উন্নত বিশ্বের সাথে উন্নয়নশীল বিশ্বের সবচেয়ে বড় পার্থক্য হলো যে, উন্নত বিশ্বের মানুষেরা সবাই মিলে আনন্দ উপভোগ করতে চায়। অন্যের দুঃখে দুঃখিত হয় এবং অপরের দুঃখ লাঘবের চেষ্টা করে। আর আমরা অন্যের কষ্টে আনন্দ পাই, উন্নয়নের পথে যতটুকু সম্ভব তার চেয়ে বেশি বাধা দে
কোথাও কেউ নেই নাটকটকের কেন্দ্রীয় চরিত্র ছিল "বাকের ভাই"। বাকের ভাই গুন্ডা প্রকৃতির লোক এবং তার সঙ্গী ছিল "বদি" আর "মজনু", তারা তিনজনই মোটর সাইকেলে করে চলাফেরা করতো। বাকের ভাই এলাকার সন্ত্রাসী হলেও অধিকাংশ মানুষ তাকে ভালোবাসতো, কারণ সে ছিল সত্যের পূজারী— নিপীড়িত মানুষের পাশে গিয়ে দাঁড়াতে যেমন কুন্ঠিত হতো না, তেমনি সমাজের অন্যায়কেও মুখ বুজে সহ্য করত না, নিজের গুন্ডাদের দিয়ে তা কঠোর হস্তে দমন করতো।
ঘটনাপ্রবাহে বাকের ভাই এলাকার প্রভাবশালী এক নারীর সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়ে। ঐ নারী তার বাড়িতে অবৈধ কার্যকলাপে লিপ্ত ছিলেন, বাকের ভাই তা জানতে পেরে প্রতিবাদ করে। এই প্রভাবশালী নারী তার বাড়িতে কুকুর পালন করতেন বলে তিনি সবার কাছে কুত্তাওয়ালী বলে পরিচিতি পান। এরই মধ্যে রাতের অন্ধকারে কুত্তাওয়ালীর বাড়িতে একজন খুন হয়। ফাঁসানোর জন্য এই খুনের দায় দেয়া হয় বাকের ভাইকে, সাক্ষী হিসেবে সাক্ষ্য দেয় কুত্তাওয়ালী'র দারোয়ান।
যদিও পদে পদে তার মিথ্যা সাক্ষ্য বাকের ভাইয়ের উকিল ধরিয়ে দিচ্ছিলেন আদালতের কাছে, কিন্তু এদিকে বাকের ভাইকে ফাঁসানোর জন্য কুত্তাওয়ালী লোভ দেখিয়ে বাকের ভাইয়েরই সাগরেদ বদিকে হাত করে নেয়। বদি, আদালতে কোরআন ছুঁয়ে শপথ করে মিথ্যা সাক্ষ্য দিয়ে বাকের ভাইকে পাকাপোক্তভাবে ফাঁসিয়ে দেয়। আদালত, ঐ খুনের দায়ে নির্দোষ বাকের ভাইকে মিথ্যা সাক্ষ্যের ভিত্তিতে মৃত্যুদণ্ড দেন। বাকের ভাইয়ের পক্ষে উকিল হিসেবে শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হোন উকিল।
বাংলাদেশ টেলিভিশনে প্রদর্শিত এই টিভি নাটক এতোটাই জনপ্রিয়তা অর্জন করেছিল যে, নাটকের প্রতিটা পর্ব, দর্শকরা প্রবল আগ্রহ নিয়ে উপভোগ করতেন।
নাটকের অগ্রগতির সাথে সাথে দর্শকরা বাকের ভাইকে পছন্দ করে ফেলেন এবং বাকের পক্ষে জনমত গড়ে উঠে। একপর্যায়ে যখন বাকের ভাইয়ের ফাঁসি হবার সম্ভাবনা প্রবল হয়ে উঠে, উকিল হুমায়ূন ফরিদি শত চেষ্টাসত্ত্বেয় খেই হারিয়ে ফেলছেন এই কেসে, তখন দর্শকরা প্রতিবাদমুখর হয়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে; চলতে থাকে মিছিল, দেয়াল লিখন, সমাবেশ। ঢাকাসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে লোকজন মিছিল করে স্লোগান দিতে থাকে “বাকের ভাইয়ের ফাঁসি কেন, কুত্তাওয়ালী জবাব চাই ” কিংবা, “ বাকের ভাইয়ের কিছু হলে জ্বলবে আগুন ঘরে ঘরে” এই ছিল নাটকের "বাকের ভাই " এর জনপ্রিয়তা ! এত জনপ্রিয়তা এবং দর্শক আন্দোলনের পরেও বাকের ভাইকে মরতে হয়েছিল বাংলাদেশের অগনিত নাটক পাগল দর্শকের মনে কষ্ট দিয়ে!
