষায় দৃঢ়প্রতীজ্ঞ। এ জাতি বঙ্গবন্ধুর হত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিত হতে দেখেছে, যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রত্যক্ষ করছে এবং অবশ্যই বিডিআর বিদ্রোহের নারকীয় ঘটনার খুনিদের বিচারের ঘোষিত রায় কার্যকর হওয়া অবলোকন করবে। সেদিন বেশি দূরে নয় যেদিন জামায়াত-বিএনপির মায়াকান্নাকে ভুল প্রমাণিত করে বিডিআর হত্যাকান্ডের সকল অপরাধীদের সমুচিত বিচারের রায় বাংলার মাটিতে কার্যকর হবে।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.