আমাদের কথা খুঁজে নিন

   

স্বাস্থ্য সমাচার-১ম পর্বঃ জন্ডিস

কোন প্রেম কোন স্বপ্ন কোনদিন মৃত হয় না



বিভিন্ন ধরনের জন্ডিসের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো হেপাটাইটিস সি এবং হেপাটাইটিস বি। কারণ এ দু’টি ভাইরাসের সংক্রমণের রোগ খুব দ্রুত বাড়তে থাকে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে বহু বছর ধরে ভোগাতে পারে। এর থেকে ‘সিরোসিস অব লিভার’ হওয়াও বিচিত্র নয়।

অবস্ট্রাক্টিভ জন্ডিস:

কেনো হয়?

যকৃৎ থেকে নিঃসৃত পিত্তরস খাবার হজম করতে সাহায্য করে। এ পিত্তরস যকৃৎ থেকে বেরিয়ে অসংখ্য সরু সরু নালীর মধ্যে দিয়ে ‘ডিওডিনামে’ অর্থাৎ পাকস্থলীর পরবর্তী খাদ্যনালীর অংশটিতে জমা হয়।

কিন্তু্তু ‘ডিওডিনামে যাওয়ার পথে পিত্তরস যদি কোথাও বাধা পায় তাহলে ‘অবস্ট্রাক্টিভ জন্ডিস’ দেখা দিতে পারে। পিত্তরসের যাত্রাপথে কোথাও পাথর বা টিউমার হওয়া, পিত্ত পৌঁছানোর নালীর মধ্যে কৃমি ঢুকে যাওয়া ইত্যাদি কারণে এ বাধা সৃষ্টি হতে পারে।

লক্ষণ কি ?

অবস্ট্রাক্টিভ জন্ডিসের সব থেকে বড় লক্ষণ পেটে প্রচন্ড যন্ত্রণা। এছাড়া রোগীর খিদে কমে যায়। প্রস্রাবের রং লাল হয়ে যায়, পায়খানার রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়।



চিকিৎসা:

সাধারণত শল্যচিকিৎসাই এর নিরাময়ের উপায়।

লিভার সেল জন্ডিস (হেপাটাইটিস):

কত রকম ?

হেপাটাইটিস এই লিভার সেল জন্ডিসেরই প্রকারভেদ। যার নাম ‘ ভাইরাস হেপাটাইটিস’। দু’রকম ভাইরাসের সংক্রমণে হেপাটাইটিস হয়। হেপাটাইটিস ভাইরাস ও নন-হেপাটাইটিস ভাইরাস।

নন-হেপাটাইটিস ভাইরাসের কারণে হেপাটাইটিস এখনও খুব বেশি দেখা না গেলেও বর্তমানে এইডস-এর হার বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এর আশঙ্কাও প্রবল হচ্ছে। কারণ এইডস হলে দেহের প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যাওয়ার দরুন সুস্থ অবস্থায় যেসব ভাইরাস শরীরকে আক্রমণ করতে পারে না, এইডসের সময়ে সেগুলো শরীরে ঢুকে নানা অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে। যাই হোক, হেপাটাইটিস ভাইরাস ছ’রকম। হেপাটাইটিস সি, হেপাটাইটিস ডি, হেপাটাইটিস ই, হেপাটাইটিস জি।

লক্ষণ কি ?

হেপাটাইটিস ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর থেকে জন্ডিস দেখা দেয়ার আগে পর্যন্ত শরীরে নানা রকম সমস্যা দেখা দেয়।

যেমন জ্বর, সর্দি, গস্ন্যান্ড ফোলা, চোখ দিয়ে জল পড়া, খিদে কমে যাওয়া, বমি, গায়ে আমবাতের মতো বেরনো, গায়ে ব্যথা ইত্যাদি। এরপর জন্ডিসের লক্ষণগুলো ফুটে উঠতে শুরু করে। চোখ সমেত গোটা শরীর হলদে হয়ে যায়। প্রস্রাবের রং সরষের তেলের মতো লাল এবং পায়খানার রং ফ্যাকাশে হয়ে যায়। উলেস্নখ্য, জন্ডিসের কারণ বহু সময়ে এ হেপাটাইটিস।

অবশ্য এমন হেপাটাইটিসও আছে যাতে জন্ডিসের লক্ষণ ফুটে ওঠে না, কিন্তু্তু লিভারে গোলমাল থাকে। একক্ষেত্রে চিকিৎসকই নিজস্ব কিছু উপায়ের মাধ্যমে অনুধাবন করতে পারেন, হেপাটাইটিস হয়েছে।

কি ক্ষতি করে ?

