লিখতে ভাল লাগে, লিখে আনন্দ পাই,তাই লিখি। নতুন কিছু তৈরির আনন্দ পাই। কল্পনার আনন্দ। (http://www.ishakkhan.blogspot.com)
কার ফোন?
বন্ধু।
কোন বন্ধু?
আরে সেদিন যে এসেছিল।
নাম মুহিব।
ও আচ্ছা।
একটু থেমেই আবার আমার উশখুশ শুরু হয়। এত রাতে কেন?
এবার সে হেসে ফেলে। বলে, রিল্যাক্স, খুকী।
এমনি খোঁজখবর নিতে ফোন করেছিল।
আমি বলি, এতক্ষণ ধরে খোঁজখবর নিলো শুধু? অতো হাসাহাসি করছিলে কেন?
এবার সে হাসতে হাসতেই আমার দিকে এগিয়ে আসে। ফোনের কল লিস্ট দেখায়। এই যে, মুহিব। চাকরির কাজে ঢাকায় আসছে, কাল অফিসে দেখা করবে, এটা জানাতেই ফোন করেছিল।
কথা বলতে চাও ওর সাথে?
আমি মাথা নাড়ি। না, দরকার নেই।
সে আমার কাঁধে হাত রেখে বলে, এত টেনশন কেন তোমার?
তারপর মুখে একটা কৌতুকের ভাব ফুটিয়ে তোলে, দুষ্টুমির সুরে বলে, কোন সুন্দরী মেয়ের সাথে ইয়ে-টিয়ে হয়ে গেলে তোমাকে জানাবো, ভয় নেই। আশা করি তখন সানন্দে গ্রহণ করবে।
আমি রেগে যাই।
বলি, এসব কথা বলতে মানা করেছি না?
ওকে, সরি। এবার ঘুমুতে যাও। টেনশন কমাও বাপু। দেখা যাবে আমার আগে তুমিই অক্কা পেয়েছ।
আমি চুপ হয়ে যাই।
ও যেটা বলেছে, তাই যেন হয়। তাহলে অন্তত কিছুদিন আমাকে আর টেনশন করতে হবে না। মরলে পরে মানুষ অনেক কিছুর ঊর্ধ্বে চলে যায়, নিশ্চয়ই টেনশনেরও ঊর্ধ্বে চলে যেতে পারে।
চুপচাপ শুয়ে পড়ি আমি। আমার গলা পর্যন্ত চাদর তুলে দেয় সে।
তারপর পাশে এসে শুয়ে পড়ে। বলে, ঘুমোও। সকালে উঠে আবার দুশ্চিন্তা শুরু করবে, কেমন? হা হা।
আমি ধমক দিই। একদম চুপ!
সে কি নিশ্চিন্তে ঘুমিয়ে যায়।
আমার একটু হিংসেই হতে থাকে। শোয়া মাত্রই ঘুম? আর আমার ঘুম আসতে এত দেরী হয়? এটা তো ভারী অবিচার।
হ্যাঁ, ভীষণ উত্তপ্ত হয়ে থাকা মাথাটা ঠাণ্ডা হয়ে না আসা পর্যন্ত ঘুম তো আসবে না। আমি মানুষটির ঘুমন্ত মুখের দিকে তাকিয়ে থাকি। কোন উদ্বেগের ছাপ নেই মুখে।
যেন সবকিছুই ঠিক আছে, সত্যিই ভয় পাবার, দুশ্চিন্তা করার কোন কারণ নেই।
অথচ এই যে শান্ত সৌম্য মুখ, এটাই আমার চব্বিশ ঘণ্টার উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সে যে ব্যাপারটা জানে না, তা নয়। সে জানে, আমার ভেতর সর্বক্ষণ প্রচণ্ড ভয় কাজ করছে ওকে হারাবার। আমি সবাইকে প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করছি; ভাবছি সবাই ওকে আমার কাছ থেকে ছিনিয়ে নিয়ে যেতে চায়।
সে জানে, আমি প্রাণ হাতে করে বসে থাকি যতক্ষণ সে বাইরে থেকে না ফেরে। ফিরলে একটু শান্তি পাই, একটু দম নিই। তারপর আবার নতুন করে ভাবতে বসি।
প্রশ্ন আর সন্দেহে ওকে জর্জরিত করছি প্রতিদিন। ভাগ্যিস আমার মত নয় সে, নইলে কবেই রেগে যেত, ধমকে আমার সমস্ত পাগলামো ছুটিয়ে দিত।
সেদিন সেই পার্টিতে অচেনা এক তরুণী যখন ওর সাথে কোল্ড ড্রিঙ্কসের গেলাস ঠোকাঠুকি করলো, সত্যি বলছি আমার ইচ্ছে করছিল মেয়েটার মুখে প্রচণ্ড আঘাত করতে, ছুরি দিয়ে চোখ গেলে দিতে।
দাঁতে দাঁত চেপে সেই অসহ্য পার্টিতে বসে ছিলাম পুরোটা সময়, নিজের ওপর দিয়ে কী গেছে তা অন্য কাউকে টের পেতে দিই নি। দেখছিলাম মানুষগুলো কি ফুর্তিতেই না আছে।
সে অবশ্য পুরো পার্টিটা খুব এনজয় করলো, তারপর আমাকে বাসায় নিয়ে এলো। আমি চোখমুখ শক্ত করে বসে আছি টের পায় নি মোটেই।
তারপর যখন ঘুমুতে এলো, তখন আপনমনেই বলে উঠলো, পার্টিটা বেশ ভালো হয়েছিল, তাই না?
