সত্য তখনই দাম পায়, যখন তার পাশে মিথ্যা নামক অদৃশ্য বস্তুটি স্থান পায়......
মৃত্যু দন্ড, অপরাধির জন্য সর্বোচ্চ শাস্তি। যদিও পৃথিবীর অনেক দেশ আছে, যেখানে সর্বোচ্চ শাস্তি হিসেবে মৃত্যু দন্ড দেওয়া হয় না, কিন্তু বিশ্বের বেশির ভাগ দেশে মৃত্যু দন্ড দেবার বিধান রয়েছে। এই শাস্তির বিধান পৃথিবীতে যত গুলি আইনি শাস্তি রয়েছে, তার মধ্যে সব থেকে পুরাতন। তাই সময়ের সাথে এই মৃত্যু দন্ড কার্যকর করার পদ্ধতি একেক সময়ে একেক পন্থায় হয়েছে। আজ আমি আপনাদের পরিচয় করিয়ে দিব এমন বীভৎস কিছু পন্থার সাথে যা সম্পর্কে জানলে আপনারও ভয় লাগবে, শুধু একবার চিন্তা করুন আসামির জায়গায় আপনি।
তাহলে চলুন জেনে নেওয়া যাক মৃত্যু দন্ড কার্যকর করার ২৫টি বীভৎস পন্থা সম্পর্কে,
সেপপুকুঃ
সেপপুকু (Seppuku) মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পদ্ধতি না বলে আত্মোহত্যার পদ্ধতি হিসেবে বেশি পরিচিত জাপানের সামুরাইদের মধ্যে। এই পদ্ধতি মৃত্যুররন করা অনেকটা সন্মানের সাথে মৃত্যুবরন করার সমপর্যায়ে পরে। এই পদ্ধতিতে সামুরাই নিজের তলোয়ার দিয়ে নিজের পেটে আঘাত করে, যখন তার পেটের মধ্যে দিয়ে নাড়ি বাইরে বেরিয়ে যায়, তখন তার কাছের কোন বন্ধু তলোয়ার দিয়ে এক কোপে আত্মোহত্যাকারির মাথা দেহ থেকে আলাদা করে ফেলে। আপনার কাছে এই পদ্ধতিতে মৃত্যুবরন করা অমানবিক মনে হলেও মৃত্যুবরনকারি সামুরাইয়ের কাছে এটি অনেক সন্মানের সাথে মৃত্যুবরন করা আর তার বন্ধুর কাছে বন্ধুর প্রতি জানানো শেষ শ্রদ্ধা।
নির্লজ্জ ষাঁড়ঃ
নির্লজ্জ ষাঁড় (Brazen Bull) পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা ইতিহাসের অমানবিক পদ্ধতি গুলির মধ্যে একটি।
এই পদ্ধতি প্রথম চালু করেন সিসিলির স্বৈরশাসক একগ্রাগাস (Akgragas), আর এই পদ্ধতি চালু করার জন্য পরামর্শ দেন তৎকালীন সময়ের ধাতু কারুকার্যকর প্রিলিয়স (Prilios)। ধাতু দিয়ে তৈরি করা এই ষাঁড়কে এতটা বড় করে বানানো হত যেন এর পেটের মধ্যে একজন মানুষকে ঢোকানো সম্ভব হয়। মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামিকে এই ষাঁড়ের পেটের মধ্যে ঢুকিয়ে বাইরে থেকে পেটের দিকে আগুন জ্বালিয়ে দেওয়া হত। যার ফলে ষাঁড়ের ভিতরে থাকা আসামি ধীরে ধীরে সরাসরি আগুনে না ঝলসে আগুনের তাপে মারা যেত। আর এই ষাঁড়কে এমন ভাবে বানানো হত যাতে ভিতরে পুরতে থাকা আসামির চিৎকার শুনে মনে হত যেন ষাঁড় চিল্লাচ্ছে আর পুরতে থাকা আসামির ধোয়া ষাঁড়ের নাক দিয়ে বের হত।
যা জল্লাদ এবং উপস্থির সকল দর্শক আনন্দ উল্লাসের সাথে উপভোগ করত।
কলম্বিয়ার নেকটাইঃ
কলম্বিয়ার নেকটাই (Colombian Necktie) পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার পদ্ধতি বর্তমানে কলম্বিয়া সহ ল্যাটিন আমেরিকার বিভিন্ন দেশে চালু রয়েছে। এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা হয় শুধু মাত্র মাদক ব্যাবসায়িদের জন্য। এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ক্ষেত্রে আসামির গলা কেটে, কাঁটা অংশ থেকে আসামির জিব্বা বের করে রাখা হয়। আর তা প্রদর্শনির জন্য রাখা হয়।
যাতে অন্যান্য মাদক ব্যাবসায়িদের মধ্যে ভয়ের সৃষ্টি হয়।
ক্রুশকাঠে বিদ্ধ করে হত্যাঃ