বিভিন্ন ধরনের জন্ডিসের মধ্যে সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো হেপাটাইটিস সি এবং হেপাটাইটিস বি। কারণ এ দু’টি ভাইরাসের সংক্রমণের রোগ খুব দ্রুত বাড়তে থাকে এবং আক্রান্ত ব্যক্তিকে বহু বছর ধরে ভোগাতে পারে। এর থেকে ‘সিরোসিস অব লিভার’ হওয়াও বিচিত্র নয়।

এমনকি, হেপাটাইটিস বি বা হেপাটাইটিস সি ভাইরাস খুব বেশিদিন যকৃতে বাসা বেঁধে থাকলে যকৃতের ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে। তবে হেপাটাইটিস এ-র জন্য রোগী চট করে মারা যায় না। হেপাটাইটিস ই-র টাইপও অনেকটা এ-র মতো। কিন্তু ‘ই’ ভাইরাস থেকে সিভিয়ার হেপাটাইটিস দেখা দিতে পারে, যা প্রাণঘাতী। আর হেপাটাইটিস ‘ডি’ কখনো একলা হয় না।

হেপাটাইটিস বি-র সঙ্গেই হয়। এমনিতেই বিপজ্জনক ‘বি’-এর ফলে আরও বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এমন কিছু হেপাটাইটিস ভাইরাস আছে যেগুলো অন্য ভাইরাসের সঙ্গে মেলে না। সেগুলোরই নাম দেয়া হয়েছে হেপাটাইটিস জি। এই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ঘটনা খুব কম ঘটে।

হেপাটাইটিস জি এখনও গবেষণাধীন।

হেপাটাইটিস কিভাবে ছড়ায় ?

হেপাটাইটিস ‘এ’ এবং হেপাটাইটিস-‘ই’ সাধারণত মহামারী আকারে হয়।
এ এবং ই ভাইরাস ছড়ায় পায়খানার মাধ্যমে। মলত্যাগের পর হাত ভালো করে না ধুলেও হাতে ভাইরাস থেকে যেতে পারে। সংক্রমিত পানি থেকেও এ ভাইরাস ছড়ায়।


হেপাটাইটিস এ খুব বেশি ছড়ায় না। কিন্তু হেপাটাইটিস ই প্রচন্ড গতিতে ছড়ায়।
হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি-এর সংক্রমণ ঘটে রক্তের মাধ্যমে। কোনো রক্তে থাকা হেপাটাইটিস বি বা সি ভাইরাস সেই রক্ত গ্রহণকারীর শরীরে সংক্রমিত হয়।
হেপাটাইটিস বি বা হেপাটাইটিস সি-তে আক্রান্ত ব্যক্তিকে যে সিরিঞ্জে ইনজেকশন দেয়া হয়েছে সেই সিরিঞ্জ অন্য কারও ক্ষেত্রে ব্যবহার করলে অপর ব্যক্তির সংক্রমণ ঘটবে।


আক্রান্ত ব্যক্তিকে ইনজেকশন দেয়ার সময়ে বা অপারেশনের সময়ে সচ বা ছুরি-কাঁচি ডাক্তার-নার্সের শরীরে ফুটে গেলে এবং তারা হেপাটাইটিস বি বা সি-তে আক্রান্ত হলে তাদের থেকেও সংক্রমণ ঘটতে পারে।
আক্রান্ত ব্যক্তির সঙ্গে যৌন সংসর্গ বা গভীর চুম্বন থেকেও এই মরণ ভাইরাস দু’টির সংক্রমণ ঘটতে পারে।
মা আক্রান্ত হলে গর্ভস্থ শিশুও হেপাটাইটিস বি কিংবা হেপাটাইটিস সি রোগে আক্রান্ত হতে পারে। শুক্রের মাধ্যমেও ভাইরাস ছড়ায় এমনকি বুকের দুধও সংক্রমণের কারণ হয়।
ভাইরাস থাকে ঘামেও।