আমি জবাব দিলাম না। অন্য পাশে ফিরে শুলাম।
সে জিজ্ঞেস করলো, কিন্তু তোমাকে তো খুব একটা কম্ফোর্টেবল দেখাচ্ছিল না। কী হয়েছিল বলো তো?
এবারও জবাব দিলাম না। আচ্ছা, টের পেয়েছিল তাহলে! এতক্ষণে ওর জিজ্ঞাসার সময় হল, সবকিছুর পর?
সে বলল, যে মেয়েটাকে দেখেছ, সে হচ্ছে আমার ভার্সিটি জীবনের বন্ধু।
খুব দুষ্টু। এত বাঁদরামো করেছি আমাদের পাঁচজনের গ্রুপ একসাথে মিলে ... ...
এবার আর আমার সহ্য হয় না। ঝরঝর করে কেঁদে ফেলি। মনে যা আসে চিৎকার করে বলতে থাকি। নিজের কপালকে দোষ দিই, ওকে গাল দিই।
সেই অচেনা মেয়েটিকেও ছাড়ি না। সবই উল্টোপাল্টা কথা, দিনের আলোতে যেগুলো অবাস্তব এবং হাস্যকর মনে হয়।
সে আমাকে সময় দেয়। নিজেও পাল্টা চিৎকার করে আমাকে থামিয়ে দেয় না। ভাগ্যিস থামিয়ে দেয় না!
একটা সময় হয়তো ক্লান্তিতে কিংবা নিজের ভুল বুঝতে পেরে থেমে যাই।
সে কিছুক্ষণ থম মেরে বসে থাকে। হয়তো সময় গুণছিল। কতক্ষণ ধরে পাগলের মত প্রলাপ বকছিলাম আমি? অভিমান উগড়ে দিচ্ছিলাম ছেলেমানুষের মত, কতক্ষণ ধরে? আড়াই মিনিটের বেশী সময় হলে নির্ঘাত সেটা মস্তিষ্কবিকৃতির লক্ষণ।
আমার মানুষটি বড় ঠাণ্ডা মাথার, সেই সাথে কেমন নির্লিপ্ত, যেটা আমাকে সবসময় পীড়া দিয়েছে। একটা সময় সে নিজেকে সামলে নেয়, আমার দুটো হাত ওর হাতের মধ্যে তুলে নিয়ে বলে, শোন, তুমি শুধু শুধু আমাকে নিয়ে ভয় পাচ্ছ।
তোমাকে এই বিশ্বাসটা অন্তত রাখতে হবে যে কেউ আমাকে তোমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাইছে না। আমি মোটেই দূরে সরে যাচ্ছি না। অন্য কারো সাথে সম্পর্ক করছি না। যদি কিছু ঘটে, তবে অবশ্যই তুমি জানবে। খুকী, একটু টেনশনটা কমাও।
এসব চিন্তাভাবনা করে ক্রমাগত শুধু নিজের ওপরই চাপ বাড়িয়ে চলেছ। একটা সময় তোমার মন আর চাপ নিতে চাইবে না, তখন কিন্তু খুব ক্ষতি হয়ে যাবে।
আমার গাল দুটো টেনে দিলো সে। যেন আমি সত্যিই পাঁচ বছরের খুকী।
ওর কথাগুলোতে আন্তরিকতার অভাব নেই, কিন্তু আমার কাছে মনে হয় ঠিক যেন পরীক্ষার রচনামূলক প্রশ্নের উত্তর, মুখস্ত সব কথা।
আমি যেমন পাগলের মত মানুষটাকে ভালোবাসি, ঠিক তেমনি করে একটি দিনের জন্য হলেও সে যদি আমাকে খুব উদ্বেগ আর উৎকণ্ঠা নিয়ে ভালবাসত, তাহলে হয়তো আমি শান্ত হতাম, স্বস্তি পেতাম।
