আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

প্রত্যাশিত আকাঙখার অনাকাঙ্খিত সমাপ্তি

আমি এমন এক সাধারন মানুষ হতে চাই যে অসাধারন হবার পেছনে দৌঁড়ায়না এবং বিনা প্রশ্নে কিছু গ্রহন করেনা ।

অবনত নীল আকাশের উপরে তিনটে শকুন বক্র পথে ঘোরাঘুরি করছে । দেখে কোন কারণ ছাড়াই সন্দেহ জাগে । কুসংস্কারমনা হলে প্রশ্ন জাগে তবে কি খুব অশুভ কিছু ঘটতে চলেছে ? তবে কি এই সময়ে জীবন বাঁচাতে সাবধান হয়ে চলাফেরা করলে ভালো ? তবে কি ............ এমন অগণিত প্রশ্ন মনের মধ্যে উঁকি দেবে কুসংস্কারের বাতিক থাকলে । অবশ্য এমনও নয় যে মনে কোন জরাজীর্ণ , অচল হাওয়াই কল্পিত ভাবনা না থাকলে সময়টা শুভ ।

এমনটা অবশ্যই হয়না । আঁচ কাকে পোড়ায়না ? দূরদুরান্ত থেকেও তো একেকটি প্রাণ পুড়ে অঙ্গার হয় । কেউ জ্বলে পুড়ে শপথ নেয় শেষবারে যখন পুড়ে যাবে তার আগে পুড়িয়ে যাবে শত্রুদের কয়েকজনকে । কেউ স্রেফ জ্বলে নির্বাক হয়ে যায় । অস্ফুট ধ্বনি প্রবল শক্তিতে ফুটে বেরিয়ে উঠে চারপাশকে কিছু জানিয়ে যেতে চায় চায় তবু তা হয়না ।

সেই হতাশার অনুতাপ থেকে , সেই আক্ষেপ পরবর্তী দীর্ঘশ্বাসের গর্ভে ছোট ছোট অনুভূতি জন্মের প্রথম ক্ষণ থেকেই পুড়ে পুড়ে অংকুরোদগমের পর ইস্পাতসম হয়ে উঠে । নতুন কোন প্রসবের আকূল বেদনায় সেই জ্বলজ্যান্ত অনুভূতিগুলো দিনানিপাত করে আজীবন । তার প্রতিটি অভিব্যক্তি যেন সৃষ্টির শ্রেষ্ঠতম আনন্দকেই বেদনার গাঢ় রসে ঢেলে দিয়ে যায় অকৃপণ ।

ক্রমশ সাদা বকের বাড়ি ফেরার সময় হয়ে আসে । ধীরে ধীরে সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসতে থাকলে কর্মব্যস্ত মানবসন্তানদের মনে পড়ে যায় আজকের মতো তার পরাজিত হবার দীর্ঘ গ্লানিময় প্রহরের সমাপ্তি হয়েছে ।

পণ্য ক্রয় – বিক্রয়ের তাড়নায় আচমকা আটপৌরে অবয়ব থেকে এরিস্টোক্রেট রঙচঙে শরীরে নিজেকে দেখতে পাওয়া রাস্তাঘাটসমূহ মানবসন্তানের পদচারণা , কুকুরের চিৎকার , বেড়ালের সতর্ক দৃষ্টির চলাফেরায় মুখর হয়ে উঠে । গাছের পাতাসমূহ আসলেই কাঁপে নাকি নিস্ফল অভিমানে স্থির হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে নিজেকে আঘাত করে চলে নিরন্তর বোঝা যায়না । শহরের বিভিন্ন গলিঘুপচি ক্রমশ ব্যতিব্যস্ত হয়ে উঠতে আরম্ভ করে । ধানের শীষ নিঃসঙ্গ দোল খায় । সারাদিনের তীব্র শোষণ শেষে ঘর্মাক্ত ও বিপর্যস্ত অর্ধনগ্ন চাষী সস্তা বিড়িতে মনুষ্যজীবনের তাৎপর্য্য খোঁজে ।

পাটক্ষেতের আড়ালে পৃথিবীর মানুষের আদিমতম ক্রিয়া জোরপূর্বক সম্পাদিত হতে থাকে সেই ক্রিয়ায় আক্রান্তের তীব্রতম অপমানে ভরপুর যাতনাময় শব্দকে অতিক্রম করে । কোথাও সর্বকণিষ্ঠ মানবসন্তানের আবির্ভাব উপলক্ষ্যে আজানের তীব্র ধ্বনিতে আকাশে – বাতাসে মৃদু কাঁপন জাগে । কোথাও পেনশনের প্রাপ্য টাকা থেকে বঞ্চিত হয়ে পথেই হার্টএটাকে বাড়ীর এককালীন কর্তার জীবনাবসানে অতীতের সমস্ত স্মৃতি বাস্তবতার বাঁধ ভেঙ্গে চোখের সামনে আসতে শুরু করলে শোকাবিভূত হতে থাকে নিহতের পরিজনেরা ।

