নিয়ম ছিল মেয়েদের তাড়াতাড়ি বিয়ে দেয়ার। কতই বা বয়স হয়েছে মেয়েটির তখন বারো কী চৌদ্দ। অন্য ভাইবোনদের চেয়ে ও একটু অন্যরকম খুব বেশী নিরব, চুপচাপ নিজের মাঝে থাকা পছন্দ করে। বাবার ভীষণ প্রিয় অসম্ভব সুন্দরী মেয়েটাকে বাবা ভাবলেন তার নিজের আত্মিয়র সাথে বিয়ে দিয়ে ঘরেই রেখে দিবেন। আর ছেলে তো দেশে থাকে না থাকে বিদেশে।
সে আমলে বউ বিদেশে নিয়ে যাওয়ার খবর খুব একটা পাওয়া যেতো না। তো নিয়ম মানা হলো আর মেয়েও নিজের কাছে থাকল, যেমন ছিল তেমনি।
এই ধারনায় মেয়েকে বিয়ে দিয়ে দিলেন একদিন খুব সাদাসিধে আয়োজনে। যথা রীতি মেয়ে জানল তার বিয়ে হচ্ছে সাজগুজ, নতুন শাড়ী গহনা, আত্মিয় স্বজনের ভীড়, ভালো খাওয়া দাওয়ার সুন্দর একটা দিন, বেশ উপভোগ করল।
রাতের বেলা বর আর কনেকে দেয়া হলো এক ঘরে থাকতে।
বর হয়ত পঁচিস বছর বা বেশী হবে। স্বাভাবিক চাওয়ার পাওয়ার মানুষ। কিন্তু অনেক বেশী অসেচতন, ভালোবাসা আর মানসিক, মানবিক সংস্পশের বাইরে শরীর সমৃদ্ধ একজন মানুষ। যার মন আছে কিন্তু সে মন কে কী ভাবে লালন করতে হয় তা শিখেনি। এ গল্প প্রায় পঞ্চাশ বছর আগের কিন্তু আজো কী যে সব তরুণ ভালোবাসা ভালোবাসা করে হা হুতাস করে তারা জানে, শরীরের আগে মনের অধিকার নিতে হয়।
হলো বা স্বামী স্ত্রী বা প্রেমিক প্রেমিকা।
সেই রাতে মেয়েটি ভয়াবহ চিৎকারে আতংক গ্রস্ত হয়ে বাসর ঘর থেকে বেরিয়ে আসে। তার মনে স্থায়ী ভয়ের আস্তরণ পরে যায় স্বামী নামের লোকটির প্রতি। কখনো সহ্য করতে পারে না আর সেই লোকটাকে। এমন কী কোন লোক কেই না।
নিজের মধ্যে গুটিয়ে গিয়ে পাগল নামে কাটিয়ে যায় সারাটা জীবন। অভিভাবক কে ঠিক দোষ দেয়া যায় না। সময়টা ছিল নিয়ম মেনে চলার। পরবর্তিতে তার আর ভুল করেননি অন্য সন্তানদের বেলায়। আর এভাবেই চলে আসছে যুগযুগ ধরে।
কেউ কখনো ভাবেনি সে সময়, জোড় করে কিছু করতে যাওয়ার কতটা প্রভাব পরে একটি মানুষের মনে ও শরীরে।
অসম্ভব সুন্দরী বিদুসী এই রমনি যদি সঠিক পরিচর্চা পেত তার জীবনে। জানতে পারত মানব জীবনের নিয়মগুলো কী ভাবে বদলে যায় বয়সের সাথে সাথে। কী প্রয়োজনে কেন কী ভাবে মানুষকে কাছে আসতে হয়। নিজের ইচ্ছায় যদি চাইত সে পরিবর্তন।
তাঁর জীবনটা হতো অন্য রকম।
সব মানুষের মানসিক পরিপূর্ণতা এক ভাবে বিকাশ হয় না। কেউ খুব ছোটবেলাতেই অনেক কিছু বুঝে আর কেউ বেশ বড় হয়েও বাচ্চা স্বভাবে থাকে। অভিভাবক বেশীর ভাগ ক্ষেত্রে, এমন কি আমাদের দেশের শিক্ষকরাও সব বাচ্চাদের এক ভাবেই মূল্যায়ন করেন। অন্যের সাথে তুলনা করেন।
ভয়াবহ প্রভাব বিস্তার করে এই ধরনের ব্যবহার শিশু কিশোর মনে। এমন কি বড়দের মনেও। ভাবা উচিৎ প্রতিটি মানুষ তার নিজের মতন। অন্যর সাথে তুলনা করার কিছু নেই। পরিবেশ পরিস্থিতিও অনেক প্রভাব ফেলে।
