তোমায় গান শোনাবো,তাইতো আমায় জাগিয়ে রাখো... ওগো ঘুমভাঙানিয়া,ওগো দুখজাগানিয়া ...
বিশ্বাস বড়ই কঠিন জিনিস । মানুষের মনের সাথে বিশ্বাসের একটা গভীর যোগসূত্র আছে । অনুকূল বা প্রতিকূল বিভিন্ন অভিঘাতের প্রতিক্রিয়াই হল বিশ্বাস । বিশ্বাসকে ধরা যায় না,ছোঁয়া যায় না শুধু অনুভব করা যায়,ঠিক মনের মতই । মনকেও দেখা যায় না,ধরা যায় না ।
এক হিসেবে বিশ্বাসই হয়তো মন কিংবা মনই বিশ্বাস । কিন্তু মন ব্যাপারটা যেমন সহজাত,বিশ্বাস কিন্তু তেমন সহজাত নয় । আগেই বলা হয়েছে অনুকূল বা প্রতিকূল পারিবারিক,সামাজিক,সাংস্কৃতিক,ধর্ম বা রাজনৈতিক মিথস্ক্রিয়াই একজন মানুষের বিশ্বাস নির্মাণের প্রধানতম নিয়ামক । কিন্তু এর বাইরেও অনেক উপাদান আছে যারা একজন মানুষের বিশ্বাস নির্ধারণ করে দেয় । এই উপাদানগুলোর চিহ্নিতকরণ সোজা ব্যাপার নয় মোটেও ।
বক্রতার এই ফাঁক দিয়েই হয়তো অসংজ্ঞায়িত,অপ্রচলিত অনেক ব্যাপার চলে আসে যেটা সচরাচর আমাদের পঞ্চইন্দ্রিয় দ্বারা উপলব্ধ হয় না । কেউ হয়তো একে “মিরাকল” বলে চালিয়ে দেবেন আর কেউ হয়তো ধরেই নিবেন সেটাই “স্বাভাবিক” ছিল ! কোনটা স্বাভাবিক আর কোনটা মিরাকল সেটা মানুষ তখনই বুঝতে পারে যখন একটা ঘটনার ফলাফল সকল সম্ভাব্য যুক্তি কিংবা সম্ভাবনাকে ছাড়িয়ে যায় । বিশ্বাসীরা একেই ঈশ্বর এবং সংশয়বাদীরা একে “কোন পরম প্রাকৃতিক সত্য” এবং অবিশ্বাসীরা একে “কোন একটি ঘটনার অজস্র সম্ভাবনার একটি” বলে চালিয়ে দেন ।
প্রাচীনকাল থেকেই এই বিশ্বাসের ‘উৎস” নিয়ে এন্তার দর্শন চর্চা হয়েছে,এখনো হচ্ছে,হবে ভবিষ্যতেও । এটা এমন একটা জিনিস যেটার রফা কোনদিনই সম্ভব নয় ।
বস্তত,অবস্তুগত এবং তাত্ত্বিক বিষয়ের মিমাংসা খুব সহজ হলেও মেনে নেবার মানসিকতাটা সহজে গঠিত হয়না । কিন্তু একটা ব্যাপার একটা মানুষের মতই সত্যি যে পরোপকার,সহানুভূতি,অন্য মানুষের প্রতি ভালোবাসা,মানুষের বিপদে এগিয়ে যাওয়া,সাধ্যমত সহায়তা করা... সর্বোপরি একটা কল্যাণিক মনের সাথে বিশ্বাসের কোথাও না কোথাও একটা সহসম্পর্ক আছে । সচেতনতায় এই বিশ্বাসের দেখা না মিললেও অবচেতনে ঠিকই তার দেখা মেলে । তাই হয়তো খুব দুর্বল মুহূর্তগুলোতে একজন “ডেসপ্যারেট” মানুষ কোন এক পরম সত্যের কাছে নিজেকে সমর্পণ করে দেয় । হোক সেটা বস্ত্রহীনের বস্ত্রকামনা,সঙ্গীহীনের সঙ্গী,ভুভুক্ষের খাদ্য, হতাশার আশা-ভরসা,বিপদের ত্রানপ্রার্থনা ।
আর এই ব্যাপারটাই একজন মানুষের বিশ্বাস কোন অভিমুখে,কোন মাত্রায় কতটুকু সেটার জানান দেয় ।
“ইটস এ ওয়ান্ডারফুল লাইফ” চমৎকার একটা ছবি । বিংশ শতাব্দীর সেই চল্লিশের দশকের শেষের দিকের ছবি । কিন্তু এখনো কেমন নতুন,ঝকঝকে । জেমস স্টুয়ারটের পরোপকারী চরিত্র,স্বতঃস্ফূর্ততা,প্রিয়জনের প্রতি ভালোবাসা,বাবা-মা,ভাইয়ের প্রতি শর্তহীন আনুগত্য এই ব্যাপারগুলো বর্তমানে কিছুটা ফিকে হয়ে গেলেও এখনো চিরতরে মুছে যায়নি ।
তাই হয়তো আমরা এখনো মনুষত্ব্যকে কামনা করি,পূজা করি,আকাঙ্ক্ষা করি,ভালোওবাসি,অন্যের মনুষ্যত্বকে শ্রদ্ধা করি,অন্যের মনুষ্যত্বকে অনুসরণ করি । এই কারণেই বোধ হয় আমরা এখনো মানুষ হওয়ার স্বপ্ন দেখি,মনুষ্যত্বে বিশ্বাস করি ।
একজন কট্টর সমালোচকের পক্ষেও অসম্ভব ফ্রাংক কাপরার ছবির খুঁত বের করা । আর জেমস স্টুয়ারটের কথা কি আর বলি । অভিনয়ের সকল বিদ্যাই তাঁর নখদর্পণে ।
হলিউডের ক্ল্যাসিক ছবিগুলো শুধু মানুষকে বিনোদিতই করে না,একটা দার্শনিক বার্তাও দেয় । আপনাকে ভাবায়,আপনার চিন্তাশক্তির উপর একটা অঘোষিত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেয়, “যে তুমি ভাবতে থাক,ভাবতেই থাক যতক্ষণ না পর্যন্ত তুমি তোমাকে খুঁজে পাও,তোমার বিশ্বাসকে খুঁজে পাও । ”
।
অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।