আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

ভারতের লোকসভা নির্বাচন, মোদি ও প্রাসঙ্গিক ভাবনা ।

স্বাধীনতা, সে তো আমার প্রিয় মানুষের এক সাগর রক্তের বিনিময়ে কেনা


মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পিউ রিসার্চ সংস্থা তাদের পরিচালিত এক জরিপে জানিয়েছে ভারতের ৬৩ শতাংশ মানুষ দিল্লির ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দুতে মোদিকে চান। রাহুল তথা কংগ্রেসের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন মাত্র ১৯ শতাংশ লোক। প্রতি ১০ জনে ছয়জন ভারতের কেন্দ্রে বিজেপি সরকারকে দেখতে চাচ্ছেন। প্রতি ১০ জনের মাত্র দু’জন কংগ্রেসের নেতৃত্বাধীন ইউপিএ সরকারকে আরো একবার ক্ষমতায় দেখতে চান।

ভারতের জনগণ গুজরাট হত্যাকান্ডে মোদির জড়িত থাকাকে আর আমলে নিচ্ছেন না বরং তারা গুজরাটে মোদি যে উন্নয়নের ধারা সৃষ্টি করেছেন ও অর্থনীতিকে যে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড় করিয়েছেন মোদির সেই কৃতিত্ব পুরো ভারতবাসীর জন্য প্রযোজ্য হতে পারে বলে অধিকাংশ ভারতবাসী মনে করছে।

এক্ষেত্রে ভারতবাসী অতীত নয় ভবিষ্যৎকেই প্রধান্য দিচ্ছে। বিজ্ঞ অর্থনীতিবিদ মনমোহনের অর্থনৈতিক ব্যর্থতাই কি মোদির সফলতা ? মোদি কি পারবেন মনমোহনের ব্যর্থতাগুলি সফলতার চাদরে মুড়িয়ে দিতে ? যদিও মোদি একজন অর্থনীতিবিদ নন , কিন্তু নির্বাহী বিভাগের প্রধানের পদটিতে অর্থনীতিবিদ নয় বরং প্রয়োজন দক্ষ, চৌকস ও প্রভাবশালী একজন রাজনীতিকের। সেসেক্ষত্রে বর্তমান রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে মোদির দ্বিতীয় কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নেই অন্তত আপাতত। এটা বলা যায় মোদি জয়লাভ করলে তাৎক্ষণিকভাবে দুর্নীতির মাত্রা কমে আসবে , ভারতের অর্থনীতি আরো গতিশীলতা পাবে, কারণ প্রশাসনে আরো গতিশীলতা আসবে, রদবদল আসবে, আসবে নতুন মুখ। মোদি এখন পর্যন্ত তার অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রকাশ করেণনি তবে তা প্রকাশ করলে মোদির জনসমর্থন বাড়বে বৈ কমবে না ! অবশ্য আমাদের দক্ষিণ এশিয়াসহ গণতন্ত্রমনা দেশগুলিতে কোনো দল দীর্ঘকাল ব্যপিয়া ক্ষমতায় থাকলে সেই দলের ব্যর্থতা, স্বজনপ্রীতি, দুনীর্তিতে জনগণ অতিষ্ঠ হয়ে পড়ে, মানুষ তখন পরিবর্তন চায়।

এই পরিবর্তনের আকাঙ্খা থেকেই কিন্তু তৃতীয় শক্তি হিসাবে জন্ম ও বিকাশ হয়েছে আম আদমির। সামনের লোকসভা নির্বাচনে বিজেপির নেতৃত্বে সরকার গঠন হওয়ার সম্ভবনা সবচেয়ে অধিক সেহেতু নরেন্দ্র মোদীই হতে যাচ্ছেন ভারতের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী !

