দৈনিক প্রথম আলোর সম্পাদক মতিউর রহমানকে তলব করেছেন হাইকোর্ট। আদালত অবমাননার অভিযোগে হাইকোর্টের জারি করা রুলের পরিপ্রেক্ষিতে নিজের দেওয়া হলফনামার সত্যতা নিশ্চিত করতে আজ সকাল সাড়ে ১০টায় সম্পাদক মতিউর রহমানকে সশরীরে হাইকোর্টে হাজির হতে বলা হয়েছে। প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগের শুনানিতে গতকাল বিচারপতি নাঈমা হায়দার এবং বিচারপতি জাফর আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দেন। একই সঙ্গে মতিউর রহমানকে আজ আদালতে এ কথাও জানাতে হবে যে, সোমবারের এফিডেভিট তিনি নিজে করেছেন কিনা। পদ্ধতিগত ত্রুটি থাকায় মতিউর রহমান এবং মিজানুর রহমান খানকে নতুন করে হলফনামা দাখিল করতেও বলা হয়েছে।
এদিকে প্রথম আলোর বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে গতকাল তৃতীয় দিনের মতো শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। বেলা ২টা ২৪ মিনিটে আদালত বসেন। এরপরে শুনানি শুরু হয়ে বেলা ৫টা ১২ মিনিট পর্যন্ত এ মামলার কার্যক্রম চলে। গতকাল শুনানির পুরো সময়ই সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানকে আদালতে দাঁড় করিয়ে রাখা হয়। শুনানির সময় আইনজীবীর আবেদন জানালেও তাকে বসতে অনুমতি দেননি আদালত। এদিন প্রথম আলোর বিরুদ্ধে জারি করা রুলের পক্ষে এবং পত্রিকাটির বিরুদ্ধে শুনানি করেন আইনজীবী রোকন উদ্দিন মাহমুদ, আহসানুল করিম, আসাদুল্লাহ ও রুহুল কুদ্দুস কাজল। প্রথম আলোর পক্ষে ছিলেন আইনজীবী শাহদীন মালিক। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট মঞ্জুর আহমেদ।
শুনানিতে আইনজীবী আহসানুল করিম বলেন, আমাদের এই অবস্থানের সঙ্গে সমগ্র সাংবাদিকতার কোনো সম্পর্ক নেই। এটি একটি পত্রিকায় প্রকাশিত নিবন্ধের বিষয়ে শুনানি। শুনাতিতে শাহদীন মালিক বলেন, আদালত অবমাননা আইন-২০১৩ হাইকোর্টের রায়ে ইতোমধ্যে বাতিল হয়ে গেছে। এ অর্থে দেশে এখন কোনো আদালত অবমাননা আইন কার্যকর নেই। তিনি বলেন, আদালত অবমাননার বিষয়ে ১৯২৬ সালের আইন বাতিল করে নতুন আইন প্রণয়ন করা হয়েছিল। পরে ওই আইন হাইকোর্টে বাতিল হয়েছে। এই আইনজীবী বলেন, সংবিধানের ১০৮ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী আদালত অবমাননার দায়ে আপনারা কাউকে দোষী সাব্যস্ত করতে পারেন কিন্তু শাস্তি দিতে পারেন না। কারণ শাস্তি দেওয়ার জন্য এখন কোনো আইন নেই। এ সময় আদালত বলেন, তাহলে আপনি বলতে চাচ্ছেন- আমরা আদালত অবমাননার অভিযোগে রুল দিতে পারি না অথবা যেটা দিয়েছি তার এখতিয়ার নেই? জবাবে শাহদীন মালিক বলেন, এ বিষয়টি আমি সরাসরি বলছি না। আইনি বিষয়টি উপস্থাপন করছি, আপনাদের খতিয়ে দেখতে হবে। শাহদীন মালিক বলেন, পঞ্চম সংশোধনী যখন বাতিল হয় তখন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদের মতো কেউ কেউ বলেছিলেন, চতুর্থ সংশোধনী (বাকশাল) ফিরে আসবে। চতুর্থ সংশোধনী কিন্তু আর ফিরে আসেনি। বাস্তবতা হচ্ছে, সরকারকে আদালতের রায়ের ভিত্তিতে নতুন করে সংবিধান ছাপাতে হয়েছিল। এর অর্থ আদালত আবমাননার আইন-২০১৩ বাতিল হওয়ায় সরকারকে প্রজ্ঞাপন জারি করে বলতে হবে যে, এ ব্যাপারে আগের আইন বহাল হয়েছে। এটা না হওয়া পর্যন্ত কোনো অবস্থাতেই বলা যাবে না যে, আদালত অবমাননা আইন রয়েছে।
শুনানিতে রোকন উদ্দিন মাহমুদ রুলের জবাব পর্যালোচনা করে বিভিন্ন অসঙ্গতি তুলে ধরেন। তিনি বলেন, আমার মনে হয়, এখানে প্রসিডিংস দেখে দেখে উনার (মিজানুর রহমান খান) মাথা খারাপ হয়ে গেছে। তাকে চিকিৎসার জন্য ডাক্তারের কাছে পাঠানো উচিত। কেবল ডাক্তাররাই ভালো বলতে পারবেন, উনি সুস্থ আছেন কিনা? উনি যা লিখেছেন (রুলের জবাব) তা কোনো সুস্থ মানুষের পক্ষে লেখা সম্ভব নয়। তার মস্তিষ্ক বিকৃতি ঘটেছে। হলফনামার নামে তিনি আরেকটি আর্টিকেল লিখেছেন। এটিও আদালত অবমাননাকর। এই আইনজীবী আরও বলেন, আগে কোর্ট রিপোর্টিং করতেন আইনজীবীরা। কিন্তু এখন তা হচ্ছে না। এ জন্য এরকম রিপোর্টিং হচ্ছে। তিনি বলেন, এগুলো তো আর বলা যাবে না, তাহলে আবার বিবৃতি দেওয়া হবে।
প্রথম আলোতে যুগ্ম সম্পাদক মিজানুর রহমান খানের লেখা দুটি নিবন্ধে আদালত অবমাননার অভিযোগে ২ মার্চ ওই সাংবাদিকসহ পত্রিকাটির সম্পাদক মতিউর রহমানের বিরুদ্ধে রুল জারি করেন হাইকোর্ট। এ ছাড়া সাংবাদিক মিজানুর রহমান খানকে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশও দেওয়া হয়। এ বিষয়ে ৬ ও ৯ মার্চ হাইকোর্টে শুনানি হয়।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।