আক্রান্তের প্রস্রাব যদি ছিটকে এসে কারো ক্ষত স্থানে পড়ে তার থেকেও সংক্রমণ হতে পারে বলে ধারণা।

নির্ণয় ও চিকিৎসা:

হেপাটাইটিস হয়েছে কি না বা কোন ধরনের হেপাটাইটিস হয়েছে বোঝার জন্য আগে রক্ত পরীক্ষা করা দরকার। হেপাটাইটিস এ হলে রক্তে একটি এ্যান্টিবডি পাওয়া যাবে। আর রক্তের ‘সারফেস এ্যান্টিজেন’ সমেত অন্য এ্যান্টিজেন পরীক্ষা বা রক্তের ডিএন এ পরীক্ষা করে হেপাটাইটিস বি নির্ণয় করা যায়। হেপাটাইটিস ‘বি’ এবং হেপাটাইটিস ‘সি’-কে আমরা দু’ভাগে ভাগ করি।

‘একিউট’ এবং ‘ক্রনিক’। একিউট অর্থাৎ সদ্য হওয়া হেপাটাইটিস বি কিংবা সি-এর নির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা নেই। রোগীকে কেবল তেল, ঘি কম খেতে এবং বিশ্রামে থাকতে বলা হয়। সেই সঙ্গে নজর রাখা জরুরি, কোনো জটিলতা শরীরে দেখা দিচ্ছে কি না। কিন্তু ধরা যাক ছ’মাস ধরে রোগটা থেকে গিয়েছে অর্থাৎ ক্রনিক হয়ে গেছে, তখন ‘ইন্টারপেরন’ নামে বহুমূল্য এক ধরনের ওষুধ দিয়ে চিকিৎসা করা হয়।

একিউট হেপাটাইটিসের ওষুধ নিয়েও গবেষণা চলছে।

হিমোলাইটিক জন্ডিস:

কি করে হয় ?

রক্তের লোহিত কণিকা খুব দ্রুত ভেঙে যেতে থাকলে হিমোলাইটিক জন্ডিস হয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই জন্মগত রোগের উপসর্গ হিসেবে এ জন্ডিস দেখা দেয়। উল্লেখ্য থ্যালাসেমিয়া, হিমোগেস্নাবিন ই ইত্যাদি রোগের ফলে রক্তের লোহিত কণিকা তাড়াতাড়ি ভেঙে যায়।

লক্ষণ:

হিমোলাইটিক জন্ডিসে সাধারণত পেটে ব্যথা থাকে না।

হেপাটাইটিসের সময়ে যেটা হয় অর্থাৎ খিদে না পাওয়া সেটাও এই জন্ডিসের সময় হয় না। এমনকি প্রস্রাবের রং লাল কিংবা পায়খানার রং ফ্যাকাশেও হয়ে যায় না। তবে এ জন্ডিসে পস্নীহা বেশ বড় হয়ে যায়। আর তার সঙ্গে অবশ্যই হয় রক্তাল্পতা বা এ্যানিমিয়া। কোনো কোনো রোগের সঙ্গে জন্ডিসের আশঙ্কা বিভিন্ন ধরনের রোগের সঙ্গে জন্ডিস দেখা দিতে পারে।

তবে ব্লাড সুগার যাদের বেশি তাদের ক্ষেত্রে জন্ডিস সব থেকে বিপজ্জনক হয়ে ওঠে। এছাড়া যারা নিয়মিত মদ্যপান করেন, তাদের ক্ষেত্রেও জন্ডিস মারাত্মক আকার নিতে পারে। গর্ভাবস্থায় জন্ডিস দেখা দিলে তা কেবল মায়ের পক্ষেই নয়, শিশুর পক্ষেও বিপজ্জনক। কারণ গর্ভবতী মায়ের জন্ডিস হলে শিশুরও হতে পারে।

কোন বয়সে বেশি হয় ?

