সবার উপরে মানুষ সত্য!
উনি নাকি বাংলাদেশের সর্বশ্রেষ্ঠ ক্রীড়া-প্রতিবেদক। তো এই ফেব্রুয়ারির ২ তারিখে দেখলাম, উনি ক্রিকেট-বিষয়ক নিজের লেখা একটি বইয়ের 'প্রকাশনা উৎসব' করলেন। বইটির নাম, “শচীন রূপকথা ”! ভদ্রলোক উনার দীর্ঘ ক্রিকেটীয় সাংবাদিকতার অভিজ্ঞতা থেকে শেষমেষ এই বইটি লিখেই ফেললেন। খুবই অবাক হয়েছিলাম ঐদিন।
আপনারা হয়তবা জানেন না যে; শুধুমাত্র এই শচীন টেন্ডুলকারের জীবনী কেন্দ্র করে কমপক্ষে ১০টি খুব ভাল এবং আন্তর্জাতিক মানের বই আছে।
এছাড়াও শচীনকে নিয়ে বিশ্বব্যাপী রয়েছে কোটি কোটি প্রবন্ধ, খবর ও প্রকাশনা!
সেই শচীনকে নিয়ে আমাদের ‘উৎপল দাদা’ নতুন আবার কি লিখলেন, তা আমার বোধগম্য নয়। দাদা কি ভুলে গেছেন; আমাদের আকরাম, বুলবুল, নান্নু, পাইলট, মোহাম্মদ রফিক এবং আতাহার আলীর কথা! বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাস যে এঁদের হাতেই গড়া।
** দাদা আপনি কি ভুলে গেছেন-
(১) ১৯৯৭ সালে আকরামের নেতৃত্বে আমাদের বিশ্বকাপে খেলার স্বপ্ন সত্য হওয়া
(২) ১৯৯৭ সালে কেনিয়ার বিপক্ষে শেষ ওভারে পাইলটের সেই ছক্কা
(৩) ১৯৯৯ বিশ্বকাপে ওয়াসিম, ওয়াকার এবং শোয়েব আখতারকে মোকাবিলা করে আকরামের ৪২ রানের ইনিংস; এবং সুজন ও নান্নুর অলরাউন্ড নৈপুণ্যে পাকিস্থানের বিরুদ্ধে জয়লাভ
(৪) বাংলাদেশের প্রথম টেস্টের প্রথম ইনিংসেই বুলবুলের রেকর্ড ১৪৫ রান এবং দুর্জয়ের ৬ উইকেট
(৫) আতাহার আলীর ৮২ রানের ইনিংস, যা দীর্ঘদিন আমাদের ‘ওডিআই’ ইতিহাসের সর্বোচ্চ রান ছিল
(৬) বাংলাদেশের পক্ষে মেহরাব হোসেন অপির প্রথম ‘ওডিআই’ সেঞ্চুরি
(৭) গোল্লার মাটি কামড়ে সারাদিন ব্যাটিং করা
(৮) মোহাম্মদ আশরাফুলের অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সেই শতরান; কিংবা ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৫২ বলে ৯৪ রান; বা টেস্টে সবচেয়ে কম বয়সে শতরান
(৯) বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট-বোলার হিসাবে মোহাম্মদ রফিকের ১০০ উইকেট
(১০) আধুনিক ক্রিকেটে সাকিব, তামিম, রাজ্জাক এবং মুশফিকের অবদান; এবং সর্বোপরি-
** সাতবার পায়ে অস্ত্রোপচার সত্ত্বেও, বল হাতে মাশরাফির দৌড়!
হ্যাঁ দাদা, আপনার কাছে শচীনের শতাধিক শতরান অনেক বড় কিছু হতে পারে। কিন্তু আমাদের মত আমজনতার কাছে, বাংলাদেশের এইসকল ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অর্জনই অনেক বড় কিছু।
আন্তর্জাতিক পর্যায়ে শচীনের মত বড়-মাপের ক্রিকেটারকে নিয়ে লেখার অনেকেই আছেন; আপনাকে আর নতুন করে কিছু লিখতে হবে না।
আপনি যদি পারেন, তবে দয়া করে, আমাদের এইসব তুচ্ছ অর্জনগুলোকেই বিশ্বের সামনে তুলে ধরেন। পারলে আমাদের আকরাম খান কিংবা আমিনুল ইসলাম বুলবুলের জীবনী নিয়ে একটা বই লিখেন। কিভাবে উনারা প্রায় কোনরকম সুযোগ-সুবিধা ব্যতিত; স্বল্প-ভাড়ায় থানা পর্যায়ে ক্রিকেট খেলে; পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও অভিজ্ঞতা ছাড়াই বাংলাদেশের ক্রিকেটে অবদান রেখেছিলেন। শচীন তো ক্রিকেট খেলার একটি সাজানো-গুছানো পরিবেশ পেয়েছিলেন। আমাদের আকরাম কি তা পেয়েছিলেন; আমাদের নান্নু কি তা পেয়েছিলেন; আমাদের বুলবুল কি তা পেয়েছিলেন? ইহা বিচারের দায়ভার আপনাকেই দিলাম!
এবার আসি অন্য প্রসঙ্গে।
গতকালের এশিয়া কাপের ম্যাচে ভারতের কাছে বাংলাদেশ পরাজিত হল। খুব হাড্ডাহাড্ডি লড়াই করেছে বাংলাদেশ। মাত্র ৬ বল হাতে থাকতে ভারতের জয় হল। ধন্যবাদ বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম। অন্তত একটি শ্বাসরুদ্ধকর ম্যাচ আমাদেরকে উপহার দিলেন।
ঐ ম্যাচে দুইজন সেঞ্চুরি করেছেন- বাংলাদেশের অধিনায়ক 'মুশফিক' এবং ভারতের অধিনায়ক 'কোহলি'। আর আপনি বলে বসলেন- “মুশফিক ভালো, কোহলি আরও ভালো” ! আমি আবারও অবাক হয়ে গেলাম! বলি কি দাদা, আপনার মাথা ঠিকমত কাজ করছে তো?
আপনি আরও বললেন- কোহলির ব্যাটিংই শুধু আটকে রেখেছিল দর্শকদের। আপনার ভাষ্যমতে এও বুঝলাম যে- কোহলির ১৩১টি ‘ওডিআই’ ইনিংসে ১৯ শতকের কাছে, আমাদের মুশফিকের ১২৬ ইনিংসে মাত্র ২টি যেন শতক কিছুই না।
তবুও ভুলে যাবেন না যে, মুশফিক আমাদের বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের গর্ব; আমাদের অধিনায়ক; আমাদের টেস্টে ২০০ করা প্রথম ব্যাটসম্যান! কোহলি ১,০০০টি সেঞ্চুরি করলেও - মুশফিক আমাদের প্রাণ, আমাদের বাঘের বাচ্চা, মুশফিক হল ‘মুশফিকুর রহিম’!
*** তাই আমাদের কাছে- “কোহলি ভালো, মুশফিক আরও ভালো”!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।