নরেন্দ্র মোদির পশ্চিমবঙ্গের জনসভায় মমতার কোনো সমালোচনা বা বিরোধীতা করেণনি বরং তিনি বলেছেন পশ্চিমবঙ্গে যেমন মমতাকে দরকার তেমনি কেন্দ্রে বিজেপিকে দরকার। মোদি পশ্চিম বাংলাকে সোনার বাংলা্ গড়বেন বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। তবে পশ্চিমবঙ্গের জনগণ হয়তো এই বাস্তবতাও উপলব্ধি করবে যে কেন্দ্রে তাদের সমর্থক দলের সরকার প্রয়োজন। সেই ক্ষেত্রে গতবারের তুলনায় পশ্চিমবঙ্গেও বিজেপি এবার হয়তো ভাল ফলাফল করবে।

তবে বিজেপি তাদের প্রধান প্রতিপক্ষ কংগ্রেসকে নিয়ে নয় বরং আম আদমি পার্টিকে নিয়েই একটু বেশি চিন্তিত মনে হচ্ছে । এই দলটির হঠাৎ উত্থান অনেকেরই হিসাব নিকাশ পাল্টিয়ে দিয়েছে ! মার্কিন লবি যেহেতু বিজেপি তথা মোদিকে পছন্দ করে না সেই ক্ষেত্রে তারা আম আদমিকে আরো সামনে নিয়ে আসার চেষ্টা করে যাচ্ছে। ভারতের রাজনৈতিক বাস্তবতা উপলব্ধি করেই যুক্তরাস্ট্র মোদি সংক্রান্ত তার অবস্থান পরিবর্তন করতে অনেকটা বাধ্য হয়েছে। সামনে আরো পরিবর্তন দেখতে পারব। আসন্ন লোকসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভারতের রাজনৈতিক দলগুলির মধ্যে জোট গড়া ও ভাঙ্গনের খেলাও চলবে সমান তালে।

অন্যদিকে দুর্নীতির বিরুদ্ধে জেহাদ ঘোষণা করে আম আদমি উত্থা্ন হলেও কেজরিওয়ালের গুরু আন্না হাজারের সমর্থন জোটেনি কেজরিওয়ালের কপালে যা আম আদমির জন্য এক বড় ধাক্কা !

এতো গেল ভারতের অভ্যন্তরীণ রাজনীতির কথা, কিন্তু বিজেপি তথা মোদির জয় নিশ্চিৎভাবেই দক্ষিণ এশিয়াতে এর চরম প্রভাব পড়বে। নি:সন্দেহে বিজেপি ভারতের অন্যতম একটি সাম্প্রদায়িক শক্তি। সেক্ষেত্রে ভারতসহ পুরো দক্ষিণ এশিয়ায় উগ্রবাদ নতুন মাত্রা পেতে পারে। ভারত-পাকিস্থান সম্পর্ক কি মাত্রায় অবস্থান করবে তা এখন বলা যাচ্ছে না । ভারতে বিচ্ছিন্নতাবাদ আরো বাড়তে পারে।

সো দক্ষিণ এশিয়ায় অস্থিতিশীলতার ঝুকি থেকেই যাচ্ছে। নরেন্দ্র মোদী এখন পর্যন্ত গুজরাট হত্যাকান্ডে অনুতপ্ত নন । সো সামনে তিনি ক্ষমতায় এসে কি কি পদক্ষেপ নেন তার উপর নির্ভর করবে পরবর্তী পরিস্থিতি। তবে কংগ্রেসের সাথে আওয়ামীলীগের যে দহরম দহরম সম্পর্ক -বিজেপি ক্ষমতায় আসলে সেই সম্পর্কে অবশ্যই একটা প্রভাব পড়বে এগুলো নির্ভর করবে মোদির পরবর্তী পরিকল্পপনা ও কর্ম-কান্ডের উপর।

বিশ্বের সবচেয়ে বৃহৎ গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের রাজনীতি সরল নয় অনেকটা জটিল প্রকৃতির।

ভারতের আয়তন, জনসংখ্যা, দ্বি-কাক্ষিক সংসদীয় শাসন ব্যবস্থা এর অন্যতম কারণ। অবশ্য এজন্যই ভারতের গণতন্ত্র দক্ষিণ এশিয়ার অন্যান্য দেশের চেয়ে অধিকমাত্রায় প্রশংসাযোগ্য !

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.