যে কোনো জন্ডিস যে কোনো বয়সে হতে পারে।

তবে কিছু বয়সের প্যাটার্ন পাওয়া যায়। হেপাটাইটিস এ সাধারণত ছোটবেলা থেকে যৌবনের প্রথম দিক পর্যন্ত বেশি হতে পারে। রক্ত নেয়ার প্রয়োজন যেহেতু বয়স মেনে হয় না তাই হেপাটাইটিস বি ও সি-র কোনো বয়স সীমা নেই। তবে যে বয়সে যৌন সংসর্গ বেশি ঘটে অর্থাৎ যৌবন থেকে প্রৌঢ়ত্বের প্রথম ভাগ পর্যন্ত এর আশঙ্কা বেশি থাকে। হেপাটাইটিস ‘ই’ যৌবনে হওয়ার আশঙ্কা বেশি।

তবে যৌবনে হয়নি মানে বার্ধক্যে হবে না, এমন কোনো নিয়ম নেই।

কোন ঋতুতে হয় ?

প্রায় সব ঋতুতেই জন্ডিস হতে পারে। তবে বেশি কমের রকমফের আছে। শীতের গোড়ার দিকে এবং বর্ষার সময় হেপাটাইটিস ‘এ’ হওয়ার ঘটনা আমরা বেশি পাই। হেপাটাইটিস ‘ই’ ছড়ায় গ্রীষ্ম শেষ হয়ে যখন বর্ষা শুরু হচ্ছে তখন।

কারণ বৃষ্টির জলে পুকুর পাড়ের ময়লা ধুয়ে এসে পড়ে পুকুরে। ফলে পানি দষিত হয় এবং সেই পানি মুখে দিলে হেপাটাইটিস ই ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা। তবে জন্ডিসের সঙ্গে ঋতুর তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। জন্ডিসের স্থায়িত্ব হেপাটাইটিস ‘এ’ কিংবা হেপাটাইটিস ‘ই’ সাধারণত চার সপ্তাহের মধ্যে সারে। কিন্তু বি ও সি-এর মেয়াদ বহু বছরও হতে পারে।

জন্মগত রোগের কারণে জন্ডিস দেখা দিলে সারা জীবন তা চলতে পারে।

মৃত্যুর আশঙ্কা:

ঠিক সময়ে ধরা না পড়লেও যথার্থ চিকিৎসা না হলে সব ধরনের জন্ডিসেই মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে। অবস্ট্রাক্টিভ জন্ডিস যেসব রোগের কারণে হয় সেই রোগগুলো মৃত্যু ডেকে আনতে পারে। হিমোলাইটিক জন্ডিসেও মৃত্যু হতে পারে। তবে সবচেয়ে বেশি মৃত্যুর আশঙ্কা থাকে হেপাটাইটিস বি এবং হেপাটাইটিস সি-এ।

একিউট হেপাটাইটিস ‘বি’ এবং হেপাটাইটিস সি-এর মধ্যে তুলনা করলে বলা যায়, হেপাটাইটিস বি সেরে যাওয়ার ঘটনা বেশি ।

গর্ভাবস্থায় জন্ডিস:

গর্ভাবস্থায় জন্ডিসের কারণ:

লিভারের রোগ-এ রোগে ভাইরাসের সৃষ্ট প্রদাহে লিভারের কোষগুলো স্ফীত হয়ে তাদের কর্মক্ষমতা হারায়। ফলে লিভারের বিলিরুবিনের শোধন হয় না, অপরিশোধিত বিলিরুবিন রক্তে জমে যায়। তাছাড়া বাইল বা পিত্ত নিঃসরণও বাধাপ্রাপ্ত হয়ে পরিশোধিত বিলিরুবিনও শরীর থেকে বেরিয়ে না গিয়ে রক্তে জমে যায়।
গর্ভাবস্থায় লিভারের অন্য কোনো রোগ বা পিত্তনালীতে স্টোন।


গর্ভাবস্থায় টক্সিমিয়া অর্থাৎ শরীরে বিষাক্ত পদার্থ জমে যাওয়া।
গর্ভাবস্থায় অতিরিক্ত বমি।
লিভারের ক্ষতি করে এমন ওষুধ যদি গর্ভাবতী মাকে খেতে হয়।
গর্ভাবস্থায় রক্তের কোনো অসুখ যেমন থ্যালাসেমিয়া-এতে রক্ত কণিকা সহজে ভেঙে যায় এবং বিলিরুবিন রক্তে জমে জন্ডিস দেখা দেয়।
কোনো কারণে মাকে যদি ব্লাড ট্রান্সফিউশন নিতে হয় তাহলে জন্ডিস হবার সম্ভাবনা থাকে।


