আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

জীবন সুন্দর; মাহী বেশি সুন্দর – চলচ্চিত্র প্রতিক্রিয়া - অগ্নী

You can do anything, but not everything.


সকাল হইতে রশীদ সাহেব “মাহীরে দেখুম; মাহীরে দেখুম” বলিয়া মাথা খারাপ করিয়া দিতেছিলেন। জীবনের প্রতি সম্প্রতি কিঞ্চিত মায়া মহব্বত কমিয়া যাওয়ায় মায়া বাড়াইতে উহার পিড়াপীড়িতে রাজিও হইয়া গেলাম। দল বল লইয়া সিনেমা দেখায় আনন্দ বেশি ভাবিয়া বান্ধবীদের শুধাইলাম, “অগ্নি দেখতে জাইতেসি; যাবা?” বান্ধবিরা চোখ টিপ মারিয়া বলিল, “এই ছবি তুম্রা ছেলেরা ছেলেরা দেখিয়া আসো; আমরা যাইব কুন দুঃখে?” চোখ টিপের মাহাত্ব না বুঝিয়াই খান তিনেক ছেলে বন্ধুকে লইয়াই(দুষ্টু লোকেরা অন্য কিছু ভাবিয়া বসিবেন না যেন !!!) আবেগে বলাকা সিনেমা হলে পৌছাইয়া গেলাম। গুনিয়া গুনিয়া চারখানা একশত টাকার নোট খরচা করিয়া সিটে গিয়া বসিয়াও পড়িলাম।

সিনেমা শুরু হইল।

প্রথম দৃশ্যেই নায়িকার ভিলেনের প্রাইভেট চেম্বারে প্রবেশ এবং ভিলেনের “আমেরিকা হইতে ফিরিয়া আসার কারণ” হিসেবে “ফার্মের মুরগী খাইতে ভাল লাগে না। দেশী মুরগী খাইতে আসছি” – জাতীয় গভীর ইঙ্গিতপুর্ন বাক্যালাপ শুনিয়া নড়িয়া চড়িয়া বসিলাম। রশীদ সাহেবের দিকে ইঙ্গিতপূর্ণ দৃষ্টিতে তাকাতেই বলিলেন – “রোসো; এ তো স্যাম্পল মাত্র; গোডাউন তো সামনে। “ দিগুন উৎসাহে পর্দায় মন দিলাম।

মুভি চলিতে লাগিল।

নায়িকা তার বাবা মার খুনিদের উদ্ধারের জন্য থাইল্যান্ড গমন করিয়াছেন। সেইখানে তার সাথে দেখা এবং পরিচয় হইল সিনেমার হিরো, ভিলেনদের বডিগার্ড, তিনবারের থাই বক্সিং চ্যাম্পিয়ন, সকল রকম অস্ত্র চালনায় পারদর্শী, সাইকেল, মটরসাইকেল থেকে শুরু করে উরাজাহাজ চালনায় সিদ্ধহস্ত, রজনিকান্তের বাপ, চাক নরিসের আপন মায়ের পেটের খালাতো ভাই, বাংলার দ্বিতীয় অনন্ত জলিল আরেফিন শুভ ওরফে ড্রাগন মতান্তরে ড্রাগেন কিংবা ড্রাগান ওরফে শিশিরের। উচা লম্বা ফিগারের নায়ক সারাটা মুভি দৌড়ায়েই গেলেন, দৌড়ায়েই গেলেন, দৌড়ায়েই গেলেন..., তবে ভিলেনদের পিছনে না; নায়িকার পিছনে !!! আজব হিসাব নিকাশ !!! আর দৌড়ের সময় তার সবচেয়ে প্রিয় বাক্য ছিল - “স্টপ। স্টপ রাইট দেয়ার। ” যেন উনার চোস্ত ইংলিশ শুনিয়া যে যেখানে যে অবস্থায় ছিল সেখানেই দাঁড়াইয়া যাইবে !!! মাহি বোধহয় উসাইন বোল্টের শিক্ষিকা ছিলেন এক সময়।

তিনবারের থাই বক্সিং এর চ্যাম্পিয়ন গোটা তিনেক দৌড়াদৌড়ি আর গাড়ি স্পিডবোট চেইজেও একবারের জন্যও নায়িকাকে ধরিতে সক্ষম হইলেন না। সার্কাস !!!





কাহিনী আগাইয়া চলিল। নায়িকা কসরত টসরত করিয়া ন্যাকা ন্যাকা ভাব করিয়া নায়কের মামার বাসায় ভাড়াও লইয়া লইলেন। সেইখানে নায়কের হাতে পিস্তল দেখার পর উনি সর্বদাই অজ্ঞান অথবা আধা অজ্ঞান হইয়া যাওয়ার ভান করিতে লাগিলেন। দুই তিন বার ঘটনার পুনরাবৃত্তি দেখিয়া নায়কের মামা নায়ককে সদুপদেষ দিতে গিয়া দিলেন পুরো সিনেমার সবচেয়ে এপিক ডায়লগ - “আল্লাহর ওয়াস্তে তোর মেশিনটা ভিতরে রাখ।

” পুরো প্রেক্ষাগৃহে হাসির রোল পড়িল।

এরপর সিনেমা চলিতেই লাগিল, থোড় বরি খাড়া আর খাড়া বরি থোড় এর মতন ছবির কিয়দংশে নায়ক নায়িকার রগড় আর কিয়দংশে মাহী একের পর এক মুদি দোকানে আলু পটল কেনার মতন এক এক ভিলেনকে উপরে পাঠায় দিতে থাকিলেন। অতঃপর আর কি? একে একে সকল ভিলেন মরিয়া গেলে নায়ক নায়িকা সুখে শান্তিতে বসবাস করিতে লাগিল !!!

বুলেট পয়েন্ট একঃ বাংলা সিনেমার কারিগরি দিক দিয়া বেশ ভালই উন্নতি হইসে। ইফেক্ট টিফেক্ট সহ ক্যামেরার কাজ; একশন দৃশ্যগুলো খুবই ভাল ছিল।
বুলেট পয়েন্ট দুইঃ সেই প্রায় গৎবাঁধা স্ক্রিপ্ট আর মাঝে মাঝে ভারামির ব্যর্থ চেষ্টা – এই দুই তিনটা জিনিস বাংলা মুভিতে কখনোই চেইঞ্জ হইল না।

হতাশা !!!
বুলেট পয়েন্ট তিনঃ নায়ক নায়িকার অভিনয় এবং এপিয়ারেন্স বেশ স্মার্ট ছিল। তবে ডায়লগ রাইটারের আরও খানিকটা যত্নবান হওয়া উচিত ছিল।

সব মিলায় ঝিলায় কারিগরি দিক দিয়ে বেশ ভাল কিন্তু বুদ্ধিমত্তার দিক দিয়া দুর্বল একখানা ছবি দেখিয়া পয়সা উসুল করিয়া বাড়ি ফিরলাম।

(ডিস্ক্লেইমারঃ ইহা শুধুমাত্রই সিনেমাটা দেখিয়া আমার নিম্নবুদ্ধির খানিকটা রসিকতা ধরণের রিভিউ লেখার চেষ্টা মাত্র। সিনেমাটাকে খাটো করিয়া দেখানোর বা এই ধরণের কোন কিছুরই অভিপ্রায় আমার ছিল না; নাইও।

ধন্যবাদ। )



 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.