আমি একজন পর্যটন কর্মী। বেড়াতে, বেড়ানোর উৎসাহ দিতে এবং বেড়ানোর আয়োজন করতে ভালোবাসি।
অন্য দশটা সকালের মতই ঘুম থেকে উঠলাম। মোহাম্মদপুরে থাকতাম তখন। বাসা থেকে বের হবো- এমন সময় মিল্টন ফোন করলো।
বললাম, কিরে এত্ত দিন পরে মনে পড়লো। গোপালগঞ্জের এই পোলাটা আমার মেস মেট ছিল। এক সাথে পুরাণ ঢাকার ললিত মোহন দাস লেনে থাকতাম। দুর্দান্ত আড্ডা আর প্রতি শুক্রবারে বিডিআর সিনেমা হলে বাংলা সিনেমা দেখার সে সব দুর্লভ অনন্দঘন দিন ছিল আমাদের। কিন্তু সংসারী হবার কারণে সে দিকে যাওয়া হয় না।
মিল্টনকে বল্লাম বল। বলল, ভাই বিডিআরের ভিতরে দুই গ্রুপে গোলাগুলি চলছে। অনেক গ্যাঞ্জাম।
আমি অনেকটা অপ্রস্তুত হয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তোর বাড়ি গোপালগঞ্জে। সেখানে বিডিআর আইলো ক্যামেনে।
ও বলল আরে ভাই ও খানে না। আজিমপুরে। আমার ভুল ভাঙলো। ঘর ছেড়ে বের হলাম। সংসদ ভবনের কোনায় আসতে গুলি আওয়াজ পেলাম।
দিন বাড়ছে, টিভি সম্প্রচার চলছে। এভাবে দেখতে থাকলাম, শুনতে থাকলাম এবং একটা সময় ওই এলাকার মোবাইল নেটওয়ার্ক বন্ধ।
ঘটনার অনেক নাটুকে মোড়ের পর জানা গেলো অনেকে সেনা কর্মকর্তার লাশ ম্যান হোলে। বুড়িগঙ্গার ময়লার সাথে মিশে যাচ্ছে। আমি উদ্বিগ্ন।
আমি উৎকণ্ঠিত। কিন্তু দোয়া দরুদ পড়া ছাড়া আমার কিচ্ছু করার নাই।
সন্ধ্যার দিকে আমাদের ক্যাম্পাসের এক ছোট বোন জানালো তার দুলাভাইও নিহত হয়েছেন। আমি খুবই শকড হলাম। তার একটা অটিস্টিক বাচ্চা আছে।
আমার এত খারাপ লাগলো, বলে বোঝানো যাবে না। এমনিতেই এত মানুষ মারা গেলো, তার মধ্যে অটিস্টিক একটা বাচ্চার বাবাও। আমি অনেকক্ষন চুপ করে রলাম। একজন অসহায় মানুষের আকাশের দিকে তাকিয়ে থাকা ছাড়া আমাদের আর কিই বা করার আছে।
আজ সেই দিন।
বিডিআর বিদ্রোহের সেই দিন। কি নির্মম, বিভৎস দিনটি। সেটি আবার ফিরেছে।
আমি বিডিআরের দোকানের খদ্দের ছিলাম। চাল ডাল, আটা কিনতাম।
তাদের নিজস্ব আউটলেট থেকে। যেটাকে বিডিআর বিদ্রোহের একটা কারণ মনে করা হয়। ১/১১ এর পরে বর্তমান প্রধানমন্ত্রীর ভাষায় 'ডক্টরস ক্লাব' মানে সেনা সমর্থিত তত্রবাবধায়ক সরকার মানুষকে কম মূল্যে খাওয়ানের জন্য ডাল ভাত কর্মসূচী জোরদার করেছিল।
সেখান থেকে নাকি এ রকম একটা বিদ্রোহ। আমি অবশ্য ইংরেজি জানি না।
এত্ত বড় একটা ঘটনা থেকে আমার একটা অর্জন হলো আমি দুটো ইংরেজি শব্দ 'মিউটিনি' ও 'রিভেল হান্ট ' শিখলাম! এ শব্দ দুটোর অনেক ক্যারিকেচার এবং পর্দার অন্তরালের দৃশ্য সম্পর্কে জানতে পারলাম না। পারবোও না।
ঘটনার পর একজন ক্ষুদ্র ও গোনার বাইরের অনুসন্ধানী সম্বাদিক হিসাবে আমাকে বিষয়টা নিযে অনুসন্ধান করতে বলা হয়েছিল, আমার সে সময়কার কর্মস্থল থেকে। তবে সেটি আমি করিনি। করিনি- একেবারেই সচেনতন ভাবে।
কারণ এ নিয়ে তদন্ত করার আগে সরকার, বিরোধী দল একে অন্যকে দোষারোপের রাজনীতি শুরু করে দিয়েছে।
এটা নিয়ে যে সব ঘটনা ঘটেছে, তার আসল ছবি আমরা এখনো দেখিনি। দেখার ভাগ্য আমাদের হবে না। কারণ লরেন্স লিফশুলৎজরা নিজস্ব অ্যাজেন্ডার বাইরে এ সব নিয়ে অনুসন্ধান করবেন না, বা করেন না।
আর বাংলাদেশ থেকে যে আন্তর্জাতিক মাধ্যমে যারা খবর পরিবেশন করেন, যাদের কাছে আমরা নিরপেক্ষ সংবাদের আশা করি, তাদের ব্যাক্তিগতভাবেই জানি, তারা বিশেষ দলের প্রতি নিজ থেকে অনুগত।
এ আনুগত্য জাতি হিসাবে আমাদের জন্য দুর্ভাগ্যের। সত্য প্রকাশে সবচেয়ে বড় বাধার। তবুও মবিলে ভাজা জিলাপি হজম করতে পারলে, এ টুকু না করতে পারার কোনো কারণ দেখি না।
তাই আপাত কোনো আশা নেই। আশার দরকারও নেই।
কেবল বিডিআর সদস্যদের হার্ট অ্যাটাকে মারা যাবার ঘটনা আমাকে বিব্রত করেছে। আসলে বিচার প্রার্থীরা এখানে কতটা অসহায় এবং দলান্ধরা এখানকে নিজেদের শ্রেষ্ঠ মোসাহেব হিসাবে প্রমাণে কতটা ব্যস্ত, সে সব বোঝার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার দরকার নাই! কোর্টের বারান্দায় যাবার দুর্ভাগ্য হলেই সহজে জানা যায়!
দেশে ও দেশের বাইরের রাজনীতির বেশি জ্ঞান অর্জন আমি করতে চাই না। আমার সে রকম মেধাও নাই। আমি খেটে খাওয়া মুটে মুজুর। আর মুটে মুজুরের এ সব নিয়ে ভাবা ঠিক না।
বাংলাদেশের চলমান সম্বাদিকতার স্বাধীনতাও ভোগ করবার সাহস আমার নাই। বরং সরকারের সাথে বুক উঁচা করে বজ্র কণ্টে কই 'দেশের গণ মাধ্যম স্বাধীন। ' খুবই স্বাধীন এতেও যদি শেষ রক্ষা হয়। মন্দ কি।
আর সকালে উঠিয়া আমি মনে মনে বলি- সারা দিন আমি যেনো ভালো হয়ে চলি।
সবাই যেনো একই রকম কথা মনে মনে বলেন। সবাইয়ের দলে যদি বিচারক আইন রক্ষী ও রাজনীতিকরা পড়েন, তাহলে আনন্দের সীমা থাকবে না।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।