নাটকের বাকের ভাই যেমন জনপ্রিয় ব্যক্তি, মূল বাকের ভাই বিশিষ্ট সংস্কৃতি ব্যক্তিত্য সাংসদ এবং বর্তমানের এমপি ও সংস্কৃতিমন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর আরো বেশি জনপ্রিয় এবং সম্মানিত ! ১০ম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে আসাদুজ্জামান নুর সাহেব যখন নিজ এলাকাতে গণ সংযোগে যান তখন ওনার গাড়ী বহরে হামলা হয় স্থানীয় বি এন পি বা জামায়াতের লোকজন কতৃক ! এই হামলার ঘটনায় ৫ জন লোক প্রাণ হারায় , এতে করে সারা বাংলাদেশেই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানায় এবং এর বিচার দাবি করে !! এই রকম ঘটনা এখন বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের জন্য নিত্য নৈমত্তিক ঘটনা বলতে গেলে প্রায় ডাল ভাতের মত ! কিন্তু একজন সংস্কৃতি ব্যক্তিত্য , শান্ত প্রকৃতির এবং সেই জনপ্রিয় বাকের ভাইয়ের উপর নিন্দনীয় হামলার কারণে এই ঘটনা কেউই স্বাভাবিক ভাবে নেইনি এবং সংবাদ মাধ্যমে ব্যাপক প্রচার এবং প্রসার লাভ করে !
বিভিন্ন টি ভি অনুষ্ঠানে আসাদুজ্জামান নুর সাহেব ও এর তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন এবং এই ঘটনায় দায়ী দোষী ব্যক্তিদের আইনের আওতায় এনে বিচারের মুখোমুখি করার দাবি জানিয়েছিলেন এবং উনি সরকারী দলের সাংসদ হিসেবে বিচারের আশ্বাস দিয়েছিলেন! বাংলাদেশে যেখানে বিচার বহির্ভূত হত্যা , খুন, গুম প্রতিদিনকার ঘটনা সেখানে জনাব আসাদুজ্জামান নুর সাহেব (বাকের ভাই) যখন বিচারের কথা বললেন , আইনের কথা বলেছিলেন , অন্যায়ের বিচার করবেন আশ্বাস দিয়েছিলেন , বাংলাদেশের মানুষ আবার জনাব আসাদুজ্জামান নুর সাহেব (বাকের ভাই) কে ভালো বেসেছিলেন এবং ভেবেছিলেন বাংলাদেশে এখনো ভালো মানুষ আছেন ! সেই সুবাদে বাকের ভাই খ্যাত জনাব আসাদুজ্জামান নুর সাহেব আবার সাংসদ হলেন এবং এবারের মন্ত্রী সভায় সংস্কৃতিমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্য নিলেন ! সবাই খুশি হলেন এই ভেবে যে যোগ্য লোককেই যথাযোগ্য দায়িত্য দেওয়া হয়েছে !!
কিন্তু মন্ত্রী হওয়ার পরে কি মানুষ বদলে যায় ?? যেই আসাদুজ্জামান নুর আইন এবং বিচারের কথা বলে আশ্বাস দিয়েছিলেন তিনি সেই কথা রাখতে পারলেন না !আসাদুজ্জামান নুর এর 'গাড়িতে হামলা' মামলার প্রথম তিন জনেরই গুলিবিদ্ধ ডেড বডি উদ্ধার হলো এই গত কয়েকদিনে ! মানুষ যেখানে বিচারের আশায় ছিলেন সেখানে আবার বিচার বহির্ভূত হত্যা !! বিচার বহির্ভূত হত্যা এখন প্রতিদিনকার ঘটনা ! কিন্তু এই ঘটনা যখন একজন সংস্কৃতি মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নুর (বাকের ভাই) এর সামনেই হয় তখন বাংলাদেশের মানুষের আশার বুক ভেঙ্গে যায়, স্বপ্ন ধুলিস্বাত হয়ে যায় ! অথচ বাকের ভাই খ্যাত এই লোকটার জন্যই একসময় বাংলাদেশের মানুষ রাস্তায় নেমেছিল !
সামান্য একটা নাটকের চরিত্রের ফাসিতেই ঢাকার রাজপথে যে প্রতিবাদ হয়েছিল; তার প্রতি সাধারন মানুষের যে অপরিমেয় শ্রদ্ধা আর ভালবাসা ছিল; তা হয়তো বা তার এই ক্ষমতার দাম্ভিকতায় সেটি মাটির সাথে মিশে যাবে!!
মানুষের পৈশাচিক রুপ টা হয়তো বা সবসময় দেখানো যায় না কিন্তু সুযোগ পেলে সেই রুপটা নিজে থেকেই বের হয়ে যায় কারন পৈশাচিকতাকে ভালো মানুষের চাদরে বেশিদিন ঢেকে রাখা যায় না, নিজ গুনেই ভেতরের আসল রুপটা ঠিকই বেরিয়ে যায়।
বাংলাদেশের বিশিষ্ট জনদের কাছেও যখন আমরা বিশেষ কিছু আশা করেও পাইনা তখন আইন আদালত , বিচার বিভাগ এই সব শুধু লোক দেখানোই মনে হয় ! খুনের বদলে খুন তো যে কেউই করে পারে এবং তা হচ্ছেও প্রতিদিন !!
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।