আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি।
ক্ষমতার হিংস্রতা, বিত্তের অহঙ্কার এবং মানুষ!
মিশে যেতাম সবার সাথে, কে গরিব, কার বাবার সামর্থ বেশি, কার বেশি ক্ষমতা- সেটি কখনোই বিবেচনায় ছিল না। আমি যে গ্রামে জন্মেছি সেখানে দেখেছি চেয়ারম্যান মেম্বাররাই ছিলেন এলাকার শক্তিমান-প্রভাবশালী মানুষ। তাদের মানুষ সেলাম করে, কুর্নিশ ঠোঁকে, দেখলে রাস্তার এক পাশে দাঁড়িয়ে নরম, সুরে আদাব বা সালাম দেয়।
আমরা এ বৃত্ত বলয়ের বাইরে ছিলাম, সেটি বলা যাবে না।
আমার জন্ম এলাকা, বেড়ে ওঠা এবং পরে যেখানে যেখানে আমি থেকেছি বা এখনো থাকছি সেখানে দেখছি মানুষ ক্ষমতাকে পুঁজা করে, ক্ষমতার পদতলে লুটিয়ে পড়ে। তবে তার ফরমেটটা ভিন্ন। ক্ষমতা মানুষকে রাজা বাদশার ভাব এনে দেয়, যেমন ধরেন যে বিড়ি খেতো, সে চেয়ারম্যান হলে চুরুট খায়। শার্ট কাঁদে ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ায়, চ্যালা চামুন্ডা থাকে।
যারে তারে মারধর, গালমন্দ করার স্বাধীনতা ভোগ করেন। বোধ করি এখনো মানুষ ক্ষমতাবানদের নির্দেশ মেনে চলেন, বা চলতে বাধ্য হন।
সাধারণত গ্রাম গঞ্জে যারা ক্ষমতাবান তারা বিনোদন বঞ্চিত। স্পিরিট বা ছোলা মদ খায়। তাস খেলতে খেলতে চা বিড়িতে অন্ধকার রাত পার করে টুক টুক করে বাসায় ফিরে আসে।
এ সব মানুষ তাদের থেকে কম সামর্থবানদের মানুষ মনে করতো্ না। এখনো করে না। তবে এখনকার ব্যাপ্তিটা বেশি।
আমাদের দেশের পুলিশ, আমলা বা আইনরক্ষী বাহিনীর লোকজন যে রকম নিজেদের জমিদার ভাবেন, অহঙ্কারের সাথে হাওয়ায় উড়ে বেড়ান, তাদের সাথে যুক্ত হয়েছে নয়া এক শ্রেণী তারা বিত্তবান। এদের বয়স দিয়ে মাপা যাবে না।
এরা এক ধরণের বিত্তবিলাসী অহঙ্কারী। মানুষকে দাবিয়ে রাখা, শাসনে রাখায় আনন্দ পায়। অদ্ভূত এবং নির্মম বিকৃত আনন্দ।
আমি দেখি! আর ভাবি সেই শৈশবেই ভালো ছিলাম। আমাদের কম সামর্থের আত্মীয়রা পাশাপাশি বসবাস করতেন, এখনো করেন।
আমাদের বাবা মা কখনো তাদের সাথে সামান্যতম বেয়াদবি সহ্য করেন নি। এখনো করেন না। এমন কি বাড়ি এসে ভিক্ষে করতেন, এামন মহিলাদের আমরা কখনো তুমি করে বলেছি বা এখনো বলি এমন নজির নাই। এখন যেটি আমাদের সন্তানরা হামেশাই করছে।
আমরা যখন ছোট - আশির দশকে, গরিব মানুষদের সরকার রিলিফ হিসাবে গম দিত।
আমি সে গমে ভাগ বসাতাম। গম ভাজা আমার খুবই প্রিয় ছিল। সে সময় সবাই ভাত খেতে চাইত, রুটি বিশেষ করে লাল আটার রুটি ছিল গরিবের খাবার! বড় লোকরা ভাত খায়। মোটা চালের ভাত।
আমার আরেকটা প্রিয় খাবার ছিল- এটাকে নোয়াখালীর স্থানীয় ভাষায় গুলগুলা বলে।
নারকেল, চিনি এবং আটা দিয়ে বানানো। ছোটবেলায় মনে হতে, বড় হলে প্রতিদিন গুলগুলা খাবো। সে জন্য গুলগুলা বানানোর লোকও মনে মনে ঠিক করে রেখেছিরাম, তিনি আমার বড় ফুপ্পি। অসাধারণ এ পিঠাটি তিনি বানাতে পারতেন।
আজ যখন জীবনের ৩৪ এ এসে গল্প করছি, তার কথা খুব মনে পড়ছে।
তিনি এখন আর বেঁচে নেই।
এই নগরে কত রকমের মানুষ দেখি, সব মানুষের ভেতরেই কেমন জানি চাপা একটা অহঙ্কার। হাতে কিছু টাকা পয়সা জমলে, ক্ষমতা থাকলে সেটি প্রয়োগ করার চেষ্টা। ছোটবেলায় একটা গল্প পড়েছিলাম দীন মোহাম্মদরে লেখা- বিনয় ও নম্রতা। এখন সে সব পড়ানো হয় কি না , জানি না।
কিন্তু আশপাশে দেখি গরিব মানুষের সাথে বিত্তবান ও ক্ষমতাবানরা যেভাবে কথা বলেন এবং সেটি ন্যায্য বচলে দাবি করেন- সেটি আমার কাছে খুব কষ্টের। আপনি বিত্তবানদের পরিবারের প্রধান ও গৃহপ্রধান এবং তাদের সন্তানদের ভেতরের রূপটা দেখলে মুহুর্তে ভুলে যেতে বাধ্য, আমরা মানুষ!
আর দেয়া বদ দোয়ার যে সব কথা মা বাবা ছোটবেলায় শিখিয়েছেন, সে সব এ সব নগর দুলালরা জানেই না। এখন যে জানে না, সেটা কিন্তু নয়। আমার মনে অনন্ত দু থেকে তিন দশক ধরে এমনটা চলছে, কিছু ব্যাতিক্রম থাকতে পারে।
মানুষে মানুষে ভেদাভেদ থাকার কথা নয়, তবুও কেন এত ভেদ, এত অহঙ্কার।
মৃত্যুর পর সবাই একই মাটির নিচে শোবে। জন্মের আগে সবাই মাতৃ একই রকমের জঠরেই ছিল। এবং পিতার কামাবেগের চূড়ান্ত বর্ষণ-বীর্য থেকেই সৃষ্টি! তবুও মানুষের এত অহঙ্কার - নিপীড়ন, মানতে পারি না। খুব কষ্ট হয়। খুব।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।