পাঁচ ফুট সাত ইঞ্চি , পেটানো শরীরের আনপড় , অশিক্ষিত সিরাজের মনে উপরিউক্ত এমন কোন অনুভূতিই হয়না । তবু সে কিছুক্ষণ পরেই অঙ্গার হতে যাচ্ছে ।

এটা অনিবার্যই ছিলো । সে বরং অবাক হয়েছে যে কিভাবে তার প্রাণখাতা এতদিন যাবত খোলা ছিলো । কিছু পৃষ্ঠার লেখা সবসময় ঝাপসা থেকে গেছে বলে মৃদুমন্দ দু একটা দীর্ঘশ্বাসকে সিরাজ আটকে রাখতে পারেনা । কি ক্ষতি ছিলো সেই পৃষ্ঠাগুলো একটু পাঠযোগ্য হলে ? সে জেনেশুনে কোন নিরীহের কি অপূরণীয় ক্ষতি করেছিলো ? খুব বেশী চাওয়া তো ছিলোনা সিরাজের । কেবল সন্ধ্যা শেষে ঘুটঘুটে অন্ধকারে ঘন রাত তাকে অভ্যর্থণা জানালে হাঁড়িতে সাদা রঙা ফ্যান দেখতে চেয়েছিলো ।

চেয়েছিলো নিজের হাতে লাগানো লেবু গাছের চারাগুলো তার জীবনের সুখকর সময়ের মতো করেই দ্রুত বেড়ে উঠুক । আর চেয়েছিলো যতোই মারুক , বকুক , বাপ – মায়ের বংশ ধরে কষে দু চারটে অশ্লীলতম গাল দিক তবু যেন মধ্য তিরিশের কালো করে দেখতে , ছিপছিপে শরীরের বুদ্ধিদীপ্ত চোখের করিমন তাকে পাল্টা ধরে চড়থাপ্পড় দিলেও যেন ছেড়ে না যায় ।

ইতোমধ্যেই সিরাজের চেতনা সারা শরীরে আঘাতের তীব্র ব্যাথায় ক্রমশ স্মার্ট শহুরে নাগরিকের মতো স্তিমিত হয়ে আসে । খুব ভোর থাকতে থাকতে পূব দিকে যেই লাল সূর্যটা বরাবরের মতোই আজকেও উঠেছিলো সেটা দিনে শেষবারের মতো তার হালকা লাল আভায় পরবর্তী দিনের আগমনের কথা জানিয়ে তার কাঙ্খিতজনাদের বিদায় জানাতে আরম্ভ করে । এদিকে দুই হাত বেঁধে রাখা মাটিতে পরম তাচ্ছিল্যে শায়িত সিরাজের খুবলে নেওয়া ডান চোখ বরাবর মানুষের শরীরে কিছু উন্মত্ত কুকুর দাঁড়িয়ে থাকে ।

তাদের প্রত্যাশিত একটা ফোন কলের অপেক্ষার পালা শেষ হলে মাটিতে শুইয়ে রাখা এই আস্ত হারামীর পোকে তারা আর স্পেয়ার করেনা । ঠাঁ ঠাঁ গুলির শব্দে মনে হয় আপাদমস্তক ভীতু জনপদের মতোই নির্জন এই রাস্তায় যেন কেউ ট্যাংকের বোমা মেরেছে । সিরাজের মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত বেরুতে আরম্ভ করে । তারও প্রায় পায়ে হেঁটে মিনিট চল্লিশের পথ দূরত্বে সিরাজের নিবাসে টিনের উপরে দুষ্ট ছেলেপেলেরা খেলতে খেলতে পাথর ছুঁড়তে থাকে ক্রমাগত । করিমন সেই পাথর ছোঁড়ার শব্দেও কনামাত্র ভোলেনা যে সিরাজ বাড়ী ফিরতে বড্ড দেরী করছে ।

সে বাড়ী ফিরলেই লেবু গাছের চারা লাগানোর মতো একজন করিমনের পেটে এসে গেছে এই খবরটা সিরাজকে জানাতে করিমন উন্মুখ হয়ে বসে থাকে ।

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।