যুক্তির কথা একটা সময়ে না মেনে উপায় থাকে না। আর এত রাতে বসে বসে কান্নাকাটি করা তো ছেলেমানুষি। অগত্যা ওর কথা মেনে নিই। নিজেকে বোঝাতে বোঝাতে, জপ করতে করতে ঘুমুতে যাই - না, কেউ ওকে আমার কাছ থেকে কেড়ে নিতে চাইছে না।
আমার প্রতিদ্বন্দ্বী হয়ে দাঁড়াবার শক্তি-সাহস কারো নেই। কারো নেই।
সে আমার মাথার কাছে বসে চুলের ভেতর বিলি কেটে দেয়। লজ্জামিশ্রিত আনন্দ নিয়ে সে রাতে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। আমার দাবীটা পাঁচ বছরের খুকীর মতই, সবসময় যত্ন চাই, সবসময় আদর চাই, সবসময় কেউ আগলে রাখুক এমনটা চাই।
কিন্তু মানুষটা প্রায় সময়েই এমন দেয়ালের ওপাশে থাকে যে ওকে টেনে আনতে আনতে ক্লান্ত হয়ে পড়ি।
সকালে উঠেই একটা লজ্জা পেয়ে বসে আমাকে। কী করেছি গত রাতে? ছি ছি। এভাবে কেউ রিঅ্যাক্ট করে? আমি কি পনেরো বছরের কিশোরী? এভাবে মান-অভিমান করা আমাকে মানায়? না হয় জীবনসঙ্গী, কিন্তু ওর-আমার, দু’জনেরই তো ব্যক্তিগত জীবন বলে একটা ব্যাপার আছে। মানুষটা না হয় আমাকে ক্রমাগত সান্ত্বনা দিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু মনে মনে কি বলছে না, এই মেয়েটার সমস্যা কী? এমন করে কেন সবসময়? এ কোন পাগলের পাল্লায় পড়লাম?
ঠোঁট কামড়ে ধরে বলি, তাহলে তো খুব লজ্জার ব্যাপার।
খুব সংকোচের ব্যাপার। নাহ, আমাকে ওর ব্যাপারে নির্লিপ্ত হতে হবে। এ যুগে কি এসব ন্যাকামো চলে?
নির্লিপ্ত হবার চেষ্টা মুখ থুবড়ে পড়লো প্রথম দিনেই। ঠিক করেছিলাম সারাদিনে একবারও ফোন করবো না, খোঁজ নেবো না। দেখিই না পারি কীনা।
নিজের মনের জোরের ওপর একটু বেশীই ভরসা করে ফেলেছিলাম।
দেখলাম, সময় গড়ানোর সাথে সাথে মাথা প্রচণ্ড গরম হয়ে উঠছে, বুকের ভেতর অনুভব করছি চাপ চাপ ব্যথা।
আর সহ্য করতে না পেরে ফোন করলাম, এবং তার দশ মিনিট পর আবার। তার পাঁচ মিনিট পর আবার। দু’বারের জায়গায় তিনবার।
আমার মানুষটা নিরাপদে আছে কীনা, নিশ্চিত হতে হবে যে আমাকে। ওর ব্যাপারে নিশ্চিন্ত হবার ভান করা আমার পক্ষে অন্তত একেবারেই সম্ভব নয়। যদি কিছু একটা হয়ে যায়, আর জানতে আমার দেরী হয়ে যায়? সে-ই তো আমার সব। অন্য কারো কি যায় আসে কিছু? কেউ কি ওর খোঁজ নেয়, না খোঁজ নেবার দরকার মনে করে? আমি না থাকলে সে তো একদিনেই ভেসে যাবে।
আমার অস্থিরতা দেখে ঘাবড়ে গেলো সে, সেদিন একটু আগেই অফিস থেকে চলে এলো, আর আমার মাথায় হাত বুলিয়ে শান্ত করলো।
হাসিমুখে বলল, আবার! এমন করতে না মানা করেছি!