গর্ভাবস্থায় জন্ডিস কেনো বিপজ্জনক?
গর্ভাবস্থায় লিভারের কাজ অনেক বেড়ে যায়। মার খাবার থেকে উপযুক্ত প্রোটিন, কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট তৈরি ছাড়াও ভ্রূণ শিশু ও পস্ন্যাসেন্টা বা ফুল থেকে বের হওয়া দষিত বর্জ্য পদার্থ পরিশোধন ও পরিবর্তন করার কাজ লিভারের মধ্যেই সম্পন্ন হয়। মার এ্যানিমিয়া অর্থ বা উপযোগী প্রোটিনের অভাবে লিভারের কোষগুলো ঠিকমতো কাজ করে উঠতে পারে না। এ সময়ে ভাইরাল হেপাটাইটিস খাদ্যাভ্যাসে দুর্বল লিভারের কাজে বাধা সৃষ্টি করে।
গর্ভাবস্থায় জন্ডিসের প্রকোপ বেড়ে রক্তে খুব বেশি বিলিরুবিন জমে যায়।

পরে লিভারের কোষের বিশেষ ক্ষতির ফলে মার মানসিক চেতনা প্রায় লুপ্ত হয়ে আচ্ছন্নভাব এবং কোমা হতে পারে, যাতে প্রাণহানির আশঙ্কাও থাকে। এছাড়া গর্ভাবস্থায় জন্ডিসে লিভারের কোষে রক্ত জমাট বাঁধার পক্ষে জরুরি ‘প্রোথ্রম্বিন’ সৃষ্টি ব্যাহত হয়। এতে রক্ত জমাট বাঁধতে পারে না এবং শিশুর জন্ম দেবার অব্যবহিত পরে প্রসতির অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় যা মায়ের প্রাণনাশের কারণ হতে পারে। এছাড়া হেপাটাইটিস ‘বি’ গর্ভবতী মায়ের থেকে সন্তানের শরীরেও আসতে পারে।

জন্ডিস হলে সাবধানতা:

জন্ডিস হলে প্রথমেই চিকিৎসকের কাছে গিয়ে তার পরামর্শ মতো চলতে হবে।

এ সময়ে বিশ্রাম নেয়া জরুরি। হেপাটাইটিস হলেই সাধারণত বিশ্রাম নিতে বলা হয়। পরিশ্রম করলে হেপাটাইটিস বেড়ে যেতে পারে বলে ধারণা। রোদ না লাগানোর ক্ষেত্রেও এ একই কথা প্রযোজ্য। আর ‘এ’ বা ‘ই’ হেপাটাইটিস যাতে না হয় সেজন্য পানি ফুটিয়ে খেতে বলা হয়।

পানি ফুটিয়ে খেলে এ দু’রকম হেপাটাইটিস হওয়ার আশঙ্কা কম থাকে। কিন্তু্তু হেপাটাইটিস একবার শুরু হয়ে গেলে তারপর ফোটানো পানি খেয়ে কোনো লাভ নেই।
আমাদের প্রত্যেকেরই একবার না একবার জন্ডিস হয়েছে। আর তা এরকম হতে বাধ্য। আপনি কোনোদিন জন্ডিসে কষ্ট না পেয়ে থাকলে আপনার রক্ত পরীক্ষায় কখনো জন্ডিস ধরা না পড়লেও জেনে রাখুন আপনি অন্তত একবার জন্ডিসের শিকার হয়েছেন এবং হয়েছেন খুব অল্প বয়সে।



ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস:

ঘটনা হলো জন্মের পর প্রত্যেক বাচ্চার জন্ডিস হয়। বাচ্চার যখন তিনদিন বয়স তখনই এর শুরু। কখনো আবার দু’দিনের মাথায় এটা হতে পারে। সাত থেকে দশ দিনের মধ্যে এটা আপনা থেকেই ঠিক হয়ে যায়। এহেন জন্ডিসের নাম ‘ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস’।

সদ্যজাত শিশুদের ‘বিলিরুবিন’-এর পরিমাণ খুব বেশি থাকে। কেননা যকৃতের যে উৎসেচক বা ‘এনজাইম’-গুলোর বিলিরুবিন নিয়ন্তণ করার কথা, সেগুলো শিশুর জন্মের অব্যবহিত পরেই তাদের কাজ ঠিকমতো শুরু করে উঠতে পারে না। এটাই হলো ‘ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিসের’ কারণ।


