চট্টগ্রাম কারাগারে নাশকতা সৃষ্টির চেষ্টা করছিল বোমারু মিজান। গোয়েন্দাদের এমন গোপন তথ্যের পর গত বছরের সেপ্টেম্বরে তাকে কাশিমপুর হাই সিকিউরিটি কারাগারে স্থানান্তর করা হয়। সর্বোচ্চ নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে অপর দুই জঙ্গি নেতাকেও রাখা হয়েছিল হাই সিকিউরিটি সেলে। ঢাকার আদালতে এদের হাজির করা হতো বুলেট প্রুফ জ্যাকেট ও হেলমেট পরিয়ে। অথচ শীর্ষ এ তিন জঙ্গি নেতাকেই গত রবিবার গাজীপুর কাশিমপুর কারাগার থেকে ময়মনসিংহে নেওয়া হচ্ছিল একটি প্রিজনভ্যানে করে। দুর্ধর্ষ তিন জঙ্গিসহ পুরো প্রিজনভ্যানের নিরাপত্তায় ছিল মাত্র চার পুলিশ।অরক্ষিত এই প্রিজনভ্যানেই হামলা চলে। পুলিশ মেরে ছিনিয়ে নিয়ে যায় তিন জঙ্গি নেতাকে। ঢাকা দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল-৪ এর কাঠগড়া থেকে একই দিন পালিয়ে যান জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র জুবায়ের হত্যা মামলার চার আসামি। জামিন নামঞ্জুর হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই তারা হাওয়া। কাঠগড়ায় পুলিশ না থাকায় তারা পালিয়ে যেতে পেরেছে বলে জানা গেছে। শুধু ঢাকার আদালতপাড়া বা কাশিমপুর থেকে ময়মনসিংহগামী প্রিজনভ্যানই নয়, সারা দেশের আদালতপাড়া ও প্রিজনভ্যান এখন এমনই অরক্ষিত। আর প্রিজনভ্যান এবং দুর্ধর্ষ অপরাধীদের নিরাপত্তায় যে কয়জন পুলিশ সদস্য নিয়োজিত থাকে, তারাই এখন নিরাপত্তাহীন। গত রবিবার হামলা চালানো ওই প্রিজনভ্যানে ছিলেন সুবেদার হাবিবুর রহমান, দুই কনস্টেবল আতিক ও সোহেল রানা এবং চালক সবুজ। ১৫-২০ জনের হামলাকারীর সামনে এরা কোনো প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারেনি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুলিশ মেরে জঙ্গি ছিনতাই ও আসামি পলায়নের পর প্রশ্ন উঠেছে প্রিজনভ্যান, আদালতপাড়া ও পুলিশের নিরাপত্তা নিয়ে। নিরাপত্তাব্যবস্থার উন্নতি না করা গেলে, ভবিষ্যতে এমন পরিস্থিতির আশঙ্কা রয়ে যাবে। জানা গেছে, কারাগার থেকে আদালতে আসামি আনা-নেওয়ার ক্ষেত্রে বেশির ভাগ সময়ই প্রিজনভ্যানগুলো থাকে নিরাপত্তাহীন। প্রিজনভ্যানের নিরাপত্তায় যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়ার কথা তার কিছুই করা হয় না। পুলিশ ও কারা কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, নিরাপত্তা দেওয়ার দায়িত্ব পুলিশের। আর গত রবিবার যা ঘটে গেল তাতে পুলিশের অবহেলার বিষয়টি তীব্রভাবে ফুটে উঠেছে। কাশিমপুর কারাগার-২ এর জেলার মুজিবর রহমান বলেন, কোনো আসামিকে আদালতে পাঠানোর আগে জেলা পুলিশ সুপারের কাছে আসামির অপরাধের বিবরণ, মামলার সংখ্যা, সাজার পরিমাণসহ সবকিছু উল্লেখ করে চিঠি পাঠানো হয়। সেই চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ সুপার অপরাধীদের আদালতে আনা- নেওয়ার নিরাপত্তার ব্যবস্থা করে থাকেন। কারা কর্তৃপক্ষ পুলিশের কাছে আসামি বুঝিয়ে দেওয়ার পর তাদের আর কিছুই করার থাকে না। এরপর সব দায়িত্বই পালন করে পুলিশ সদস্যরা। গাজীপুরের পুলিশ সুপার আবদুল বাতেন বলেন, 'কারা কর্তৃপক্ষ সঠিকভাবে অপরাধীদের বর্ণনা আমাদের জানায়নি। তাই সাধারণ অপরাধীদের যেভাবে পাঠানো হয়, এ জঙ্গিদেরও একইভাবে আদালতে পাঠানো হচ্ছিল।' একজন ঊধর্্বতন কারা কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, গাজীপুর থেকে সাধারণ অপরাধীদের ময়মনসিংহ বা আশপাশের জেলার আদালতে হাজিরা দিতে পাঠানোর সময় পুলিশ দিয়ে বাসে করে পাঠানো হয়। আর গুরুত্বপূর্ণ আসামি পাঠানো হয় প্রিজনভ্যানে। এবার যেহেতু তিনজনকে নেওয়ার জন্য একটি প্রিজনভ্যান ব্যবহার করা হলো তাহলে সাধারণভাবেই বোঝা যায় আসামিরা দাগি অপরাধী বা সাজাপ্রাপ্ত দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী।' পুলিশের নথি থেকে জানা গেছে, ২০০২ সালের ২৬ জানুয়ারি দক্ষিণাঞ্চলের সর্বহারা সংগঠন জনযুদ্ধের প্রধান আবদুর রশিদ মালিথা ওরফে তপন মালিথা পুলিশের হাত থেকে পালিয়ে যায়। এ ঘটনার পর দুর্ধর্ষ আসামি আনা-নেওয়ায় বিশেষ নিরাপত্তা নিশ্চিত করার তাগিদ দেওয়া হয়। কিন্তু কিছুদিন না যেতেই এ উদ্যোগ থমকে যায়। শুরু হয় ঢিলেঢালা নিরাপত্তাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে কারাগার থেকে আসামি আনা-নেওয়া। এ সুযোগে শুধু দক্ষিণাঞ্চলেই পুলিশের হাত থেকে অন্তত দুই ডজন আসামি পালিয়ে গেছে। যাদের অনেকেই পুলিশ আর দ্বিতীয় দফায় গ্রেফতার করতে পারেনি। আদালত সূত্র জানায়, ঢাকার আদালতে শতাধিক এজলাস রয়েছে। এর নিরাপত্তা বিধানে রয়েছে ২০০ নিরস্ত্র পুলিশ। এ ছাড়া সাদা পোশাকে পুলিশ ও বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা অবস্থান করে থাকে। ঢাকা ও ঢাকার বাইরের কারাগার থেকে প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার আসামিকে আদালতে নেওয়া হয়।
আদালতে এত বিপুলসংখ্যক আসামির নিরাপত্তা দেওয়ার মতো জনবল পুলিশের নেই। যে কারণে আদালত থেকে আসামিরা পালিয়ে যাচ্ছে। বিচার প্রার্থী, সাক্ষী, বাদী, আইনজীবী ও বিচারকদের নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রয়েছে। জানা গেছে, ঢাকার আদালতপাড়ায় ১৯৯৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত আটটি হত্যাকাণ্ড ঘটে। সন্ত্রাসীরা এসব হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে সহজেই পালিয়ে গেছে। ২০০৫ সালের ১৭ আগস্ট সবকটি ভবনে বোমা ফাটিয়ে নির্বিঘ্নে পালিয়ে যায় জঙ্গিরা।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।