আমি অবাক হই। এই মানুষটা কী করে এত হাসে? আমি দুশ্চিন্তায় কাঠ হয়ে যাচ্ছি, আর সে কীনা ... ...।
অন্য কোন মেয়ে হলে নিশ্চিত এতদিনে খুব ভরসা পেয়ে যেত। আমি নিশ্চয়ই খুব খারাপ একটা মেয়ে, তাই ভরসা পাচ্ছি না। কিছুতেই মনের ভেতরটাকে শান্ত করতে পারছি না, বশ মানাতে পারছি না।
একটু একটু ভয়ও লাগছে। হয়তো কিছুদিনের ভেতরেই সে সসংকোচে আমাকে এসে বলবে, একজন খুব ভালো ডাক্তারের সন্ধান আছে, যাবে?
অর্থাৎ, তোমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে, চিকিৎসা দরকার।
আমি প্রাণপণে বলি, খোদা, এমন হবার আগেই যেন মরে যাই।
ভয়াবহ চিৎকার করছিলাম আমি। একটানা চিৎকার।
সম্বিৎ ফিরে আসার আগ পর্যন্ত কতক্ষণ চেঁচিয়েছিলাম জানি না।
পুরো সময়টা সে আমাকে বুকে চেপে ধরে বসে ছিল। পিঠে হাত বুলোতে বুলোতে বলছিল, শান্ত হও খুকী, শান্ত হও।
একটা সময় আমার হুঁশ হল, আমি হাঁপাতে হাঁপাতে বললাম, শোন, তুমি একটু সাবধানে চলাফেরা কোরো।
সে একটা নিঃশ্বাস ফেলে বলল, আচ্ছা।
তারপর গ্লাসে করে পানি এনে দিলো।
ঢকঢক করে পানি খেতে গিয়ে অর্ধেকটাই বাইরে পড়লো। সে মাথার কাছে বসে মুখস্ত কথার মতই বলে, আস্তে খাও, গলায় আটকাবে তো। তাড়াহুড়ো নেই তো।
আমি ওর কথায় কান দিই না।
কখনোই দিই নি। কোনমতে পানিটা শেষ করি, তারপর আবার বলি, শোন, তুমি একটু ... ...
সে আমাকে বাধা দেয়। আচ্ছা, সাবধানে থাকবো। না থেকে উপায় আছে? তুমি যা কর! এবার শুয়ে পড় তো। ঘুমোও।
মাথা ঠাণ্ডা কর। কোন ভয় নেই।
আমি আবার শুয়ে পড়ি। দপদপ করছে মাথাটা, ভীষণ ক্লান্ত লাগছে কিন্তু ঘুম আসছে না। কি বিশ্রী স্বপ্ন! আচ্ছা, সত্যিই যদি এমনটা হয়, তাহলে আমার কী হবে?
আমি আর ভাবতে পারি না।
দুঃস্বপ্ন মাথা থেকে দূর করার প্রাণপণ চেষ্টায় আরও ক্লান্ত হয়ে তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। আমার পাশেই শুয়ে থাকা মানুষটা নিশ্চয়ই আন্দাজ করতে পেরেছে, প্রায়ই ওকে নিয়ে স্বপ্ন দেখছি। দেখছি রাস্তা পার হতে গিয়ে সে ... ...
ধ্যাত, রাস্তা পার হতে যাবে কেন? আর পার হতে গিয়ে কেন হঠাৎ দাঁড়িয়ে পড়বে? আর গাড়িটাই বা কেন ওর ওপর ... ...
রক্তে মাখামাখি রাস্তা। কি বীভৎস, কি কুৎসিত!
আমি বহু কষ্টে কেঁদে উঠতে গিয়ে সামলে নিই। এত সহজে চোখে পানি চলে আসে কেন কে জানে।
ওর তো আসে না!
এই করে চলছে দিনের পর দিন, রাতের পর রাত। দুশ্চিন্তা করা আমার রুটিনওয়ার্ক। শুধু ওর জন্য দুশ্চিন্তা। অবসেশন। দুঃস্বপ্ন, সন্দেহ, নানা বিদঘুটে আর কিলবিলে প্রশ্ন রাতদিন আমাকে পীড়া দিয়ে যাচ্ছে।
সাইকোলজির পরিভাষায় নিশ্চয়ই ব্যাপারটার গালভরা কোন নাম আছে। হয়তো “উন্নত” চিকিৎসাও আছে, যে থেরাপি নিলে জন্মের মত সব দুশ্চিন্তা দূর হয়ে যায়।
আমি দাঁত কিড়মিড় করে বলি, কি বিশ্রী ব্যাপার! একান্তই নিজের মানুষটির জন্য দুশ্চিন্তা করার রাস্তাটাও বন্ধ করে দিলে একজন বাঁচবে কী নিয়ে?
