আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

সম্পাদনা বিভাগ ছাড়াই চলছে এফডিসি

চলচ্চিত্র নির্মাণের অপরিহার্য অঙ্গ হচ্ছে সম্পাদনা। আশ্চর্য হলেও সত্য, সম্পাদনা বিভাগ ছাড়াই এফডিসিতে চলছে চলচ্চিত্রের নির্মাণকাজ। অথচ চলচ্চিত্র নির্মাণে পূর্ণাঙ্গ সহায়তার জন্যই প্রতিষ্ঠা করা হয় এফডিসি।

বর্তমানে সম্পাদনার জন্য বেসরকারি প্রতিষ্ঠান অথবা বিদেশে কাজ করতে গিয়ে বাড়তি অর্থ ব্যয় করতে হচ্ছে নির্মাতাদের। এতে লোকসানেও পড়ছে তারা।

সম্পাদনা বিভাগ বন্ধ থাকায় এ বিভাগের ৪০ সদস্যের প্রায় সবাই এখন বেকারত্বের কারণে মানবেতর জীবনযাপন করছেন।

চলচ্চিত্র এডিটরস গিল্ডের সভাপতি আবু মুসা দেবু বলেন, প্রায় দু বছর ধরে এনালগ পদ্ধতিতে চলচ্চিত্র নির্মাণ হয় না। হলেও খুব কম। কিন্তু সম্পাদনা বিভাগের জন্য এ পর্যন্ত ডিজিটাল যন্ত্রপাতি আনার লক্ষণ নেই। দীর্ঘদিন শুধুই শুনছি 'শীঘ্রই আনা হচ্ছে'।

ব্যাপারটি চলচ্চিত্রের বিজ্ঞাপনের মতো হয়ে দাঁড়িয়েছে। মানে একসময় বলা হতো, 'অমুক ছবি আসিতেছে'। সম্পাদনা বিভাগের লোকজনও এখন সেই আসিতেছের প্রতীক্ষায় আছে।

তিনি জানান, সম্পাদনা বিভাগের লাইট ওয়ার্ক একবারেই বন্ধ রয়েছে। সরকার দুই বছর আগে এফডিসির আধুনিকায়নের জন্য প্রায় ৬০ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয়।

গত দুই বছর ধরে বরাদ্দের টাকা শুধু টেন্ডার আহ্বান ও বাতিলের মধ্যেই সীমিত রয়েছে। আধুনিকায়নের কোনো ছোঁয়া সংস্থাটিতে এখনো লাগেনি।

২০১১ সালে একনেকের সভায় এফডিসির আধুনিকায়ন ও সম্প্রসারণের জন্য সরকার ৫৯ কোটি ১৮ লাখ টাকা বরাদ্দ দেয়। অর্থ বরাদ্দের নীতিমালা অনুযায়ী তিন বছরে তিন কিস্তিতে এই টাকা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। সেই হিসেবে প্রথম কিস্তি অর্থাৎ ২০১১-১২ অর্থবছরে ৯ কোটি ৭২ লাখ টাকা পাওয়া যায়।

এই অর্থের মধ্যে ৩ কোটি ৩৩ লাখ টাকা বিভিন্ন খাতে ব্যয় হলেও বাকি অর্থ টেন্ডার জটিলতায় সরকারের কাছে ফেরত যায়। এই অর্থের মধ্যে সম্পাদনা বিভাগের যন্ত্রপাতি কেনার কোনো ব্যবস্থা ছিল না। দ্বিতীয় কিস্তিতে ২০১২-১৩ অর্থবছরে পাওয়া যায় ১০ কোটি ৮২ লাখ টাকা। এই টাকা দিয়ে অন্যান্য যন্ত্রপাতির মধ্যে একটি ডিজিটাল এডিটিং মেশিন কেনার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় শেষ পর্যন্ত এই টাকাও সরকারের কাছে ফেরত চলে যায়। অর্থাৎ এডিটিং বিভাগের উন্নয়ন বা আধুনিকায়ন আর হয়নি।

ইতোমধ্যে ৯ কোটি ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে বেশ কিছু যন্ত্রপাতি এসে পেঁৗছলেও এডিটিং বিভাগের কোনো যন্ত্রপাতি আনা হয়নি।

এফডিসি কর্তৃপক্ষ জানায়, শীঘ্রই ডিজিটাল এডিটিং মেশিন আনা হচ্ছে। এডিটরস গিল্ডের সভাপতি আবু মুসা দেবু বলেন, আমিও শুনেছি পাঁচ সেট এফসিও অফলাইন অনলাইন ডিজিটাল এডিটিং মেশিন আনা হচ্ছে। তবে কখন আনা হবে তা জানি না। হাতে এসে না পৌঁছানো পর্যন্ত 'আসিতেছে'-এর মধ্যেই থাকতে হবে।

তিনি বলেন, সম্পাদনা বিভাগের ৪০ সদস্যের মধ্যে পাঁচজন বাইরের এডিটিং প্যানেলে নিয়মিত কাজ করছেন। তাদের সহকারী হিসেবে কাজ করছেন আরও কয়েকজন। বাকিরা বেকার।

তিনি আরও জানান, যখন এনালগ ব্যবস্থায় কাজ চলত তখনই এডিটিং বিভাগের প্রায় সব যন্ত্রপাতি ছিল অকেজো। ট্রান্সফার মেশিনের দুটি টেলিসিনেই ৬ বছরের বেশি সময় ধরে নষ্ট অবস্থায় পড়ে আছে।

৬ বছর আগে একটি ডিজিটাল এডিটিং মেশিন আনলেও তাও এখন নষ্ট। ৮টি স্ট্যান্ডব্যাক মেশিনের ৭টিই অচল। ১টি চলে গেছে ল্যাবে। ৪টি কেইএম মেশিনের ৩টিই নষ্ট। বহু আবেদন নিবেদন করেও এগুলো ঠিক করা যায়নি।

টেলিসিনে মেশিনটি যদি এখনো ঠিক করানো যায় তাহলে তা দিয়ে ৩৫ মিলিমিটারে শুট করা ছবিকে ডিজিটালে রূপান্তর করা যাবে।

আবু মুসা দেবু এফডিসি কর্তৃপক্ষ এবং সরকারের কাছে অনুরোধ জানিয়ে বলেন, দ্রুত এফডিসির সম্পাদনা বিভাগকে ডিজিটাল কর্ম উপযোগী করে গড়ে তুলে চলচ্চিত্র নির্মাণের সুবিধা নিশ্চিত এবং সম্পাদকদের বেকারত্বের অভিশাপ থেকে বাঁচানো হোক।

 

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।

প্রাসঙ্গিক আরো কথা
Related contents feature is in beta version.