ক্রুশকাঠে বিদ্ধ করে হত্যা (Crucifixion) যদিও ধর্মিয় ভাবে খ্রীষ্টয় ধর্মালম্বিদের কাছে অনেক পবিত্র, কিন্তু বাস্তব হচ্ছে খ্রীষ্টিয় ধর্ম মতে ঈসা (আঃ) এর মৃত্যুদন্ড (!!!) কার্যকর করার পূর্বে এবং পরে রোমান সম্রাজ্যের মৃত্যুসাজা প্রাপ্ত সকল আসামিকে এই প্রথায় মৃত্যুদন্ড দেওয়া হত। তাই এই ক্রুশ কি ভাবে আর কখন থেকে পবিত্র হল তা নিয়ে অনেকের মাঝেই বিতর্ক আছে। সে যা হোক, এটি ছিল রোমানদের সব থেকে জনপ্রিয় পন্থা। এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ড দেবার আগে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামিকে অনেক অত্যাচার করা হত, তারপর তাকে বাধ্য করা হত তাকে যে ক্রুশকাঠে ঝোলানো হবে সেই ক্রুশকাঠটিকে নিজের কাঁধে করে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জায়গায় নিয়ে যাবার জন্য।
এর পরে তাকে ক্রুশকাঠের উপর শুয়িয়ে তার দু'হাতের পাতা বরাবর লোহার প্রেক পুতে দেওয়া হত এছাড়াও তার দু'পা এক করে লোহার প্রেক পুতে দেওয়া হত খুটির সাথে। এভাবেই ঝুলে থাকত মৃত্যু না হওয়া পর্যন্ত। সাধারনত সপ্তাখানেক সময় লাগত মৃত্যু হতে। মৃত্যু হত শ্বাস বন্ধো হয়ে।
ফাঁসি, ডুবানো, খন্ড করনঃ
ফাঁসি, ডুবানো, খন্ড করন (Hanged, Drawn and Quartered) পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা ইতিহাসের সব থেকে অমানবিক পন্থা।
এই পদ্ধতি চালু ছিল ইংল্যান্ডে। এই পদ্ধতিতে মৃত্যুদন্ড প্রাপ্ত আসামিকে একটি কাঠের সাথে বেঁধে, ঘোড়া দিয়ে বেঁধে টানতে টানতে নিয়ে যাওয়া হত মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার জায়গায়। এরপরে তাকে ঝুলিয়ে দেওয়া হত ফাঁসির দড়িতে। কিন্তু মৃত্যুবরন করার আগেই তাকে ফাঁসির দড়ি থেকে খুলে ফেলা হত। এরপরে তাকে পানিতে ডুবানো হত।
এখানেও তার কপালে মৃত্যু থাকে না। এর পরে আধমরা আসামিকে হাত পা বেঁধে স্বজ্ঞানে তার পেট কেটে পেটের মধ্য থেকে ভুড়ি বের করে আনা হত। এসময় বিশেষ ভাবে খেয়াল রাখা হত যেন কোন ভাবেই তার মূল রক্ত পরিবাহি তন্ত্র ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, ফলে আসামির মৃত্যু তৎক্ষণাৎ হত না। এরপরে আসামির সামনেই তার নাড়িভুড়িকে আগুনে পোড়ানো হত। এরপর ধারালো কুড়াল দিয়ে আসামির জীবন থাকা অবস্থায় তার দেহকে চার খন্ড করা হত।
সব শেষে তার মাথা কেটে ফেলা হত। বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই মাথা কাঁটার আগ পর্যন্ত আসামি বেঁচে থাকত। এরপরে তার দেহের বিভিন্ন অংশ ইংল্যান্ডের বিভিন্ন অঞ্চলে পাঠিয়ে দেওয়া হত, জনগনকে দেখানোর উদ্দেশ্যে।
এই ছিল মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ২৫টি বীভৎস পন্থা। বর্তমান যুগে এই সকল পদ্ধতির মধ্যে কয়েকটি বাদে বাদবাকি পদ্ধতি গুলি ব্যাবহৃত হয় না।
মৃত্যু সকল জীবের চিরন্তন সত্য একটি জিনিষ। আসুন সবাই দোয়া করি যেন আল্লাহ আমাদের সকলকে শান্তিতে মৃত্যুবরন করার তৌফিক দান করেন। আমিন।
পূর্বের পর্বগুলিঃ
০১) মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ২৫টি বীভৎস পন্থা (১ম পর্ব)
০২) মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ২৫টি বীভৎস পন্থা (২য় পর্ব)
০৩) মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ২৫টি বীভৎস পন্থা (৩য় পর্ব)
০৪) মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ২৫টি বীভৎস পন্থা (৪র্থ পর্ব)
০৫) মৃত্যুদন্ড কার্যকর করার ২৫টি বীভৎস পন্থা (শেষ পর্ব)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।