তাই আমি দুশ্চিন্তা করি। নানাবিধ, বহুমাত্রিক, কিম্ভূত সব দুশ্চিন্তা!
এই বুঝি কোন লাস্যময়ী তরুণী একটা মিষ্টি হাসি হেসেই ওকে কুপোকাত করে দিলো। পুরুষমানুষ তো, কী ভরসা? মুনিগণ ধ্যান ভাঙি দেয় পদে তপস্যার ফল।
আর আমার মানুষটি তো একেবারেই সাধারণ। মেয়েগুলোর ছলাকলার কোন অভাব আছে?
এই বুঝি কোন বন্ধু ভুলিয়ে-ভালিয়ে নিয়ে ওকে মেরে ফেললো, মদের আড্ডায় বসিয়ে দিলো। তারপর সে রাতে ফিরল টলতে টলতে, মুখ খিস্তি করে গালিগালাজ করতে করতে, চোখ দুটো জবাফুলের মত লাল করে, মুখে দুর্গন্ধ নিয়ে। সেটা সহ্য হবে আমার?
এই বুঝি কোন গোপন সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ল, এই বুঝি আমার চোখের আড়ালে কারো সাথে হেসে হেসে আলাপ করলো।
এই বুঝি রাস্তা পার হতে গিয়ে একটা ব্রেক ফেল করা গাড়ির নিচে চাপা পড়ল।
এই বুঝি ... ... ইত্যাদি ইত্যাদি।
আমার ভয় আর দুশ্চিন্তার তালিকা করতে যাবো না। তারা বড় অগোছালো হয়েই আছে, তারপরও আমাকে খুঁচিয়ে যাচ্ছে সর্বক্ষণ। অস্বীকার করবো না, যদি সম্ভব হত, তবে আমার মানুষটিকে বাক্সে ভরে তালা এঁটে আলমারির সবচেয়ে ভেতরের গোপন কুঠুরিটায় রেখে দিতাম।
জানি, মোটেই ঠিক হচ্ছে না।
নিজেকে তো বটেই, ওকেও খুব কষ্ট দেয়া হচ্ছে। সে কোন পোষা জন্তু নয়, স্বাধীনচেতা, জীবনকে উপভোগ করতে চাওয়া একজন মানুষ। কিন্তু সবসময় ওর পায়ে শেকল পরিয়ে রাখতে চাইছি, অধিকারের দাবীতে। সুযোগ নিচ্ছি কি স্বার্থপরের মত! সুযোগটা দিচ্ছে বলেই কি?
মানুষটা সবসময় হাসিমুখে আমাকে সামলানোর চেষ্টা করছে সন্দেহ নেই। সে আমাকে খুব ভালোবাসে তাতে সন্দেহ নেই।
কখনো মুখ বিকৃত করে বিরক্তি প্রকাশ করছে না তা-ও ঠিক। ওকে এভাবে সর্বক্ষণ আটকে রাখতে চাওয়া, ওর স্বাধীনতা, ওর চলাফেরার ওপর সবসময় নজরদারি করা মোটেই উচিৎ হচ্ছে না, খুব ভালো করে জানি।
কিন্তু আমাকে কে বোঝাবে? কে মনকে মানাবে? নিজেই নিজেকে বোঝাবার উপায়টা খুব একটা কাজের নয়, সে প্রমাণ ইতোমধ্যেই পেয়েছি। আর অন্যরা তো আমাকে বোঝাতে এসে বহু আগেই ব্যর্থ হয়ে গেছে।
হয়তো এত অনুভূতিপরায়ণ হওয়া ঠিক নয়।
হয়তো ওর মত “ফর্মাল ভালোবাসা”, “চুপচাপ ভালোবাসা” - ই ঠিক। সবকিছুতেই পা ছড়িয়ে কাঁদতে বসা, সন্দেহ করা, চিৎকার-চেঁচামেচি করে একাকার করা, রাতদুপুরে দুঃস্বপ্ন দেখে জেগে ওঠা অপরাধই হয়তো। কিন্তু আমি যে এমন অবুঝের মতই ভালবাসতে ভালোবাসি!
(২৮ অক্টোবর, ২০১৩)
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।