বড় সন্তানটি অনেক বেশী চুপচাপ হয় অনেক ক্ষেত্রে। যাকে অনেকে বোকা বলে অভিহিত করেন।
অজ্ঞতায় না রেখে জীবনের সাথে ওতপ্রতোভাবে জড়িত বিষয়ের, শিক্ষা যদি প্রতিটি সন্তানকে অভিভাবক থেকে শিক্ষকরা শিক্ষিত করে তুলতেন। অনেক রকম যন্ত্রনার থেকে মুক্তি পেতো বেড়ে উঠা মানুষটি। আজো শুনি অনেক অভিভাবক বা অজ্ঞ মানুষের প্রতিবাদ।
যৌন শিক্ষা চালু করা বিষয়ে। যা জীবনের অসম্ভব এক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। অথচ স্বচেতন ভাবে এই বিষয়টাকে এড়িয়ে যেতে থাকেন অনেকে। পারিবারিক ভাবে শিক্ষিত করা সেও কয়টা পরিবারে এ্ বিষয়ে খোলাখুলি কথা বলা হয়। আর সেই সুযোগে নর নারীর স্বাভাবিক চলাফেরার মধ্যে অহেতুক বাধ্যবাধকতা আরোপ করে সহজ বিষয়টাকে করে তুলেন জটিল।
অকারণ কৌতুহলে অবাক হয়ে একে ওপরের দিকে দেখতে থাকে অচেনা প্রাণীর মতন। আর সে দেখার প্রভাব প্রতিফলিত হয় নানারকম বিকৃত স্বভাবের মাধ্যমে। রাস্তায় দাঁড়ানো ছেলেদের আমরা চোখে দেখতে পাই দেখতে পাই তাদের ইভটিজ। নানা রকম অশালীন ব্যবহার মেয়েদের প্রতি। কিন্তু ঘরের ছেলে মেয়ে কিশোর কিশোরীর অকারণ রাগ, নিজের মধ্যে গুটিয়ে যাওয়া বা একাকী নিজের প্রতি ব্যবহারগুলো আমরা খুব একটা গুরুত্ব দিয়ে দেখিই না।
জানিই না এ সবের পরিচর্চা করতে হয় প্রয়োজনে ডাক্তারের শরনাপন্ন হতে হয়। জটিল বিষয়কে বাড়তে না দিয়ে। জানলেও অন্যে জেনে যাবে বলে চুপচাপ থাকি। ধামাচাপা দেয়ার চেষ্টা করি। বয়সের দোষ বলে আমরা খুব সহজ ভাবে ঠিক হয়ে যাবে বলে মনোযোগ দেই না।
ব্যস্ত থাকি নিজেদের কাজে যখন পুরোপুরি দৃষ্টি নিবদ্ধ করি ততদিনে হয়ে যায় অনেক দেরী। অনেকে চলে যায় উচ্ছোন্নের পথে অনেকে বেছে নেয় আত্ম হত্যার পথ।
খুব বেশদিন আগের কথা নয় আমাদের দাদী নানীদের বিয়ে হয়ে ছিল খুব ছোটবেলায়। বালিকা থেকেই বিয়ের পীড়িতে বসা সেই সব ছোট বধুদের নিজেস্ব জীবনই ছিল না। খেলার ঘুরে বেড়ানোর জীবন ছিল না।
অথচ এখনও অনেক পরিবারে অসম্ভব রকম রক্ষণশীলতার কড়া শাসনে বড় হচ্ছে সন্তান, বিশেষ করে মেয়েরা। যাদের জীবনের কথা ভেবে কষ্ট পাই ভীষণ রকম। সময় বদলে গেছে। পুরানো ধ্যানধারনা নিয়ে বসে থাকলে তো চলবে না। নতুনকে বরণ করে নতুন কে গ্রহণ করতে হবে সঠিক পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্য।
অকারণ লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই যা জীবনের সাথে ওতোপ্রত ভাবে জড়িত তা নিয়ে। বরং শেখা উচিৎ সঠিক প্রয়োগ মনের এবং শরীরের স্বাস্থ ঠিক রাখার জন্য। একটি মানুষের সঠিক ভাবে বেড়ে উঠার জন্য।
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।