আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সবাই অসাম্প্রদায়িক বাঙালি হলে হানাহানি থাকবে না

যখন উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার প্রস্তাব করা হয়, তখনই আমরা প্রতিবাদ শুরু করলাম। পাকিস্তানিদের এই অন্যায় পূর্ববাংলার কেউ মেনে নিতে পারেনি। তাই ছাত্রসমাজসহ সব মানুষ ভাষা আন্দোলনে যুক্ত হয়েছিল। আমিও ওই একই কারণে ভাষা আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়ি। আমরা তো বাঙালি।

পুরো পাকিস্তানের ৫৬ শতাংশ মানুষ পূর্ব পাকিস্তানের। এ দেশের হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান-মুসলমানসহ সব ধর্ম ও গোত্রের মানুষ সবাই বাংলা বলে। ধর্মের ভিত্তিতে এরা ভাগ হলেও সবার পরিচয় তারা বাঙালি। ১৯৪৮ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে আমাকে আহ্বায়ক করে যে কমিটি গঠিত হয়েছিল, সেখান থেকে আমরা ডাক দিলাম রাষ্ট্রভাষা বাংলা চাই। এর মানে ছিল, বাঙালিদের রাষ্ট্র চাই।

সেই রাষ্ট্র পেলেও স্বাধীনতার এত বছর পরও মানুষের মৌলিক অধিকার পূর্ণ হয়নি। অথচ আমরা মুক্তিযুদ্ধ করেছি বাঙালিদের স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্য। আমার ভাবনা হলো, আমাদের স্বাধীনতা। আমাদের স্বাধীনতা নিয়ে এই যে জামায়াতে ইসলামী লম্ফঝম্ফ করে, তাদের বিরুদ্ধে মানুষকে আরও সজাগ করে তোলা দরকার। জামায়াত যদি বাংলাদেশের স্বাধীনতা নিয়ে আগামীতে ছিনিমিনি খেলতে চায়, তাহলে জামায়াতসহ তাদের বিদেশি মদদদাতারা লণ্ডভণ্ড হয়ে যাবে।

জামায়াতিরা বাংলায় কথা বলে। তারাও বাঙালি। মাওলানারা যে তফসির করে, তা কি বাংলায় করে না? তাহলে আবার কীভাবে তারা নিজেদের বাঙালি বলে না?

আমরা তো অনার্য। এখন অনেকের অনার্য বলতে লজ্জা করে। কিন্তু আসলে এটা তো আমদের গর্বের বিষয়।

আমরা সেই অনার্য আমরা বাংলা ভাষায় কথা বলতাম। সত্যিকার অর্থে আমরা তখন থেকেই বাঙালি। আমি নমঃশূদ্র ছিলাম। এটা আমি আমার পূর্বপূরুষ থেকে পেয়েছি। আসলে আমি মনে করি বাংলা ভাষা ও দেশকে যারা ভালোবাসে তারা এ দেশ ও মানুষের কল্যাণে নিজেকে উৎসর্গ করবে।

আর যারা বিদেশে বসে বাংলা ভাষা ও দেশের প্রতি দরদ দেখানোর ভাব নেয়, আসলে তারা নিজেদের সঙ্গে নিজেরাই এক ধরনের প্রতারণা করছে। আমি বলতে চাই বিদেশে বসে বিদেশি ভাষা শিখে বাঙালি হওয়া যায় না। বাঙালি হতে হলে বাংলার মানুষের সঙ্গে নিজের সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। আসলে এখনো আমাদের মধ্যে একটি অংশ আছে যারা মুসলমান হতে চায়, কিন্তু বাঙালি হতে চায় না। কিন্তু আমি বলতে চাই আমাদের ধর্ম তো আছেই।

মুক্তিযুদ্ধ হয়েছে আমার দেশকে স্বাধীন করার জন্য। সেই জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম। মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীদের বিচার চাই। অসাম্প্রদায়িকতা মুখে থাকলে হবে না। তা বাস্তবেও প্রমাণ করতে হবে।

বাংলাদেশ অসাম্প্রদায়িক হবে। আমাদের দেশের সব ধর্মের মানুষ স্বাধীনভাবে বসবাস করবে। সবাই বাংলায় কথা বলবে। বাঙালি হয়ে চলবে। হানাহানি আর থাকবে না।

এটাই সবার অধিকার। অনুলিখন- রুহুল আমিন রাসেল

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.