ব্রেস্ট মিল্ক জন্ডিস:

বাচ্চাদের আর এক ধরনের জন্ডিস হলো ‘ব্রেস্ট মিল্ক জন্ডিস’। মায়ের দুধে এমন একটা হরমোন থাকে যার থেকে শিশুর শরীরে বিলিরুবিনের মাত্রা খুব বেশি হয়ে যায়।

এ টাইপের জন্ডিস অনেক বাচ্চারই হতে দেখা গিয়েছে। মাঝে মধ্যে এক থেকে দু’মাস এটা থাকে। শিশু হাসপাতালে থাকার সময়ে এটা ধরা পড়লে অতি বেগুনি রশ্মি বা ‘আল্ট্রাভায়োলেটের’ নিচে তাকে রাখা হয়। অনেক সময়ে অবশ্য বাচ্চা বাড়ি চলে যাওয়ার পর এ জন্ডিস ধরা পড়ে। সে ক্ষেত্রে সর্যের আলোয় বাচ্চাকে শুইয়ে রাখতে বলা হয়।

এ দুটি উপায়ে এ জন্ডিসের চিকিৎসা করা হয়ে থাকে।

রেশাস ইনকমপ্যাটিবিলিটি:

বাচ্চাদের জন্ডিসের মধ্যে সবচেয়ে জটিল বোধহয় ‘রেশাস ইনকমপ্যাটিবিলিটি’। মায়ের ব্লাড গ্রুপের সঙ্গে শিশুর ব্লাড গ্রুপ না মিললে অনেক সময়ে এ জন্ডিস শিশুর দেহে দেখা দেয়। জন্মের দিন থেকেই বাচ্চার এ জন্ডিস হয় এবং সেদিন থেকেই এর চিকিৎসা শুরু হওয়া দরকার। গর্ভাবস্থায় আগে থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করালেই কিন্তু্তু বাচ্চা জন্মানোর আগেই বোঝা সম্ভব, তার এ ধরনের জন্ডিস হবে কি না।

সে ক্ষেত্রে চিকিৎসারই সুবিধা হয়। এমনিতে এ জন্ডিস কমের মধ্যে থাকলে ‘ফটোথেরাপি’ দিয়েই সারানো সম্ভব। তা না হলে জন্ডিসের তীব্রতা খুব বেশি হলে শেষ বিকল্প হিসেবে ‘ব্লাড ট্রান্সফিউন’ বা বাচ্চার রক্ত পাল্টে দেয়া হয়। আর একটা কথা এ ধরনের জন্ডিসের ক্ষেত্রে যতক্ষণ না বাচ্চা পুরোপুরি সুস্থ হচ্ছে ততোক্ষণ তাকে হাসপাতাল থেকে ছাড়া হয় না। বাড়িতে রেখে এ জন্ডিসের চিকিৎসা সম্ভব নয়।



অবস্ট্রাকশন:

‘অবস্ট্রাকশন’ বা শরীরের কোথাও কোনো বাধা থাকলে তার থেকে যে জন্ডিস হয়, বাচ্চাদের বেলায় সে জন্ডিস কিন্তু্তু মারাত্মক। কারণ এটা প্রথমে চট করে বোঝা যায় না। ‘ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস’-এর সঙ্গে এ জন্ডিসের পার্থক্য নিরূপণ করা মুশকিল। কিন্তু্তু ফিজিওলজিক্যাল জন্ডিস ১০ দিনের মধ্যে সেরে যাওয়ার কথা। যদি একরম হয়, দু‘সপ্তাহের মধ্যে জন্ডিস সারছে না, তবে দেরি না করে ডাক্তারের কাছে গিয়ে পরীক্ষা করান।

‘অবস্ট্রাকশন’-এর দরুন জন্ডিস হলে বাচ্চার পায়খানার রং সাদা হবে। তাছাড়া গায়ের রংও একটু বেশি হলুদ হতে পারে। মনে রাখবেন, এ জন্ডিস শিশুর এক থেকে দেড় মাস বয়সের মধ্যে ধরা পড়া খুব জরুরি।
কারণ সেই সময়ের মধ্যেই অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে ওই ‘অবস্ট্রাকশন’ যার জন্য জন্ডিস হচ্ছে-তা সরিয়ে ফেলতে হবে। আট সপ্তাহ বা দু’মাস হয়ে গেলে শল্যচিকিৎসকের আর কিছুই করা থাকে না।

তাই যে কথাটা বারবার করে বলা, বাচ্চার দিকে নজর রাখুন, কতদিন তার জন্ডিস থাকছে। একটু অসুবিধা মনে করলে বা জন্ডিস দু’সপ্তাহ ধরে থাকলে ডাক্তারের কাছে যান। অবশ্য ‘অবস্ট্রাকশন’ না থাকলেও বাচ্চাদের জন্ডিস অনেক সময়ে অন্যান্য কারণে বেশ কিছুদিন থাকতে পারে। তাহলে কদাচিৎ এরকম ব্যাপার। এটা নিয়মের ব্যতিক্রম বলেই ধরে নিতে হবে।



অন্যান্য কারণে:

আরও কিছু কারণে জন্ডিস হতে পারে। যেমন হাইপোথাইরয়েডের জন্যও জন্ডিস হয়। জন্মের পাঁচ থেকে সাত দিনের মাথায় এটা হয়। হাইপোথাইরয়েডের জন্ডিস দেরি করে শুরু হয়, দেরি করে শেষ হয়। আবার ‘প্রি-ম্যাচিউর বেবি’ এবং ছোট সাইজের বাচ্চাদের মধ্যে জন্ডিসে আক্রান্ত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকে।


এবার জন্ডিসের টাইপ। এবিসিই-সব রকম জন্ডিসই বাচ্চাদের হতে পারে। ‘এ’ আর ‘ই’ টাইপ খাদ্য এবং পানীয় থেকে সংক্রমণের ফলেই সাধারণত হয়। আর হেপাটাইটিস ‘বি’ বিভিন্ন কারণে হতে পারে। মা-র তা থাকলে বাচ্চা জন্মের সময়ই ওই ‘বি’ টাইপ জন্ডিসের সংক্রমণের আক্রান্ত হতে পারে।

হেপাটাইটিস বি-র আরও একটি কারণ আছে। তবে সে কারণ সম্পর্কে এখনও পর্যন্ত নির্দিষ্ট করে কিছু বলা সম্ভব হয়নি। আর বাড়ির বাচ্চার হেপাটাইটিস বি হলে বাড়ির সকলকে এর টিকা নিতে হবে। হেপাটাইটিস বি-র তাও ভ্যাকসিন বা টিকা আছে। হেপাটাইটিস সি-র কিন্তু সেরকম কিছু নেই।

তাই এটা খুবই ভয়ের। আবার অনেক সময়ে এক-দু’বছরের বাচ্চাদের জন্ডিস যে হয়েছে তা বোঝা যায় না। ‘এ’ বা ‘ই’ টাইপ জন্ডিস হলে সেরকম ঝামেলা হয়তো হবে না। কিন্তু্তু এরকম অজান্তে যদি বি বা সি টাইপ জন্ডিস হয়, তাহলে কিন্তু্তু প্রাণ সংশয়ও হতে পারে। এমনিতে যেটা বলার, বাচ্চাদের জন্ডিস হলে হাল্কা খাবার বা ‘লাইট ফুড’ দিন।

যতো পারা যায় কম ওষুধ খাওয়ান। কোনোরকম ওষুধ না দেয়াই সবচেয়ে ভালো। আর রক্ত পরীক্ষা অবশ্যই করাবেন। আর সে সঙ্গে বাচ্চা যেনো বিশ্রামে থাকে।
জেনে রাখুন, জন্ডিস হলে আঁতকে ওঠার কিছু নেই।

অভিভাবকদের সচেতনতা, শিশুর প্রতি তার যত্ন সময় মতো সু-চিকিৎসার মাধ্যমে জন্ডিস সহজেই নিরাময় করা সম্ভব।
(সংকলিত)

অনলাইনে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা কথা গুলোকেই সহজে জানবার সুবিধার জন্য একত্রিত করে আমাদের কথা । এখানে সংগৃহিত কথা গুলোর সত্ব (copyright) সম্পূর্ণভাবে সোর্স সাইটের লেখকের এবং আমাদের কথাতে প্রতিটা কথাতেই সোর্স সাইটের রেফারেন্স লিংক উধৃত আছে ।